Headlines
Loading...
দীর্ঘজীবন লাভের উপায় (পর্ব-৮) : দীর্ঘজীবি হবার কার্যকর উপায়

দীর্ঘজীবন লাভের উপায় (পর্ব-৮) : দীর্ঘজীবি হবার কার্যকর উপায়

ডায়াবেটিস, হার্ট অ্যাটাক এবং উচ্চ রক্তচাপের প্রকৃত কারণ এবং প্রতিরোধের উপায় জানার মাধ্যমে
দীর্ঘজীবন লাভের উপায়




 অধ্যায়-৯

দীর্ঘজীবি হবার কার্যকর উপায়

পৃথিবীতে পুনর্জন্ম আছে- এমন বিশ্বাসও কারো কারো আছে। তবে পৃথিবীতে আমি আগে কখনো এসেছি বলে আমার মনে হয় না। অতীতে না এলেও ভবিষ্যতে আসার সম্ভাবনা আছে- এমন কোনো আশাও মনে ভুলেও বাসা বাঁধে না। কারণ এখনো কোনো মানুষকে বলতে শুনিনি, ‘এটা আমার চতুর্থ জন্ম, গতবার আমি চিনের বেইজিংয়ে জন্মেছিলাম, তার আগের বার এসেছিলাম জাপানের এক গ্রামে আর আমার প্রথম জন্ম হয়েছিল আফ্রিকার জোহানেসবার্গে। জানি না, পরের বার আবার কোন্ দেশে আমার জন্ম হয়!’ এ পর্যন্ত কোনো মানুষ কোনোভাবে জানাননি, তাঁর জন্ম এ পৃথিবীতে অন্ততঃ আরো একবার হয়েছিলো। যদি মানুষের অজ্ঞাতে তার পুনর্জন্ম হয়, পুনর্জন্ম হিসেবে সেটার কোনো অর্থ নেই, সেটা নতুন জন্মের মতোই। কারণ, যার পুনর্জন্ম হয়েছে, সে যদি তা না বুঝতে পারে, তাহলে পুনর্জন্মকে পুনর্জন্ম না বলে নতুন জন্ম বলাই সঠিক।

পৃথিবীর শুরু থেকে এ পর্যন্ত এখনো কেউই পুনর্জন্মের দাবি করেননি, তাই ভবিষ্যতে এমন ঘটনা ঘটতে পারে- এমন বিশ্বাসের কোনো ভিত্তি নেই। পৃথিবীতে আমরা মাত্র একবারের জন্য আসি। পৃথিবীর জীবনটা প্রায় সব মানুষের জন্যই অভাবিত, আকর্ষণীয়। পৃথিবীতে বেঁচে থাকাটা সীমাহীন আনন্দের। এখানে সত্যিই আনন্দের অনেক উপকরণ, উপলক্ষ্য ও ব্যবস্থা আছে। তাই এই আলো, হাসি, গানে ভরা পৃথিবী ছেড়ে মানুষ চলে যেতে চায় না। কারণ এখান থেকে একবার চলে গেলে আর কখনো ফিরে আসা যায় না।
এজন্য প্রায় সব মানুষই দীর্ঘ জীবন চায়। অনেকে দীর্ঘ জীবন চেয়েও পায় না। মন্দভাগ্যের কারণে অনেকে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে, অনেকে নানান দুর্ঘটনার শিকার হয়ে, অনেকে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে, অনেকে আবার মানুষ নামক নরপশুদের হাতে বিভিন্ন ভাবে মারা যায় প্রত্যাশিত সময়ের আগেই। এসব অকালমৃত্যু কখনোই পুরোপুরি রোধ করা যাবে না। তবে মানুষ যেসব রোগে অসময়ে মারা যায়, তার মধ্যে অনেকগুলো রোগ আছে, যেগুলোতে মারা যাওয়াটা আমার কাছে মনে হয় রোধ করা সম্ভব।

আগের অধ্যায়ে স্পষ্ট করা হয়েছে, বর্তমান বিশ্বে ক্যান্সার, স্ট্রোক (মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণ), কিডনী রোগ, হার্ট অ্যাটাক, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এই রোগগুলো মানুষের মৃত্যুর জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী হলেও ক্যান্সার, স্ট্রোক (মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণ) ও কিডনী রোগে বিশ্বব্যাপী যত মানুষ মারা যায়, তার চেয়ে বেশি মারা যায় হার্ট অ্যাটাক, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপে। তাছাড়া ক্যান্সার, স্ট্রোক (মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণ) ও কিডনী রোগের সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি এবং এগুলোর কোনো প্রতিষেধকও আবিষ্কার করা যায়নি। অন্যদিকে হার্ট অ্যাটাক, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ এ তিনটি রোগের সুনির্দিষ্ট কারণ রয়েছে এবং কারণগুলো পরিষ্কার হবার কারণেই রোগগুলো থেকে মানুষ নিজেদেরকে নিরাপদ দূরত্বে রাখতে শতভাগ সফল হতে পারে বলে আমার বিশ্বাস। এ রোগগুলোতে আক্রান্ত হলে চিকিৎসা করে এগুলো থেকে পুরোপুরি মুক্তি পাওয়া হয়তো সম্ভব নয়, তবে এগুলো যাতে আক্রমণ করতে না পারে, সে প্রতিরোধ ব্যবস্থা বা প্রতিষেধক মানুষের নাগালের মধ্যেই আছে। আর ‘চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম’, এটা একটা স্বতঃসিদ্ধ কথা।
হার্ট অ্যাটাক এবং ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপজনিত জটিলতায় বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ লোক প্রতি বছর মারা যায়। মানুষ যদি রোগগুলো থেকে নিজেদেরকে নিরাপদ রাখতে পারে, তাহলে মানুষের গড় আয়ু অবশ্যই আরো বৃদ্ধি পাবে।

অধ্যায়-১০
হার্ট অ্যাটাক, ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের প্রতিষেধক

শৈশবে যে রোগগুলোতে মানুষ বেশি বেশি আক্রান্ত হবার কথা জানতে জানতে বড় হয়েছি, সেগুলো হলো পোলিও, কলেরা, হাম, যক্ষ্মা, হুপিংকাশি, ডিপথেরিয়া, হাঁপানি ইত্যাদি। কিন্তু পরবর্তীতে দেখলাম এসব রোগের মধ্যে অনেকগুলোর প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হবার ফলে মানুষ সেগুলোতে আক্রান্ত হওয়া থেকে রক্ষা পাচ্ছে। কিন্তু বড় হয়ে নতুন নতুন কিছু রোগের সাথে পরিচিত হতে লাগলাম। যেমন: ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট অ্যাটাক, কিডনী বিকলতা, স্ট্রোক, এইডস ইত্যাদি। কিন্তু যখন দেখতাম আগের রোগগুলোর প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হবার ফলে মানুষ সেগুলো থেকে নিরাপদ হতে শুরু করেছে, তখন প্রায়ই মনের মধ্যে একটা প্রশ্ন আসতো, কেন পরের এ রোগগুলোর প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয় না? বিজ্ঞানীরা এখানে এসে কি ব্যর্থ? এসব রোগের প্রতিষেধক বের হলে মানবজাতি কতোই না উপকৃত হতো! বিষয়টা ভাবতে গিয়ে সবসময় হতাশ হতাম। প্রশ্ন জাগতো, বিজ্ঞান কি এতোই সীমাবদ্ধ?


ভাবতে ভাবতে একসময় বুঝতে পারলাম, বিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতার সাথে বিষয়টাকে সম্পর্কিত করা ভুল। যে রোগগুলোর প্রতিষেধক নিয়ে ভাবছি, সেগুলোর মধ্যে কিছু রোগের প্রতিষেধক হয়তো বিজ্ঞান কখনোই আবিষ্কার করতে পারবে না। কারণ এগুলোর প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হবার নয়। ঠান্ডাজনিত কারণে মানুষ নিমোনিয়া, সর্দি-কাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো যে শারীরিক সমস্যাগুলোতে আক্রান্ত হয়, সেগুলোর প্রতিষেধক আবিষ্কার করা যেমন বিজ্ঞানের পক্ষে সম্ভব নয়, তেমনি উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের মতো যে রোগগুলো মানুষের শরীরে শারীরিক পরিশ্রম থেকে দূরে থাকা এবং চর্বি-কোলেস্টেরল বৃদ্ধির কারণে হয়ে থাকে সেগুলোর প্রতিষেধক আবিষ্কার করাও বিজ্ঞানের পক্ষে সম্ভব নয়।

স্ট্রোক এবং ক্যান্সারের কারণ নিয়ে বিজ্ঞান এখনো অনেকটা অন্ধকারে আছে। স্ট্রোকের কারণ নিয়ে অনেকে অনেক মন্তব্য করে, বাস্তবতার সাথে আমি যেগুলোর মিল পাই না। এমনকি ক্যান্সারের কারণ নিয়েও অনেককে ফাঁকা বুলি আওড়াতে দেখা যায়। বিশেষ করে ধূমপানকে স্ট্রোক এবং ক্যান্সারের জন্য নয় শুধু, হার্ট অ্যাটাক, উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসের জন্যও একতরফাভাবে দায়ী বলে মনে করা হয় বিশ্বব্যাপী। এ ব্যাপারে আমার ভিন্নমত রয়েছে। বিষয়টা নিয়ে পৃথক অধ্যায়ে আলোচনা করা হবে। আমার মনে হয়, ক্যান্সার এবং স্ট্রোকের স্পষ্ট কারণ খুঁজে বের করা যায়নি বলেই এগুলোর প্রতিষেধক নিয়ে কিছু করা যাচ্ছে না। তবে চেষ্টা যে চলছে, তা আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারছি। আর এইডসের কারণ সম্পর্কে অনেক কথা শোনা যায়। কতটুকু সঠিক, জানি না। কিন্তু প্রতিষেধক এখনো বের করা যায়নি।

ঠান্ডাজনিত রোগগুলো থেকে বাঁচার জন্য ঠান্ডা লাগা থেকে মানুষের আত্মরক্ষা করাটা যেভাবে প্রতিষেধকের কাজ করে, তেমনি শারীরিক পরিশ্রম থেকে দূরে থাকা এবং শরীরে চর্বি-কোলেস্টেরল বৃদ্ধির কারণে যে রোগগুলোতে মানুষ আক্রান্ত হয়, সে রোগগুলো থেকে বাঁচার জন্য বেশি বেশি শারীরিক পরিশ্রম করা এবং শরীরে চর্বি-কোলেস্টেরল বাড়তে না দেয়াও অবশ্যই প্রতিষেধকের কাজ করবে। মানুষের অলসতা, শারীরিক পরিশ্রম ছেড়ে দেয়া, আরামপ্রিয় লাইফস্টাইল আর শরীরে মেদ-চর্বি বৃদ্ধির সুযোগে যে রোগগুলোর জন্ম, সেগুলোর প্রতিষেধক বিজ্ঞান কিভাবে আবিষ্কার করবে!

এগুলোর প্রতিষেধক তো মানুষের হাতেই! মানুষ যদি নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করে- তা কায়িক শ্রমের যে কোনো কাজ/পেশায় নিয়োজিত থেকে হোক, নিয়মিত শরীরচর্চা করে হোক বা খেলাধূলা করে হোক; পরিমিত খায়; মুটিয়ে যাওয়া থেকে দূরে থেকে চিকন থাকাকে প্রাধান্য দেয়; শরীরে চর্বি-কোলেস্টেরল বাড়তে না দেয়; কমপক্ষে নিয়মিত পর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রম করে, মানুষের শরীরে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগের মতো রোগ কখনো দেখা দেবে না, বাবা-মা বা পূর্বপুরুষ কারো এসব রোগ থাকুক না কেন, জীবনে যত টেনশনই থাকুক; যত মিষ্টিজাতীয় খাবার, চিনি, লবণ (চিনি, মিষ্টান্ন এবং লবণ খাওয়াকেও অনেকে এসব রোগে আক্রান্ত হবার জন্য দায়ী মনে করে, যা নিয়ে পরে একটি অধ্যায়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে) বা মাংস খেতে অভ্যস্ত হোক না কেন।

যতদিন মানুষ নিয়মিত পর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রম করবে ও শরীরে মেদ-কোলেস্টেরল বাড়তে না দেবে, ততদিন এসব রোগ থেকে নিরাপদ থাকবে। তবে কখনো কোনো কারণে শারীরিক পরিশ্রম করতে অক্ষম হয়ে গেলে রোগগুলোতে মানুষ আক্রান্ত হয়ে পড়তে পারে। তবে এমন হতে পারে, কেউ নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন করে দীর্ঘদিন ধরে রোগগুলো থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখলো, কিন্তু একসময় অন্য কোনো রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলো, তাতেও কিন্তু তুলনামূলক বেশি দিন বেঁচে থাকার সুযোগ পেল। মানুষকে তো একসময় মারা যেতেই হয়। জীবন বিধ্বংসী ছয়টি রোগের তিনটি থেকেই মানুষ যদি নিজেদেরকে নিরাপদ রাখতে পারে, এমনকি ছয়টির মধ্যে সবচেয়ে বিধ্বংসী রোগ হার্ট অ্যাটাক থেকে মানুষ যদি নিজেদেরকে রক্ষা করতে পারে, তাতে মানুষের গড় আয়ু অনেক বৃদ্ধি পাবে, সন্দেহ নেই।


নবম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

Occupation: Teaching, Hobbies: Writing

0 Comments: