দীর্ঘজীবন লাভের উপায় (পর্ব-১২) : দীর্ঘজীবি হবার কার্যকর উপায়
ডায়াবেটিস, হার্ট অ্যাটাক এবং উচ্চ রক্তচাপের প্রকৃত কারণ এবং প্রতিরোধের উপায় জানার মাধ্যমে
অধ্যায়-১২
ডায়াবেটিসের মূল কারণ মাত্র ১টি, মোট কারণ ৩টি
মহামারীর চেয়েও ভয়ঙ্কর এক রোগ ডায়াবেটিস
বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস উপলক্ষ্যে প্রথম আলোয় ১৪ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে ‘ডায়াবেটিস: প্রতিটি পরিবারের যুদ্ধ’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘প্রতিদিন সকালটা ফিলিস্তিনের শিশু আহমেদের শুরু হয় একটু পরই গুলির শব্দ হবে, এ শঙ্কা নিয়ে। আর অন্যদিকে ভারতের শিশু মালিনীর সকাল শুরু হয় অন্য রকম ভয় নিয়ে। তাকে ইনসুলিন নিতে হবে, চামড়া ভেদ করে রক্তাক্ত করে ইনসুলিন দেওয়া হবে; এ আতঙ্কে দিন কাটে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত এই শিশুর। যুদ্ধ, সহিংসতা আর হানাহানিতে মানুষের মৃত্যু যেমন দিন দিন পৃথিবীকে করে তুলছে ভয়ংকর; তেমনি পৃথিবীতে প্রতিবছর লাখ লাখ মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী ১০টি রোগ এ মুহূর্তে হয়ে উঠেছে আশঙ্কাজনক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, পৃথিবীতে সবচেয়ে উদ্বেগজনক ১০টি স্বাস্থ্য সমস্যার মধ্যে অন্যতম ডায়াবেটিস। পৃথিবীতে এ মুহূর্তে ৪৫ কোটির অধিক লোক ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। বাংলাদেশে প্রায় ৮০ লাখ লোক ডায়াবেটিসে আক্রান্ত।’
‘ডায়াবেটিসের ঝুঁকি সম্পর্কে যেসব জানা জরুরি’ শিরোনামে ১৩ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে বিবিসি বাংলায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে ১৯৮০ সালে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ছিল প্রায় ১১ কোটি। ২০১৪ সালে সেটা বেড়ে হয় ৪২ কোটিরও বেশি। ১৯৮০ সালে ১৮ বছরের বেশি বয়সী মানুষের ডায়াবেটিস হওয়ার হার ছিল ৫ শতাংশেরও কম কিন্তু ২০১৪ সালের তাদের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৫ শতাংশ।’
আরেকটা প্রতিবেদনের একটা অংশ উল্লেখ করা খুব সংগত মনে হচ্ছে। ‘ঘরে ঘরে ডায়াবেটিস’ শিরোনামে যা দৈনিক সমকালে ১৪ নভেম্বর ২০১৭ তারিখে প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘দেশে ডায়াবেটিস আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। শুধু বয়স্ক বা মধ্যবয়সী নয়, শিশুরাও এখন এই নীরব ঘাতকের শিকার হচ্ছে। শহর থেকে গ্রাম- সর্বত্র প্রায় সমান হারে ছড়িয়ে পড়ছে ডায়াবেটিস। ডায়াবেটিস এখন প্রায় প্রতিটি ঘরে ছড়িয়ে পড়েছে।’
সেখানে আরও বলা হয়, ‘দ্রুত নগরায়নের ফলে পরিবর্তিত জীবনযাপনের কারণে বিশ্বজুড়ে প্রতিবছর ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হারে বাড়ছে। আইডিএফের (ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিক ফেডারেশন) ২০১৫ সালের হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বে বর্তমানে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা প্রায় ৪৩ কোটি। ১৯৮৫ সালে এই সংখ্যা ছিল মাত্র তিন কোটি। গত আড়াই দশকে ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ১৩ গুণ বেড়েছে। সংস্থাটি দুই বছর পরপর আক্রান্ত মানুষের তথ্য প্রকাশ করে। তাদের ধারণা, এ ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা ৬৪ কোটিতে উন্নীত হবে।’ এ তথ্যগুলো আমাদেরকে ডায়াবেটিস সম্পর্কে সতর্ক হবার বার্তা দেয় নিঃসন্দেহে।
ডায়াবেটিসের কারণ সম্পর্কে বিভ্রান্তি
প্রথমে আমাদের জানা দরকার ডায়াবেটিস কেন হয়?
খুবই হতাশ হই, যখন দেখি ডায়াবেটিসের কারণ সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী মানুষকে সঠিক ধারণা দেয়ার পরিবর্তে ভুল ধারণা দেয়া হয় খুব বেশি। ডায়াবেটিস নিয়ে বিশ্বের নামকরা সব প্রতিষ্ঠান এ পর্যন্ত যত গবেষণা করেছে, কোনো গবেষণা ডায়াবেটিসের নির্ভেজাল কারণ খুঁজে বের করতে পারেনি। দু’একটা উদাহরণ দেখা যাক:
১৭ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখের প্রথম আলোয় ‘গ্রামে ডায়াবেটিস সচেতনতা কম’ শিরোনামে গবেষণা-তথ্যভিত্তিক (গবেষণা তথ্যটি যুক্তরাজ্যভিত্তিক স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাবিষয়ক সাময়িকী ল্যানসেট-এর) একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়, ‘গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর প্রায় তিনজনের একজন ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত অথবা রোগের ঝুঁকিতে আছেন। ধূমপান, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, অপ্রতুল কায়িক পরিশ্রম ডায়াবেটিস হওয়ার মূল কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম।’
এই অধ্যায়ের শুরুতে প্রথম আলোয় প্রকাশিত ‘ডায়াবেটিস: প্রতিটি পরিবারের যুদ্ধ’ শিরোনামের যে প্রতিবেদনের কথা বলা হয়েছে, সেখানে আরও বলা হয়, ‘ডায়াবেটিস রোগের সবচেয়ে বড় কারণ হলো অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন। খাদ্যাভ্যাসে অসচেতনতা, কম শারীরিক কর্মকান্ড, পরিবেশগত বিভিন্ন উপাদান এবং বংশগত বা কিছু কিছু ক্ষেত্রে জিনগত অস্বাভাবিকতা। বিশ্বের মোট ডায়াবেটিসের শতকরা ৯০ ভাগ টাইপ-২ জাতীয় ডায়াবেটিসে এবং বিশ্বে বর্তমানে ৩০ কোটির অধিক লোক এই প্রকার ডায়াবেটিসে ভুগছে।... তাহলে প্রশ্ন হলো ডায়াবেটিসের কি কোনো সমাধান নেই? অবশ্যই আছে। সুস্থ জীবনযাপন। অতিরিক্ত চিনি কিংবা চর্বিজাতীয় খাবার পরিহার করা, হাঁটা কিংবা ব্যায়ামের মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সচল রাখা, অতিরিক্ত ওজন কমানোর চেষ্টা, ফাস্ট ফুড বা জাঙ্কফুড ও অতিরিক্ত মদপান পরিহার করা।’
বিবিসি বাংলায় প্রকাশিত যে প্রতিবেদনের কথা এ অধ্যায়ের প্রথম পরিচ্ছেদে উল্লেখ করা হয়েছে, সেখানে আরও বলা হয়, ‘ডায়াবেটিস যদিও জেনেটিক এবং আপনার জীবন যাপনের স্টাইলের ওপর নির্ভরশীল তারপরেও আপনি চেষ্টা করলে রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে পারেন।
সেজন্যে আপনাকে খাবার গ্রহণের বিষয়ে বিশেষভাবে সচেতন থাকতে হবে এবং আপনাকে হতে হবে অত্যন্ত সক্রিয় একজন মানুষ।
খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
প্রক্রিয়াজাত খাবার ও পানীয় এড়িয়ে চলতে হবে। মসৃণ শাদা আটার রুটির পরিবর্তে খেতে হবে ভুষিওয়ালা আটার রুটি। এটাই প্রথম ধাপ।
এড়িয়ে চলতে হবে হোয়াইট পাস্তা, প্যাস্ট্রি, ফিজি ড্রিংকস, চিনি জাতীয় পানীয়, মিষ্টি ইত্যাদি।
আর স্বাস্থ্যকর খাবারের মধ্যে রয়েছে শাক সব্জি, ফল, বিন্স এবং মোটা দানার খাদ্য শস্য।
স্বাস্থ্যকর তেল, বাদাম খাওয়াও ভালো। ওমেগা থ্রি তেল আছে যেসব মাছে সেগুলো বেশি খেতে হবে। যেমন সারডিন, স্যামন এবং ম্যাকেরেল।
এক বেলা পেট ভরে না খেয়ে পরিমানে অল্প অল্প করে বিরতি দিয়ে খাওয়া দরকার।
শরীর চর্চ্চা বা ব্যায়াম করার মাধ্যমে রক্তে চিনির মাত্রা কমিয়ে রাখা সম্ভব।
চিকিৎসকরা বলছেন, প্রতি সপ্তাহে আড়াই ঘণ্টার মতো ব্যায়াম করা দরকার। তার মধ্যে দ্রুত হাঁটা এবং সিড়ি বেয়ে ওপরে ওঠাও রয়েছে।
শারীরিকভাবে থাকতে হবে সক্রিয়। ওজন কম রাখলেও চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। যদি ওজন কমাতে হয় তাহলে সেটা ধীরে ধীরে করতে হবে। সপ্তাহে আধা কেজি থেকে এক কেজি পর্যন্ত।
ধূমপান পরিহার করাও জরুরী। নজর রাখতে হবে কোলস্টেরলের মাত্রার ওপর। এর মাত্রা বেশি হলে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।’ [https://www.bbc.com/bengali/news-46194839]
ডায়াবেটিসের কারণ এবং প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে আমি আরও অনেকগুলো প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিতে পারি, যেগুলোতে ডায়াবেটিসের আরও ভিন্ন ভিন্ন কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু অতিরিক্ত হয়ে যাবে বলে উল্লেখ করতে চাই না। শুধু এ তিনটি প্রতিবেদনেই ডায়াবেটিসের অনেকগুলো কারণ বলা হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, যদি এতোগুলো কারণেই ডায়াবেটিস হয় এবং মানুষকে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করার জন্য এতোগুলো উপায় অবলম্বন করতে হয়, তাহলে কয়জনের ধৈর্যে কুলাবে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করার? শুধু এ কারণেই, আমার খুব শক্তভাবে মনে হয়, বিশ্বে ডায়াবেটিস রোগের প্রকোপ কমছে না, বরং হু হু করে বাড়ছেই। মহামারীর চেয়েও ভয়াবহ মাত্রায় ডায়াবেটিস সমাজে ছড়িয়ে পড়ছে। আমি এখানে ডায়াবেটিসের কারণ সম্পর্কে শুধু একটি ধারণা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করবো এবং ডায়াবেটিসের মূল কারণগুলো নিয়ে আলোচনা করবো। ডায়াবেটিসের কারণ বলে প্রচারিত সব কারণগুলোর স্বরূপ উন্মোচনের জন্য এই লেখার বিভিন্ন জায়গায় আরো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে।
এখানে প্রথম আলোয় প্রকাশিত "গ্রামে ডায়াবেটিস সচেতনতা কম" শিরোনামের প্রতিবেদনে ডায়াবেটিসের তিনটি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে, যার প্রথমটি হচ্ছে ধূমপান। বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, "ধূমপান পরিহার করাও জরুরী।" আমি ডায়াবেটিস সম্পর্কে পত্রপত্রিকায় আরো অনেক লেখায় পড়েছি, বলা হচ্ছে, ধূমপানও নাকি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হবার একটি অন্যতম কারণ।
আমার বড় দুভাই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত বেশ কয়েক বছর ধরে। আমার মেঝো ভাইয়ের স্ত্রীও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। আমাদের বিদ্যালয়ের ঝুনু রানী পাল নামক একজন মহিলা শিক্ষক অনেক বছর ধরে ডায়াবেটিসের সাথে যুদ্ধ করছেন। আমার শাশুড়িরও আছে ডায়াবেটিস। মাদ্রাসা শিক্ষিত ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত আমার পরিচিত অনেক লোক আছেন, যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। আমার মেঝো ভাবীর বাবা-মাও অনেক বছর ধরে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এভাবে আমার প্রতিবেশী এবং আত্মীয়সহ কাছের এবং দূরের পরিচিত অনেক লোক ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, যাদের সাথে ধূমপানের কোনো সম্পর্কই নেই। ধূমপান করা ছাড়াই তাদের তাহলে ডায়াবেটিস হলো কী করে?! বলতে পারেন, যাদের কথা এখানে বলা হয়েছে, তারা প্রত্যক্ষ ধূমপানের সাথে জড়িত না হলেও পরোক্ষ ধূমপানের শিকার। কিন্তু না, এদের কেউ পরোক্ষ ধূমপানের শিকারও নন। বরং একটা তথ্য জেনে সবাই অবাক হতে পারেন, আমার যে সহকর্মীর ডায়াবেটিস, তাঁর স্বামী নিয়মিত ধূমপান করেন, কিন্তু এখনো ডায়াবেটিস থেকে মুক্ত। যিনি ধূমপান করেন, তিনি যদি ডায়াবেটিস থেকে মুক্ত থাকেন, তাহলে তাঁর ধূমপানের পরোক্ষ শিকার কেউ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হবেন কিভাবে?!
"বাংলাদেশে নারীদের মধ্যে ডায়াবেটিস কেন বাড়ছে?" শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় বিবিসি বাংলায় ১৪ নভেম্বর ২০১৭ তারিখে। সেখানে বলা হয়, "বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি বলছে, বর্তমানে ৩৫ লাখের বেশি নারী ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। সংস্থাটি বলছে, এ সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। এর মধ্যে একটি বড় অংশের নারীরাই সন্তান জন্মদানের জন্য সক্ষম অবস্থায় (অর্থাৎ কম বয়সে) এ রোগে আক্রান্ত হন।" প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, "বারডেম হাসপাতালের চিকিৎসক মোঃ দেলোয়ার হোসেন বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তারা দেখেছেন প্রতি দশ জন নারীর মধ্যে একজনের ডায়াবেটিস আছে। আর এজন্য এখনকার জীবনযাত্রাকেই সবচেয়ে বড় কারণ বলে তিনি মনে করেন।
"মূল কারণ আমাদের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন। কায়িক পরিশ্রম নাই, বসে থাকা হয় বেশি। আর নারীদের আক্রান্ত বেশি হবার কারণ, তারা সংসারের অনেক কাজ করেন, সংসার সামলানো, সন্তান প্রতিপালনসহ সব করার পরে নিজের দিকে নজর দেন না তারা। ডায়াবেটিস হলেও সেটার চিকিৎসায় নজর দেন না অনেকেই।"
এখানে বলা হয়েছে, বর্তমানে ৩৫ লাখের বেশি নারী ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। বাংলাদেশে যারা বসবাস করেন এবং বাংলাদেশ সম্পর্কে যারা একটু ভালোভাবে জানেন, তারা জানেন, বাংলাদেশের নারীদের মধ্যে ধূমপানের প্রবণতা নেই বললেই চলে। উপজাতীয়দের মধ্যে কোনো কোনো মহিলা ধূমপান করেন। সাম্প্রতিক সময়ে ভার্সিটি পড়–য়া কিছু কিছু তরুণীর মধ্যে ধূমপানের প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়। কিন্তু এখানে যে ৩৫ লাখ নারীর ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হবার কথা বলা হয়েছে, আমার মনে হয়, এদের মধ্যে ধূমপায়ীর সংখ্যা খুঁজতে গেলে সর্বোচ্চ এক হাজার জনও পাওয়া যাবে না। তাহলে এই লক্ষ লক্ষ নারী ধূমপান ছাড়া ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলেন কী করে?! নাকি সবার স্বামীই ধূমপায়ী বলেই ধূমপানের পরোক্ষ শিকার হয়ে এরা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়েছেন? এটাও সম্ভব নয়। কারণ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত অনেক মহিলার স্বামীও ধূমপান করেন না। বাংলাদেশে যারা ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশুনা করেছেন বলে ধর্মীয় চেতনা ধারণ করেন, তাঁরা ধূমপানকে রীতিমতো ঘৃণাই করেন, ধূমপান দূরের কথা। এ ধরনের ধর্মীয় ভাবধারার অসংখ্য মানুষও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। তাহলে ধূমপানের সাথে সম্পর্ক না থাকার পরও এরা কেন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছেন?
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হবার সাথে ধূমপানের সম্পর্কের বিষয়টা নিয়ে যে কেউ একটু নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করলেই দেখবেন, এর কোনো ভিত্তি নেই। ধূমপানের সাথে সত্যিই যদি ডায়াবেটিসের সম্পর্ক থাকতো, তাহলে বিশ্বব্যাপী শুধু ধূমপায়ীরাই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতেন, অধূমপায়ী কেউ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত না হতেন। এখন তো দেখা যায় অনেক ১০-১৫ বছর বয়সী শিশু, যাদের সাথে এখনো ধূমপানের কোনো সম্পর্কই নেই, তারাও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। বিশ্বের যে কোনো দেশে নতুন করে বিষয়টা পর্যবেক্ষণ করলে এটাই শতভাগ সত্য প্রমাণিত হবে, ডায়াবেটিসের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ধূমপানের কোনো সম্পর্ক নেই। বিষয়টা শতভাগ অবাস্তব।
0 Comments: