Headlines
Loading...
টেনশন কখন শরীরের কোনো ক্ষতি করতে পারে না?

টেনশন কখন শরীরের কোনো ক্ষতি করতে পারে না?

 টেনশন আপনার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না, যদি শরীরে চর্বি জমতে না দেন


টেনশন নিয়ে বর্তমান সময়ের মানুষ সত্যিই টেনশনে আছে। কারণ (১) বিগত কয়েক দশক ধরে মানুষ নতুন করে কিছু রোগে ব্যাপকহারে আক্রান্ত হতে শুরু করেছে এবং (২) নানা দিক থেকে প্রচার করা হচ্ছে, এই রোগগুলোতে আক্রান্ত হবার প্রধান কারণ টেনশন। এইজন্যই টেনশন নিয়ে মানুষ এখন অতিরিক্ত মাত্রায় টেনশনে আছে।

আমার পরিচিত অনেক মানুষের মুখে প্রায়ই শুনি, টেনশনে নাকি মানুষ হাই ব্লাড প্রেশারে এবং ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়। আর শৈশব কাল থেকে শুনে আসছি, শুধু টেনশনেই নাকি মানুষ হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়। শৈশব থেকে মানুষের মুখে শোনা হার্ট অ্যাটাকের এই কারণকে সঠিক বলেই মনে হতো। একটা সময় ছিল আমি নিজেও নিজের টেনশন নিয়ে টেনশন করতাম।

কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে টেনশন নিয়ে আমার কোনো টেনশন নেই। কারণ উপরে উল্লেখিত তিনটি রোগ হাই ব্লাড প্রেশার, ডায়াবেটিস এবং হার্ট অ্যাটাক নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে গভীরভাবে ভাবনা, অধ্যয়ন, পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা করতে গিয়ে আমার নিকট পরিষ্কার হয়, এই তিনটি রোগে আক্রান্ত হবার জন্য টেনশন কোনোভাবেই দায়ী নয়। টেনশনকে অকারণেই এই তিনটি রোগে আক্রান্ত হবার জন্য দায়ী করা হচ্ছে। তবে হ্যাঁ, যারা অন্য কারণে এই রোগগুলোতে আক্রান্ত, টেনশন করলে তাদের রোগগুলো তীব্র হতে পারে শুধু।

আমাদের এলাকায় আমার পরিচিত ৮-১০ জন লোক আছেন, যারা নিজের এবং অন্যের জমিতে কৃষিকাজ করে যাচ্ছেন দীর্ঘদিন ধরে। এদের বয়স ৪৫ বছর থেকে ৭০ বছরের মধ্যে। এই লোকগুলোর মধ্যে অনেকের ব্যক্তিগত অনেক বিষয় নিয়ে নানান টেনশন আছে বলেও আমার জানা আছে। কিন্তু এদের কারো প্রেশার হাই নয়, এরা কেউ ডায়াবেটিসেও আক্রান্ত নয়, হৃদরোগেও (হার্ট অ্যাটাক) নয়। অথচ আমার পরিচিতজনদের মধ্যেই এই লোকগুলোর চেয়ে বয়সে অনেক ছোট অসংখ্য মানুষ এই তিনটি রোগের এক বা একাধিকটিতে আক্রান্ত আছেন।

তবে আমি কাউকে বলছি না, আমার পরিচিত এই লোকগুলো সম্পর্কে আমার দেয়া বক্তব্য বিশ^াস করতে। আমি সবাইকে অনুরোধ করছি, আপনি আপনার পরিচিত যারা শারীরিক শ্রমনির্ভর কোনো না কোনো কাজে কর্মরত আছে অনেক বছর ধরে, তাদেরকে চিহ্নিত করুন, তাদের খোঁজ নিন, আপনি অবাক হয়ে দেখবেন, তারা (১) কেউই উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগ এই তিনটি রোগের কোনোটিতেই আক্রান্ত নন এবং (২) তাদের অনেকের জীবনে নানান টেনশন রয়েছে।

আজ থেকে ৪০-৫০ বছর আগে, মানুষের জীবনে অভাব বেশি ছিল। মানুষের জীবনে নানা রকম টেনশনও ছিল এখনকার চেয়ে বেশি মাত্রায়। কিন্তু তখন মানুষ এই তিনটি রোগে এখনকার চেয়ে অনেক কম হারে আক্রান্ত হতো। কেন? কারণ জীবনের পদে পদে তাদেরকে নানাভাবে শারীরিক পরিশ্রম করতে হতো, আরামে থাকার সুযোগ ছিল তাদের খুব কম। এখনকার মতো আরামের পেশা তখন খুব কম ছিল। মানুষ যা-ই খেতো, হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের কারণে সেগুলো থেকে আহরিত শক্তি খরচ হয়ে যেতো। মানুষের শরীরে চর্বি বৃদ্ধি পেতো খুবই কম। অধিকাংশ মানুষ নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রমের কাজ করার কারণে এবং তাদের শরীরে বাড়তি চর্বি না হবার কারণে এই রোগগুলো তাদেরকে আক্রমণ করার সুযোগই পেতো না। কোনো কোনো মানুষ শেষ বয়সে সাংসারিক সব কাজ থেকে একেবারে অবসরে চলে গেলে এই রোগগুলোতে আক্রান্ত হতো।

কিন্তু এখন মানুষ অল্প বয়সেই আরামের জীবন যাপন করতে শুরু করে। অধিকাংশ মানুষের জন্য শারীরিক পরিশ্রম করাটা ঐচ্ছিক বিষয়ে পরিণত হয়ে গেছে। মানুষ আরামপ্রিয় হয়ে যাবার কারণে শারীরিক পরিশ্রমকে যথাসাধ্য অগ্রাহ্য করছে। বহুতল ভবনে উপরের ফ্লোরে উঠতে সিঁড়ির পরিবর্তে লিফট বা এস্কেলেটর ব্যবহার করছে। বাইসাইকেলের পরিবর্তে মোটরসাইকেল ব্যবহার করছে। সামান্য দূরত্বে অবস্থিত অফিসে হেঁটে না গিয়ে গাড়ি ব্যবহার করছে। বাজারের ব্যাগটি হাতে বহন করে বাসায় আনতে অনীহা পোষন করছে। কৃষিজমি থাকলেও সেগুলো ফেলে রাখছে অথবা সেগুলোতে নিজে কাজ না করে অন্য লোক দিয়ে কাজ করাচ্ছে। পায়েচালিত রিকশা বাদ দিয়ে মোটরচালিত রিকশা চালাচ্ছে। মানুষ মনমতো খেতে পারছে, খাচ্ছেও। শরীরে শক্তি জমা করছেই শুধু, কিন্তু সেগুলো খরচ করছে একেবারে কম।

আরামে জীবন যাপনের এই প্রবণতা মানুষের শরীরে চর্বির উপর চর্বি জমা করছে। যেগুলো ক্ষয়ের (বার্ণ) সুযোগ দিচ্ছে না। শরীরে এভাবে বছরের পর বছর ধরে চর্বি জমা হয়ে সেই চর্বির মধ্যেই জন্ম নিচ্ছে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগ।
মানুষ এই বিষয়টা ভালোভাবে লক্ষ্য না করে ভাসা ভাসা পর্যবেক্ষণের উপর ভিত্তি করে এই তিনটি রোগের জন্য অবাস্তব সব কারণকে দোষারোপ করছে। সেই কারণগুলোর একটি হচ্ছে টেনশন।

আপনার পরিচিত যেই লোকগুলো এখনো পায়েচালিত রিকশা চালায়, খোঁজ নিয়ে দেখুন তো, দেখবেন, তাদের অনেকের টেনশনের মাত্রা আপনার চেয়ে বেশি। তবু তারা এই তিনটি রোগের কোনোটিতেই আক্রান্ত হচ্ছে না। শুধু এরকম একটি পর্যবেক্ষণই আপনাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেবে, টেনশনে এসব কোনো রোগ হয় না, এসব রোগ হয় আরামপ্রিয় হবার কারণে, শারীরিক পরিশ্রম থেকে দূরে থাকার কারণে।

একজন লোকের জীবনে টেনশন খুব কম থাকলেও যদি সে আরামে থাকতে অভ্যস্থ হয়, সময়ের ব্যবধানে সে নিশ্চিতভাবে এসব রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। অন্যদিকে যারা শারীরিক পরিশ্রমের পেশায় নিয়োজিত, তাদের জীবনে টেনশনের অসংখ্য বিষয় থাকলেও তারা এসব রোগে কোনোভাবে আক্রান্ত হয় না, বয়স যতোই হোক না কেন।

টেনশনকে স্ট্রোকের জন্যও দায়ী করা হয়। আপনি আপনার পরিচিত টেনশনে ভোগা ১০ জন মানুষ খুঁজে নিন, দেখবেন তারা কেউই এখনো স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়নি। আপনার জীবনেও হয়তো অনেক টেনশন আছে। কিন্তু আপনি এই পর্যন্ত কয়বার স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছেন, নিজেকে জিজ্ঞেস করুন। আমি ২০০১ সাল থেকে বেশ কয়েক বছর কিছু বিষয় নিয়ে চরম টেনশনে ভুগেছি। আমার তো বেশ কয়েকবার স্ট্রোক হবার কথা! মূলত স্ট্রোকের কোনো কারণই এখনো পরিষ্কার নয়। একজন মানুষ টেনশন না করলেও স্ট্রোকে আক্রান্ত হতে পারে, টেনশন করলেও। তবে টেনশন কখনোই ভালো নয়। কারণ টেনশন মানুষের মনকে অস্থির করে রাখে। টেনশনে অনেকে আত্মহত্যাও করে বসে। তাই বলে টেনশনকে এমন সব রোগের পেছনে দায়ী বলে প্রচার করাটা কোনোভাবেই উচিত নয়, যেগুলো টেনশনে নয়, অন্য কারণে হয়। এভাবে যারা টেনশনকে দায়ী করে, তারা মানুষকে নতুন টেনশনে ফেলার জন্য অবশ্যই দায়ী।

Occupation: Teaching, Hobbies: Writing

0 Comments: