Headlines
Loading...
দীর্ঘজীবন লাভের উপায় (পর্ব-৭) : মানুষের গড় আয়ু আরো বৃদ্ধি পাবে, যদি

দীর্ঘজীবন লাভের উপায় (পর্ব-৭) : মানুষের গড় আয়ু আরো বৃদ্ধি পাবে, যদি

ডায়াবেটিস, হার্ট অ্যাটাক এবং উচ্চ রক্তচাপের প্রকৃত কারণ এবং প্রতিরোধের উপায় জানার মাধ্যমে
দীর্ঘজীবন লাভের উপায়


                                           

 অধ্যায়-৮

মানুষের গড় আয়ু আরো বৃদ্ধি পাবে, যদি...

তিন-চার দশক আগেও ডায়াবেটিস ছিল খুবই অপিরিচিত রোগ। উচ্চ রক্তচাপ এবং হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও ছিল কম। কিন্তু সভ্যতার অগ্রযাত্রার সাথে সাথে রোগগুলো শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, সভ্যতার অগ্রযাত্রার সাথে রোগগুলোর সম্পর্ক কী? উত্তর খুঁজতে গেলে দেখা যাবে, সভ্যতার যতো অগ্রযাত্রা হচ্ছে, মানুষের জীবনযাত্রায় কষ্ট ততো কমছে, আরাম বাড়ছে। একসময় মানুষ হাতপাখা দিয়ে গরম শরীরকে ঠান্ডা করতো। কালক্রমে এসেছে বৈদ্যুতিক পাখা। সর্বশেষ এয়ার কন্ডিশনার, এয়ারকূলার ইত্যাদি এসে বৈদ্যুতিক পাখাকেও তাড়িয়ে দিতে শুরু করেছে। গাছ থেকে কাঠ কেটে এনে আগুন দিয়ে রান্নাবান্নার যে কাজগুলো মানুষ অনেক কষ্টে করতো, সে কাজগুলো এখন হয়ে যাচ্ছে গ্যাস বা বৈদ্যুতিক চুলায়, কোনো ঘাম ঝরানো ছাড়াই। যে পথ মানুষ অতিক্রম করতো হেঁটে হেঁটে, তা এখন অতিক্রম করছে বসে বসেই, নানারকম বিলাসবহুল যানবাহনে। যেন নিজ ঘরে সোফায় বসে টিভি দেখতে দেখতে মানুষ স্বপ্নযোগে পৌঁছে যাচ্ছে কাক্সিক্ষত গন্তব্যে! যেসব কাজ মানুষ করতো কঠোর শারীরিক পরিশ্রমের বিনিময়ে, সেসব কাজ এখন মানুষকে করে দিচ্ছে মেশিন, মানুষ শুধু বসে বসে আদেশ করছে।

নগরায়নও সভ্যতার উৎকর্ষের অংশ। আগে বেশিরভাগ মানুষ থাকতো গ্রামে। জীবিকার তাগিদে নানারকম শারীরিক পরিশ্রমের কাজে ডুবে থাকতে হতো সকাল-সন্ধ্যা। এখন? এখন শহরের প্রতি মানুষের দুর্বলতা চরম আকার ধারণ করেছে। মানুষ গ্রামের সুবিধাগুলোকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে শহুরে সুবিধাগুলোকেই শান্তি ও সুখের প্রতীক ভাবতে শুরু করেছে। শহরে গিয়ে আরামের পেশা বেছে নিয়ে নগদ টাকা উপার্জন করছে আর বসে বসে খাচ্ছে। ঘামঝরানো শারীরিক পরিশ্রমের কাজ থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে আরামে আরামে জীবন কাটানোর চেষ্টা করছে।

এসব করে করে মানুষ ব্যাপকহারে মুটিয়ে যাচ্ছে; শরীরে বাড়ছে মেদ-চর্বি। আশঙ্কাজনকহারে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগের মতো জীবন ধ্বংসকারী রোগে। অনেক ডাক্তারকে বলতে শোনা যায়, যার ডায়াবেটিস নেই তার আসলে কোনো রোগই নেই। কোনো কোনো ডাক্তার আবার বলেন, যার উচ্চ রক্তচাপ নেই, তার কোনো রোগই নেই। আর হার্ট অ্যাটাক তো অনেক মানুষকে চোখের পলকেই মেরে ফেলে। এসব রোগে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বব্যাপী মানুষ যে হারে মারা যাচ্ছে, তা মানবজাতির জন্য অবশ্যই আতঙ্কের বিষয়। একটি পরিসংখ্যান দেখলে এসব রোগের ভয়াবহতা সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পাওয়া যাবে-

ওয়ার্ল্ড হার্ট ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে, পৃথিবীর মোট মৃত্যুর ৩১ ভাগের জন্য দায়ী হৃদরোগ। বছরে ১ কোটি ৭৫ লাখ মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। ৩০ থেকে ৭০ বছর বয়সী মৃত ব্যক্তিদের প্রতি ১০ জনে একজনের মৃত্যু ঘটে হৃদরোগে। [দৈনিক যুগান্তর, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭]

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে দেড়শত কোটি মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। এ রোগে প্রতি বছর প্রায় ৭০ লাখ মানুষ মারা যান। [দৈনিক ইত্তেফাক, ১৭ মে ২০১৭]

ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিক ফেডারেশনের (আইডিএফ) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বে প্রতি ৭ সেকেন্ডে একজন মানুষ ডায়াবেটিসের কারণে মৃত্যুবরণ করছে এবং প্রতি ১২ জনে একজন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। [দৈনিক যুগান্তর, ১৪ নভেম্বর ২০১৬]

‘কত মানুষ কীভাবে মরছে’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় ৭ মার্চ ২০১৯ তারিখের প্রথম আলোয় বিবিসি সূত্রে। সেখানে বলা হয়, ‘মৃত্যু অবধারিত। প্রতিনিয়ত মানুষ মরছে রোগশোক বা দুর্ঘটনায়। মৃত্যু হচ্ছে রাস্তাঘাটে, হাসপাতালে কিংবা বাড়িতে বা যুদ্ধের ময়দানে। কিন্তু ঠিক কোন কোন কারণে কত মানুষ মারা যাচ্ছে, বিভিন্ন গবেষণার তথ্য বিশ্লেষণ করে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
মনে হতে পারে সন্ত্রাস, যুদ্ধ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মানুষের মৃত্যুর সবচেয়ে বড় কারণ। কিন্তু গবেষণা থেকে জানা যাচ্ছে, বিশ্বে মোট মৃত্যুর মাত্র দশমিক ৫ শতাংশের পেছনে দায়ী এগুলো। মানুষ মরছে এমন সব কারণে, যা একটু সচেতন হলেই প্রতিরোধ করা যায়। সরকারি পদক্ষেপও কমিয়ে আনতে পারে অনেক মৃত্যু।
গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যুর পেছনে যে কারণটি এককভাবে সবচেয়ে বেশি দায়ী, সেটি হলো হৃদ্রোগ। প্রতিবছর যত মানুষের মৃত্যু হচ্ছে, তার প্রতি তিনজনে একজন মরছে হৃদ্রোগে। ক্যানসারে মৃত্যুর চেয়ে যা দ্বিগুণ। ক্যানসার বিশ্বে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যুর কারণ। প্রতি ছয়টি মৃত্যুর একটির কারণ ক্যানসার। অন্য অসংক্রামক রোগ যেমন ডায়াবেটিস, শ্বাসকষ্টজনিত রোগ ও স্মৃতিভ্রংশতা মানুষের মৃত্যুর কারণের তালিকায় ওপরের দিকে রয়েছে।’ [https://www.prothomalo.com/technology/article/1582295]

এ প্রতিবেদনে অবশ্য স্ট্রোকে মৃত্যুর কথা বলা হয়নি। জানি না, কেন?

বর্তমান বিশ্বে মানবমৃত্যুর জন্য দায়ী রোগগুলোর অন্যতম হচ্ছে হৃদরোগ, ক্যান্সার, স্ট্রোক (মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণ), কিডনী রোগ, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপজনিত জটিলতা, শ্বাসকষ্টজনিত রোগ ও স্মৃতিভ্রংশতা ইত্যাদি। রোগগুলোকে দু’টি ভাগে ভাগ করলে একটা বিষয় স্পষ্ট করা সহজ হবে। দেখা যায়, ক্যান্সার, স্ট্রোক, কিডনী রোগ এইসব গুরুতর রোগে প্রতিদিন বিশ্বব্যাপী যে পরিমাণ মানুষ মারা যায়, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগে তার চেয়ে অনেক অনেকগুণ বেশি মানুষ মারা যায়। বাস্তবতা পর্যবেক্ষণ করলেও আমরা দেখতে পাবো-- ১. আমাদের আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশি, বন্ধু-বান্ধব এবং পরিচিতজনদের মধ্যে যতজন লোক উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগ- এ তিনটি রোগে আক্রান্ত, ক্যান্সার, স্ট্রোক এবং কিডনী রোগ- এ তিনটি রোগে আক্রান্ত লোকের সংখ্যা তার চেয়ে অনেক অনেক কম; ২. আমাদের পরিজন, বন্ধু, প্রতিবেশী, আত্মীয় ও পরিচিত মানুষদের মধ্যে সর্বশেষ দশ বছরে যতজন লোক হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসজনিত জটিলতায় মারা গেছেন, ক্যান্সার, কিডনী রোগ, স্ট্রোক ইত্যাদিতে মারা গেছেন তার চেয়ে অনেক কম সংখ্যক মানুষ।

উপরের পরিসংখ্যানে (দৈনিক যুগান্তর, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭) বলা হয়েছে, ‘৩০ থেকে ৭০ বছর বয়সী মৃত ব্যক্তিদের প্রতি ১০ জনে একজনের মৃত্যু ঘটে হৃদরোগে।’ কিন্তু আমার মনে হয়, প্রতি দশ জনে একজন নয়, বরং প্রতি দশজনের মধ্যে তিন-চারজনের মৃত্যু ঘটে হৃদরোগে। কারণ, সমাজে ৩০ থেকে ৭০ বছরের বেশি বয়সী যেসব মানুষ এখন মারা যায়, তাদের মধ্যে দুর্ঘটনাজনিত কারণ বাদ দিয়ে যদি রোগের কারণে যাদের মৃত্যু হয়, শুধু তাদের হিসেব করা হয়, দেখা যাবে, তাদের অধিকাংশের মৃত্যুই হয় হার্ট অ্যাটাকে। বাকিরা মারা যায় ক্যান্সার, স্ট্রোক, কিডনী রোগ ইত্যাদিতে। আমার দাবিটা কতটুকু বাস্তসম্মত, তা যাচাই করতে পারেন যে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে যে দেশগুলোতে গড় আয়ু তুলনামূলক বেশি, এরকম তিন-চারটা দেশ বাদ দিয়ে অন্য সব দেশে খুব নিবিড়ভাবে নিরীক্ষণ করলে দেখা যাবে, ৩০ থেকে ৭০ বছরের বেশি বয়সী যারা কোনো দুর্ঘটনার শিকার না হয়ে রোগের কারণে মারা যায়, তাদের মৃত্যুর জন্য হার্ট অ্যাটাক বা হৃদরোগই সবচেয়ে বেশি দায়ী। আর হৃদরোগ তাদেরই বেশি হয়, যারা উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। তাছাড়া আমার বিশ্বাসের সাথে পুরো মিল পাওয়া যায় ৭ মার্চ ২০১৯ তারিখের প্রথম আলোয় প্রকাশিত ‘কত মানুষ কীভাবে মরছে’ শিরোনামে প্রতিবেদনটির। সেখানে পরিষ্কার বলা হয়, ‘প্রতিবছর যত মানুষের মৃত্যু হচ্ছে, তার প্রতি তিনজনে একজন মরছে হৃদ্রোগে’।

আরেকটা কথা, কিডনীর সমস্যায় যাদের মৃত্যু হয়, তাদের অনেকের কিডনী বিকল হওয়ার জন্য ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা হৃদরোগ দায়ী। ‘কিডনি বিকল হয়ে ঘণ্টায় পাঁচ মৃত্যু’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখের প্রথম আলোয়। সেখানে উল্লেখ করা হয়, ‘ইউরোলজি অ্যান্ড ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক এম এ সালাম বলেন, নীরব ঘাতক হচ্ছে কিডনি রোগ। উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস এই দুটি রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকলে কিডনি অনেকাংশে সুস্থ রাখা সম্ভব।’ তাই হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপজনিত জটিলতার কারণে কিডনী বিকল হয়ে প্রতিদিন যে মানুষগুলো মৃত্যুবরণ করে, তাদের সংখ্যাটা হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপজনিত কারণে মৃত্যুবরণকারী লোকদের সংখ্যার সাথে যুক্ত হলে এ তিনটি রোগে মৃত্যুর সংখ্যাটা আরো বড় হয়ে যাবে নিঃসন্দেহে।

৩০ থেকে ৭০ বছর বয়সের মধ্যে যারা মৃত্যুবরণ করে, তাদের মৃত্যু অবশ্যই অকালমৃত্যু। কারণ এখনও বিভিন্ন দেশে অসংখ্য মানুষ ৮০-৯০ বছর পর্যন্ত বা তারও বেশি বেঁচে থাকার সুযোগ পায়। যে লোকটি ৭০ বছর বয়সের আগে মারা গেলো, তারও তো ৭০ বছরের বেশি বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ছিল। মানুষকে ৭০ বছরের বেশি বেঁচে থাকতে দেয়না যে রোগগুলো, সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর হচ্ছে হৃদরোগ। ৩০ বছরের বেশি বয়সী মানুষ এখন অহরহ হৃদরোগে আকস্মিক মৃত্যুমুখে পতিত হচ্ছে বিশ্বব্যাপী। সাধারণ মানুষ ছাড়াও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পৃথিবীতে বিশাল শূন্যতা সৃষ্টি করে না ফেরার দেশে চলে যাচ্ছেন অকালে। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই এমন ঘটনা ঘটছে। মাত্র দু’টি উদাহরণ দিচ্ছি।

বাংলাদেশের ব্যান্ডসংগীতের জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী আইয়ুব বাচ্চু গত ১৮ অক্টোবর ২০১৮ তারিখে আকস্মিক মৃত্যুবরণ করেন। ১৯ অক্টোবর প্রথম আলোয় তার মৃত্যু সংবাদ ছাপা হয় ‘গিটারের জাদুকরের অকালবিদায়’ শিরোনামে। সেখানে তাঁর মৃত্যু সম্পর্কে বলা হয়, ‘...গতকাল সকালে মাত্র ৫৬ বছর বয়সে আইয়ুব বাচ্চু মারা গেছেন। আইয়ুব বাচ্চুর সম্প্রতি অসুস্থতার কোনো লক্ষণ ছিল না। আইয়ুব বাচ্চুর গানের দল এলআরবির ব্যবস্থাপক শামীম আহমেদ জানিয়েছেন, ১৬ অক্টোবর রাতে রংপুরে একটি কনসার্ট সেরে পরদিনই ঢাকায় ফিরেছিলেন আইয়ুব বাচ্চু। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে বাসায় বুকে ব্যথা অনুভব করেন তিনি। ব্যক্তিগত গাড়িচালক তাঁকে নিয়ে স্কয়ার হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা দেন। গাড়িতে তোলার সময় তিনি খুবই অসুস্থ হয়ে পড়েন। হাসপাতালে সকাল ১০টার কিছু আগে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। স্কয়ার হাসপাতালের চিকিৎসক মির্জা নাজিম প্রথম আলোকে বলেন, সকাল সোয়া নয়টার দিকে আইয়ুব বাচ্চুকে হাসপাতালে আনা হয়। এর আগেই তাঁর মৃত্যু হয়। তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।...’

৭ মে ২০১৯ একুশে পদকপ্রাপ্ত বাংলাদেশের বরেণ্য সংগীতশিল্পী সুবীর নন্দী মৃত্যুবরণ করেন। পরদিন ৮ মে বাংলাদেশ প্রতিদিনে ‘চলে গেলেন সুবীর নন্দী’ শিরোনামে তাঁর মৃত্যুসংবাদ প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়, ‘সুবীর নন্দী আর গাইবেন না। তার কণ্ঠ থেকে আর বের হবে না সুর। ‘আমার এ দুটি চোখ পাথর তো নয় তবু কেন ক্ষয়ে ক্ষয়ে যায়’, ‘পৃথিবীতে প্রেম বলে কিছু নেই’, ‘কত যে তোমাকে বেসেছি ভালো’ কালজয়ী গানগুলোও এখন থেকে ইতিহাস হয়ে যাবে। অগণিত ভক্তকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে না-ফেরার দেশে চলে গেলেন কিংবদন্তি গায়ক একুশে পদকপ্রাপ্ত শিল্পী সুবীর নন্দী। গতকাল বাংলাদেশ সময় ভোর সাড়ে ৪টায় সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি পরলোকগমন করেন। তার মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন তার মেয়ে ফাল্গুনী নন্দী। দীর্ঘদিন যাবৎ হৃদরোগ, ডায়াবেটিসসহ নানা সমস্যায় ভুগছিলেন সুবীর নন্দী। তার বয়স হয়েছিল ৬৬ বছর।...’

মানুষের গড় আয়ু দিন দিন কমছে না বাড়ছে, তা নিয়ে বিতর্ক আছে। আমার মনে হয় বিশ্বব্যাপী মানুষের গড় আয়ু কমছে। পঞ্চাশ বছরের বেশি বয়সী মানুষ এখন খুব কম পাওয়া যায়, যার উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস বা হৃদরোগের মতো কোনো রোগ নেই। আর এসব রোগে আক্রান্ত মানুষ ৭৫/৮০ বছর বয়স পর্যন্ত খুব কমই পৌঁছতে পারেন। কিছু কিছু দেশের ক্ষেত্রে বিষয়টা ভিন্ন। ওয়ার্ল্ড হার্ট ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে পৃথিবীর মোট মৃত্যুর যে ৩১ ভাগ হৃদরোগের কারণে হয়। কিন্তু ৫০-৬০ কছর আগেও মানুষ এতো ব্যাপকহারে হৃদরোগে মারা যেতো না। তাহলে তখন কি মানুষের গড় আয়ু আরো বেশি ছিল না? এখন যদি কোনোভাবে সে ৩১ ভাগ মৃত্যু রোধ করা যায়, তাহলে মানুষের গড় আয়ু কি বাড়বে না? অথবা বর্তমানে যে বয়সে মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়, যদি সে বয়সে আক্রান্ত না হয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়াকে আরো ২৫/৩০ বছর পেছানো যায়, তাহলে মানুষের গড় আয়ু কি বাড়বে না? শুধু হৃদরোগ নয়, উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়াকেও (যে রোগগুলো দিন দিন ভয়ঙ্করভাবে বেড়ে চলছে) যদি কোনোভাবে রোধ করা বা বিলম্বিত করা যায়, মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধিতে তা অবশ্যই যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে।


৮ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

Occupation: Teaching, Hobbies: Writing

0 Comments: