Headlines
Loading...
দীর্ঘজীবন লাভের উপায় (পর্ব-৬) : টেনশনের সাথে কি ডায়াবেটিসের কোনো সম্পর্ক আছে?

দীর্ঘজীবন লাভের উপায় (পর্ব-৬) : টেনশনের সাথে কি ডায়াবেটিসের কোনো সম্পর্ক আছে?

ডায়াবেটিস, হার্ট অ্যাটাক এবং উচ্চ রক্তচাপের প্রকৃত কারণ এবং প্রতিরোধের উপায় জানার মাধ্যমে
দীর্ঘজীবন লাভের উপায়




টেনশনের সাথে ডায়াবেটিসের সম্পর্ক


ডায়াবেটিসের কারণ সম্পর্কে আমরা এতটাই অসচেতন যে, অনেক ডায়াবেটিস রোগী যখন দেখেন অন্য সবাই ডায়াবেটিসকে বংশগত রোগ মনে করছেন, তখন তিনি নিজের বাবা-মা বা বংশের কারো মধ্যে এ রোগের অস্তিত্ব খুঁজে না পেয়ে ধরে নেন, না, এ রোগ বংশগত নয়; বরং আমি যে বিভিন্ন সময় টেনশন করে থাকি, সেই টেনশন থেকেই হয়তো রোগটির জন্ম। নিজের জীবনযাত্রা, খাদ্যাভ্যাস বা শারীরিক অবস্থা কোনোটার দিকেই লক্ষ্য না করে টেনশনকে এ রোগের জন্য দায়ী করে বসেন। অথচ টেনশনও কখনো ডায়াবেটিসের জন্য দায়ী নয়। দায়ী হচ্ছে বেশি খাওয়া, কায়িক শ্রম কম করা বা না করা, শরীরে কোলেস্টেরল কিংবা চর্বি বেড়ে যাওয়া।
কিন্তু আমরা ডায়াবেটিসের প্রকৃত কারণ না জেনে অবাস্তব সব কারণকে ডায়াবেটিসের জন্য দায়ী মনে করার ফলে ডায়াবেটিস থেকে মুক্ত থাকা যেমন আমাদের পক্ষে সম্ভব হয় না, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলেও আমরা অনেকে তা নিয়ন্ত্রণের সঠিক পন্থা সম্পর্কে থাকি বিভ্রান্তিতে।

পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়া প্রায় সব মানুষের মধ্যে বেশি খাওয়ার প্রবণতা, শারীরিক স্থুলতা, আরামপ্রিয়তা বা পরিশ্রমহীনতা এসব সাধারণ বৈশিষ্ট্য দেখা যাবার পরও দু’একজন ডায়াবেটিস রোগীকে যখন দেখি, তার জীবনে টেনশন বেশি, তখন হুট করে মন্তব্য করে বসি, টেনশন থেকেই ডায়াবেটিস হয়। জ্ঞানের এমন সংকীর্ণতা আমাদের খুব বেশি ক্ষতি করছে।

ডায়াবেটিসের কারণ নিয়ে একটি গবেষণা প্রসঙ্গে

২৮ আগস্ট ২০১৮ সংখ্যা প্রথম আলোয় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় “জন্ম-ওজন কম হলে পরিণত বয়সে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি” শিরোনামে। প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয় কম জন্ম-ওজন ও তার সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী অসংক্রামক রোগের সম্পর্ক নিয়ে চীনের করা এক গবেষণার তথ্য অনুসারে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণাপ্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীরা এই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাঁদের গবেষণা নিবন্ধটি ২২ আগস্ট ২০১৮ অস্ট্রেলিয়ার জার্নাল অব ডায়াবেটিস-এ ছাপা হয়েছে।
চীনের সাংহাইয়ের ১১ হাজার ৫১৫ জন পুরুষ ও ১৩ হাজার ৫৬৯ জন নারীর ওপর এই গবেষণা করা হয়। গবেষণার ফল হিসেবে গবেষকরা বলেন, ‘কম ওজন নিয়ে জন্ম নেওয়া শিশুরা পরিণত বয়সে স্থূল হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ে। আর বয়স্ক হলে এদের মধ্যে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের প্রবণতাও বেশি দেখা যায়।’

গবেষণায় অংশ নেওয়া নারীদের বয়স ছিল ৪০ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে। পুরুষদের বয়স ছিল ৪০ থেকে ৭৪ বছর। এসব নারী-পুরুষের একটি বড় অংশ ১৯৫৯ থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত স্থায়ী চীনা দুর্ভিক্ষের সময় বা তার পরপর জন্মগ্রহণ করেন। এসব নারী-পুরুষের কাছ থেকে তাঁদের জন্ম-ওজন, শিশু বয়সে বুকের দুধ খাওয়ার অভ্যাস, জীবনচর্চার ধরন, খাদ্যাভ্যাস, কায়িক শ্রমের অভ্যাস, পেশাগত ইতিহাস ও দীর্ঘস্থায়ী রোগের তথ্য সংগ্রহ করেন গবেষকেরা।
গবেষকরা দেখেছেন, ‘কম ওজন নিয়ে যেসব নারী-পুরুষ জন্মেছিলেন, প্রাপ্ত বয়সে তাঁদের মধ্যে স্থূলতা, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের প্রকোপ সঠিক ওজন নিয়ে জন্মানো নারী-পুরুষের চেয়ে বেশি।’

তবে গবেষণাটির ফলাফলে গবেষকরা আরও একটি কথা স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘জীবনের শুরুর দিকের পুষ্টি-পরিস্থিতি পরবর্তী জীবনে প্রভাব ফেলে। জন্মের সময় ওজন কম হলে পরবর্তী জীবনে শারীরিক গঠন কী হবে, তার কোনো সরল উত্তর নেই।’

গবেষকদের এ সরল স্বীকারোক্তিই গবেষণার ফলাফলকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। এই উক্তিটি গবেষণার ফলাফলের সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক। জীবনের শুরুর দিকের পুষ্টি-পরিস্থিতি সব সময় না হলেও অনেক সময় পরবর্তী জীবনে প্রভাব ফেলে। অনেক মানুষ আছে, শৈশবেও হালকা-পাতলা, পরিণত বয়সেও হালকা-পাতলাই থাকে। অনেককে দেখা যায়, শৈশবে যেমন মোটা, পরিণত বয়সেও মোটাই থাকে। এই হিসেবে এবং গবেষণার ‘জন্মের সময় ওজন কম হলে পরবর্তী জীবনে শারীরিক গঠন কী হবে, তার কোনো সরল উত্তর নেই’ এই অনুসিদ্ধান্তমতে, শৈশবে যারা অপুষ্টিতে ভুগেছে তথা হালকা-পাতলা ছিল, তারা পরিণত বয়সে হালকা-পাতলা তথা স্থূল না হবার সম্ভাবনাই বেশি। কিন্তু গবেষণাটি এক্ষেত্রে বলছে, শৈশবে যারা অপুষ্টিতে ভুগেছে, পরিণত বয়সে তারা স্থূল হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ে! যদি ‘জন্মের সময় ওজন কম হলে পরবর্তী জীবনে শারীরিক গঠন কী হবে, তার কোনো সরল উত্তর নেই’- এই কথাটি সত্য হয়, তাহলে ‘কম ওজন নিয়ে জন্ম নেওয়া শিশুরা পরিণত বয়সে স্থূল হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ে’- এই কথাটি সত্য হয় কী করে!

কম ওজন নিয়ে জন্ম নেয়া শিশুরা পরিণত বয়সে স্থূল না হবার সম্ভাবনাই বেশি। এটা অনেক সময় বংশগত কারণে হয়। বংশগত কারণে অনেকে চিকন, অনেকে মোটা হতে দেখা যায়। তবে ব্যতিক্রম ঘটনারও অভাব নেই। দেখা যায়, শৈশবে মোটা ছিল, কিন্তু পরবর্তীতে শারীরিক পরিশ্রমের কাজে বেশি বেশি লিপ্ত থাকতে হওয়ায় অনেকে চিকন হয়ে যায়। অনেকে আবার শৈশবে চিকন থাকে। কিন্তু পরবর্তীতে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন বা আরামদায়ক পেশায় যুক্ত থাকার কারণে মোটা হয়ে যায়। তাই ‘জন্মের সময় ওজন কম হলে পরবর্তী জীবনে শারীরিক গঠন কী হবে, তার কোনো সরল উত্তর নেই’- কথাটিই সঠিক বলে প্রতীয়মান হয় এবং ‘কম ওজন নিয়ে জন্ম নেওয়া শিশুরা পরিণত বয়সে স্থূল হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ে’- কথাটি বাস্তবতার সাথে সাংঘর্ষিক হয়ে পড়ে।
খুব কাছের একটার উদাহরণ না দিয়ে পারছি না। আমি এবং আমার মেঝো ভাই উভয়ে শৈশবে চিকন ছিলাম। কিন্তু পরবর্তীতে একসময় আমার মেঝো ভাই স্থূল হয়ে যান এবং আমি চিকনই থেকে যাই এখনো। আমার মেঝো ভাই এখন ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত অথচ রোগগুলো এখনো আমাকে আক্রমণ করেনি। আমার মেঝো ভাই স্থূল হয়ে যাবার কারণ প্রথম অধ্যায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে এখনো সেরকম কোনো কারণ ঘটেনি বলে আমি স্থূল হবার সুযোগ পাইনি। আর স্থূল হবার সুযোগ পাইনি বলেই এবং আরামপ্রিয় জীবন বেছে নিইনি বলেই হয়তো রোগগুলো আমাকে এখনো স্পর্শ করার সুযোগ পায়নি। আমাদের দু’জনকে রোগগুলো আক্রমণ করা-না করার সাথে জন্মের সময় আমাদের ওজন কম-বেশ থাকার কি কোনো সম্পর্ক আছে?
আমার বিশ্বাস, এরকম আরো অসংখ্য উদাহরণ খুঁজে পাওয়া যাবে হাত বাড়ালেই, যেগুলো প্রমাণ করবে, পরিণত বয়সে ডায়াবেটিস, স্থূলতা বা উচ্চ রক্তচাপের সাথে জন্মগত ওজনের কোনো সম্পর্ক নেই।
জন্মগতভাবে কেউ স্থূল না হলেও পরিণত বয়সে যদি সে শারীরিক পরিশ্রম থেকে দূরে থাকে, ভোজনরসিক হয়, তাহলে তার স্থূলতা, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি খুবই বেশি। পক্ষান্তরে জন্মগতভাবে কেউ স্থূল হলেও পরিণত বয়সে সে যদি বেশি বেশি শারীরিক পরিশ্রমের সাথে জড়িত থাকে, পরিমিত খায়, তার স্থূলতা, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি একেবারে কম। আমার ভিন্নমতটা নিয়ে নতুন করে সঠিক পন্থায় গবেষণা করলে আমার বিশ্বাস, গবেষণাটি সম্পর্কে আমার ভিন্নমতটাই শতভাগ সঠিক বলে প্রমাণিত হবে।

ডায়াবেটিসের কারণ সম্পর্কে প্রচলিত আরো কিছু কারণ প্রসঙ্গে

চিনি বা মিষ্টান্ন বেশি খেলে ডায়াবেটিস হয়, এমন একটা কথা বিশ্বব্যাপী ব্যাপকভাবে প্রচলিত, মানুষের  বিশ্বাসে ভালোভাবে ঢুকে গেছে। এ সম্পর্কে আলাদা অধ্যায়ে পরে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
ধূমপানের কারণেও ডায়াবেটিস হয় বলে অনেক ডাক্তার বলে থাকেন। এ সম্পর্কে পরে ভিন্ন অধ্যায়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

অধ্যায়-৭
কিছু ব্যতিক্রম

হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস এসব রোগ যে বংশগত কারণে, টেনশনে বা অজ্ঞাত কোনো কারণে হয় না; বরং বেশি বেশি খাওয়া, মুটিয়ে যাওয়া, শুয়ে-বসে বা আরামে আরামে থাকা, নিয়মিত শারীরিক শ্রমের কাজ বা ব্যায়াম না করা, সর্বোপরি শরীরে চর্বি-কোলেস্টেরল বেড়ে যাবার কারণেই হয়, তা শতভাগ প্রমাণ করা আসলেই কঠিন। কারণ কিছু উদাহরণ আমাদের এ বিশ্বাসকে দুর্বল করে দেয়। কিছু লোক দেখা যায়, তেমন মোটা নন, তবু এসব কোনো রোগে আক্রান্ত। অনেকে টেনশন বেশি করেন বলে মনে করেন তার ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা হার্ট অ্যাটাক টেনশনের কারণে হয়েছে। অনেককে আবার শারীরিক পরিশ্রমের কাজের সাথে জড়িত থাকার পরও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে দেখা যায়।

উদাহরণগুলো অবশ্যই আমাদেরকে বিভ্রান্ত করার মতো। তবে এসব লোককে নিয়ে স্টাডি করার প্রয়োজন আমরা মনে করি না বা স্টাডি করার সুযোগ পাই না, শুধু দূর থেকে দেখে এদেরকে উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করে একটা মন্তব্য করে বসি। কিন্তু যদি আমরা এসব লোকের জীবনযাত্রা বা চালচলনের গভীরে যাই, দেখা যাবে, টেনশনের কারণে যারা বলছেন তাদের এসব কোনো রোগ হয়েছে, পরিশ্রমের কোনো কাজের সাথে তাদের সম্পর্ক তো নেই-ই, খাওয়া-দাওয়ায়ও কোনো সংযম নেই। বেশি বেশি খেয়ে আর আরামে আরামে থেকে শরীরে মেদ-চর্বি বাড়তে দেয়ার পর রোগ যখন আক্রমণ করে বসেছে, তখন কোনো চিন্তাভাবনা ছাড়াই এরা দোষটা চাপিয়ে দিচ্ছে টেনশনের ঘাড়ে। এরা মোটেও লক্ষ্য করে না, অসংখ্য মানুষ রয়েছে, যারা ব্যক্তিগত জীবনে সুখী, তবু এসব রোগে আক্রান্তÍ। বরং যে কেউ একটু চোখ বুলিয়ে দেখলেই বুঝতে পারবে, হার্ট অ্যাটাক, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের মতো রোগগুলো সমাজের উচ্চবিত্ত ও সুখী মানুষদেরই বেশি হয়। কারণ এদের জীবনে আরাম বেশি, টেনশন কম, ভোজনবিলাসিতা বেশি এবং কায়িক শ্রম কম। সুতরাং টেনশনকে দোষারোপ না করে নিজের শারীরিক পরিশ্রম থেকে দূরে থাকার মানসিকতাকেই দোষারোপ করা উচিত।

তেমন মোটা নন, তবু ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত লোকের কথাও জানা যায় মাঝে মাঝে। প্রধান কারণ হচ্ছে, এরা কায়িক শ্রমের সাথে সম্পর্ক রাখে না অথবা রাখলেও তা পরিমাণে খুব কম। কিছু লোক আবার এমন আছে, যারা ইতিপূর্বে মোটা ছিল। মোটা থাকা অবস্থায় এসব কোনো রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসকের কথামতো ডায়েট কন্ট্রোল করার ফলে চিকন হয়ে গেছে। এখন বলছে, আমি তো চিকন, কম কম খাই, তারপরও আমার রোগটি হলো কেন! আরেকটা কথা, মানুষ বেশ মোটা না হলেও এসব রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, যদি দীর্ঘদিন কোনো প্রকার শারীরিক পরিশ্রমের সাথে সম্পর্ক না থাকে বা পেশাগতভাবে বসে বসে কাজ করতে হয় বছরের পর বছর।

কিছু লোক আছে মোটা, কিন্তু এসব কোনো রোগ নেই। মোটা মানুষরা যদি এসব রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তাহলে এরা এসব রোগে আক্রান্ত নয় কেন? প্রশ্নটি যৌক্তিক। এসব লোকের ক্ষেত্রে খোঁজ নিলে দেখবেন, এরা শারীরিক পরিশমের কোনো না কোনো কাজের সাথে জড়িত। তাই এদের শরীরে কোলেস্টেরল বাড়তে পারে না বলেই এরা ডায়াবেটিসসহ কোলেস্টেরল বৃদ্ধিজনিত রোগগুলোতে আক্রান্ত হয় না।

কিছু মানুষ আছে আবার মোটা শরীরের, পরিশ্রমের কাজও করেন, তবু ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা হৃদরোগে আক্রান্ত। এখন বলছেন, পরিশ্রম করি, তবু এসব রোগ কেন? যৌক্তিক প্রশ্ন। এরা পরিশ্রমের কাজে জড়িত। কিন্তু শরীরে যে পরিমাণ মেদ-চর্বি, সে অনুপাতে পরিশ্রম না করলে রোগ তো অবশ্যই আক্রমণ করবে। পরিশ্রম পর্যাপ্ত হলে অবশ্যই শরীরে কোলেস্টেল নিয়ন্ত্রণে থাকতো এবং রোগগুলোও আক্রমণের সুযোগ পেতো না।
আরেকটি ব্যতিক্রম উদাহরণ হলো- কিছু লোক মোটা, পরিশ্রমের কাজের সাথেও সম্পর্ক কম, তবু শরীরে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস বা হৃদরোগ নেই! মোটা হওয়া এবং পরিশ্রম না করা সত্ত্বেও এরা এসব রোগ থেকে কিভাবে নিরাপদ? তাহলে কি পরিশ্রম না করা এবং মোটা হওয়া এসব রোগে আক্রান্ত হওয়ার কোনো কারণ নয়?! বিভ্রান্তিকর এক প্রশ্ন।

এরকম পরিচিত কিছু লোক সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, এরা দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস্ট্রিক এবং আলসারজনিত সমস্যায় ভুগছেন। তৈলাক্ত এবং চর্বিযুক্ত খাবার সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে চলছেন চিকিৎসকের পরামর্শে। শুধু তা-ই নয়, খুব বেছে বেছে খাবার খেতে হচ্ছে, ঝাল তো খেতেই পারছেন না। তাদের জন্য ঝালবিহীন ভিন্ন খাবার রান্না করতে হচ্ছে। অনেকটা নিরামিষ খাবার খুব বেছে বেছে অল্প পরিমাণে খাওয়ার কারণে এদের শরীরে অতিরিক্ত চর্বি হচ্ছে না, বরং আগে যা ছিলো তা-ও কমে যাচ্ছে। আর চর্বি অতিরিক্ত হলেই সাধারণত এসব রোগ হানা দেয়। তাই কম কম এবং বেছে বেছে খাওয়ার কারণেই এরা ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ইত্যাদি থেকে মুক্ত থাকে।

আর মোটা হলেই সাথে সাথে এসব রোগ হানা দেবে, এমনও নয়। কারো কারো ক্ষেত্রে বিভিন্ন কারণে রোগগুলো একটু দেরিতে হানা দেয়। আবার কেউ নিজের অজান্তেই অনেক পরিশ্রমের কাজের সাথে সম্পর্কিত থাকেন। কাজটা যে পরিশ্রমের, কাজটি করার কারণে যে তার শারীরিক উপকারও হচ্ছে, বিষয়টা অনেকে টের পান না। সর্বোপরি কথা হচ্ছে, দীর্ঘদিন ধরে মোটা থাকার পাশাপাশি পর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রমের সাথে জড়িত না থাকলে তাকে এসব রোগ আক্রমণ করেই। অনেক সময় শুধু শারীরিক পরিশ্রম থেকে দীর্ঘ সময় ধরে দূরে থাকলেই আক্রমণ করে, মোটা না হলেও। সুতরাং ব্যতিক্রম দু’একটা উদারণ দেখে ভালোভাবে না ভেবে কোনো মন্তব্য করা ঠিক নয়।

সবশেষে এটাই সত্য, শারীরিক পরিশ্রম যাদের পর্যাপ্ত হয় না বা যারা পর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রম করে না, পাশাপাশি মনের চাহিদামতো খায়, অনেক সময় বেশি মোটা না হলেও তারা দু’দিন আগে বা পরে, এসব কোনো রোগে আক্রান্ত হয়ই। এই সত্যের কোনো ব্যতিক্রম খুঁজে পেতে কষ্ট হবে। আর এই সত্যটি আরো পরিষ্কারভাবে বুঝতে এই লেখা শেষ পর্যন্ত পড়তে হবে।


সপ্তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

Occupation: Teaching, Hobbies: Writing

0 Comments: