Headlines
Loading...
দীর্ঘজীবন লাভের উপায় (পর্ব-৯) : ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং উচ্চ রক্তচাপ এই রোগ তিনটি একই সূত্রে গাঁথা

দীর্ঘজীবন লাভের উপায় (পর্ব-৯) : ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং উচ্চ রক্তচাপ এই রোগ তিনটি একই সূত্রে গাঁথা

ডায়াবেটিস, হার্ট অ্যাটাক এবং উচ্চ রক্তচাপের প্রকৃত কারণ এবং প্রতিরোধের উপায় জানার মাধ্যমে
দীর্ঘজীবন লাভের উপায়




অধ্যায়-১১
ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং উচ্চ রক্তচাপ এই রোগ তিনটি একই সূত্রে গাঁথা

ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং উচ্চ রক্তচাপ এই রোগগুলোর একটার সাথে আরেকটার নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। রোগগুলো একই সূত্রে গাঁথা। কাউকে এরকম একটা রোগ আক্রমণ করলে অন্য রোগগুলোও তাকে আক্রমণ করার সম্ভাবনা খুব বেড়ে যায় এবং আক্রমণ করেও প্রায়ই। কারণ একই ধরনের কারণে রোগগুলো মানুষকে আক্রমণ করে। যাদেরকে রোগগুলো আক্রমণ করে, খুঁজলে দেখা যায়, তাদের শারীরিক বৈশিষ্ট্য এবং জীবনযাত্রা প্রায় একই। তাই রোগগুলো যে সমগোত্রীয়, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে যারা এরকম কোনো একটি বা দু’টি রোগে আক্রান্ত হবার পর সেগুলো নিয়ন্ত্রণের যথাসাধ্য চেষ্টা করে, তাদেরকে সমগোত্রীয় অন্য কোনো রোগ সহজে আক্রমণ করতে পারে না। কিন্তু যারা অবহেলা করে, রোগ নিয়ন্ত্রণের তেমন চেষ্টা করে না, তাদেরকে খুব দ্রুত অন্য রোগগুলো আক্রমণ করে বসে। বিষয়টা ভালোভাবে বুঝতে হলে প্রথমে আমরা বাস্তবতার দিকে একটু চোখ বুলাই।

বাস্তবতা কী বলে?

এমন অসংখ্য মানুষ আমি দেখেছি আমার পরিচিতজনদের মধ্যে, যারা একই সাথে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ এবং ডায়াবেটিস এই তিনটি রোগেই আক্রান্ত। উদাহরণ দিতে চাই না। কারণ আমার দেয়া উদাহরণ শুধু আমার পরিচিতজনরাই যাচাই করে দেখার সুযোগ পাবে সহজে, অন্যরা নয়। তাই উদাহরণ খুঁজে নেয়ার দায়িত্ব সকলের উপর ছেড়ে দিচ্ছি। আপনার পরিচিত যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, দেখবেন তাদের অনেকে উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগ এই দু’টির একটি বা উভয়টিতেও আক্রান্ত, আবার যারা উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত, তাদের অনেকে দেখবেন ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগ এই দু’টি রোগের একটি বা উভয়টিতেও আক্রান্ত, আবার যারা হৃদরোগে আক্রান্ত, তাদের অনেককে দেখবেন উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস এই দু’টি রোগের একটি বা উভয়টিতেও আক্রান্ত। তবে হৃদরোগে অনেকে আক্রান্ত হবার পর বেশিদিন বেঁচে থাকতে পারে না বলে সমগোত্রীয় অন্য রোগে আক্রান্ত হবার সুযোগই পায় না বলে হৃদরোগে আক্রান্তদের মধ্যে এ জাতীয় অন্য রোগ দেখা যায় কম। আবার অনেক হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তি বাইপাস সার্জারী করে অনেকটা সুস্থ হয়ে যাবার কারণে বা নিয়মিত কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণের ঔষধ সেবন করার ফলে তাদেরকে সমজাতীয় অন্য রোগ আক্রমণ করতে সময় লেগে যায়। তবে হৃদরোগে আক্রান্ত অধিকাংশ ব্যক্তিকে দেখবেন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত না হলেও উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত।

অনেক মানুষ প্রথমে আক্রান্ত হয় উচ্চ রক্তচাপে, তা নিয়ন্ত্রণে ত্রুটি করলে অন্য দু’টি রোগের কোনো একটি বা উভয়টি তাকে একসময় আক্রমণ করে বসে। অনেককে প্রথমে আক্রমণ করে ডায়াবেটিস, তা নিয়ন্ত্রণ না করলে একসময় হৃদরোগ বা উচ্চ রক্তচাপ তাকে আক্রমণ করে বসে। অনেকে আবার প্রথমে আক্রান্ত হয় হৃদরোগে, তা নিয়ন্ত্রণে ত্রুটি করলে তাকে উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস এই দু’টি রোগের একটি বা উভয়টি একসময় আক্রমণ করে বসে।
তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানুষ প্রথমে আক্রান্ত হয় উচ্চ রক্তচাপে। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ না করলে তাদেরকে ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগ এই দু’টি রোগের কোনো একটি বা উভয়টি আক্রমণ করে। খুব কম লোক এমন পাওয়া যায়, যারা উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হবার পর তা নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা না নেয়ার পরও ১০-১৫ বছর ধরে ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগ এই দু’টি রোগের কোনো একটি বা উভয়টি থেকে নিরাপদ ছিলেন।

একটু খুঁজলেই আমাদের আশেপাশে এমন অসংখ্য লোক পাওয়া যাবে, যাদের কেউ এরকম দু’টি রোগে, কেউ আবার একই সাথে তিনটি রোগেই আক্রান্ত। এই রোগগুলোর কোনো একটিতে ১০ বছর ধরে আক্রান্ত এক হাজার রোগীর খোঁজ নিলে দেখা যাবে তাদের অন্তত ৮০০ জন লোক এজাতীয় একাধিক রোগে আক্রান্ত। কারণ? কারণ হলো, রোগ তিনটির মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব রয়েছে।

রোগগুলোর কারণ সম্পর্কে কিছু মতামত

বিষয়টা আরো স্পষ্টভাবে বুঝার জন্য রোগগুলোর কারণ সম্পর্কে একটু আলোচনা করা যাক। রোগগুলোর কারণ সম্পর্কে আমি অনেক গবেষণা প্রতিবেদন এবং পত্রপত্রিকায় ডাক্তারের লেখা অনেক নিবন্ধ পড়েছি। অনেক মানুষের মুখেও রোগগুলোর কারণ সম্পর্কে অনেক কথা শোনা যায়। দুঃখজনক হচ্ছে, রোগগুলোতে আক্রান্ত হবার তিন-চারটি প্রকৃত কারণ ছাড়াও অনেকগুলো কারণকে গড়পড়তাভাবে রোগগুলোর জন্য দায়ী বলে প্রচার করা হয়। যেমন: পূর্বপুরুষদের কারো রোগগুলো থাকা, বয়স ৪৫ বা তার বেশি হওয়া, টেনশন বা মানসিক অস্থিরতা, ধূমপান, মদপান, চিনি বা মিষ্টিজাতীয় খাবার বেশি খাওয়া, লবণ খাওয়া, খাদ্যে ফরমালিন বা ভেজাল, অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম ইত্যাদি। দু’একটা নমুনা দেখা যাক:

৮ অক্টোবর ২০১৬ তারিখের দৈনিক আমাদের সময়ে ডা: এম শমশের আলী একটি নিবন্ধ লেখেন ‘হাই প্রেসার ও হৃদরোগ’ শিরোনামে। সেখানে উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের কারণ সম্পর্কে বলা হয়, ‘যারা বেশি টেনশনের কাজ করেন, যাদের কাজের চাপ খুব বেশি, যারা কাজের চাপের জন্য শরীরের যত্ন নিতে পারেন না, ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া, বিশ্রাম বা ঘুমাতে পারেন না, তাদের উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। দুশ্চিন্তা, অবসন্ন, বংশগত প্রবণতা, অতিমাত্রায় ধূমপান ও মদ্যপান উচ্চ রক্তচাপের কারণ হিসেবে বিবেচিত। যারা খুব বেশি প্রতিযোগী মনোভাবাপন্ন, তাদেরও এ রোগে ভোগার আশঙ্কা রয়েছে। কায়িক শ্রমের অভাব বা অলস জীবনযাপন, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, অতিমাত্রায় লবণ খাওয়ার অভ্যাস, শারীরিক ওজন বৃদ্ধি, ডায়াবেটিস ও রক্তে উচ্চ মাত্রায় কোলেস্টেরল উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।... অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ বিভিন্নভাবে হৃদরোগ সৃষ্টি করতে পারে এবং যাদের অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ আছে, তাদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা শতভাগ।’

১১ ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখের বাংলাদেশ প্রতিদিনে ‘হৃদরোগের লক্ষণ ও তা থেকে বাঁচার উপায়’ শিরোনামে একটি লেখা প্রকাশিত হয়, যা লিখেছেন ঢাকার ল্যাবএইড কার্ডিয়াক হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট, কার্ডিওলজিস্ট ও সিসিইউ ইনচার্জ ডা. মাহবুবর রহমান। সেখানে বলা হয়, ‘গবেষণায় দেখা যায়, পারিবারিক ইতিহাস ও জেনেটিক বৈশিষ্ট্যই হৃদরোগের ক্ষেত্রে প্রধান ও নিয়ন্ত্রণের অযোগ্য কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, নিয়ন্ত্রণযোগ্য কারণেই মানুষ আজকাল হৃদরোগে আক্রান্ত হন বেশি। এসব কারণের মধ্যে রয়েছে- উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ধূমপান, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, মানসিক চাপ এবং অতিরিক্ত ওজন।’

১৭ মে ২০১৮ তারিখের দৈনিক সমকালে ‘বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবস’ উপলক্ষ্যে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় ‘আজ বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবস’ শিরোনামে। সেখানে বলা হয়, ‘এক গবেষণায় দেখা গেছে, ওজন বাড়লে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হওয়ার হার দুই থেকে ছয়গুণ বেড়ে যায়। এ ছাড়া  অতিরিক্ত লবণ খাওয়া, ধূমপান, মদপানও উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টিতে দায়ী।’

এ লেখার ‘উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগের কারণ সম্পর্কে ভুল ধারণা’ শিরোনামের অধ্যায়ে  ‘উচ্চ রক্তচাপে করণীয়’ শিরোনামে ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ তারিখের দৈনিক যুগান্তরে প্রকাশিত একটি লেখার অংশবিশেষ উল্লেখ করা হয়েছে। লেখাটিতে ‘৯০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের কোনো নির্দিষ্ট কারণ জানা যায় না’ বলা হলেও উচ্চ রক্তচাপের আশংকা বাড়ায়, এমন কিছু বিষয়ের উল্লেখ করা হয়। যথা: বংশানুক্রমিক, ধূমপান, অতিরিক্ত লবণ গ্রহন, অধিক ওজন ও অলস জীবনযাত্রা, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, অতিরিক্ত মদপান, ডায়াবেটিস ও অতিরিক্ত উৎকন্ঠা।

‘আপনি কি ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতে আছেন?’ শিরোনামে একটি লেখা ছাপা হয় ৮ অক্টোবর ২০১৭ তারিখের প্রথম আলোয়। লিখেছেন ঢাকার বিআইএইচএস জেনারেল হাসপাতালের ডায়াবেটিস ও হরমোন বিশেষজ্ঞ ডা. এ হাসনাত শাহীন। আট ধরনের মানুষকে লেখাটিতে ডায়াবেটিসের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে উল্লেখ করা হয়। যথা: ১. বয়স ৪৫ বা তার বেশি ২. স্থূল ব্যক্তি ৩. রক্ত-সম্পর্কীয় নিকটাত্মীয়ের ডায়াবেটিস থাকলে ৪. শারীরিক পরিশ্রমের ঘাটতি ৫. গর্ভকালীন ডায়াবেটিস বা অধিক ওজনের সন্তান প্রসবের পূর্ব ইতিহাস ৬. পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম ৭. উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক বা হৃদরোগ এবং ৮. রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বেশি এবং এইচডিএলের মাত্রা কম থাকলে। [https://www.prothomalo.com/life-style/article/1339441]

‘ডায়াবেটিসের ঝুঁকি সম্পর্কে যেসব জানা জরুরি’ শিরোনামে বিবিসি বাংলায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় ১৩ নভেম্বর ২০১৮। সেখানে ডায়াবেটিস প্রতিরোধের কিছু উপায় উল্লেখ করা হয়। ‘প্রতিরোধের উপায়’ আর ‘কারণ’ প্রকারান্তরে একই কথা। বলা হয়, ‘ডায়াবেটিস যদিও জেনেটিক এবং আপনার জীবন যাপনের স্টাইলের ওপর নির্ভরশীল তারপরেও আপনি চেষ্টা করলে রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে পারেন। সেজন্যে আপনাকে খাবার গ্রহণের বিষয়ে বিশেষভাবে সচেতন থাকতে হবে এবং আপনাকে হতে হবে অত্যন্ত সক্রিয় একজন মানুষ। প্রক্রিয়াজাত খাবার ও পানীয় এড়িয়ে চলতে হবে। মসৃন শাদা আটার রুটির পরিবর্তে খেতে হবে ভুষিওয়ালা আটার রুটি। এটাই প্রথম ধাপ। এড়িয়ে চলতে হবে হোয়াইট পাস্তা, প্যাস্ট্রি, ফিজি ড্রিংকস, চিনি জাতীয় পানীয়, মিষ্টি ইত্যাদি।
আর স্বাস্থ্যকর খাবারের মধ্যে রয়েছে শাক সব্জি, ফল, বিন্স এবং মোটা দানার খাদ্য শস্য। স্বাস্থ্যকর তেল, বাদাম খাওয়াও ভালো। ওমেগা থ্রি তেল আছে যেসব মাছে সেগুলো বেশি খেতে হবে। যেমন সারডিন, স্যামন এবং ম্যাকেরেল।
এক বেলা পেট ভরে না খেয়ে পরিমানে অল্প অল্প করে বিরতি দিয়ে খাওয়া দরকার।
শরীর চর্চা বা ব্যায়াম করার মাধ্যমে রক্তে চিনির মাত্রা কমিয়ে রাখা সম্ভব। চিকিৎসকরা বলছেন, প্রতি সপ্তাহে আড়াই ঘণ্টার মতো ব্যায়াম করা দরকার। তার মধ্যে দ্রুত হাঁটা এবং সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠাও  রয়েছে।
ওজন কম রাখলেও চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। যদি ওজন কমাতে হয় তাহলে সেটা ধীরে ধীরে করতে হবে। সপ্তাহে আধা কেজি থেকে এক কেজি পর্যন্ত।

ধূমপান পরিহার করাও জরুরী। নজর রাখতে হবে কোলস্টেরলের মাত্রার ওপর। এর মাত্রা বেশি হলে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।’ [https://www.bbc.com/bengali/news-46194839]

উপরের প্রতিবেদনগুলোতে হার্ট অ্যাটাক, ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের অনেকগুলো কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। একটু ভালোভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, কারণগুলোর মধ্যে কিছু আছে, তিনটি রোগের ক্ষেত্রেই যেগুলো অনিবার্যভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন: কায়িক শ্রমের অভাব বা অলস জীবনযাপন, শারীরিক ওজন বৃদ্ধি, রক্তে উচ্চ মাত্রায় কোলেস্টেরল, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদি। যেহেতু রোগগুলো কিছু কমন বা সাধারণ কারণে হয়ে থাকে, তাই রোগগুলো অবশ্যই সমগোত্রীয়।

নির্দিষ্ট এ কারণগুলো ছাড়া অন্য যে কারণগুলোকে রোগগুলোর জন্য দায়ী করা হয়েছে, (যেমন: ধূমপান, মদপান, লবণ খাওয়া, চিনি/মিষ্টি খাওয়া, বয়স বেশি হওয়া, বংশের কারো থাকা ইত্যাদি) সেগুলো যে সত্যিই রোগগুলোর জন্য দায়ী নয়, তা শুধু এদিকে লক্ষ্য করলেই বুঝা যায়, সব নিবন্ধ/প্রতিবেদনে এগুলোকে রোগগুলোর জন্য দায়ী বলে উল্লেখ করা হয়নি। একেকটিকে একেক জায়গায় উল্লেখ করা হয়েছে। যদি এগুলো সত্যিই রোগগুলোর জন্য দায়ী হতো, তাহলে সব লেখায় এগুলোর প্রত্যেকটিকে অপরিহার্যভাবে উল্লেখ করা হতো।

মতামতগুলোর সাথে বাস্তবতার মিল কতটুকু?

এই নিবন্ধ/প্রতিবেদনগুলোতে উল্লেখিত কারণগুলোর কোনটি সত্যিকারের কারণ, আর কোনটি সত্যিকারের কারণ নয়, তা আমরা বাস্তবতার সাথে মিলিয়ে দেখলেও বুঝতে পারবো। বাস্তবতার সাথে মিলিয়ে দেখলে দেখা যাবে, যেসব লোক দিনের বেশির ভাগ সময় শারীরিক পরিশ্রমেই কাটিয়ে দেয় বা রুটিনমাফিক দৈনিক দুএক ঘন্টা ব্যায়াম করে, তারা ফাস্টফুডে আসক্ত হলেও, বয়স বেশি হলেও, ধূমপান করলেও, মাদকের সাথে সম্পর্ক রাখলেও, চিনি/মিষ্টান্ন/লবণ মনমতো খেলেও, এমনকি তাদের জীবনে অনেক মানসিক চাপ থাকলেও তাদের শরীরে কোলেস্টেরল বাড়তে পারে না বলে তারা রোগগুলো থেকে মুক্ত থাকে।

আর যেসব মানুষ পনেরো-বিশ বছর ধরে এমন পেশায় নিযুক্ত, যেখানে সারাক্ষণ বসে বসেই কাজ করতে হয়, ব্যায়ামে অভ্যস্ত নয়, এককথায় যাদের জীবনে শারীরিক পরিশ্রম তেমন নেই বা থাকলেও খুব কম, তারা ফাস্টফুড বা জাঙ্কফুড খাক বা না খাক, মিষ্টান্ন/চিনি/লবণ বেশি বা কম খাক, ধূমপান করুক বা না করুক, মদপান করুক বা না করুক, তাদের টেনশন কম থাক বা বেশি থাক বা না থাক, তাদের বাবা-মা এরকম রোগে আক্রান্ত হোক বা না হোক, তারা এসব রোগ থেকে রক্ষা পায় না। এমনকি, এমরকম একটা রোগে আক্রান্ত হবার পরও যখন তাদের টনক না নড়ে, তা নিয়ন্ত্রণে একটু গড়িমসি বা অবহেলা করে, তখন এ জাতীয় অন্য রোগও তাকে পেয়ে বসে।

এক কথায় এটাই বাস্তব, শারীরিক পরিশ্রম যে যত বেশি করে, তার নিকট থেকে এসব রোগ তত বেশি দূরে থাকে আর শারীরিক পরিশ্রম থেকে যে যত বেশি দূরে থাকে, সে তত বেশি এসব রোগে আক্রান্ত হয়। রোগগুলোর সম্পর্ক শুধুই পর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রম করা বা না করার সাথে। মূলত এখানে এসেই রোগগুলো এক সূতোয় গেঁথে যায়।

রোগগুলোর পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে কিছু মতামত

বিষয়টা আরো পরিষ্কারভাবে বুঝার জন্য বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে এই রোগ তিনটির মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে প্রকাশিত কিছু প্রতিবেদন ও নিবন্ধে বর্ণিত মতামত উল্লেখ করা হলো। আশা করি এগুলো পড়ার পর এটা অস্বীকার করার কোনো সুযোগ থাকবে না, রোগগুলো যে একই সূত্রে গাঁথা।


দশম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

Occupation: Teaching, Hobbies: Writing

0 Comments: