যৌন দুর্বলতার ৬টি প্রধান কারণ
যৌন দুর্বলতার ৬টি প্রধান কারণ
নূর আহমদ
যৌন দুর্বলতা বিশ্বব্যাপী মানুষের একটি বড় সমস্যার নাম। কোটি কোটি মানুষ এই সমস্যায় ভুগছেন। এটা এমন এক সমস্যা, যা সবার নিকট প্রকাশ করা যায় না। এটা এমন এক সমস্যা, যেই সমস্যায় আক্রান্ত হলে শারীরিক কোনো কষ্ট হয় না, তবে মনের উপর সব সময় একটা চাপ থাকে। বিয়ের আগে যারা এই সমস্যায় ভোগে তারা বিয়ে করতে ভয় পায় আর বিয়ের পর যারা এই সমস্যায় ভোগে তারা শুধু সঙ্গীকে তৃপ্তি দিতে পারে না, তা নয়, নিজেরাও তৃপ্তি পায় না। যৌন দুর্বলতায় ভোগা মানুষের নিকট পৃথিবীর প্রতি এক ধরনের বিতৃষ্ণা সৃষ্টি হয়। জীবন যাপনে তারা হতাশা অনুভব করেন।
আসুন আমরা জেনে নিই মানুষ কেন যৌন দুর্বলতায় আক্রান্ত হয়? শেষে আমরা জানবো কিভাবে যৌন শক্তি ধরে রাখা যায় এবং যৌন দুর্বলতা দূর করা যায়।
বেশ কিছু কারণে মানুষ যৌন দুর্বলতায় আক্রান্ত হয়ে থাকে।
এক. বিয়ের আগে যারা যৌন দুর্বলতায় আক্রান্ত হয়, তারা দুটি বিশেষ কারণে এই সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে থাকে। দুটি কারণের প্রথমটি হচ্ছে হস্তমৈথুন। বিয়ের আগে অনেকে জৈবিক চাহিদা পূরণের বিকল্প হিসেবে হস্তমৈথুন করে থাকে। এটা করে মানুষের যৌন শক্তির ওপর বড় আঘাত সৃষ্টি হয়, যাতে স্বাভাবিক যৌন ক্ষমতা কমে যায়। এটা খুব বাজে এবং আত্মঘাতি একটি অভ্যাস।
বিয়ের আগে যৌন শক্তি কমে যাবার আরেকটি বড় কারণ হচ্ছে স্বপ্নদোষ কমানোর জন্য ঔষধ সেবন। অনেক তরুণ ঘন ঘন স্বপ্নদোষ হবার কারণে খুবই বিরক্তি বোধ করে। অনেকে শারীরিকভাবে দুর্বলও হয়ে যায়। তাই স্বপ্নদোষ কমানোর জন্য বিভিন্ন রকম ঔষধ সেবন করে থাকে। যার ফলে তাদের স্বাভাবিক যৌন ক্ষমতা কমে যায়। এটা মনে রাখতে হবে, স্বপ্নদোষ একটি স্বাভাবিক শারীরিক প্রক্রিয়া, যা মোটেই কোনো রোগ নয়। যৌবনের শুরুতে অনেকের এটা বেশি বেশি হয়ে থাকে। সময়ে কমেও যায়। যারা এটা কমানোর জন্য ঔষধ সেবন করেন তারা নিজের অজান্তে নিজেরই ক্ষতি করেন। যদি আপনার স্বপ্নদোষ বেশি বেশি হয়, বুঝে নিতে হবে, আপনার যৌন ক্ষমতা খুব ভালো অবস্থায় আছে। আপনি স্বপ্নদোষ কমানোর জন্য কখনোই কোনো ব্যবস্থা নেবেন না। যদি এতে শরীর দুর্বল হয়ে যায়, আপনি ভালো ভালো খাবার খান, ভিটামিন খান। কোনোভাবে স্বপ্নদোষ কমানোর চেষ্টা করবেন না।
দুই. বিয়ের পর মানুষের যৌন ক্ষমতা কমে যাবার বেশ কিছু কারণ রয়েছে। প্রথম কারণ হলো যেসব স্বামী—স্ত্রী সবসময় একই সাথে থাকেন, কারো কাছ থেকে কেউ দীর্ঘ দিন ধরে দূরে থাকেন না, বিয়ের কয়েক বছর পর তাদের যৌন ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমে যায়। এটা খুবই স্বাভাবিক। কারণ একটা শক্তি যতো খরচ হবে, তা ততো দুর্বল হতে থাকবে। এজন্য যেসব দম্পতি সবসময় একত্রে বসবাস করেন না, তাদের যৌন ক্ষমতা সহজে কমে যায় না। কারণ তাদের এই শক্তি খরচ হয় কম। তাই যারা একত্রে বসবাস করছেন আর যৌন শক্তি কমে গেছে, তারা ভাববেন না এটা কোনো রোগ। কারণ এই দুর্বলতা যৌনশক্তি বেশি খরচের ফসল।
বিয়ের পর যৌন দুর্বলতায় ভোগার আরেকটি কারণ গ্যাস্ট্রিক ও কোষ্ঠকাঠিণ্য। গ্যাস্ট্রিক ও কোষ্ঠকাঠিণ্যে আক্রান্ত হলে মানুষের খাওয়ার রুচি কমে যায়, মানুষের পায়খানা নিয়মিত হয় না, ফলে মানুষ যা খায়, তা যথাসময়ে হজম হয় না। যার ফলে খাবার থেকে শরীরে শক্তি সরবরাহ হয় না। তাই মানুষের যৌন শক্তি কমে যায়। এই বিষয়টা অনেকে বুঝতে পারেন না, যারা গ্যাস্ট্রিক ও কোষ্ঠকাঠিণ্যে আক্রান্ত হবার পাশাপাশি যৌন দুর্বলতায়ও ভুগছেন। দেখা যায়, যাদের গ্যাস্ট্রিক ও কোষ্ঠকাঠিণ্য তেমন নেই, খাবারে রুচি ঠিকঠাক আছে, সময়মতো তীব্র ক্ষুধা লাগে, তাদের যৌন শক্তি সহজে কমে না।
বিয়ের পর যৌন দুর্বলতায় ভোগার আরেকটি বড় কারণ হাই ব্লাড প্রেসার বা ডায়াবেটিস এই রোগগুলোতে আক্রান্ত হওয়া। যারা এই রোগগুলোতে আক্রান্ত হন, তাদের কর্মশক্তি একেবারে কমে যায়। কর্মশক্তি কমে গেলে যৌনশক্তিও কমে যাবে, এটাই স্বাভাবিক। এই রোগগুলোতে আক্রান্ত মানুষ অল্প পরিশ্রমেই হাঁপিয়ে ওঠে। তাই এরা যৌন দুর্বলতায় ভোগেন।
যৌন দুর্বলতায় ভোগার সর্বশেষ কারণ বয়স বেশি হওয়া। মানুষের বয়স যতো বাড়ে, মানুষ শারীরিকভাবে ততো দুর্বল হয়ে যায়। বয়স বেশি হলে যৌনশক্তিও বেশি খরচ হয়। তাই বয়স বেশি হবার সাথে যৌন দুর্বলতার সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে।
যৌন দুর্বলতা থেকে মুক্তি পাবার চেয়ে যৌন দুর্বলতা রোধ করাটা থাকা সহজ।
প্রথমে আমরা যৌন দুর্বলতা থেকে নিরাপদ থাকার উপায় নিয়ে আলোচনা করবো।
যারা অবিবাহিত, কোনোভাবে হস্তমৈথুন করবেন না এবং স্বপ্নদোষ ঘন ঘন হলে তা কমানোর জন্য কোনো ঔষধ খাবেন না।
আর যারা বিবাহিত, তারা কোষ্ঠকাঠিণ্য এবং গ্যাস্ট্রিক থেকে নিরাপদ থাকার জন্য তরকারিতে তেল খাওয়া কমিয়ে দিন এবং প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর দুই গ্লাস পানি পান করুন। আপনি কোষ্ঠকাঠিণ্য এবং গ্যাস্ট্রিক থেকে নিরাপদ থাকবেন।
আর হাই ব্লাড প্রেসার ও ডায়াবেটিস থেকে নিরাপদ থাকার জন্য প্রতিদিন চল্লিশ মিনিটের বেশি সময় ঘামঝরানো কায়িক শ্রম করুন। আপনার শরীরে চর্বি কোলেস্টেরল জমবে না, ফলে আপনি এই দু’টি রোগ থেকে বেঁচে থাকবেন। শুধু এই দু’টি রোগ থেকে নয়, আপনি হার্ট অ্যাটাক থেকেও নিশ্চিতভাবে নিরাপদ থাকবেন। আর এই রোগগুলো থেকে নিরাপদ থাকলে আপনার যৌনশক্তিও সতেজ থাকবে।
আর বেশি বয়সেও যৌনশক্তি ধরে রাখার জন্য করণীয় হচ্ছে নিয়মিত পর্যাপ্ত কায়িক শ্রম বা ব্যায়াম করা। শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম নিজেই মানুষের কর্মশক্তি সতেজ রাখে। নিয়মিত ব্যায়ামে আপনার কর্মশক্তি অটুট থাকার পাশাপাশি যৌনশক্তিও অটুট থাকবে।
বিয়ের পর যৌন শক্তি ধরে রাখার আরেকটি উপায় হচ্ছে স্বামী স্ত্রী মাঝে মাঝে দূরে থাকা। তবে একটানা বেশি সময় ধরে নয়। যৌন শক্তি ধরে রাখার জন্য বা যৌন দুর্বলতা কমানোর জন্য কিছু খাবার খেতে পারেন নিয়মিত। যেমন: জাফরান, দুধ, মধু, খেজুর, ডিম ইত্যাদি খাবার। দুধ, মধু, খেজুর, ডিম এসব খাবারের উপকারীতার কথা আমরা অনেকেই জানি। জাফরানের কথা একটু বলে নিই। যৌনশক্তি বৃদ্ধি ও যৌন ইচ্ছাকে স্বাভাবিক রাখতে জাফরানের ভূমিকা অনস্বীকার্য। জাফরান যেমন মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে তেমনই এটি রক্তে ইস্ট্রোজেন, সেরোটোনিন ও অন্যান্য ফিল—গুড হরমোন ক্ষরণে সাহায্য করে। তাই অনেক ফিটনেস এক্সপার্টই দুধে জাফরান মিশিয়ে খাওয়ার পক্ষপাতী। লিবিডো বৃদ্ধিতে এই খাবার বিশেষ উপকারী।
নূর আহমদ
ফিটনেস বিষয়ক গবেষক ও লেখক
0 Comments: