দীর্ঘজীবন লাভের উপায় (পর্ব-৫৭) : ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এগুলো কি বয়স বাড়ার সাথে সম্পর্কিত?
রোগগুলো বয়স বাড়ার সাথে সম্পর্কিত নয়, বরং ...
ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং উচ্চ রক্তচাপ এ রোগগুলোকে অনেকে বয়স বাড়ার সাথে সম্পর্কিত করে ফেলেন। বলে থাকেন, বয়স বাড়ার সাথে সাথে রোগগুলো মানুষের শরীরে সৃষ্টি হয়। এরকম কথা শুনলে রোগগুলোতে আক্রান্ত হওয়াকে সবাই ভাগ্যের উপরই ছেড়ে দেবে। মানুষ রোগগুলো থেকে নিজেদেরকে রক্ষার ব্যাপারে হতাশ হবে। রোগগুলো প্রতিরোধের কোনো চেষ্টা করবে না।
jw.org নামক একটি ওয়েবসাইটের বাংলা সংস্করণে প্রকাশিত ব্রাজিলের সচেতন থাক লেখক কর্তৃক লিখিত ‘উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ’ শিরোনামে একটি নিবন্ধের ‘(উচ্চ রক্তচাপের) যে কারণগুলো আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না’ শিরোনামের অনুচ্ছেদে বলা হয়, ‘গবেষকরা আবিষ্কার করেছেন যে, যদি একজন ব্যক্তির আত্মীয়স্বজনদের উচ্চ রক্তচাপ থাকে, তা হলে তার ওই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। পরিসংখ্যান দেখায় যে, যেসব যমজ ব্যক্তি দুটো নিষিক্ত ডিম্ব থেকে জন্ম নিয়েছে তাদের তুলনায় একই নিষিক্ত ডিম্ব থেকে জন্ম নেওয়া ব্যক্তিরা উচ্চ রক্তচাপে বেশি আক্রান্ত হয়। একটা গবেষণা “ধমনীয় হাইপারটেনশনের জন্য জিনের অবস্থান দায়ী” বলে নির্দেশ করে, যার সমস্ত কিছুই বংশগতভাবে পাওয়া উপাদানের অস্তিত্বকে নিশ্চিত করে আর তা উচ্চ রক্তচাপের জন্য দায়ী। এটাও জানা যায় যে, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অস্বাভাবিক উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায় এবং এটা কালো চামড়ার পুরুষদের বেলায় বেশি দেখা যায়।’ [https://wol.jw.org/bn/wol/d/r137/lp-be/102002246]
বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৫৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি। দিবসটি উপলক্ষ্যে ২০১৮ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি দৈনিক যুগান্তরে ‘প্রতিরোধই বাঁচার উপায়’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ লিখেন বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির চিফ কো-অর্ডিনেটর ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ। তাতে তিনি লিখেন, ‘রক্তে শর্করার পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি হলে ডায়াবেটিস রোগ দেখা দেয়। সাধারণত ডায়াবেটিস বংশগত কারণে এবং পরিবেশের প্রভাবে হয়। কখনও কখনও অন্যান্য রোগের ফলেও হয়ে থাকে। এ রোগ সব লোকেরই হতে পারে।... যাদের বংশে রক্ত-সম্পর্কযুক্ত আত্মীয়স্বজনের ডায়াবেটিস আছে, যাদের ওজন খুব বেশি, যাদের বয়স ৪০-এর ওপর এবং যারা শরীরচর্চা করে না-গাড়ি চড়েন এবং বসে থেকে অফিসের কাজকর্মে ব্যস্ত থাকেন, তাদের ডায়াবেটিস হবার সম্ভাবনা বেশি।’
মুক্ত বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়ার বাংলা সংস্করণে বয়স বেশি হওয়াকেও হৃদরোগের একটি কারণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে হৃদরোগ সম্পর্কে একটি পরিচিতিমূলক নিবন্ধে হৃদরোগের ঝুঁকির জন্য যে বিষয়গুলোকে দায়ী করা হয়েছে, তন্মধ্যে প্রথমেই উল্লেখ করা হয়েছে বয়স বেশি হবার কথা। বলা হয়েছে, ‘হৃদরোগের পিছনে বয়স সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়। দেখা গেছে, ৬৫ বছরের বেশি ব্যক্তিদের ৮২ শতাংশ হৃদরোগে মারা গিয়েছেন।’
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হয়, এমন কথা বলছে কলকাতার (ভারত) আনন্দবাজার পত্রিকা। ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখের আনন্দবাজার পত্রিকায় ‘উচ্চ রক্তচাপ? সাবধান!’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি তৈরি করেন রুমি গঙ্গোপাধ্যায়। সেখানে উচ্চ রক্তচাপের ৫টি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে, যার প্রথমটি হলো- ‘বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে (রক্তচাপ বাড়ে)। বয়সের সঙ্গে রক্তচাপ সমানুপাতিক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানাচ্ছে, ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে প্রতি তিন জনের মধ্যে এক জন উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত। বয়স ২০ থেকে ৩০-এর মধ্যে হলে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হন প্রতি ১০ জনের মধ্যে ১ জন। আর পঞ্চাশের কোঠায় বয়স হলে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হন প্রতি ১০ জনে ৫ জন। বয়স ৭০ বা তার বেশি হলে প্রতি দুই জনের মধ্যে এক জনের উচ্চ রক্তচাপ থাকবে।’
৩১ অক্টোবর ২০১৭ তারিখের বাংলাদেশ প্রতিদিনে উচ্চ রক্তচাপ বিষয়ক একটি নিবন্ধ ছাপা হয় ‘উচ্চ রক্তচাপের ১০ কারণ’ শিরোনামে। সেখানে উচ্চ রক্তচাপের ১০টি ‘রিস্ক ফ্যাক্টর’ উল্লেখ করা হয়েছে, যার প্রথমটি হচ্ছে- ‘উচ্চ রক্তচাপের ক্ষেত্রে বয়স একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বয়স বাড়ার সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকিও বাড়ে। বয়স্ক ব্যক্তি হলে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি।’
বয়স বাড়ার সাথে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগের সম্পর্ক আছে, এমন কথার পক্ষে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে নেয়া উপরের বক্তব্যগুলো সম্পর্কে আমি কিছু না বলে প্রথমে কিছু ডাক্তারের বক্তব্য উল্লেখ করছি।
০৯ অক্টোবর ২০১৭ তারিখের প্রথম আলোয় ‘কম বয়সেই উচ্চ রক্তচাপ?’ শিরোনামে একটি লেখা ছাপা হয়, যা লিখেছেন ঢাকার জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শরদিন্দু শেখর রায়। তিনি লেখাটিতে বলেন, ‘অনেকে ভাবেন অল্প বয়সে উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে না। এটা বৃদ্ধদের রোগ। আসলে তা নয়। নানা কারণেই অল্প বয়সে উচ্চ রক্তচাপ দেখা দিতে পারে। ইদানীং অপেক্ষাকৃত কম বয়সে, ৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সের মধ্যেই উচ্চ রক্তচাপ দেখা দিচ্ছে। এ জন্য নানা বদ অভ্যাসও দায়ী। অতি লবণযুক্ত ফাস্ট ফুড, প্রক্রিয়াজাত খাবার, ওজন বৃদ্ধি ও কায়িক শ্রমের অভাব অল্পবয়সী মানুষের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের প্রবণতা বাড়িয়ে দিচ্ছে। ...’
২৪ আগস্ট ২০১৭ তারিখের দৈনিক সমকালে ‘ছোটদের ডায়াবেটিস ও করণীয়’ শিরোনামে একটি লেখা ছাপা হয়, যা লিখেছেন ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. শাহজাদা সেলিম। তিনি বলেন, ‘জীবনযাত্রার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে অল্প বয়সে ডায়াবেটিস রোগ ক্রমশ বাড়তে শুরু করেছে।... কিছুদিন আগেও অল্প বয়সের ডায়াবেটিসকে টাইপ-১ (ইনসুলিননির্ভর) ডায়াবেটিস বলে প্রায় সর্বক্ষেত্রে ধরা হতো। কিন্তু ইদানীং স্থূলকায় শিশুদেরকে টাইপ-২ ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হতে দেখা যাচ্ছে।... বর্তমান তরুণ প্রজন্মের মধ্যে মোটা হওয়ার প্রবণতা অনেক বেড়ে গেছে। কারণ ছোটরা পরিশ্রম ও খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত। খাওয়া-দাওয়া প্রধানত এখন চটজলদি ফাস্টফুড বা ফ্রায়েড চিপস্, চকোলেট। খেলাধুলার বদলে টিভিতে কার্টুন দেখেই সময় কাটায় তারা। আর গতিবিধি ফ্ল্যাটের মধ্যে সীমাবদ্ধ।’
বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় বেসরকারি টিভি চ্যানেল এনটিভির নিয়মিত আয়োজন ‘স্বাস্থ্য প্রতিদিন’ অনুষ্ঠানের ৩০৭৯তম পর্বে কথা বলেছেন জালালাবাদ রাগিব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আয়েশা রফিক চৌধুরী। অনুষ্ঠানটির অলোচ্য বিষয় ছিল ‘অল্প বয়সে হৃদরোগ কেন হয়?’ এনটিভির ওয়েবসাইটে অনুষ্ঠানটির ভিডিওসহ আলোচ্য বিষয়টি প্রকাশ করা হয় ৬ মে ২০১৮ তারিখে। সেখানে ডা. আয়েশা রফিক চৌধুরীকে অল্প বয়সে হৃদরোগের কারণ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আগে আমরা ধরে নিতাম হৃদরোগ বা হার্ট অ্যাটাক শুধু বয়স্কদের সমস্যা। এটা এখন আর বদ্ধমূল ধারণার মধ্যে নেই। দেখা যাচ্ছে, তরুণ প্রজন্ম যারা, যারা ২৫ থেকে ৩৫-এর মধ্যে রয়েছে, একদম তরুণ যাদের আমরা মনে করি, তাদের মধ্যে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে গেছে। এর কারণ হিসেবে দেখা গেছে, অনেক ক্ষেত্রে আমাদের জীবনযাপনটাই বেশি দায়ী। যেমন আমরা বেশিরভাগ সময়ই বসে থাকি, টিভির পাশে অথবা ল্যাপটপে, অথবা মোবাইলে- এই যে সেডেন্টারি জীবনযাপন, অথবা কাজ না করা বা ব্যায়াম না করা, যেটা আমরা ঠিক করতে পারছি না।...’ [https://www.ntvbd.com/health/194191]
বয়স বাড়ার সাথে রোগগুলো সৃষ্টি হবার কথা যারা বলেন, তারা খুব ভালোভাবে চিন্তাভাবনা করে যে কথা বলেন না, মনগড়া কথা বলেন, তা এ তিনজন ডাক্তারের বক্তব্য পড়ে তারা উপলব্ধি করবেন আশা করি। তারা বয়স বাড়ার সাথে সাথে রোগগুলো মানুষের শরীরে জন্ম নেবার কথা যখন বলেন, তখন এ দিকে লক্ষ্য করেন না যে, ইদানিং মানুষ অল্প বয়সেও রোগগুলোতে ব্যাপকহারে আক্রান্ত হতে শুরু করেছে। ‘উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে’ শিরোনামে বিবিসি বাংলায় ১৭ মে ২০১০ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ডা: বদিউজ্জমান বলছেন, সাধারণত ৪০-উর্ধ্ব জনগোষ্ঠীর মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের প্রবণতা দেখা গেলেও এখন আমরা এর চেয়ে কমবয়সীদের মধ্যেও উচ্চ রক্তচাপের প্রবনতা দেখছি।’ [https://www.bbc.com/bengali/news/2010/05/100517_tbbdhypertension]
‘কেন শিশুদের মধ্যে ডায়াবেটিস রোগ বাড়ছে’ শিরোনামে বিবিসি বাংলায় ১৩ অগাস্ট ২০১৭ তারিখে প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘পাঁচ থেকে নয় বছরের বাচ্চাদের মধ্যেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা দেখা যাচেছ।’ [https://www.bbc.com/bengali/news-40916558]
কোন বয়সে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেশি, এ বিষয়ে বাংলাদেশের জনপ্রিয় টিভি চ্যানেল এনটিভির নিয়মিত আয়োজন ‘স্বাস্থ্য প্রতিদিন’ অনুষ্ঠানের ২৯৭১তম পর্বে কথা বলেন কার্ডিওলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. নূর আলম। অনুষ্ঠানটির পুরো আলোচনা ফিচার আকারে প্রকাশিত হয় এনটিভির ওয়েবসাইটে ২০ জানুয়ারি ২০১৮ তারিখে ‘কোন বয়সে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেশি?’ শিরোনামে। আলোচনায় ডা. নূর আলম বলেন, ‘আসলে আগে মনে করা হতো, বয়স কম, হার্ট অ্যাটাক হবে না। মনে করা হতো কম বয়সে হার্ট অ্যাটাক হয় না। সাধারণত প্রবীণদের হার্ট অ্যাটাক হতো, তবে আমরা এখন যেটা দেখছি, তরুণ বয়সেও হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। এটি স্বাভাবিক। তবে ৩০ থেকে ৪৫, এই বয়সে হার্ট অ্যাটাকটা হয়। খুব প্রবীণদের তুলনায় ৪০ থেকে ৫০ বছর বয়সী যারা, তাদের হার্ট অ্যাটাকটা বেশি হয়। তারা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এ বিষয়ে। তবে যেকোনো বয়সেই হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।’
জার্মানীর জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যম ডয়চে ভেলের (বাংলা) ওয়েবসাইটে ১৪.১০.২০১৭ তারিখে ‘ভারতে তরুণ প্রজন্মের পুরুষদের মধ্যে হৃদরোগ বিশ্বে সর্বাধিক’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়, ‘৬৮ শতাংশ কার্ডিওলজিস্ট মনে করেন, হৃদরোগের কোনো বয়স নেই, যে-কোন বয়সেই তা হতে পারে।’ [https://www.dw.com/bn/a-40942842]
সুতরাং এটাই সত্য, রোগগুলো এখন আর মানুষের বয়স বাড়ার জন্য অপেক্ষা করে না, যতো আগে সুযোগ পায়, মানুষকে আক্রমণ করে বসে। ‘সুযোগ’? কী সেই সুযোগ?
এ লেখার একাদশতম পরিচ্ছেদে (হার্ট অ্যাটাক, ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের প্রতিষেধক) সুযোগটির কথা বলা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘মানুষের অলসতা, শারীরিক পরিশ্রম ছেড়ে দেয়া, আরামপ্রিয় লাইফস্টাইল আর শরীরে মেদ-চর্বি বৃদ্ধির সুযোগে যে রোগগুলোর জন্ম, সেগুলোর প্রতিষেধক বিজ্ঞান কিভাবে আবিষ্কার করবে!’ বয়স বাড়ার সুযোগে রোগগুলো মানুষকে আক্রমণ করে না, শারীরিক পরিশ্রম ছেড়ে দেয়ার সুযোগেই রোগগুলো মানুষের শরীরে বাসা বাঁধে।
বয়স বাড়ার পর যদি রোগগুলো মানুষকে আক্রমণ করতো, তাহলে যারা ৬০-৭০ বছর বয়স পর্যন্ত শারীরিক পরিশ্রমের পেশায় নিযুক্ত থাকে, তাদের শরীরে রোগগুলো জন্ম নেয় না কেন? আমাদের দেশে যারা রিকশা (পায়ে চালিত) চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে, বয়স ৭০/৮০ বছর হয়ে গেলেও তাদের কারো শরীরে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ বা উচ্চ রক্তচাপ জন্ম নেয় না। কারণ তারা সারাদিন শারীরিক পরিশ্রম করে, ঘাম ঝরায়; শরীরে চর্বি-কোলেস্টেরল বাড়তে দেয় না।
পক্ষান্তরে যারা আরামে থাকতে পছন্দ করে, বেশি বেশি খায়, স্বাস্থ্যবান (মোটা হওয়াকে আমরা অনেকে স্বাস্থ্যবান মনে করি) হতে পছন্দ করে, শরীরে চর্বি-কোলেস্টেরল জমায়, তারা অনেকে ৩০/৩৫ বছর বয়সেও রোগগুলোতে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। ৬০ বছর বয়সের আগেই এরা অনেকে পৃথিবী ত্যাগ করতেও বাধ্য হয়।
সুতরাং রোগগুলোর সম্পর্ক বয়স বাড়ার সাথে নয়, বরং শারীরিক পরিশ্রমহীন থাকার সাথে; শরীরে চর্বি-কোলেস্টেরল বাড়ার সাথে; বেশি বেশি খাওয়ার সাথে। মনগড়া কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করলে মানবজাতিরই ক্ষতি। মানুষ যতদিন বেশি বেশি শারীরিক পরিশ্রম করবে/পর্যাপ্ত ব্যায়াম করবে, চিকন থাকবে, পরিমিত খাবে, ততদিন রোগগুলো মানুষকে স্পর্শ করার সাহস পাবে না, বয়স যতো বেশি হোক। হাজার বার যাচাই করলেও এই কথাটি ভুল প্রমাণ করা যাবে না।
৫৮তম পর্ব:
https://waytogainlonglife.blogspot.com/2022/09/blog-post_74.html
0 Comments: