Headlines
Loading...
জ্বর কেন হয়? জ্বরের কারণ কী? জ্বর থেকে নিরাপদ থাকার কিছু উপায়

জ্বর কেন হয়? জ্বরের কারণ কী? জ্বর থেকে নিরাপদ থাকার কিছু উপায়

 জ্বর কেন হয়? জ্বরের কারণ কী? জ্বর থেকে নিরাপদ থাকার কিছু উপায়

নূর আহমদ

জ্বরে আক্রান্ত হয় না, এমন কোনো মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। বিশ্বের সব মানুষ জ্বরে আক্রান্ত হয়। জ্বর, সর্দি, কাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং নিউমোনিয়া এইগুলো সমগোত্রীয় শারীরিক সমস্যা। জ্বর, ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং নিউমোনিয়া এই তিনটি বিষয় নামে ভিন্ন হলেও লক্ষণ এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্যে একেবারে কাছাকাছি। এনেক সময় মানুষ শুধু জ্বরে আক্রান্ত হয়, অনেক সময় জ্বরের পাশাপাশি সর্দি এবং কাশিতেও আক্রান্ত হয়।

জ্বর থেকে কি বেঁচে থাকা যায়? জ্বর থেকে বেঁচে থাকা যায় না বলেই অনেকে মনে করেন। এর কারণ হচ্ছে জ্বরের কারণ অনেকের জানা নেই। কিন্তু আমি মনে করি জ্বরের সুস্পষ্ট কিছু কারণ রয়েছে এবং জ্বর থেকে অনেক ক্ষেত্রে বেঁচে থাকা যায়, মানে জ্বর প্রতিরোধ করা অনেকাংশে সম্ভব।

জ্বর থেকে বেঁচে থাকার জন্য বা জ্বর প্রতিরোধের জন্য জ্বর কেন হয়, তা অবশ্যই জানতে হবে।

১.

জ্বরের সবচেয়ে বড় কারণগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে শরীরে ঠান্ডা—গরম মিশ্রিত হওয়া। গরম পরিবেশ থেকে এসে হঠাৎ ঠান্ডা পরিবেশে গেলে অনেক সময় মানুষ জ্বরে আক্রান্ত হয়। যেমন: কেউ অনেকক্ষণ রোদে থাকার পর ঘরে এসে শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক হবার আগেই যদি গোসল করতে চলে যায় বা কেউ গোসল করার পর শরীরের পানি ভালোভাবে না মুছে যদি রোদে চলে যায় বা শরীর ভেজা অবস্থায় যদি কেউ গরম পরিবেশে চলে যায়, তখন অনেক সময় মানুষ জ্বরে আক্রান্ত হয়। অনেকে গরম পরিবেশে থাকার কারণে শরীরের তামপাত্রা বেশি থাকা অবস্থায় আইসক্রীম বা ঠান্ডা কোনো খাবার খাওয়ার পর সর্দি বা জ্বরে আক্রান্ত হয়। অনেক মানুষ যেসব কাজে প্রচুর শারীরিক পরিশ্রম হয়, ঘাম বের হয়, সেসব কাজ করার সময় বৃষ্টি এলে বৃষ্টিতে ভিজে ভিজেও কাজ করতে থাকে। ফলে অনেক সময় জ্বরে আক্রান্ত হয়। অনেকে বেশি গরম লাগার কারণে ফ্লোরে ঘুমায়। ফ্লোরে ঘুমানোর কারণেও ঠান্ডা গরমের মিশ্রণে অনেক সময় মানুষের জ্বর এসে যায়।

২.

জ্বরের আরেকটি বড় কারণ অতিরিক্ত ঠান্ডা লাগা। বছরের বিভিন্ন সময়, বিশেষ করে শীতকাল শুরুর সময় এবং শীতকাল শেষের দিকে রাতে শোয়ার সময় ফ্যান চালিয়ে শুইলে ভোররাত যখন তাপমাত্রা একেবারে কমে যায়, তখন ফ্যানের বাতাসের ঠান্ডার সাথে তাপমাত্রা কমে যাওয়াজনিত ঠান্ডা একত্র হয়ে অতিরিক্ত ঠান্ডায় অনেকে জ্বরে আক্রান্ত হয়। কিন্তু বুঝতে পারে না, কেন জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে। অনেক সময় ঋতু পরিবর্তনের সময় ঘরের একাধিক মানুষ জ্বরে আক্রান্ত হয়। পরে ভাবে, জ্বর ছোঁয়াচে। কিন্তু ঘরের সবাই যে একই কারণে জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে, তা বুঝে না, ভেবেও দেখে না।

৩.

পক্স এবং চোখ ওঠা (কনজাংটিভাইটিস)এই দু’টি শারীরিক সমস্যা দেখা দিলেও মানুষ জ্বরে আক্রান্ত হয়। জ্বর আসার মাধ্যমেই মানুষের শরীরে পক্স দেখা দিতে শুরু করে। আর চোখ ওঠা শুরু হলেও যন্ত্রণায় বা ব্যথায় মানুষের জ্বর এসে যায়। শরীরে ফোঁড়া উঠলেও অনেক মানুষ ফোঁড়ার যন্ত্রণায় জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়ে।

৪.

জ্বরে আক্রান্ত হবার আরেকটি কারণ শরীরের কোথাও প্রচন্ড আঘাত পাওয়া বা কোথাও জখম বা ক্ষত হওয়া। শরীরের কোথাও মারাত্মক আঘাত পেলে বা কাটা গেলে ওই ব্যথায় মানুষ জ্বরে আক্রান্ত হয়। তবে ছোটখাটো আঘাত বা জখমে শরীরে জ্বর আসে না।

৫.

কিডনী বিকলতায় আক্রান্ত হলেও মানুষের জ্বর আসে। ওই জ্বর মূলত একটি লক্ষণ হিসেবে প্রকাশ পায়।

আরো কিছু কারণে জ্বর আসে, সবগুলো পরিষ্কার নয়। তবে প্রথম দু’টি কারণে মানুষ জ্বরে আক্রান্ত হয় বেশি।


জ্বর থেকে বেঁচে থাকার উপায়

জ্বরের কারণ যখন আপনার নিকট পরিষ্কার হবে, তখন আপনি জ্বর থেকে যথাসম্ভব বেঁচে থাকতে পারবেন। আমি নিজেও অন্য সবার মতো আগে ঘন ঘন জ্বরে আক্রান্ত হতাম। কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে জ্বরে আক্রান্ত হবার হার অনেক কমে গেছে। যেই কারণে জ্বর আসে, ওই কারণ এড়িয়ে চলার কারণে।

গরম পরিবেশ থেকে আসার পর গোসল করার দরকার হলে ৫ মিনিটের বেশি সময় ধরে বিশ্রান নিন, শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক হবার পর গোসল করুন। গোসল করার পর শরীরের পানি ভালোভাবে মুছুন। ভেজা জামা গায়ে খেলাধুলা করবেন না, দৌড়াদৌড়ি করবেন না বা গরমে যাবেন না। যেসব কাজে শারীরিক পরিশ্রম বেশি হয়, সেসব কাজ বৃষ্টিতে ভিজে করবেন না। গরম দূর করার জন্য শরীরের তাপমাত্র বেশি থাকা অবস্থায় ঠান্ডা কিছু খাবেন না। একটা কথা মনে রাখতে হবে, শরীরের তাপমাত্রা কম থাকা অবস্থায় গরম কিছু খেলে সমস্যা নেই, কিন্তু শরীরের তাপমাত্র বেশি থাকা অবস্থায় ঠান্ডা কিছু খাওয়া ক্ষতিকর। তাপমাত্রা বেশি হলে ঘুমানোর সময় একেবারে খালি গায়ে ফ্লোরে শুবেন না।


ঋতু পরিবর্তনের সময় যখন ভোররাত তাপমাত্রা কমে যায়, তখন খালিগায়ে ঘুমাতে যাবেন না। ফ্যানের স্পীড কমিয়ে রাখুন। হালকা কাঁথা পাশে রাখুন, যাতে শীত লাগলে গায়ে জড়াতে পারেন। ঋতু পরিবর্তনের সময় শুধু এই সচেতনতার অভাবে পৃথিবীব্যাপী কোটি কোটি মানুষ জ্বরে আক্রান্ত হয়।

পক্স, চোখ ওঠা, ফোঁড়া ওঠার সময় জ্বর প্রতিরোধের তেমন কোনো সুযোগ নেই। এসব সমস্যা দেখা দেয়া শুরু হলে প্যারাসিটামল খেতে শুরু করুন। শরীরে কোনো আঘাত পেলে বা ক্ষত হলেও জ্বর থেকে বাঁচার সুযোগ একেবারে কম। তখনও জ্বর জ্বর অনুভূত হলে প্যারাসিটামল খেতে শুরু করুন। জ্বরের শক্তি কমে যেতে পারে বা মাঝপথ থেকে জ্বর ইউটার্ন করতে পারে।

আর কিডনী সমস্যা দেখা দিলেও জ্বর থেকে রেহাই পাবার তেমন সুযোগ নেই। চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

জ্বর, ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং নিউমোনিয়াকে ছোঁয়াচে বলে বিশ্বাস করা হয়। কিন্তু এগুলো কোনোভাবে ছোঁয়াচে নয়। আপনি সুস্থ থাকা অবস্থায় জ্বরে আক্রান্ত অনেক মানুষকে স্পর্শ করে দেখুন, জ্বরে আক্রান্ত হবেন না। আমি নিজে প্রায়ই স্কুলের অনেক শিক্ষার্থীর শরীরে জ্বর আছে কিনা (ওরা যখন শরীরে জ্বর আছে বলে ছুটি চায়), নিজ হাতে ওদের তাপমাত্রা পরখ করে দেখি, কিন্তু অনেকের শরীরে জ্বর থাকার পরও আমি তাদের কাছ থেকে জ্বরে আক্রান্ত হই না।

জ্বর নিয়ে একটি বড় ভুল ধারণায় এখনো অনেক মানুষ আক্রান্ত। মনে করে জ্বর আসা শুরু হলে পুরোপুরি আসতে দেয়া উচিত। পুরোপুরি আসার আগে ঔষধ খাওয়া ঠিক নয় বলেই এরা মনে করে। কিন্তু এটা একটা বাজে ধারণা। জ্বর ভালোভাবে আসার পর আপনি যতো পাওয়ারফুল ঔষধই খান না কেন, জ্বর সহজে ভালো হবে না, জ্বরে ভুগে ভয়ানক কষ্ট পাবেন। যেই ঔষধ আপনি জ্বর পুরোপুরি আসার পর খেতে পারেন, ওই ঔষধ জ্বর আসতে শুরু হলেই খেতে কী অসুবিধা? জ্বর আসতে শুরু হলে দেরি না করে প্যারাসিটামলের পাশাপাশি ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নরম্যাল এন্টিবায়োটিক খেতে শুরু করুন, জ্বর পুরোপুরি আসার আগেই চলে যাবে। আপনি জ্বরে মারাত্মক কষ্ট পাবেন না। জ্বরের কোনো ভাইরাস নেই। ভাইরাসে বিশ্বাস করবেন না। জ্বর একটি শারীরিক সমস্যা। এখানে ভাইরাসের বিন্দুমাত্র হাত নেই। একদিন এই সত্য প্রকাশিত হবে, জ্বরের সাথে ভাইরাসের কোনো সম্পর্ক নেই।


নূর আহমদ

ফিটনেস বিষয়ক গবেষক ও লেখক

Occupation: Teaching, Hobbies: Writing

0 Comments: