Headlines
Loading...
দীর্ঘজীবন লাভের উপায় (পর্ব-১৪) : ডায়াবেটিসের মূল কারণ সম্পর্কে কিছু প্রতিবেদন

দীর্ঘজীবন লাভের উপায় (পর্ব-১৪) : ডায়াবেটিসের মূল কারণ সম্পর্কে কিছু প্রতিবেদন

ডায়াবেটিস, হার্ট অ্যাটাক এবং উচ্চ রক্তচাপের প্রকৃত কারণ এবং প্রতিরোধের উপায় জানার মাধ্যমে



দীর্ঘজীবন লাভের উপায়



ডায়াবেটিসের মূল কারণ সম্পর্কে কিছু প্রতিবেদনের বক্তব্য


ডায়াবেটিসের মূল কারণ যে শারীরিক পরিশ্রম থেকে দূরে থাকা, কথাটির সমর্থনে কিছু আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করছি।

(১) ৭ এপ্রিল ২০১৬ তারিখের বিবিসি বাংলায় প্রকাশিত "বিশ্ব ডায়াবেটিসের ''ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের'' ঝুঁকিতে" শিরোনামে একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, "বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, সারা বিশ্বে এখন প্রতি ১১ জনে একজন ব্যক্তি ডায়াবেটিস আক্রান্ত। ২০১৪ সালে এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৪২২ মিলিয়ন প্রাপ্তবয়ষ্ক ব্যক্তি, যা ১৯৮০-তে আক্রান্তের তুলনায় ৪ গুণ বেশি। ৭ই এপ্রিল বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের প্রাক্কালে প্রকাশিত সংস্থাটির প্রথম গ্লোবাল রিপোর্টে বলা হয়েছে প্রতি বছর রক্তে উচ্চমাত্রার গ্লুকোজ বা ডায়াবেটিসের কারণে বিশ্বে মারা যাচ্ছে ৩৭ লক্ষ মানুষ।
২০১২ সালে ১৫ লাখ লোক প্রত্যক্ষভাবে ডায়াবেটিসের কারণে মারা যান।"

আরো বলা হয়, "বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে এখনই ''দৃঢ় পদক্ষেপ'' না নিলে এই সংখ্যা আরও বাড়বে।"

এই রিপোর্টে টাইপ-১ এবং টাইপ-২ - দুধরনের ডায়াবেটিস আক্রান্তদের কথাই বলা হয়েছে। তবে এটাও বলা হয়েছে যে ধরনের ডায়াবেটিস আক্রান্তের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে তারা টাইপ-২ ডায়াবেটিসের শিকার, যার মূল কারণ অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন।"

(২) জার্মানির জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যম ডয়চে ভেলের (বাংলা) ওয়েবসাইটে ২১ এপ্রিল ২০১২ তারিখে প্রকাশিত "ভারতে ডায়বেটিসের প্রকোপ" শিরোনামের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, "বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডাব্লিউএইচও"র তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী ৩৪৬ মিলিয়ন মানুষ ডায়বেটিসে আক্রান্ত। ২০৩০ সাল নাগাদ গোটা বিশ্বে আনুমানিক ৭.৮ শতাংশ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। বর্তমানে চীন ও ভারতে দেখা যাচ্ছে এর প্রকোপ। নতুন সমীক্ষা অনুযায়ী, ভারতে ৫১ মিলিয়ন মানুষ ডায়বেটিসে ভুগছেন। আগামী ২০ বছরে এই সংখ্যা ১৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। দিল্লি, মুম্বই ও কলকাতার মতো বড় বড় শহরে ডায়াবেটিস রোগীরা একই ধরনের সমস্যার কথা বলেন চিকিৎসকের কাছে, যেমন অফিসে চেয়ারে বসেই কাজ করতে হয় অনেকটা সময়, খেলাধুলা ও স্বাস্থ্যকর খাবারের সুযোগ সুবিধাও কম। পুষ্টিকর খাদ্য দ্রব্য ও রান্নাবান্নার সময়ও পান না অনেকে। চারিদিকে, কোকাকোলা, পিৎসা ও বার্গারের মতো ফাস্টফুডের বিজ্ঞাপন। একটু স্বচ্ছল হলেই গাড়ি কেনার প্রবণতা। ঘরকন্নার সাহায্যে থাকে কাজের লোক। শারীরিক পরিশ্রমের পাল্লাটা অনেক কম ইত্যাদি ইত্যাদি। আর এসবই বহুমূত্র রোগের দিকে ঠেলে দেয় মানুষকে।"

(৩) ডয়চে ভেলের (বাংলা) ওয়েবসাইটে আরেকটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় ১৩ অক্টোবর ২০১৫ তারিখে "ডায়াবেটিস ও ইনসুলিন" শিরোনামে। সেখানে বলা হয়, "সারা বিশ্বে ডায়াবেটিস রোগীদের সংখ্যা দ্রুত বেড়ে চলেছে। এর কারণ হল বেশি খাওয়া ও কম দৌড়ঝাঁপ বা হাঁটাচলা করা। যার ফলে ডায়াবেটিস আধুনিক জীবনযাত্রার সঙ্গী হয়ে উঠেছে। সারা বিশ্বে প্রায় ২৫ কোটি মানুষ ডায়াবেটিসে ভুগছেন। তবে খাওয়াদাওয়া ঠিক রাখলে আর নিয়মিত ব্যায়াম করলে রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।"

(৪) ভারত থেকে প্রকাশিত xiaomi.dailyhunt.in (শাওমী ডট ডেইলীহান্ট ডট আইএন) নামক অনলাইন পত্রিকায় ‘ইনসুলিনের অভাবে ভুগবে বিশ্ব’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বর্তমান বিশ্বের অন্যতম জীবনঘাতী রোগ বলা হয় ডায়াবেটিসকে। এই রোগের কারণে প্রতিবছর মারা যাচ্ছে পাঁচ লাখের বেশি মানুষ। বিশ্বে বর্তমানে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা প্রায় ৪২ কোটি ৫০ লাখ। আর প্রতিবছরই আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হারে বেড়ে ২০৩০ সাল নাগাদ এই সংখ্যা দাঁড়াবে ৫১ কোটি ১০ লাখে। তবে সেই হারে বাড়বে না এই রোগে আক্রান্তদের প্রয়োজনীয় জীবনরক্ষাকারী ওষুধ ইনসুলিনের সরবরাহ। ফলে ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বের চার কোটির বেশি রোগী ইনসুলিন পাবেন না। এই অবস্থায় দক্ষিণ এশিয়া, আফ্রিকা ও ওশেনিয়া অঞ্চলে ভয়াবহ প্রভাবের আশঙ্কা করছেন গবেষকরা।
ল্যানসেট ডায়াবেটিস ও এন্ডোক্রায়োনোলজি জার্নালের এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।’

গবেষণা প্রতিবেদনটিতে আরো বলা হয়, ‘গবেষণায় নেতৃত্বদানকারী স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক ডাক্তার সঞ্জয় বসু বলেন, ছোঁয়াচে নয় এমন রোগ বিশেষ করে ডায়াবেটিসের বিস্তার রোধে জাতিসংঘের নানা পদক্ষেপ সত্ত্বেও বর্তমানে চাহিদার তুলনায় ইনসুলিনের প্রাপ্যতা অনেক কম। আগামী ১২ বছরে বার্ধক্য, নগরায়ন, খাদ্যাভাস ও শারীরিক কাজকর্মের ধরনে নানা পরিবর্তনের কারণে গোটা বিশ্বেই টাইপ টু ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাবে।’

(৫) ‘ডায়েবেটিস থেকে সাবধান!’ শিরোনামে ডয়চে ভেলের ওয়েবসাইটে ২৭ মে ২০১৭ তারিখে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে বলা হয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বাড়ার মূল কারণ, অতিরিক্ত ওজন।’ [https://www.dw.com/overlay/media/bn/38965147/41071625]

(৬) ভারতের কলকাতা থেকে প্রকাশিত আনন্দবাজার পত্রিকায় ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে "নিয়মিত জীবনযাপন দূর করবে ডায়াবেটিস" শিরোনামে একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়। সাক্ষাৎকারটি দিয়েছেন বোলপুরের চিকিৎসক প্রদীপ গঙ্গোপাধ্যায়। সাক্ষাৎকারের একটি অংশ এখানে উল্লেখ করা হচ্ছে।
"প্রশ্ন: ডায়াবেটিস কেন হয়?
উত্তর: হাইপারটেনশন, থাইরয়েড, হার্টের অসুখ, ফ্যাটি লিভার, আর্থারাইটিজের মতোই ডায়াবেটিস মূলত একটি "লাইফস্টাইল ডিজিজ"। জীবনশৈলীর কারণে যে অসুখগুলো হয় তার মধ্যে অন্যতম হল ডায়াবেটিস। এখন মানুষ কায়িক পরিশ্রম কম করে, অনিয়মিত খাওয়াদাওয়া করে। অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনই এই ধরনের অসুখের মূলে। আগেকার দিনে ফ্রিজ, এসি, গাড়ি, কম্পিউটার, টিভি, মোবাইলের ব্যবহার কম ছিল। এখন মানুষ মাঠে খেলাধুলোর বদলে কম্পিউটারে গেমে মনোনিবেশ করে। সাইকেলের বদলে স্কুটি ব্যবহার করে। আগে সব ক্ষেত্রেই পরিশ্রম অনেক বেশি ছিল। বর্তমানে গাড়ি চড়া, না হাঁটা, রেস্তোরাঁতে খাওয়া সব দিক থেকে মানুষের জীবনশৈলী বদলেছে। মাছ, ভাত, শাক, পোস্তার জায়গায় খাবার হিসেবে এসেছে পাস্তা, পেস্ট্রি, কোল্ড ড্রিংকস, আইসক্রিম, নুডলস যেগুলি মূলত হাই ক্যালোরির খাবার। এই সমস্ত খাবার বেশি করে খাওয়া এবং কম পরিশ্রম করার ফলে চাইল্ডহুড ওবেসিটি হচ্ছে। এই ওবেসিটিই হচ্ছে ভবিষ্যতে সুগার, প্রেসার, হার্টের অসুখের প্রবেশ পথ। আগেকার থেকে এখন মানুষের জীবনযাত্রা অনেক জটিল হয়েছে। বেড়েছে মানসিক চিন্তা। সমাজ, সংসার, কর্মক্ষেত্রে মানসিক চাপও ডায়াবেটিসের মূলে।"

এই ছয়টি নিবন্ধ-প্রতিবেদনের প্রথমটিতে ডায়াবেটিসের মূল কারণ বলা হয় অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপনকে, দ্বিতীয়টিতে ডায়াবেটিসের জন্য দায়ী বলে মনে করা হয় আরামপ্রিয় জীবনযাপন এবং শারীরিক পরিশ্রম কম করাকে, তৃতীয়টিতে ডায়াবেটিসের কারণ বলে মনে করা হয় বেশি খাওয়া, দৌড়ঝাঁপ বা হাঁটাচলা কম করা এবং নিয়মিত ব্যায়াম না করাকে, চতুর্থটিতে বার্ধক্য, নগরায়ন, খাদ্যাভাস ও শারীরিক কাজকর্মের ধরনে নানা পরিবর্তনের কারণে মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয় বলে মনে করা হয়, পঞ্চমটিতে ডায়াবেটিসের মূল কারণ বলা হয় অতিরিক্ত ওজনকে, আর ষষ্ঠটিতে ডায়াবেটিসকে "লাইফস্টাইল ডিজিজ" বলেই আখ্যা দেয়া হয়। লাইফস্টাইল হিসেবে বলা হয়, "এখন মানুষ কায়িক পরিশ্রম কম করে, অনিয়মিত খাওয়াদাওয়া করে। অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনই এই ধরনের অসুখের মূলে। আগেকার দিনে ফ্রিজ, এসি, গাড়ি, কম্পিউটার, টিভি, মোবাইলের ব্যবহার কম ছিল। এখন মানুষ মাঠে খেলাধুলোর বদলে কম্পিউটারে গেমে মনোনিবেশ করে। সাইকেলের বদলে স্কুটি ব্যবহার করে। আগে সব ক্ষেত্রেই পরিশ্রম অনেক বেশি ছিল। বর্তমানে গাড়ি চড়া, না হাঁটা, রেস্তোরাঁতে খাওয়া সব দিক থেকে মানুষের জীবনশৈলী বদলেছে।"

এই প্রতিবেদনগুলোতে কিন্তু ডায়াবেটিসকে বংশগতভাবেও হয়, এমন রোগ বলা হয়নি; ডায়াবেটিসের সাথে ধূমপান, মদপান, চিনি/মিষ্টি/লবণ বেশি খাওয়ার সম্পর্ক আছে বলেও বলা হয়নি। তবে শুধু শেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ডায়াবেটিসের সাথে মানসিক চাপের সম্পর্কের কথা। শুধু একটা কথাই বলবো, এ অধ্যায়ে যে চার শ্রেণির ডায়াবেটিস থেকে মুক্ত থাকার কথা বলা হয়েছে, শারীরিক পরিশ্রমে যুক্ত থাকা ছাড়া জীবনের অন্য বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে এরা কি আর সব মানুষের মতো নয়? আর সব মানুষের মতো এদের জীবনেও হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখের সাথে মানসিক চাপও নিশ্চয়ই আছে। তাহলে মানসিক চাপ এদেরকে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত করতে পারছে না কেন? কারণ মানসিক চাপ কাউকে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত করতে পারে তখন, যখন মানুষ পর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রম না করার ফলে শরীরে কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পায়। যেসব মানুষের শরীরে কোলেস্টেরল বাড়তে পারে না, তারা শুধু ডায়াবেটিস নয়, হার্ট অ্যাটাক এবং উচ্চ রক্তচাপ থেকেও বেঁচে থাকে। তাই মানসিক চাপ ডায়াবেটিসসহ এ তিনটি রোগের প্রত্যক্ষ কারণ নয়। বরং এসব রোগের প্রত্যক্ষ কারণ শারীরিক পরিশ্রম থেকে দূরে থাকা বা আরামপ্রিয় জীবন যাপন করা। আরামে থাকলেই মানুষকে রোগগুলো আক্রমণ করার সুযোগ পায়।

অধ্যায়-১৩

হৃদরোগ এবং উচ্চ রক্তচাপেরও মূল কারণ ১টি, মোট কারণ ৩টি


এর আগের অধ্যায়ের আগের অধ্যায়ে এটা স্পষ্ট করার চেষ্টা করা হয়েছে, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং উচ্চ রক্তচাপ এই রোগ তিনটি একই সূত্রে গাঁথা। রোগ তিনটির কারণ যেহেতু একই, এগুলো থেকে বেঁচে থাকার উপায়ও একই। আর সর্বশেষ অধ্যায় থেকে সবাই আশা করি স্পষ্টভাবে বুঝতে পেরেছেন, ডায়াবেটিসের মূল কারণ ১টি, আর মোট কারণ ৩টি।

যেহেতু ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং উচ্চ রক্তচাপ এই তিনটি রোগ সমগোত্রীয়, সেহেতু ডায়াবেটিসের মূল কারণ যা, বাকি দু’টি রোগের মূল কারণও তা-ই এবং ডায়াবেটিস যেহেতু মোট তিনটি কারণে মানুষের হয়ে থাকে, অন্য রোগ দু’টিও মোট তিনটি কারণেই মানুষের হয়ে থাকে। এ ব্যাপারে এর আগের অধ্যায়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে, তাই বাড়তি কিছু বলার মনে হয় প্রয়োজন নেই।


১৫তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

Occupation: Teaching, Hobbies: Writing

0 Comments: