Headlines
Loading...
টেনশনেই কি মানুষ হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়?

টেনশনেই কি মানুষ হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়?

টেনশনে কি হার্ট অ্যাটাক বা হৃদরোগ হয়?

নূর আহমদ

বর্তমান বিশ্বে যে রোগগুলোর কাছে মানুষ সবচেয়ে বেশি পরাজিত, মানুষের অকালমৃত্যুর জন্য যে রোগগুলো সবচেয়ে বেশি দায়ী, তন্মধ্যে ক্যান্সার, স্ট্রোক এবং হার্ট অ্যাটাক অন্যতম। আবার ক্যান্সার এবং স্ট্রোকে যে মৃত্যুগুলো হয়, সেগুলোর সাথে হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর তুলনা করা হলে আমার মনে হয়, ক্যান্সার ও স্ট্রোকে মৃত্যুর চেয়েও হার্ট অ্যাটাকে বিশ্বব্যাপী মানুষের মৃত্যু অনেক অনেক বেশি ঘটে।

আমাদের পরিচিত যে মানুষগুলো ইতোমধ্যে হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন বা এখন হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত, সে মানুষগুলোর সংখ্যার সাথে আমাদের পরিচিত যারা ক্যান্সার ও স্ট্রোকে মারা গেছেন বা এসবে আক্রান্ত, সে মানুষগুলোর সংখ্যার তুলনা করা হলে সবার নিকট পরিষ্কার হবে, হার্ট অ্যাটাক অন্য সব রোগের চেয়ে বর্তমান বিশ্বে মানুষের মৃত্যুর পেছনে বেশি প্রভাব ফেলে।

পঁয়ত্রিশ বছরের কাছাকাছি বয়সের আমাদের এক আত্মীয় মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত অবস্থায় বছর দুয়েক আগে হার্ট অ্যাটাকে আকস্মিক মৃত্যুবরণ করেন। পারিবারিক কিছু বিষয় নিয়ে তিনি অনেক সময় টেনশন করতেন বলে সবাই তাঁর এ হার্ট অ্যাটাকের জন্য টেনশনকেই দায়ী করলো। এরকম হার্ট ব্লক্ড হয়ে বা হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুবরণকারী অধিকাংশ মানুষের মৃত্যুর জন্য আমরা চোখ বন্ধ করে টেনশনকেই দোষারোপ করি, টেনশন ছাড়া অন্য কিছু তাদের হার্ট অ্যাটাকের জন্য দায়ী ছিল কিনা, তা ভেবে দেখার তেমন একটা প্রয়োজন বোধ করি না।

‘মানসিক অস্থিরতা বা টেনশনে হার্ট অ্যাটাক হয়’, এমন কথা সমাজে এতো ব্যাপকভাবে প্রচলিত, মনে হয়, হার্ট অ্যাটাকের একমাত্র কারণ মানসিক অস্থিরতা বা টেনশন। মনে হয়, যেসব মানুষ বেশি বেশি টেনশন করে বা মানসিক অস্থিরতায় ভোগে, তারাই কেবল হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয় বা মারা যায়, আর যাদের তেমন কোনো মানসিক অস্থিরতা বা টেনশন নেই, তারা হার্ট অ্যাটাক থেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ থাকে। এই হিসেবে- ১. সমাজের নিরীহ, হতদরিদ্র এবং খেটে খাওয়া মানুষগুলোরই বেশি বেশি হার্ট অ্যাটাক হবার কথা। কারণ অভাব, সংকট এবং নানা রকম দুশ্চিন্তা তাদেরই নিত্যসঙ্গী। যাদের জীবনে সুখ নেই, সারাক্ষণ সুখ এবং অর্থের পেছনে যারা ছোটে, মানসিক অস্থিরতা তো তাদেরই বেশি। সুতরাং তারাই বেশি বেশি হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হবার কথা। ২. পক্ষান্তরে যাদের জীবন প্রাচুর্যে ভরপুর, জীবনে যারা সুখী, যারা বিত্তশালী ও সৌভাগ্যবান, তারা কোনোভাবে হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হবার কথা খুব কম! কারণ তাদের তো তেমন কোনো মানসিক অস্থিরতা বা টেনশন নেই!

বিষয়টা কি বাস্তবেই এমন?

যদি একটুও বাড়িয়ে না বলি, আমার মনে হয়, যেসব মানুষ ব্যক্তিগত জীবনে সুখী, যাদের অভাব কম, মানসিক অস্থিরতা যাদের জীবনে খুব কম, তারাই বেশি বেশি হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয় বা মারা যায়। এমন অসংখ্য ঘটনা আমার জানা আছে, উল্লেখ করা অনাবশ্যক। কারণ উদাহরণ শুধু আমার চোখের সামনেই নেই, সবার চোখের সামনেই এমন অসংখ্য ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটে চলছে। দেখা যায়, অর্থবিত্তের মালিক সুখী মানুষরাই বিশ^ব্যাপী বেশি হার্ট অ্যাটাক বা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়, মারা যায়। বিশ্বের অনেক অনেক বিখ্যাত, গুরুত্বপূর্ণ লোক হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাবার সংবাদ প্রায়ই পত্রিকায় চোখে পড়ে। আমার বুঝে আসে না, প্রতিনিয়ত অসংখ্য সুখী, বিত্তশালী ও সফল মানুষ আমাদের চোখের সামনে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যেতে দেখার পরও আমরা হৃদরোগের জন্য কেন একতরফাভাবে মানসিক অস্থিরতাকে দায়ী করি!

আসলেই পৃথিবীতে অনেক কিছু সহজে কাউকে বুঝিয়ে বলা সম্ভব হয় না বা যতো সহজ ও স্পষ্ট করেই বুঝিয়ে বলা হয়, অনেকে বুঝতে চান না, প্রচলিত ধারণা থেকে বের হয়ে আসতে পারেন না। বিশেষত কোনো ব্যাপক প্রচলিত বদ্ধমূল ধারণা ভুল প্রমাণ করতে গেলে বিষয়টা আরো বেশি কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। মানুষ কথায় কথায় পাল্টা যুক্তি দাঁড় করায়। এক্ষেত্রে অনেকে আমার কথাকে সম্পূর্ণ নাকচ করে দিয়ে বলবে, “ঠিক আছে, ‘কিছু কিছু’ সুখী মানুষও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়। কিন্তু এরাও আক্রান্ত হয় সেই টেনশনের কারণেই। কারণ সুখী মানুষরাও অনেক সময় মানসিক অস্থিরতায় ভোগে। বিপদাপদ সবার জীবনেই কমবেশ থাকে। সুতরাং ধনী বা দরিদ্র, সুখী বা অসুখী সবার ক্ষেত্রেই হৃদরোগের কারণ একটাই- মানসিক অস্থিরতা।”

মানসিক অস্থিরতা বা টেনশনকে যারা এভাবে একতরফাভাবে হার্ট অ্যাটাকের জন্য দায়ী মনে করেন, তাদের নিকট প্রশ্ন- ১. যেসব লোক শারীরিক পরিশ্রমের পেশায় নিয়োজিত, বছরের পর বছর ধরে নিয়মিত দৈনিক চার-পাঁচ ঘন্টা বা তার চেয়ে বেশি সময় ঘামঝরানো শারীরিক পরিশ্রম করে আসছেন, তাদের কাউকে কখনো হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হতে দেখা যায়? ২. তাদের কারো জীবনে কি তাহলে কোনো টেনশন বা মানসিক অস্থিরতা নেই?

আমার মনে হয়, কোনো সচেতন মানুষই প্রথম প্রশ্নটির উত্তরে ‘হ্যাঁ’ বলতে পারবেন না এবং দ্বিতীয় প্রশ্নটির উত্তরে ‘নেই’ বলতে পারবেন না।

বরং আমার ছোট্ট পর্যবেক্ষণে মনে হয়, জীবনে অভাব, বিপদ, দুঃখ, হতাশা তেমন একটা নেই, এমন সুখী মানুষগুলোই হৃদরোগে আক্রান্ত হয় বেশি বেশি। অন্য যারা আক্রান্ত হয়, তারা টেনশনে আক্রান্ত হয় বলে বাহ্যিক দৃষ্টিতে মনে হলেও টেনশন তাদের হৃদরোগের জন্য প্রত্যক্ষভাবে দায়ী নয়।

প্রশ্ন হচ্ছে- ১. তাহলে হৃদরোগের প্রত্যক্ষ কারণ কী? ২. জীবনে অভাব, বিপদ, দুঃখ, হতাশা তেমন একটা নেই, এমন সুখী মানুষরা কেন বেশি বেশি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়? এরা তো বরং হৃদরোগ থেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ থাকারই কথা, কারণ তেমন কোনো টেনশনে এদের পড়তে হয় না?


[এই নিবন্ধটি ‘‘দীর্ঘজীবন লাভের উপায়’’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি বই থেকে নেয়া হয়েছে। পুরো বই অনলাইনে পড়তে হলে এই পেইজে যেতে হবে: https://www.facebook.com/waytogainlonglife/posts/786418842097294]

Occupation: Teaching, Hobbies: Writing

0 Comments: