Headlines
Loading...
 বেশিদিন বেঁচে থাকার উপায়

বেশিদিন বেঁচে থাকার উপায়

 বেশিদিন বেঁচে থাকার উপায়

নূর আহমদ

পৃথিবীর প্রায় সব মানুষ চায় পৃথিবীতে তুলনামূলক বেশি দিন বেঁচে থাকতে। এর কারণ পৃথিবী একটি উপভোগ্য জায়গা, স্বপ্নের জগৎ; এখানে মানুষ মাত্র একবারের জন্য আসে। কেউ কোনোভাবে এখানে জীবনকে টিকিয়ে রাখতে পারে না, একটা সময়ে এসে সবাই এখান থেকে বিদায় নিতে হয়। এখান থেকে একবার প্রস্থান করলে কেউ দ্বিতীয়বারের জন্য ফিরে আসতে পারে না, এটাও পৃথিবীতে বেশি দিন বেঁচে থাকতে চাওয়ার একটা বড় কারণ। যদিও পুণর্জন্ম নিয়ে অনেকে ইতিবাচক কথা বলেন, কিন্তু এই পর্যন্ত কোনো মানুষ বলতে পারেনি, সে পৃথিবীকে আগেও একবার এসেছিল।


খুব কম মানুষ আছে, যারা পৃথিবীতে বেশিদিন বেঁচে থাকতে চায় না। কিছু মানুষ বিভিন্ন কারণে আত্মহননের পথ বেছে নেয়। কিন্তু এর সংখ্যা একেবারে নগণ্য। এর বিপরীতে পৃথিবীর প্রায় সব মানুষ চায় এখানে বেশিদিন টিকে থাকতে, জীবনের সুবিধাগুলো দীর্ঘ সময় ধরে উপভোগ করতে।



পৃথিবীতে বেশিদিন বেঁচে থাকার উপায় নিয়ে আপনি অনেক বক্তব্য, নিবন্ধ বা বই পাবেন। তবু আমি লিখছি আমার দৃষ্টিকোণ থেকে।

১.

যেসব দেশে অপমৃত্যু, অকালমৃত্যু বা অস্বাভাবিক মৃত্যু যেমন: সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু, পানিতে পড়ে মৃত্যু, আগুণে পুড়ে মৃত্যু, ডাকাত/ছিনতাইকারী/সন্ত্রাসীর হাতে মৃত্যুসহ বিভিন্ন দুর্ঘটনা এবং খুন ইত্যাদি তুলনামূলক কম; যেসব দেশে অভাব, অর্থনৈতিক সংকট কম এবং যেসব দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন: বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিকম্প, বজ্রপাত এসবের প্রকোপ কম, সেসব দেশে বসবাস করলে বেশি দিন বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বাড়বে।


ইউটিউব থেকে এই আলোচনা শুনতে এই লিঙ্কে যেতে হবে: https://www.youtube.com/watch?v=JN2K6vhw4WY


২.

যেখানে যুদ্ধ হয়, সেখান থেকে দূরে থাকতে হবে।

এই দুইটি সুবিধা গ্রহণ সবার পক্ষে সম্ভব নয়। সবার পক্ষে সম্ভব, এমন কিছু পন্থা সম্পর্কে জানা যাক।

৩.

নিয়মিত কায়িক শ্রম করতে হবে। দৈনিক কমপক্ষে ৪০ মিনিট ঘামঝরানো কায়িক শ্রম করতে হবে। মানুষ এখন সবচেয়ে বেশি যেই রোগগুলোতে আক্রান্ত হয়, মারা যায়, সেই রোগগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ৫টি রোগ। যথা: হৃদরোগ (হার্ট অ্যাটাক), ক্যান্সার, ব্রেইন স্ট্রোক, উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস। এই তিনটি রোগ আমার নিকট দুই ভাগে বিভক্ত। একভাগে হচ্ছে ঐ রোগগুলো, যেগুলোর কারণ এখনো অজানা এবং যেগুলো এখনো অপ্রতিরোধ্য। যেমন: ক্যান্সার এবং ব্রেইন স্ট্রোক। এই দুইটি রোগের কারণ যে যাই বলুক, কোনোটিই বাস্তবতার সাথে সম্পর্কিত নয়। ধূমপানকে কান্সারের কারণ বলে বিশ^ব্যাপী মনে করা হয়। কিন্তু ধূমপায়ীরা যেমন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়, যারা ধূমপান থেকে দূরে থাকে, তারাও ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় অহরহ। শুধু তাই নয়, ধূমপায়ী সবাই কিন্তু ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় না। ধূমপায়ী যারা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়, তাদের যে হার, ওই হারের চেয়ে দীর্ঘদিন ধরে ধূমপায়ী যারা ক্যান্সার থেকে বেঁচে যায়, তাদের হার শুধু বেশি নয়, অনেক অনেক বেশি। তবু শুধু শুধু ধূমপান এবং তামাক সেবনকে ক্যান্সারের জন্য দায়ী করা হয় একচেটিয়াভাবে।


একইভাবে ব্রেইন স্ট্রোকের জন্য ধূমপান এবং টেনশনকে দায়ী করা হয় একতরফাভাবে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, ধূমপায়ী এবং টেনশনে ভোগা মানুষ যেই হারে ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়, অধূমপায়ী এবং জীবনে তেমন টেনশন নেই, এমন মানুষ তার চেয়ে বেশি অনেক হারে ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়। যে কেউ এই বিষয়ে জরিপ করে দেখতে পারেন।


আরেকভাগে হচ্ছে ঐ রোগগুলো, যেগুলোর কারণ সুনির্দিষ্ট এবং যেগুলো সম্পূর্ণ প্রতিরোধযোগ্য। রোগগুলো হচ্ছে হার্ট অ্যাটাক, উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস। এই রোগগুলোর সুনির্দিষ্ট কারণ হলো কায়িক শ্রম থেকে দূরে থাকা বা অপর্যাপ্ত কায়িক শ্রম করা। তবে কখনো কখনো কায়িক শ্রম নিয়মিত না করলেও যারা খুব কম খেতে অভ্যস্ত, তারা সহজে এই রোগগুলোতে আক্রান্ত হয় না।


প্রথম ভাগের দুইটি রোগ এখনো অপ্রতিরোধ্য, মানুষ কোনোভাবে সেগুলো থেকে আত্মরক্ষা করতে পারে না। আর দ্বিতীয়ভাগের তিনটি রোগ সম্পূর্ণ প্রতিরোধযোগ্য, মানুষ যথাযথভাবে চেষ্টা করলে সেগুলো থেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ থাকতে পারে। একটা লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, সমাজের মানুষ প্রথম ভাগের দুইটি রোগে যেই হারে আক্রান্ত হচ্ছে, দ্বিতীয়ভাগের তিনটি রোগে তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি হারে আক্রান্ত হচ্ছে। আপনি খুঁজলে প্রায় প্রতি ঘরে উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগী পাবেন। অনেক মানুষকে খূঁজে পাবেন, যারা একই সাথে এই তিনটি রোগের দু’টি বা তিনটিতেই আক্রান্ত। কিন্তু প্রতি ঘরে ক্যান্সার এবং ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগী পাবেন না। আর দ্বিতীয় ভাগের রোগ হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত মানুষ প্রতি ঘরে পেতে কষ্ট হবে এই কারণে যে, এই রোগটিতে আক্রান্ত অনেক মানুষ হুট করেই মারা যায়, খুব কম সময়ে চিকিৎসার সুযোগ পায়।


যেসব মানুষ কোনো না কোনোভাবে নিয়মিত কায়িক শ্রম করে, তারা এই তিনটি রোগ থেকেই সম্পূর্ণ নিরাপদ থাকে। কায়িক শ্রম হচ্ছে কৃষিকাজ, ব্যায়াম, সাঁতার, জগিং, সাইক্লিং, কায়িক শ্রমনির্ভর বিভিন্ন খেলা যেমন: ফুটবল, টেনিস, ক্রিকেট, ভলিবল ইত্যাদি। যারা অন্য কোনোভাবে কায়িক শ্রম করতে পারেন না, তারা জগিং করতে পারেন। জগিংয়ের একটি প্রকার হচ্ছে স্ট্যান্ড জগিং। একজায়গায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দুই পা উঠানামা করে জগিং করা। বাইরে জগিং করার সুযোগ যাদের নেই, তারা স্ট্যান্ড জগিং করতে পারেন। আরেকটি চমৎকার ব্যায়াম হচ্ছে দড়িলাফ।

৪.

কম কম খান। কম খেলেও বেশিদিন বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। অনেক মানুষ সম্পর্কে আমি জানি, যারা কম কম খাওয়ার কারণে বেশি দিন বেঁচে থাকার সুযোগ পেয়েছেন।

৫.

চিকন থাকুন। চিকন মানুষের চেয়ে মোটা মানুষরা কম আয়ু পেয়ে থাকে। তবে এমন কোনো কথা নেই যে, চিকন থাকলেই শরীরে রোগব্যাধি হবার সম্ভাবনা কমবে বা বেশি দিন বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বাড়বে। তবে মোটা মানুষের চেয়ে চিকন মানুষরা তুলনামূলক কম রোগে আক্রান্ত হয়, তুলনামূলক বেশিদিন বাঁচে।

৬.

সবচেয়ে ভালো হয় আপনি যদি চিকন থাকার পাশাপাশি কম খেতে অভ্যস্ত হন এবং পাশাপাশি নিয়মিত পর্যাপ্ত কায়িক শ্রম করেন। এই তিনটি বিষয় যদি আপনার জীবনে একত্রিত হয়, তাহলে আপনার দীর্ঘ জীবন লাভের সম্ভাবনা অনেক বেশি।

৭.

মদপান থেকে দূরে থাকুন। অনেক সময় শুধু মদপানের কারণেই মানুষ মৃত্যুবরণ করে। এই নেশার কারণে অনেকের মস্তিষ্কেও সমস্যা হয়। ‘মদপানে মৃত্যু’ লিখে গুগলে সার্চ করলে মদপানে মানুষের মৃত্যুর শত শত ঘটনার সংবাদ দেখে অবাক হতে পারেন।

৮.

শরীরে চর্বি বাড়তে দেবেন না। যদি আপনি নিয়মিত কায়িক শ্রম করার পাশাপাশি কম কম খান, তাহলে আপনার শরীরে চর্বি বৃদ্ধি না হওয়ার জন্য আপনাকে আলাদা কিছুই করতে হবে না। কায়িক শ্রম থেকে দূরে থাকার কারণে শরীরে চর্বি বেড়ে গেলেই মানুষ হার্ট অ্যাটাক, উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস এই রোগগুলোতে আক্রান্ত হয় আর মানুষের জীবন সংক্ষিপ্ত হয়ে যায়।

৯.

খাওয়াদাওয়ায় বাছবিচার? করতে হবে না। আপনি যা—ই খান, যদি নিয়মিত কায়িক শ্রম করেন, আপনার শরীরে চর্বি জমতে পারবে না। এনার্জি আর্ন আর এনার্জি বার্ন সমানতালে চললে মানুষ মুটিয়ে যেতে পারে না, মানুষের শরীরে চর্বি জমতে পারে না, যার ফলে শরীরে ঐসব রোগ দেখা দেয় না, যেসব রোগ চর্বি—কোলেস্টেরল বেড়ে যাবার কারণে শরীরে জন্ম নেয়।

১০.

টেনশনমুক্ত থাকতে হবে কিনা? মোটেই না। টেনশন এমন বিষয়— (১) যা থেকে মানুষ শত চেষ্টা করলেও বেঁচে থাকতে পারে না। মানুষের জীবন সুখ এবং দুঃখের সমষ্টি। (২) নিয়মিত কায়িক শ্রমে লিপ্ত মানুষের জীবনে অনেক টেনশন থাকলেও তারা টেনশনে রোগাক্রান্ত হয় না।

১১.

বেশি হাঁটুন। যতো বেশি হাঁটবেন, ততো বেশি দিন বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বাড়বে। প্রতিদিন ৪০ মিনিট থেকে ১ ঘন্টা জোরে জোরে হাঁটুন। যদি আপনি শুধু এই কাজটা করেন, আপনি অন্য কোনোভাবে চেষ্টা না করলেও আপনার দীর্ঘজীবন লাভের সম্ভাবনা অনেক অনেক বাড়বে। যথাযথভাবে চেষ্টা করলে, লেগে থাকলে, দীর্ঘজীবন লাভের সম্ভাবনা অনেক বেশি।


নূর আহমদ

ফিটনেস বিষয়ক গবেষক ও লেখক


Occupation: Teaching, Hobbies: Writing

0 Comments: