Headlines
Loading...
উচ্চ রক্তচাপ কি বংশগতভাবেও হয়?

উচ্চ রক্তচাপ কি বংশগতভাবেও হয়?

বংশগতভাবে বা জিনগতভাবে কি উচ্চ রক্তচাপ হয়?

নূর আহমদ

‘উচ্চ রক্তচাপে করণীয়’ শিরোনামে ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ তারিখের দৈনিক যুগান্তরে একটি নিবন্ধ দেখলাম, যা লিখেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাকা) মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ। লেখাটিতে উচ্চ রক্তচাপের কারণ সম্পর্কে তিনি লিখেছেন, ‘৯০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ জানা যায় না, একে প্রাইমারি বা অ্যাসেন্সিয়াল রক্তচাপ বলে।’

বিবিসি বাংলায় ১৭ মে ২০১০ তারিখে প্রকাশিত ‘উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে’ শিরোনামের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উচ্চ রক্ত চাপের কারণ সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায়না, বলছেন বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা। তবে চিকিৎসাবিজ্ঞান উচ্চ রক্তচাপকে বংশগত বিষয় হিসেবেই দেখে থাকে।’

‘উচ্চ রক্তচাপ বংশগত কারণে হয়’, এমন অভিমত ব্যক্তকারী সবার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলছি, আমার মনে হয় অভিমতটি সম্পূর্ণ বাস্তবতা-পরিপন্থী। কোনো ডাক্তার বলতে পারবেন না, তার কোনো ভুল নেই। ডাক্তারদের হাতেই ভুল চিকিৎসায় অনেক রোগী প্রায়ই মারা যায় বা ক্ষতিগ্রস্থ হয়। অনেক রোগীই প্রথমে একজন ডাক্তারের কাছে গিয়ে অনেক সময় সঠিক চিকিৎসা পায় না। পরে অন্য ডাক্তারের কাছে গিয়ে সুচিকিৎসা পায়। এজন্য কোনো ডাক্তার এটা জোর দিয়ে বলতে পারবেন না, তার ধারণায় কোনো ভুল নেই। অনেক গবেষণাও অন্য আরেক গবেষণায় ভুল প্রমাণিত হয়। কারণ? অনেক গবেষণা পদ্ধতি ভুল পন্থায় পরিচালিত হয়। এই লেখায় এ সম্পর্কে আলাদা অধ্যায়ে আলোচনা করা হবে।

যারা মনে করছেন, ‘৯০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ জানা যায় না’ বা ‘উচ্চ রক্তচাপ বংশগত বিষয়’, তাদের অভিমত সম্পর্কে আমি কোনো মন্তব্য না করে সবাইকে বাস্তবতার সাথে তাদের অভিমতটিকে মিলিয়ে দেখার অনুরোধ করছি। বাস্তবতার সাথে মিলিয়ে দেখতে গেলে দেখা যায়, শারীরিক পরিশ্রমের কাজে যারা বেশি বেশি সময় দেন, যারা চিকন এবং যাদের শরীরে চর্বি বাড়তে পারে না, তাদের তেমন কারোই উচ্চ রক্তচাপ নেই। পক্ষান্তরে যারা শারীরিক পরিশ্রমের সাথে সম্পর্কহীন বা সম্পর্ক কম রাখেন, শরীরে চর্বি-কোলেস্টেরল বেশি এবং দীর্ঘদিন ধরে মোটা, তাদের অধিকাংশই উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত। সুতরাং ‘৯০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের কারণ অজানা’ নয়, বরং প্রায় শতভাগ ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের কারণ দিবালোকের মতো পরিষ্কার। আর তা হলো মুটিয়ে যাওয়া, ক্ষুধা লাগতে না লাগতেই পেটভরে খাওয়া ও শারীরিক পরিশ্রম তেমন না করে আরামপূর্ণ জীবন যাপন করা।

‘উচ্চ রক্তচাপে করণীয়’ লেখাটিতে লেখক উচ্চ রক্তচাপের কারণ হিসেবে বংশগত ধারাবাহিকতার কথাও বলেছেন। কথাটি আমরা বাস্তবতার সাথে একটু মিলিয়ে দেখি। পঞ্চাশ বছর বয়সী একজন লোকের উচ্চ রক্তচাপ দেখা দিল। সে ভাবতে লাগলো, কোত্থেকে, কেন তার উচ্চ রক্তচাপ দেখা দিল? পরিচিত কারো সাথে বিষয়টা নিয়ে আলাপ করলো। জানতে পারলো, উচ্চ রক্তচাপ বংশগত কারণেও হয়ে থাকে। সে তৎক্ষণাৎ মিলিয়ে দেখলো, তার বাবা/মাও শেষ বয়সে উচ্চ রক্তচাপে ভুগেছেন। সে তখন নিশ্চিত হয়, ঠিক আছে, আমার উচ্চ রক্তচাপ বংশগত কারণেই হয়েছে।

আমাদের সরল চিন্তা। খুব সহজেই আমরা অনেক সমীকরণ মিলিয়ে ফেলি। কিন্তু অনেক সময় বড় ধরনের ফাঁক যে থেকে যায়, সেদিকে লক্ষ্য করি না। কাল্পনিক এ লোকটির মতো আমরা অনেকেই উচ্চ রক্তচাপকে বংশগত রোগ মনে করি। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, বাবা-মা কারো উচ্চ রক্তচাপ না থাকলেও এখন অনেকে নিজের উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হবার জন্য বংশগত কারণকেই দায়ী মনে করেন!

এবার আসি বাস্তবতার সাথে মিলিয়ে দেখার কথায়। যে লোকটি নিজের উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হবার জন্য নিজের বাবার উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হওয়াজনিত কারণকে দায়ী করলো, সে কি ভেবে দেখেছে, তার বাবা কত বছর বয়সে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হয়েছে? সে যদি বিষয়টা ভাবতো, দেখতো, তার বাবা হয়তো উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হয়েছে ষাট বা সত্তর বছর বয়সে (কারণ প্রথম প্রথম অধিকাংশ মানুষ ষাট-সত্তর বছর বয়স পার হলেই উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হতো), তার জন্মের অনেক অনেক বছর পর। অর্থাৎ লোকটি যখন জন্মগ্রহণ করে, তখন তার বাবার উচ্চ রক্তচাপ ছিল না। তার জন্মের সময় যে রোগ তার বাবার ছিল না, তার জন্মের অনেক বছর পর তার বাবার শরীরে দেখা দেয়া রোগটি তার শরীরে সংক্রমিত হলো কী করে?! এমনও হতে পারে, লোকটির বয়স যখন পঞ্চাশ, লোকটির বাবা হয়তো তখন জীবিতও নেই, তখন তার বাবার উচ্চ রক্তচাপ তার শরীরে সংক্রমিত হলো কী করে?! এটা কি সত্যিই সংক্রমণ? কেমন সংক্রমণ? বংশগত? বায়ুবাহিত? পানিবাহিত?!

শুধু উচ্চ রক্তচাপ নয়, ডায়াবেটিসকেও মানুষ বংশগত রোগ মনে করে ঠিক একই রকমভাবে। একজন লোকের বাবা বৃদ্ধ বয়সে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলো। বাবা মারা যাবার পর যখন তার ডায়াবেটিস দেখা দিলো, সে ধরে নিলো, তার বাবার ডায়াবেটিস থাকার কারণেই তার ডায়াবেটিস হয়েছে। লোকটির বাবা যদি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হবার আগে অন্য কোনো রোগ বা দুর্ঘটনায় মারা যেতো, তাহলে লোকটি (সন্তান) আর ডায়াবেটিস হতো না, এটা কি নিশ্চিত? একটা কথা মনে রাখলে কেউ এরকম বিভ্রান্তিতে পড়বে না, সন্তানের শরীরে বাবা-মায়ের শরীর থেকে ঐ সমস্ত রোগ সংক্রমিত হতে পারে, যেসব রোগ সন্তান গর্ভধারণের সময় বা সন্তানকে দুধ খাওয়ানোর সময় বাবা-মায়ের শরীরে থাকে। সন্তান জন্ম ও সন্তানকে দুধ খাওয়ানো শেষ হবার পর বাবা-মা যদি কোনো রোগে আক্রান্ত হয়, সে রোগ সন্তানের শরীরে সংক্রমিত হতে পারে না।

লবণ খেলেও উচ্চ রক্তচাপ হয় বলে অনেকে বলে থাকেন বা মনে করেন। এ সম্পর্কে আলাদা অধ্যায়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

[ এই নিবন্ধটি ‘‘দীর্ঘজীবন লাভের উপায়’’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি বই থেকে নেয়া হয়েছে। পুরো বই অনলাইনে পড়তে হলে এই পেইজে যেতে হবে: https://www.facebook.com/waytogainlonglife/posts/786418842097294]

Occupation: Teaching, Hobbies: Writing

0 Comments: