Headlines
Loading...
 হার্ট অ্যাটাক নিজেই ভয় পায় যেসব মানুষকে!

হার্ট অ্যাটাক নিজেই ভয় পায় যেসব মানুষকে!

 হার্ট অ্যাটাক নিজেই যেসব মানুষকে ভয় পায়!




হার্ট অ্যাটাকের ভয়ে বিশ্বব্যাপী মানুষ যখন অস্থির, তখন যদি শোনা যায় স্বয়ং হার্ট অ্যাটাকই কোনো কোনো মানুষের কাছ ঘেঁষতে ভয় পায়, তখন খুব অবাক লাগে না?

হ্যাঁ, শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্য যে, হার্ট অ্যাটাক নিজেই কোনো কোনো মানুষের ধারেকাছেও যায় না।

বিষয়টা পরিষ্কার করার জন্য গল্প দিয়ে শুরু করি। আমাদের বাড়ি থেকে তিন-চার বাড়ি দূরের একজন লোক আছেন সুলতান নামে। রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। ধূমপানেও আসক্ত। বয়সের কথায় পরে আসছি। দু’তিন বছর আগে একদিন তাঁর সাথে আলাপকালে আমি তাঁকে কথায় কথায় জিজ্ঞেস করলাম, ‘কত বছর ধরে আপনি ধূমপান করছেন?’ তিনি বললেন ‘আমি যত বছর ধরে রিকশা চালাই, ধূমপান করার বয়সও তত।’ আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘আপনি রিকশা চালান কত বছর ধরে?’ তিনি বললেন, ‘৬৫ বছর ধরে।’

তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আপনার কি হাই ব্লাড প্রেসার আছে?’ তিনি বললেন, ‘আমার হাই প্রেসার, ডায়াবেটিস কিছুই নেই।’

যার হাই ব্লাড প্রেসার নেই, তার হার্ট অ্যাটাক হবারও কোনো সুযোগ নেই।

আরেকজন লোক আছে আমাদের বাড়ি থেকে দুই কিলোমিটার উত্তরে তাঁর বাড়ি। পেশায় যিনি চুল কাটেন, মানে নরসুন্দর। অনেক বছর আগে, আমাদের ছোটবেলায় তিনি আমাদের বাড়ির প্রায় এক কিলোমিটার দক্ষিণে একটা স্পটে চুল কাটার দোকান দিতেন। গত কয়েক বছর ধরে তিনি আমাদের বাড়ি থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দক্ষিণে, মানে তাঁর বাড়ি থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দক্ষিণে আনন্দবাজার নামক স্থানে একটি দোকানে চুল কাটার কাজ করেন।

তিনি কর্মস্থলে কিভাবে যাতায়াত করেন, জানেন?

আমি সেই ছোটকাল থেকেই দেখি, তিনি সাইকেল চালিয়ে কর্মস্থলে আসা-যাওয়া করেন। আমাদের এলাকার অনেকেই তাঁকে চেনেন। তিনি আমাদের বাড়ির সামনে দিয়েও মাঝে মাঝে যাতায়াত করেন।

একদিন তাঁর সাথে কুশল বিনিময় করতে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আপনার বয়স এখন কত?’ তিনি বললেন, ‘৯০ বছরের কম নয়।’ বললাম, ‘আপনার শরীরে কি ডায়াবেটিস বা হাই ব্লাড প্রেসার আছে?’ তিনি স্বস্তির সাথে উত্তর দিলেন, ‘আমার শরীরে এসব কোনো রোগই নেই।’

এই লোকটির ক্ষেত্রেও ওই কথাই প্রযোজ্য, যেহেতু তাঁর শরীরে হাই ব্লাড প্রেসার নেই, তাই তিনি হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হবার প্রশ্নও অবান্তর।

এরকম উদাহরণ আরো আরো আছে। এই দুই জন লোকের বয়সের অর্ধেকেরও কম বয়সী অনেক মানুষ আছেন আমার আত্মীয় ও পরিচিতজনদের মধ্যে, যাদের অনেকে হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন ইতোমধ্যে, অনেকে ডায়াবেটিস, হাই ব্লাড প্রেসার নিয়ে বেশ কষ্টকর জীবন যাপন করছেন। না পারছেন পছন্দের অনেক খাবার খেতে, না পারছেন ঔষধ ছাড়া একটা দিন কাটাতে, না পারছেন সুস্থ ভবিষ্যত নিয়ে ভাবতে।

প্রশ্ন হচ্ছে, ৮০ বছরের বেশি বয়সী এই দুজন মানুষ কেন এখনো হাই ব্লাড প্রেসার বা ডায়াবেটিসেও আক্রান্ত হননি? কেন এখনো হার্ট অ্যাটাকে মারা যাননি, এমনকি আক্রান্তও হননি? অথচ তাঁদের চেয়ে কম বয়সী অসংখ্য মানুষ প্রতিনিয়ত হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হচ্ছে বিশ^ব্যাপী, আমাদের জানাশোনায়ও।

আরো একজন লোকের কথা বলছি। লোকটি কোহিনুর নামে আমার এক জেঠাতো বোনের স্বামী। তাঁর বয়সও সত্তরের কাছাকাছি। কিন্তু এখনো হাই ব্লাড প্রেসার, ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগ কোনোটিই তাঁকে স্পর্শ করতে পারেনি। আমি মাঝে মাঝে তাঁর সাথে এই বিষয় নিয়ে আলাপ করি।

আপনি ভাবুন তো, কেন এই লোকগুলো এই বয়সে এসেও এই রোগগুলো থেকে মুক্ত? আমি এই রোগগুলো নিয়ে পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত অসংখ্য নিবন্ধ-প্রতিবেদন এবং গবেষণা-প্রতিবেদন পড়েছি। অনেক অনেক প্রতিবেদনে বলা হয়, রোগগুলোতে আক্রান্ত হবার জন্য বয়স বেশি হওয়াও দায়ী। বয়স বেশি হলে নাকি রোগগুলো মানুষকে এমনি এমনিই আক্রমণ করে, রোগগুলো হবার অন্য কোনো কারণ না থাকলেও। এই তিনজন লোকের ক্ষেত্রে এই ধরনের মন্তব্য একেবারে ভিত্তিহীন বলেই প্রতীয়মান হয়। এই মন্তব্যটি ভিত্তিহীন বলে প্রমাণিত হয় ঐ দিকে লক্ষ্য করলেও, এখন অনেক অনেক মানুষ ৩৫-৪০ বছর বয়সে নয়, বরং ১৫-২০ বছর বয়স থাকতেই রোগগুলোতে আক্রান্ত হয়।

আপনি খুঁজে দেখুন, এরকম অনেক ঘটনার খোঁজ পাবেন।

কেন কোনো কোনো মানুষকে এই রোগগুলো ৭০ বছর পার হয়ে যাবার পরও আক্রমণ করে না, আবার অনেককে আরো অনেক কম বয়সেই আক্রমণ করে বসে?

কারণ নিশ্চয়ই আছে। উপরে যে তিনজন লোকের বেশি বয়সে এসেও এই তিনটি রোগ থেকে নিরাপদ থাকার বিষয়ে বলা হয়েছে, এরা সবাই কোনো না কোনোভাবে শারীরিক পরিশ্রম করেই দিনের একটা বড় অংশ কাটিয়ে দেন। প্রথমোক্ত জন পায়েচালিত রিকশা চালান এখনো উপার্জনের অবলম্বন হিসেবে, দ্বিতীয়জন দৈনিক প্রায় ১০ কিলোমিটার পথ সাইকেল চালান এবং চুলকাটার কাজেও প্রচুর কর্মশক্তি ব্যয় করেন এবং তৃতীয়জন নিজের ফসলের জমিতে এখনো অনেক কাজ করেন। সবাই শারীরিক পরিশ্রমে নিয়মিত। পরিশ্রমগুলো সাদামাটা নয়, বেশ কষ্টসাধ্য। এজন্য হার্ট অ্যাটাক দূরের কথা, উচ্চ রক্তচাপও তাঁদেরকে কাবু করতে পারেনি।

কিন্তু যারা তাঁর চেয়ে কম বয়সেই রোগগুলোতে আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন, দেখবেন তাদের কেউই শারীরিক পরিশ্রম-নির্ভর কোনো পেশায় যেমন নিয়োজিত নেই, নিজে থেকেও নিয়মিত কোনো ব্যায়াম করছেন না। যার ফলে তাদের শরীরে বেড়ে যায় চর্বি-কোলেস্টেরল।

শরীরে চর্বি যখন শুধু জমা হতেই থাকে, তখন সেই চর্বিতে প্রথমে বাসা বাঁধে হাই ব্লাড প্রেসার, আর সেই হাই ব্লাড প্রেসারের পথ ধরেই শরীরে হামলা করে ডায়াবেটিস এবং হার্ট অ্যাটাক।

আপনি এমন কোনো হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত মানুষ পাবেন না, যিনি নিয়মিত কঠোর শারীরিক পরিশ্রম করা সত্ত্বেও হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়েছেন। আবার এমন কোনো কঠোর শারীরিক পরিশ্রমে নিয়োজিত ব্যক্তি পাবেন না, যিনি হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়েছেন।

এজন্য যারা নিয়মিত বেশি বেশি কঠোর শারীরিক পরিশ্রমের কাজ করে, তাদেরকেই মারাত্মকভাবে ভয় করে হার্ট অ্যাটাক। হার্ট অ্যাটাক এদের ধারেকাছেও যায় না।

আপনিও যদি চান হার্ট অ্যাটাক আপনাকে ভয় করুক, তাহলে নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রমে অন্তত ৪০ মিনিট সময় দিন। হার্ট অ্যাটাককে আপনি আর ভয় করতে হবে না, বরং হার্ট অ্যাটাক নিজেই আপনাকে ভয় করবে। নিশ্চিত।

দীর্ঘজীবন লাভের উপায় শিরোনামে এইটি বই পড়ুন সম্পূর্ণ অনলাইনে, ঘর শুয়ে-বসে। বইটি পড়লে আপনি উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং হার্ট অ্যাটাক এই তিনটি গুরুতর রোগের সঠিক কারণ এবং এই তিনিটি রোগ থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখার সঠিক উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।

Occupation: Teaching, Hobbies: Writing

0 Comments: