Headlines
Loading...
হার্ট অ্যাটাকের মূল কারণ

হার্ট অ্যাটাকের মূল কারণ

 হার্ট অ্যাটাক এবং উচ্চ রক্তচাপের প্রত্যক্ষ ও প্রকৃত কারণ

নূর আহমদ

হৃদরোগকে হার্ট ব্লকেজও বলা হয়, এটা সবার জানা কথা। হার্ট ব্লকেজ কী? হার্ট বা হৃৎপিন্ড কেন ব্লক্ড হয়? কীসের দ্বারা ব্লক্ড হয়? এ প্রশ্নগুলোর উত্তরের মধ্যেই উপরের দু’টি প্রশ্নের উত্তর রয়েছে।

হৃৎপিন্ডের ধমনীতে কোলেস্টেরল বা চর্বি জমে স্বাভাবিক রক্ত চলাচল ব্যাহত হয়। ফলে হৃৎপিন্ডে অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায় এবং বুকে ব্যথাসহ হৃদরোগের নানা উপসর্গ দেখা দেয়। অনেকে প্রথম বার হার্ট অ্যাটাকেই মারা যায়। ভাগ্য সহায় থাকলে অনেকে চিকিৎসা পর্যন্ত বেঁচে থাকে।

হৃৎপিন্ডে এভাবে কোলেস্টেরল বা চর্বি বৃদ্ধি হওয়াজনিত কারণে রক্ত চলাচল ব্যাহত হওয়াই হার্ট ব্লকেজ। যেসব মানুষের শরীরে চর্বি জমতে পারে না, সব সময় শারীরিক পরিশ্রমের কাজে জড়িত থাকার কারণে, তাদের হৃৎপিন্ড তাই কোনো রকম ব্লকেজের সম্মুখীন হয় না। এরকম মানুষগুলো হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি থেকে সব সময় নিরাপদ থাকে। যে কোনো কারণে যতো মানসিক অস্থিরতা এদের জীবনে আসুক না কেন, এরা কখনো হার্ট ব্লকেজ বা হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয় না।

যেসব মানুষের শরীরে চর্বি বেশি, তারা কোনো রকম শারীরিক পরিশ্রমের সাথে সম্পর্ক না রাখলে বা কম রাখলে কোনো রকম টেনশন না করলেও হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়। শরীরে চর্বির পরিমাণ বেশি থাকা এবং শারীরিক পরিশ্রম না করাই হচ্ছে হার্ট অ্যাটাকের প্রত্যক্ষ কারণ। এই দু’টো বৈশিষ্ট্য যাদের, তারা শুধু টেনশন করলে নয়, বেশি আনন্দ করলেও হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হতে পারে। ২০১৮ সালে রাশিয়া বিশ্বকাপে গ্রুপপর্বে আর্জেন্টিনা-নাইজেরিয়া ম্যাচে খেলার একেবারে শেষ দিকে আর্জেন্টিনা যখন জয়সূচক গোল করে, তখন অতি আনন্দে জয়োল্লাস করতে গিয়ে আর্জেন্টিনার এক বাংলাদেশী সমর্থক চেয়ার থেকে নিচে পড়ে যান। এসময় তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন। পরে হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করে। ঘটনার পরদিন ২৭ জুন ২০১৮ তারিখের দৈনিক সমকালে সংবাদটি ‘জয়োল্লাস করতে গিয়ে আর্জেন্টিনা সমর্থকের মৃত্যু’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়। এসব মানুষ বেশি জোরে হাঁটলে বা বেশি পরিশ্রমের কোনো কাজ করলেও হাঁপিয়ে উঠে, কারো কারো তাৎক্ষণিক বুকব্যথা শুরু হয়ে যায় টেনশন না করলেও।

সুতরাং হার্ট অ্যাটাকের জন্য টেনশন প্রত্যক্ষভাবে দায়ী নয়। মানুষের শরীরে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেশি হলে যে কোনো সময় মানুষ হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হতে পারে, টেনশন করলেও, না করলেও। যদি দেখা যায় কোনো বিষয়ে বেশি টেনশন করার কারণে কেউ হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়, তখন টেনশনকে তার হার্ট অ্যাটাকের প্রত্যক্ষ কারণ বলা যাবে না। প্রত্যক্ষভাবে দায়ী হচ্ছে কোলেস্টেরল বেশি হওয়া এবং শারীরিক পরিশ্রমহীনতা। যেভাবে কারো শরীরে এলার্জি দেখা দেয়ার পর এমন কিছু খাবার এড়িয়ে চলতে হয় যেগুলো খেলে এলার্জি মারাত্মক রূপ ধারণ করে, কিন্তু সেসব খাবার খাওয়া তার এলার্জিতে আক্রান্ত হবার জন্য দায়ী নয়।

সুতরাং হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হবার জন্য টেনশন প্রত্যক্ষভাবে দায়ী নয়, প্রত্যক্ষভাবে দায়ী হচ্ছে, শরীরে চর্বি বা কোলেস্টেরল বাড়তে দেয়া, শারীরিক পরিশ্রম থেকে দূরে আরামে আরামে থাকা, মোটা হওয়া, বেশি বেশি খাওয়া ইত্যাদি। যদি সব কারণ বাদ দিয়ে শুধু একটি কারণকে দায়ী করতে হয়, তাহলে দায়ী করতে হবে পর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রম না করাকে। কারণ পর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রম না করলে মানুষ কম খেলেও শরীরে চর্বি জমে যায়।

ঠিক এরকম, যে বৈশিষ্ট্যের লোকগুলোর হার্ট অ্যাটাক হয়, একই বৈশিষ্ট্যের লোকেরই উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস হয়। এ সম্পর্কে পরে আরো বিস্তারিতভাবে আলাদা অধ্যায়ে আলোচনা করা হবে।

অধিকাংশ সময় দেখা যায়, যারা উচ্চ রক্তচাপে ভোগে, তারাই হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হন। মানসিক টেনশন এসব রোগে আক্রান্ত হবার জন্য প্রত্যক্ষভাবে দায়ী নয়। মানসিক টেনশনের সাথে এসব রোগের সম্পর্ক হচ্ছে, যেসব লোক শারীরিকভাবে স্থুল, ভোজনরসিক, আরামপ্রিয় বা কায়িক শ্রমহীন, শরীরে চর্বি-কোলেস্টেরল বেশি, তারা টেনশন করলে দ্রুত এসব রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। টেনশন না করলেও এসব রোগ থেকে রক্ষা পান না।

দু’টি বিষয় লক্ষ্য কর বিষয়টা আরো স্পষ্ট হবে- ১. আমাদের আশপাশে খুঁজলে দেখা যাবে, ব্যক্তিগত জীবনে যারা বেশ সুখী, কোনো বিষয় নিয়ে তেমন কোনো টেনশন নেই, পাশাপাশি শারীরিকভাবে স্থুল, খাওয়া-দাওয়ায় সংযম নেই, শারীরিক পরিশ্রমের কোনো কাজের সাথেও সম্পর্ক নেই, শরীর মেদ-চর্বিতে ভরপুর, তারা ব্যাপকহারে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ২. অন্যদিকে কায়িক পরিশ্রমের কাজই যাদের পেশা, অভাবের কারণে ভালো ভালো খেতে পারেন না সব সময়, শরীরে মেদ-চর্বি জমারও সুযোগ নেই, চিকন শরীর, এমন মানুষদের জীবনে যতো টেনশনেই থাকুক, উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট অ্যাটাক এবং ডায়াবেটিস থেকে এরা মুক্ত থাকে। এই দু’টি বিষয় একটু ভালোভাবে চিন্তা করলেই আশা করি সবাই রোগগুলোর প্রকৃত কারণ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পেয়ে যাবে।

মানুষের জীবনে কমবেশ টেনশন থাকেই। টেনশন নেই, এমন মানুষের সংখ্যা কম। উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ এসবে আক্রান্ত হবার জন্য নিয়মিত কায়িক শ্রম বা ব্যায়াম না করাকে দায়ী না করে টেনশনের ওপর সব দোষ চাপানো হলে এসব রোগের আক্রমণ ও ক্ষতি থেকে আমরা কখনোই নিরাপদ হতে পারবো না।

[এই নিবন্ধটি ‘‘দীর্ঘজীবন লাভের উপায়’’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি বই থেকে নেয়া হয়েছে। পুরো বই অনলাইনে পড়তে হলে এই পেইজে যেতে হবে: https://www.facebook.com/waytogainlonglife/posts/786418842097294]

Occupation: Teaching, Hobbies: Writing

0 Comments: