Headlines
Loading...
হাঁটাহাঁটি অনেক রোগ থেকে মানুষকে সুরক্ষিত রাখে

হাঁটাহাঁটি অনেক রোগ থেকে মানুষকে সুরক্ষিত রাখে

হাঁটা মানুষকে রোগমুক্ত রাখে 

নূর আহমদ

স্কুলে পঞ্চম শ্রেণীতে একদিন আলোচনা প্রসঙ্গে ডায়াবেটিসের কথা ওঠে আসে। শিক্ষার্থীরা সবাই ডায়াবেটিস সম্পর্কে কমবেশি জানে। ১০ বছর বয়সী শিশুরাও ডায়াবেটিস সম্পর্কে অনেক কিছু জানে। কারণ, প্রায় প্রতিটি ঘরে কেউ না কেউ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। 

শুধু বাংলাদেশই নয়, সারাবিশ্বে এখন ডায়াবেটিসে লাখ লাখ আক্রান্ত হচ্ছে। ১৮ মার্চ ২০১৮ বিবিসি বাংলায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়, ‘কাতারের মানুষের ওজন বেশি হয় কেন?’ শিরোনামে। সেখানে বলা হয়, ‘কাতারে প্রতি দশজনে সাতজনই স্থূলকায় এবং পাঁচজনে একজন ডায়াবেটিসে ভুগছেন।’

‘মধ্যপ্রাচ্যে মুটিয়ে যাচ্ছে মানুষ’ শিরোনামে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় ২৭ মার্চ ২০১৫ প্রথম আলোয়। সেখানে বলা হয়, ‘গবেষকেরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যে বিশেষ করে উপসাগরীয় অঞ্চল, যেমন-কুয়েত, সৌদি আরব, বাহরাইন, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে স্থূলতা ও ডায়াবেটিসের হার বেড়ে গেছে। 

আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশন (আইডিএফ) জানিয়েছে, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় তিন কোটি ৭০ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসের সমস্যায় ভুগছে, যা এ এলাকার মোট জনসংখ্যার নয় দশমিক সাত শতাংশ। অবশ্য ৫০ শতাংশ ক্ষেত্রেই ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা হয় না। আইডিএফের বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আগামী দুই দশকে মধ্যপ্রাচ্যে ডায়াবেটিসের হার দ্বিগুণ হয়ে যাবে। পৃথিবীতে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ প্রাণ হারায় ডায়াবেটিসজনিত জটিলতায়। 

আরেকটা রোগ এখন সমাজে আতঙ্ক হয়ে দেখা দিয়েছে, তা হলো হার্ট অ্যাটাক বা হৃদরোগ। রোগটিতে এখন অসংখ্য মানুষ মারা যাচ্ছে। 

পরিসংখ্যান মতে, বর্তমান বিশ্বে মানুষের মৃত্যুর ৩১ শতাংশই হচ্ছে হার্ট অ্যাটাক বা হৃদরোগে। ‘বছরে হৃদরোগে পৌনে দুই কোটি মানুষের মৃত্যু’ শিরোনামে দৈনিক যুগান্তরে ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বিশ্বে প্রতি বছর ১৭ দশমিক ৫ মিলিয়ন বা পৌনে দুই কোটি মানুষের মৃত্যু ঘটে হৃদরোগে। ৩০-৭০ বছর বয়সী মানুষের প্রতি ১০ জনে একজন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারায়। পৃথিবীর মোট মৃত্যুর ৩১ শতাংশ হয় হৃদরোগে। এ ছাড়া অল্প বয়সে মৃত্যুর ৮০ শতাংশ কারণও হৃদরোগ। এ তথ্য ওয়ার্ল্ড হার্ট ফেডারেশনের।’

আরেকটা মারাত্মক রোগ, যা মানুষের স্বাভাবিক জীবন বিপন্ন করছে, তা উচ্চ রক্তচাপ। রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে মানুষ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। ‘উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ২৫ শতাংশ, বছরে মৃত্যু ৭০ লাখ মানুষের’ শিরোনামে ১৭ মে ২০১৫ দৈনিক জনকণ্ঠে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘রোগের নাম উচ্চ রক্তচাপ। রোগটি আজ বিশ্বব্যাপী নীরব ঘাতক হিসেবে চিহ্নিত। উচ্চ রক্তচাপে হার্ট অ্যাটাক, ব্রেন স্ট্রোক, হৃদরোগ, কিডনি বিকল এবং অন্ধত্ববরণের শিকার হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিশ্বে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে শতকরা ২০ থেকে ২৫ শতাংশ আক্রান্ত হচ্ছে উচ্চ রক্তচাপে। সারা বিশ্বে প্রায় দেড় শ’ কোটি লোক উচ্চ রক্তচাপের শিকার এবং প্রতি বছর এ রোগে মারা যায় প্রায় ৭০ লাখ মানুষ।’

এই তিনটি রোগ একই সূত্রে গাঁথা। রোগ তিনটি সম্পর্কে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত ডাক্তারদের লেখায় অনেক কারণ উল্লেখ করা হয়। বলা হয় চর্বিজাতীয় খাবার বেশি খেলে, মিষ্টি বা চিনি বেশি খেলে রোগগুলো আক্রমণ করে, বংশগতভাবেও নাকি এগুলো অনেকের হয়ে থাকে, বয়স বাড়ার সাথেও রোগগুলোর সম্পর্ক রয়েছে, টেনশন করলেও রোগগুলোতে মানুষ আক্রান্ত হয়, ধূমপান বা মদপান করলেও রোগগুলো হয়। ফাস্টফুড বা জাঙ্কফুড বেশি খাওয়াও রোগগুলোতে আক্রান্ত হওয়ার একটা কারণ ইত্যাদি।

পর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রমই মানুষকে এসব রোগ থেকে অনেকাংশে মুক্ত রাখতে পারে। যারা শারীরিক পরিশ্রম থেকে দূরে থাকতে পছন্দ করেন, তারা রোগগুলোতে আক্রান্ত হচ্ছেন।

যারা রোগগুলোতে আক্রান্ত, তাদের খোঁজ নিলে দেখা যাবে, রোগগুলোতে আক্রান্ত হওয়ার আগে তারা শারীরিক পরিশ্রম থেকে দূরে থাকতেন। আর ওই সব লোকই রোগগুলো থেকে নিরাপদ আছেন, যারা শারীরিক পরিশ্রমের কোনো না কোনো কাজ করেন।

প্রতিরক্ষা বাহিনীতে কর্মরত যারা নিয়মিত পর্যাপ্ত ব্যায়াম করেন, তারা সাধারণত এই তিনটি রোগে আক্রান্ত হন না। যারা রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন, তাদের খুব কমই এসব রোগে আক্রান্ত হন। 

পাশ্চাত্যে যেসব মানুষ ফাস্টফুড বা জাঙ্কফুডে আসক্ত হয়ে রোগগুলোতে আক্রান্ত হচ্ছেন বলে মনে করা হয়, তারা শারীরিক পরিশ্রমের সাথে সম্পর্ক রাখেন না। আবার দেখা যায়, যারা ফাস্টফুড বা জাঙ্কফুড খাচ্ছেন, কিন্তু শারীরিক পরিশ্রমও করছেন, তারা এসব রোগ থেকে অনেকটাই নিরাপদ। সুতরাং রোগগুলোর প্রধান কারণ শারীরিক পরিশ্রম থেকে দূরে থাকা বা পরিমাণে কম করা। শুধু শারীরিক পরিশ্রমই মানুষকে ভয়ঙ্কর এ রোগ তিনটি থেকে বহুলাংশে নিরাপদ রাখতে পারে।

আর কে না জানেন, শারীরিক পরিশ্রমের একটা উপায় হাঁটা। প্রতিদিন যে কোনোভাবে অন্তত এক ঘণ্টা হাঁটলে এসব রোগ থেকে বেঁচে থাকা যেতে পারে। যারা অন্য কোনো উপায়ে শারীরিক পরিশ্রম করতে পারেন, তারা বেশি বেশি না হাঁটলেও চলে। তবে অন্য কোনো উপায়ে শারীরিক পরিশ্রমের সুযোগ না থাকলে, হাঁটার কোনো বিকল্প নেই। হাঁটা একটি সহজ ব্যায়াম। এতে কোনো খরচও নেই, বিরক্তিও আসে কম, শুধু সময় খরচ হয়। বেশি বেশি হাঁটুন, রোগমুক্ত জীবন পেতে সহজ হবে।


লেখক : শিক্ষকnurahmad786@gmail.com


[লেখাটি দৈনিক নয়াদিগন্তে প্রকাশিত হয় ২৯ জানুয়ারি ২০১৯]

Occupation: Teaching, Hobbies: Writing

0 Comments: