দীর্ঘজীবন লাভের উপায় (পর্ব-১৩) : ডায়াবেটিসের প্রকৃত কারণ
ডায়াবেটিস, হার্ট অ্যাটাক এবং উচ্চ রক্তচাপের প্রকৃত কারণ এবং প্রতিরোধের উপায় জানার মাধ্যমে
ডায়াবেটিসের প্রকৃত কারণ
গত চার বছরের বেশি সময় ধরে ডায়াবেটিস, হার্ট অ্যাটাক, উচ্চ রক্তচাপ, ক্যান্সার ইত্যাদি রোগ নিয়ে আমি অনেক ভেবেছি। কারণ রোগগুলো সারাবিশ্বেই কোটি কোটি মানুষের জীবন কেড়ে নিচ্ছে, স্বাভাবিক জীবন বিপন্ন করছে। শুধু ডায়াবেটিসের কথাই বলছি। আমার আত্মীয় এবং পরিচিত অনেকেই রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে কঠিন জীবন যাপন করছে, অনেকে ইতোমধ্যে মারাও গেছে। আমাদের বাড়ির আমার এক জেঠাতো ভাই, নাম আবুল বাশার, ২০১৮ সালের ১৩ ডিসেম্বর ডায়াবেটিসজনিত জটিলতা বৃদ্ধি পেয়ে মারা যান। তাঁর মৃত্যুর কিছুদিন পরই আরেক জেঠাতো ভাইয়ের স্ত্রী আকস্মিক ডায়াবেটিস বেড়ে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেন। আরো অনেক আত্মীয় ডায়াবেটিসে ভুগে কঠিন জীবন পার করছেন, যে কোনো সময় মারা যেতে পারেন।
ডায়াবেটিসের কারণ সম্পর্কে পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত অনেক ডাক্তারের লেখা ও অনেক গবেষণা প্রতিবেদনে এবং মানুষের মুখে অনেক রকম মন্তব্য পাওয়া যায়। মন্তব্যগুলোর সাথে বাস্তবতার মিল খুঁজতে গিয়ে আমি বেশির ভাগ ক্ষেত্রে হতাশ হয়েছি। দেখেছি, যে কারণগুলোকে ডায়াবেটিসের জন্য দায়ী করা হয়, বাস্তবতার সাথে তার অনেকগুলোরই মিল নেই।
ডায়াবেটিসের কারণ নিয়ে বিশ্বের অনেক বড় বড় গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষণা ফলাফল মাঝে মাঝে পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়। দুঃখজনক হচ্ছে, কোনো গবেষণা-ফলাফলেই ডায়াবেটিসের মূল কারণ কয়টি, তা চিহ্নিত করতে দেখা যায় না এবং ডায়াবেটিসের মোট কারণ কয়টি, তা-ও সুনির্দিষ্টভাবে খুঁজে বের করতে পারে না কোনো গবেষণা। একেক গবেষণায় একক কারণকে ডায়াবেটিসের জন্য দায়ী বলে উল্লেখ করা হয়। কিছু কারণ অনেক সময় মিলে যায়, কিছু কারণ আবার মিলে না। সবগুলো কারণ একত্র করলে মানুষ ডায়াবেটিস থেকে বাঁচার আশা বাদ দিয়ে ভাববে, এতোগুলো কারণ পরিহারের চেয়ে ডায়াবেটিসে ধুঁকে ধুঁকে মরাই বরং ভালো!
মাফ করবেন, আমি কোনো ডাক্তার নই, কোনো গবেষকও নই, তবু এমন মন্তব্য করে ফেললাম। কারণ এমন মন্তব্য করার মতো শক্তি আমার আছে। আমি যে মন্তব্য করেছি, তা খুব ভালোভাবে প্রমাণ করে দেখাতে পারবো বলেই মন্তব্য করার সাহস পেয়েছি।
আমি দেখেছি, ডায়াবেটিসের মূল কারণ মাত্র ১টি এবং ডায়াবেটিস সর্বমোট তিন কারণে হয়। ডায়াবেটিস মূলতঃ যে কারণে হয়, মানুষ তা থেকে দূরে থাকতে পারলে মানুষকে ডায়াবেটিস আক্রমণ করতে পারবে খুব কম। আর ডায়াবেটিস মোট যে তিনটি কারণে হয়, সবগুলো এড়িয়ে চললে নিশ্চিতভাবে মানুষ ডায়াবেটিস থেকে রক্ষা করতে পারবে নিজের মূল্যবান জীবনকে।
আমি দীর্ঘদিন ধরে শুধু একটা বিষয় দেখেছি চরম সত্য হিসেবে, ডায়াবেটিস শুধু ঐসব মানুষের হয়, যারা শারীরিক পরিশ্রম থেকে দূরে থাকে বা করলেও পরিমাণে কম করে। পাশাপাশি যারা বেশি বেশি খায় বা মনের চাহিদামতো খায় বা ভোজনপ্রিয় এবং যারা মোটা শরীরের, তারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয় বেশি বেশি। এককথায় ডায়াবেটিসের মূল কারণ শারীরিক পরিশ্রম থেকে দূরে থাকা এবং অন্য দুকারণ হচ্ছে বেশি খাওয়া বা মনের চাহিদামতো খাওয়া এবং মুটিয়ে যাওয়া। এই তিনটি কারণ যার মধ্যে নেই, সে কখনো কোনোভাবে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয় না। তবে যারা মোটা হওয়া সত্ত্বেও এবং বেশি বেশি খাওয়া সত্ত্বেও শারীরিক পরিশ্রম করে বেশি বেশি, তারাও খুব কমই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়। আবার চিকন লোকও যখন শারীরিক পরিশ্রম থেকে দূরে থাকে, অনেক সময় ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। তাই এতে কোনো সন্দেহ নেই, ডায়াবেটিসের মূল কারণ শারীরিক পরিশ্রম না করা বা কম করা। এককথায় পর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রম যারা করে, তারা কখনো ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয় না। আমার এ বক্তব্যে পুরো আস্থা রাখার জন্য চার শ্রেণির লোকের দিকে লক্ষ্য করার অনুরোধ করছি।
১. বাংলাদেশের ঐসব "পায়েচালিত" রিকশাচালক, যারা ১০ বছরের বেশি সময় ধরে (অনেকে ৩০-৪০ বছর বা তার চেয়েও বেশি সময় ধরে চালায়) রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। এমন এক হাজার বা দশ হাজার রিকশাচালকের খোঁজ নিয়ে দেখুন, দেখবেন তারা কেউই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত নন। এমনও দেখা যেতে পারে, তাদের অনেকের পিতামাতা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ছিলেন বা কোনো সন্তান ইতোমধ্যে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। এমনও দেখা যাবে, তাদের অধিকাংশই ধূমপান করছেন, নয়তো ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হবার জন্য প্রচারিত অন্য কোনো কারণ অনেকের মধ্যে বিরাজমান, তবু তারা কেউ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছে না।
২. বিশ্বের সব দেশেই শ্রমজীবি মানুষ আছে। যারা মাটি কাটার কাজ করে বা ফসলের জমি কিংবা কারখানায় হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের কাজ করে, এককথায় সেসব শ্রমজীবি মানুষ, যারা শারীরিক শ্রমনির্ভর কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে, এমন শ্রম, যা এদেরকে মোটা হতে দেয় না। পনেরো-বিশ বছরের বেশি সময় ধরে যেসব শ্রমজীবি মানুষ এভাবে পরিশ্রম করছেন দিনের একটা বড় অংশ, তারা কেউ দেখবেন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত নন।
৩. যেসব অ্যাথলেট বা ক্রীড়াবিদ পেশাগতভাবে শারীরিক শ্রমনির্ভর বিভিন্ন খেলা (যেমন: ফুটবল, ক্রিকেট, টেনিস, সাঁতার, ব্যাডমিন্টন ইত্যাদি) খেলে যাচ্ছেন ১০ বছরের বেশি সময় ধরে, তাদের খোঁজ নিয়ে দেখুন, দেখবেন ডায়াবেটিসে তারা কেউ আক্রান্ত নন। এরা অনেকে হয়তো ধূমপানও করেন, অনেকে হয়তো ফাস্টফুডেও আসক্ত, অনেকের বাবা-মা কারো হয়তো ডায়াবেটিস ছিল, তবু এরা ডায়াবেটিসের ছোবল থেকে মুক্ত।
৪. বিভিন্ন দেশের সামরিক বাহিনীতে যারা চাকরি করেন এবং বাধ্যগতভাবে রুটিনমাফিক নিয়মিত পর্যাপ্ত ব্যায়াম করেন, অতিরিক্ত ব্যায়ামের কারণে মোটা হতেও পারছেন না, তাদের কাউকেও দেখবেন না ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে।
এ চার শ্রেণির মানুষের ডায়াবেটিস না হওয়াটা প্রমাণ করে, ডায়াবেটিসের মূল কারণ শারীরিক শ্রম থেকে দূরে থাকা, অন্য কিছু নয়।
মানুষ যখন শারীরিক পরিশ্রম কম করে, মনের চাহিদামতো খায়, একসময় এসব কারণে মুটিয়ে যায়। আর মুটিয়ে গেলে শরীরে চর্বি বা কোলেস্টেরল বেড়ে যায়। কোলেস্টেরলের মধ্যেই জন্ম নেয় ডায়াবেটিস। অনেক মানুষ মোটা না হলেও নিয়মিত শারীরিক শারীরিক পরিশ্রম না করার কারণে শরীরে কোলেস্টেরল বেড়ে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে পড়ে।
তিনটি কারণে মানুষের শরীরে কোলেস্টেরল বেড়ে যায়। প্রথম কারণ পর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রম না করা, দ্বিতীয় কারণ বেশি খাওয়া, তৃতীয় কারণ মুটিয়ে যাওয়া। যে তিনটি কারণে মানুষের শরীরে কোলেস্টেরল বেড়ে যায়, সেই তিনটি কারণেই মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়। অর্থাৎ যে কোনো কারণে কোলেস্টেরল বেড়ে গেলে মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়। তাই যেসব মানুষের শরীরে কোলেস্টেরল বাড়তে পারে না পর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রমের কারণে, সেসব মানুষ ডায়াবেটিস থেকে নিরাপদ থাকে।
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত শতভাগ লোকের মধ্যে এই বৈশিষ্ট্য পাওয়া যাবে যে, সে পর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রম করে না। অনেকের মধ্যে এটা পাওয়া যাবে যে, তারা মোটা বা বেশি বেশি খায়। কিন্তু অন্য কোনো কারণ, যেগুলোকে ডায়াবেটিসের কারণ বলে প্রচার করা হয়, শতভাগ লোকের মধ্যে পাওয়া যাবে না। আমি ধূমপান এবং ডায়াবেটিসের সম্পর্ক নিয়ে আগেই বলেছি, ধূমপানকে তখনই ডায়াবেটিসের কারণ বলে বিশ্বাস করা যেতো, যখন দেখা যেতো ধূপায়ীরাই (সবাই না হলেও অনেকেই) শুধু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয় এবং অধূমপায়ী কেউ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয় না। কথাটি প্রচারিত অন্য কারণগুলোর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। যেমন বলা হয়, ডায়াবেটিস নাকি বংশগতভাবেও হয়। ডায়াবেটিসকে বংশগত রোগ তখনই বলা যাবে, যখন দেখা যাবে: ১. কারো পূর্বপুরুষ শুধু এক সিঁড়ি নয়, একাধিক সিঁড়ি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ছিল, ২. পিতা/মাতা কেউ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, শুধু এমন লোকেরাই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয় বেশি বেশি এবং ৩. পূর্বপুরুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত নয়, এমন মানুষ খুব কমই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়।
ডায়াবেটিসকে বংশগত রোগ বলা সম্পর্কে এ লেখায় আরো অনেক আলোচনা আছে। এখানে আরো দুএকটা কথা না বললেই নয়। এ অধ্যায়ের শুরুতে ডায়াবেটিসের ভয়াবহতা সম্পর্কে অনেক পরিসংখ্যান উল্লেখ করা হয়েছে। একটি পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, "আইডিএফের ২০১৫ সালের হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বে বর্তমানে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা প্রায় ৪৩ কোটি। ১৯৮৫ সালে এই সংখ্যা ছিল মাত্র তিন কোটি। গত আড়াই দশকে ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ১৩ গুণ বেড়েছে। সংস্থাটি দুই বছর পরপর আক্রান্ত মানুষের তথ্য প্রকাশ করে। তাদের ধারণা, এ ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা ৬৪ কোটিতে উন্নীত হবে।"
দৈনিক যুগান্তরে ২৮ ফেব্রুয়াারি ২০১৮ তারিখে "ডায়াবেটিস সচেতনতা দিবস" উপলক্ষ্যে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, "এক জরীপ মতে বিশ্বে প্রতি সাত সেকেন্ডে একজন মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছে। বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে এই রোগ এখন মহামারী রূপ নিচ্ছে। দেশে বর্তমানে ৮৪ লাখেরও বেশি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত।
ডায়াবেটিক সমিতির তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ডায়াবেটিস আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৪২ দশমিক ৫ কোটি। অথচ ১৯৮৫ সালে এ সংখ্যা ছিল মাত্র ৩ কোটি। এখনই এই রোগ প্রতিরোধ করা না গেলে ২০৩৫ সালের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ৫৯ কোটিতে পৌঁছানোর আশঙ্কা করা হচ্ছে।"
এই রকম পরিসংখ্যানগুলো কী নির্দেশ করে, তা আমরা সহজে বুঝতে পারি না বলে ডায়াবেটিসকে বংশগত বা জিনগত রোগ বলে নিজেদের সর্বনাশ করছি। এই রকম পরিসংখ্যানগুলো বলে- যত পেছনের সময়ে যাওয়া যায়, দেখা যায় তখন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা সমাজে তত কম ছিল। এভাবে যেতে যেতে এমন একটা সময় দেখা যাবে, তখন তেমন কারো ডায়াবেটিস ছিল না। যদি এক সময় পৃথিবীতে তেমন কারো ডায়াবেটিস না থাকে, তাহলে কোন্ সব পূর্বপুরুষ থেকে রোগটি আমাদেরকে সংক্রমিত করেছে? পূর্বপুরুষ কারো তো একসময় ডায়াবেটিস ছিলই না পরিসংখ্যান মতে!
ডায়াবেটিসকে জিনগত রোগ বলে আমরা নিজেদেরকে ধোঁকা দিচ্ছি। যখন দেখছি আমাদের বাবা-মা কারো রোগটি ছিল, তখন ভাবছি রোগটি তো আমার হওয়া অবশ্যম্ভাবী, তাহলে কী আর করার আছে! এটা ভেবে রোগটির নিকট আমরা অসহায় আত্মমসমর্পণ করছি। রোগটি সময় মতো আমাদের আক্রমণ করে বসছে। যারা ডায়াবেটিসকে জিনগত রোগ বলছে, তারা মানবজাতির সর্বনাশ করছে।
আমরা যদি দেখতাম, যত পেছনের সময়ে যাওয়া যায়, মানুষের জীবন তত কষ্টসাধ্য ছিল; মানুষ হেঁটে হেঁটেই তখন চলে যেতো অনেক দূরের গন্তব্যে, মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের অধিকাংশ কাজ করতে হতো শারীরিক শ্রমের বিনিময়ে; আর মানব সমাজে তখন থেকেই ডায়াবেটিসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে, যখন থেকে মানুষের শারীরিক পরিশ্রমের কাজ কমে যেতে শুরু করেছে, যখন থেকে মানুষ মেশিন-নির্ভর হয়ে পড়তে শুরু করেছে; যখন থেকে আরামপ্রিয়তা মানুষের মধ্যে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে শুরু করেছে; যখন থেকে মানুষ দশ মাইল দূরের কথা, এক মাইল দূরে যাবার জন্যেও গাড়ি ব্যবহার করছে বা করতে পারছে; আমরা বুঝতাম, ডায়াবেটিস আগেকার কোনো ডায়াবেটিস রোগী থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত রোগ নয়, বরং ডায়াবেটিস আরামপ্রিয় মানুষের রোগ; আরামপ্রিয় মানুষের সংখ্যা সমাজে যত বাড়ছে, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যাও আনুপাতিকহারে তত বাড়ছে; আমরা খুব সহজে বুঝতাম, ডায়াবেটিস শুধু শারীরিক পরিশ্রম থেকে দূরে থাকা মানুষদেরকেই আক্রমণ করে, পাশাপাশি যারা পরিমিত খায় না এবং মোটা, তাদেরকে।
টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিসকে যারা বংশগত মনে করে, তারা ভাবে না, একসময় সমাজে তেমন কেউ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতো না। পরে আরামপ্রিয় হয়ে যাবার পর থেকেই মানুষ রোগটিতে আক্রান্ত হতে শুরু করছে। এখন থেকে যদি বিশে^র সকল ডায়াবেটিসমুক্ত মানুষ শারীরিক পরিশ্রমে প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণ সময় ব্যয় করার মাধ্যমে একযোগে রোগটি প্রতিহত করা শুরু করে, এদের সন্তানরা বা সামনের প্রজন্মের কেউ আর টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিসেও আক্রান্ত হবে না। তাছাড়া পরিসংখ্যান মতে, টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা সমাজের মোট ডায়াবেটিস রোগীর দশ শতাংশ। এ অধ্যায়ের শুরুতেও প্রথম আলোয় প্রকাশিত "ডায়াবেটিস: প্রতিটি পরিবারের যুদ্ধ" শিরোনামের প্রতিবেদন থেকে উল্লেখ করা হয়েছে, বিশ্বের মোট ডায়াবেটিস রোগীর শতকরা ৯০ ভাগ টাইপ-২ জাতীয় ডায়াবেটিসে ভুগছে।
যদি শুধু এই দশ শতাংশ টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিস রোগীকে বংশগত ডায়াবেটিস রোগী ধরে নেয়া হয়, তবু বাকি নব্বই শতাংশ টাইপ টু ডায়াবেটিস রোগীর বিবেচনায় টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা একেবারে নগণ্য। তাই রোগটিকে জিনগত না বলাই ভালো।রোগটিকে বংশগতভাবেও হয়, এমন রোগের কাতারে ফেললে যাদের বাবা-মা কারো ডায়াবেটিস, তারা আতঙ্কে জীবন কাটাবে এবং যাদের বাবা-মা কারো ডায়াবেটিস হয়নি, তারা নিশ্চিন্তে জীবন কাটাবে। উভয় শ্রেণিই একসময় ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে পড়বে কোনো প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ না করার ফলে।
0 Comments: