ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগ এগুলো বংশগত ভাবে হয় না
ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগ এগুলো বংশগত ভাবে হয় না
নূর আহমদ
বিশ্বের প্রায় সব গবেষণার ফলাফল এবং ডাক্তারের মতামত হলো ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগ এই রোগগুলোর একটা প্রধান কারণ বংশের কারো থাকা। বাবা-মা বা পূর্বপুরুষদের কারো থাকলে নাকি সন্তানের এই রোগগুলো হবার সম্ভাবনা খুব বেশি।
‘উচ্চ রক্তচাপে করণীয়’ শিরোনামে দৈনিক যুগান্তরে ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ তারিখে প্রকাশিত একটি লেখায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ উচ্চ রক্তচাপের কারণ সম্পর্কে প্রথমে বলেন, ‘৯০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের কোনো নির্দিষ্ট কারণ জানা যায় না, একে প্রাইমারি বা অ্যাসেন্সিয়াল রক্তচাপ বলে।’ পরে উচ্চ রক্তচাপের আশংকা বাড়ায়, এমন কিছু বিষয়ের উল্লেখ করতে গিয়ে প্রথমেই বলেন, ‘উচ্চ রক্তচাপের বংশগত ধারাবাহিকতা আছে, যদি বাবা-মায়ের উচ্চ রক্তচাপ থাকে, তবে সন্তানেরও উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার আশংকা থাকে।’
বাংলাদেশ প্রতিদিনে ২১ জুলাই ২০১৭ তারিখে ‘বংশগত কারণে কি হৃদরোগ হয়?’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি লেখায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট (কার্ডিওলজি) ডা. এম শমশের আলী বলেন, ‘বাবা অথবা মা যে কোনো একজনের কার্ডিওমাইওপ্যাথি রোগ থাকলে ৫০ ভাগ ছেলেমেয়ে এ রোগে আক্রান্ত হবে এটা স্বতঃসিদ্ধ।
কিছুদিন আগে এক রোগী দেখলাম। বয়স ৪০ থেকে ৪২ বছরের মতো হবে। পুরুষ মানুষ, স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। ভদ্রলোক বিগত চার-পাঁচ দিন যাবৎ বুকে ও পিঠে চাপের মতো অনুভব করছেন এবং স্বামী-স্ত্রী দুজনেই এতে বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।
সামান্য বুক-পিঠ ব্যথায় এত বেশি উদ্বিগ্নতা দেখে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম ২-৩ মাস আগে তার বড় ভাই হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুবরণ করেছেন এবং দুই বছর আগে তার জন্মদাতা পিতাও হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এখন নিশ্চয়ই আর বুঝতে বাকি থাকল না যে, তাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ বিদ্যমান। বেশকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর এটা স্পষ্ট হলো যে, রোগীর হার্টের দেয়াল পুরু হয়ে গেছে, তাও আবার সাধারণ মানুষের হার্টের দেয়ালের তুলনায় প্রায় দেড়গুণ। এ ধরনের সমস্যাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় কার্ডিওমাইওপ্যাথি বলা হয়। সচরাচর এসব রোগী সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে থাকেন বা তারা নিজেরাও কখনো হার্টের অসুস্থতার কোনোরূপ লক্ষণ তার শরীরে বিদ্যমান আছে, তা অনুভব করেন না। তবে এসব রোগী যদি কখনো অতিমাত্রায় পরিশ্রম করতে যান, তখন কারও কারও বুকে চাপ বা ব্যথা অনুভূত হতে পারে বা অত্যধিক ক্লান্ত হয়ে যেতে পারে, আবার এ সময় অনেকের বুক ধড়ফড় বা মাথা ঘোরাতে পারে। এ ধরনের লক্ষণকে সব সময় মারাত্মক হিসেবে গণ্য করতে হবে এবং দ্রুততার সঙ্গে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। কার্ডিওমাইওপ্যাথি এমন এক ধরনের হৃদরোগ যাকে পুরোপুরি বংশগত হৃদরোগ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে এবং বংশগত অনেক হৃদরোগের মধ্যে কার্ডিওমাইওপ্যাথিতে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হয়ে থাকে। বাবা অথবা মা যে কোনো একজনের কার্ডিওমাইওপ্যাথি রোগ থাকলে ৫০ ভাগ ছেলেমেয়ে এ রোগে আক্রান্ত হবে এটা স্বতঃসিদ্ধ।’
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ তারিখে দৈনিক যুগান্তরে ‘ডায়াবেটিস সচেতনতা দিবস’ (বাংলাদেশ) উপলক্ষ্যে ‘প্রতিরোধই বাঁচার উপায়’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়, যা লিখেছেন বাংলাদেশের সাবেক সচিব, এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান; বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির চিফ কো-অর্ডিনেটর ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ। তিনি সেখানে লিখেন, ‘রক্তে শর্করার পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি হলে ডায়াবেটিস রোগ দেখা দেয়। সাধারণত ডায়াবেটিস বংশগত কারণে এবং পরিবেশের প্রভাবে হয়।...যাদের বংশে রক্ত-সম্পর্কযুক্ত আত্মীয়স্বজনের ডায়াবেটিস আছে, যাদের ওজন খুব বেশি, যাদের বয়স ৪০-এর ওপর এবং যারা শরীরচর্চা করেন না- গাড়ি চড়েন এবং বসে থেকে অফিসের কাজকর্মে ব্যস্ত থাকেন, তাদের ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।’
তাছাড়া বিভিন্ন ডাক্তারের কাছে কোনো ডায়াবেটিস রোগী গেলে প্রায় সব ডাক্তার খুব কমন একটি প্রশ্ন করেন রোগীকে, ‘আপনার বাবা-মা কারো কি ডায়াবেটিস ছিল?’ রোগী ‘হ্যাঁ’ বললেই হলো। ডাক্তার নিশ্চিন্তে এরকম কথা বলে ফেলেন, ‘আপনার রোগটি তাহলে বংশগত।’ ডাক্তারদের এই মন্তব্যগুলো সমাজে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। এখন অসংখ্য মানুষ ডায়াবেটিস রোগটিকে বংশগতই মনে করছে। কিন্তু সত্যিই কি তা-ই?
এক. যারা বলে থাকেন রোগ তিনটি বংশগত কারণে অনেকের হয়ে থাকে, তাদের কেউ কি এটা অস্বীকার করেন, এই তিনটি রোগের জন্য শরীরে কোলেস্টেরলের আধিক্য প্রধান দায়ী?
যদি অস্বীকার না করেন, তাহলে বলতে হবে, যেসব মানুষের বাবা-মা বা বংশের পূর্ব-পুরুষের কেউ রোগগুলোতে আক্রান্ত হয়েছে, যদি সেসব মানুষ শৈশব থেকেই বা রোগগুলোতে আক্রান্ত হবার আগেই যে কোনো উপায়ে শরীরে কোলেস্টেরল বাড়তে না দেয় (যেমন: নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণ ব্যায়াম করার ফলে বা কায়িক শ্রমের পেশায় জড়িত থাকার কারণে এমনিতেই দৈনিক পাঁচ-ছয় ঘন্টা কায়িক শ্রম হয়ে যায়, যার ফলে ওদের শরীরে কোলেস্টেরল বাড়তে পারে না), তবুও কি তাদের শরীরে তাদের পূর্বপুরুষের কারো রোগগুলো থাকার কারণে রোগগুলো জন্ম নেবেই?
দুই. ৫০ বছরের কম বয়সী যেসব লোক এখন এসব রোগে আক্রান্ত, দেখা যাবে তাদের কারো কারো বাবা-মায়েরও হয়তো এসব রোগ ছিল/আছে। কিন্তু ৭০ বছরের বেশি বয়সী যারা এখন এসব রোগে আক্রান্ত, তাদের মধ্যে এমন লোক খুব কম পাওয়া যাবে, যাদের বাবা-মা কেউ হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়েছেন বা ডায়াবেটিস/উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হয়ে ধুঁকে ধুঁকে মারা গেছেন। দেখা যাবে, এ বয়সী লোকদের প্রায় সবার বাবা-মা অন্য কোনো রোগে মারা গেছেন। তাই ৫০ বছরের কম বয়সী রোগীদের ক্ষেত্রে তাদের রোগটিকে অনেক ডাক্তার বংশগত বলার সুযোগ থাকলেও ৭০ বছরের বেশি বয়সী রোগীদের ক্ষেত্রে রোগটিকে বংশগত বলবেন কিভাবে!
তিন. আমার বড় ভগ্নিপতি উচ্চ রক্তচাপের পাশাপাশি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বেশ কষ্টকর জীবন যাপন করছেন। তাঁর দু’জন বোনের একজন হার্ট অ্যাটাকেই মারা গেছেন, আরেকজন হার্ট অ্যাটাক এবং সমজাতীয় রোগগুলোতে আক্রান্ত হয়ে কষ্টকর জীবন কাটাচ্ছেন। তাঁর আরও দু’ভাই হার্ট অ্যাটাক এবং সমজাতীয় রোগগুলোতে আক্রান্ত হয়ে শেষে হার্ট অ্যাটাকেই মারা যান। তাঁর বাবা বা মা যদি হার্ট অ্যাটাকে মারা যেতেন, ডাক্তাররা অবশ্যই তাঁর বা তাঁর ভাই-বোনদের হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হওয়াকে বংশগত রোগ বলে দিতেন নির্দ্বিধায়। কিন্তু তাঁর বাবা-মা কেউই হার্ট অ্যাটাকে মারা যাননি, তাঁকে জিজ্ঞেস করে বিষয়টা জানতে পেরেছি।
আমাদের বিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের নাম মরিয়ম বেগম। তাঁর একটা ছেলে ২০১৬ সালে ষষ্ঠ শ্রেণিতে উঠার কিছুদিনের মধ্যেই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে বসে। ছেলেটি তখন স্থূল ছিল। ডাক্তারের কাছে নেয়ার পর ডাক্তার অবশ্য তার ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়াকে বংশগত বলেননি। হয়তো বলতেন যদি তার বাবা-মা কারো রোগটি থাকতো। তার বাব-মা অবশ্য পরে কখনো রোগটিকে যে আক্রান্ত হবে না, তা বলা যায় না। জানি না, তখন আবার ডাক্তার বলে বসেন কিনা, ওর ডায়াবেটিস হওয়ার কারণেই ওর বাবা-মা ডায়াবেটিস হয়েছে?!
আমার মেঝো ভাইও উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত বেশ কয়েক বছর ধরে। তিনি উচ্চ রক্তচাপে যখন আক্রান্ত হন, তখন আমার বাবা-মা কারো উচ্চ রক্তচাপ ছিল না। পরে একসময় আমার বাবা-মা সাংসারিক কাজকর্ম অনেকটা ছেড়ে দেয়ার পর উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হন। এখন কি বলা যাবে, সন্তানের উচ্চ রক্তচাপ তার বাবা-মায়ের শরীরেও সংক্রমিত হয়?!
আমার ছোট বোনের একমাত্র ননদের স্বামী ৩৫ বছরের মতো বয়সে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে কর্মরত অবস্থায় হার্ট অ্যাটাকে মারা যান কয়েক বছর আগে, যখন তাঁর বাবা-মা কেউ হার্ট অ্যাটাক বা সমজাতীয় বাকি রোগ দু’টিতে আক্রান্ত হয়নি। বাংলাদেশে এমন অসংখ্য মানুষ এখন খুঁজে পাওয়া যাবে, যারা চল্লিশ বছর বয়সের আগেই হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন, অথচ তাদের বাবা-মা কেউ তখনো হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্তও হননি, মারা যাওয়া দূরের কথা। শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বব্যাপী এরকম লক্ষ লক্ষ মানুষ নিজেদের বাবা-মা কেউ হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হতে না হতে নিজেরা হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে যায় কি ভুলবশত? অর্থাৎ তাদের বাবা-মা আগে হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হবার কথা, তারা আক্রান্ত হলে তাদের সন্তানরা উত্তরাধিকার সূত্রে পরে আক্রান্ত হবে। কিন্তু হার্ট অ্যাটাক ভুল করে আগে সন্তানকে আক্রমণ করে বসেছে! এমন হওয়া কি সম্ভব? সম্ভব না হলে রোগগুলোকে বংশগত বলা যাবে কিভাবে?
চার. যেসব লোকের ক্ষেত্রে বলা হয়, তারা তাদের বাবা-মায়ের কেউ এসব রোগে আক্রান্ত হবার কারণেই রোগগুলোতে আক্রান্ত হয়েছে, সেসব লোকের বাবা-মায়ের পূর্বপুরুষেরও এসব রোগ ছিল কিনা, তা কি কোনো ডাক্তার যাচাই করে দেখেন? যদি তৃতীয় পক্ষ (শেষ প্রজন্ম) বাবা-মায়ের পক্ষ থেকে এসব রোগের উত্তরাধিকারী হয়, তাহলে দ্বিতীয় পক্ষও নিশ্চয় তাদের বাবা-মা থেকে এসব রোগের উত্তরাধিকারী হবার কথা। কিন্তু খোঁজ নিলে দেখা যায়, এখন যারা এসব রোগে আক্রান্ত হচ্ছে, তাদের তেমন কারোই দাদা-দাদী বা নানা-নানী এসব রোগে আক্রান্ত হয়নি। তাহলে তাদের রোগগুলো বংশগত বা জিনগত হলো কিভাবে?! ‘জিনগতভাবেও রোগগুলো বংশপরম্পরায় সংক্রমিত হয়’, কথাটি তখনই সত্য হবে, যখন কারো রোগগুলো হবার পর দেখা যায়, তার পূর্বপুরুষদের যত সিঁড়ির খবর নেয়া যায়, সবাই রোগগুলোতে আক্রান্ত ছিল। যদি শুধু বাবা-মা কারো থাকে, কিন্তু দাদা-দাদী কারো না থাকে, তাহলে রোগগুলোকে বংশগত বলা হবে চরম ভুল।
পাঁচ. ২০ বছরের কম বয়সী যেসব শিশু-কিশোর এখন ডায়াবেটিস বা সমগোত্রীয় কোনো রোগে আক্রান্ত, যদি ওরা ওদের বাবা-মায়ের প্রথম সন্তান হয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যাবে এদের বাবা-মা কেউই এখনো রোগগুলোতে আক্রান্ত হয়নি। তবে প্রায় শতভাগ ক্ষেত্রে দেখা যাবে, এরা স্থূল (বেশি বেশি খাওয়ার কারণে বা শারীরিক পরিশ্রমের সাথে খুব কম জড়িত থাকার কারণে)। এসব শিশু-কিশোরের অধিকাংশের পিতামাতা-ই যদি এখনো ডায়াবেটিসসহ সমগোত্রীয় রোগগুলোতে আক্রান্ত না হয়ে থাকে, তাহলে অল্প অংশের উপর ভিত্তি করে এদের এসব রোগে আক্রান্ত হওয়াকে বংশগত বলা কিভাবে ঠিক হবে? আর যেহেতু এদের প্রায় সবাই স্থূল, আর স্থূলতা থেকেই অনেকে এসব রোগে আক্রান্ত হয়, তাই স্থূলতাকে এদের এসব রোগে আক্রান্ত হবার জন্য দায়ী করতে অসুবিধা কোথায়?
আর ২০ বছরের কম বয়সী যেসব শিশু-কিশোর এসব রোগে আক্রান্ত, সে প্রথম সন্তান হোক বা শেষ সন্তান হোক, যদি দেখা যায় ওর বাবা-মাও এসব রোগে আক্রান্ত, দেখা যাবে ওর বাবা-মা শারীরিকভাবে স্থূল, না হয় শারীরিক পরিশ্রম থেকে দূরে বা খাওয়া-দাওয়ায় রসিক। ওর বাবা-মা যে কারণে রোগগুলোতে আক্রান্ত, সে-ও একই কারণে রোগগুলোতে আক্রান্ত হতে পারে। ওর রোগটাকে তখন বংশগত বলার কোনো মানে নেই।
ছয়. ডাক্তাররা এমন অসংখ্য মানুষের এই রোগগুলোতে আক্রান্ত হওয়াকে বংশগত বলে থাকেন, যারা জন্মের সময় তাদের বাবা-মা কারো রোগগুলো ছিল না, তাদের থাকা তো দূরের কথা। পরে তাদের বাবা মা হয়তো ৬০-৭০ বছর বয়সে রোগগুলোতে আক্রান্ত হলো এবং তারা রোগগুলোতে আক্রান্ত হলো তাদের বয়স যখন ৩০-৪০ বছর। তাদের জন্মের সময় তাদের বাবা-মায়ের যে রোগগুলো ছিল না, তাদের জন্মের ৩০-৪০ বছর পর তাদের বাবা-মাকে যে রোগগুলো আক্রমণ করলো, সে রোগগুলো তাদের জন্মের ৩০-৪০ বছর পর তাদের বাবা-মায়ের শরীর থেকে তাদের শরীরে আসে কিভাবে?! বায়ুবাহিত না হলে এমন হওয়া সম্ভব নয়।
ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগ এই তিনটি রোগের মূল কারণ শারীরিক পরিশ্রম থেকে দূরে থাকা। যদি শারীরিক পরিশ্রম থেকে দূরের থাকার পাশাপাশি কেউ বেশি বেশি খায় বা মুটিয়ে যায়, তার এ রোগগুলোতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি প্রায় শতভাগ।
যদি কারো বাবা-মা বা পূর্বপুরুষ কেউ রোগগুলোতে আক্রান্ত হয়, আর সে এখনো রোগগুলোতে আক্রান্ত না হয়, তাহলে নিয়মিত অন্তত এক ঘন্টা যে কোনো উপায়ে শারীরিক পরিশ্রম করলে সে এই রোগগুলো থেকে নিরাপদ থাকার সম্ভাবনা প্রায় শতভাগ। কোনো কারণে যদি কেউ কখনো শারীরিক পরিশ্রম করতে অক্ষম হয়ে পড়ে, তখনই শুধু সে রোগগুলোতে আক্রান্ত হবার ঝুঁকিতে পড়ে যাবে।
রোগগুলোকে বংশগত রোগ বলার কারণে কমপক্ষে দুই শ্রেণির মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়-
(১) যাদের এখনো রোগগুলো হয়নি, তারা যখন জানে রোগগুলো বংশগত, তখন দেখে নিজের বাবা-মা কারো রোগগুলো হয়েছে কিনা। যদি দেখে হয়নি, তখন সে রোগগুলোতে আক্রান্ত হওয়া থেকে নিশ্চিন্ত থাকে, রোগগুলো প্রতিরোধের কোনো চেষ্টা করে না। এভাবে একসময় সে রোগগুলোতে আক্রান্ত হয়ে পড়ে, সত্যিকারার্থে যে কারণে রোগগুলো হয় সে কারণে। (২) যেসব লোকের বাবা-মা কেউ রোগগুলোতে ইতোমধ্যে আক্রান্ত হয়ে গেছে, তারা যখন জানে, রোগগুলো বংশগত, তখন তাদের মনে একটা আতঙ্ক সৃষ্টি হয়, কখন তারা আবার রোগগুলোতে আক্রান্ত হয়ে বসে! এই আতঙ্ক তাদের মন থেকে কোনোভাবে দূর করা যায় না এবং রোগগুলো প্রতিরোধের কোনো চেষ্টাই তারা করে না। কারণ রোগগুলো যে বংশগত! এভাবে একসময় এরাও রোগগুলোতে আক্রান্ত হয়ে পড়ে।
এই দু’রকম ঘটনা এখন সমাজে ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে শুধুই রোগগুলোকে বংশগত বলে অপপ্রচারের কারণে। আশা করি এই অপপ্রচার বন্ধ হবে।
হ্যাঁ, রোগগুলোকে তখনই বংশগত বলার সুযোগ থাকবে, যখন দেখা যাবে কোনো শিশু মাতৃগর্ভে আসার পর থেকে মায়ের দুধ খাওয়া পর্যন্ত সময়ে ওর বাবা-মা কারো রোগগুলো থাকে এবং শিশুটি ভুমিষ্ট হবার পর পরই বা মায়ের দুধ পান করা শেষ হতে না হতেই রোগগুলোতে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। শিশুটি মাতৃগর্ভে আসার পর থেকে মায়ের দুধ খাওয়া পর্যন্ত সময়ে যদি ওর বাবা-মা কারো রোগগুলো না থাকে এবং ভুমিষ্ট হবার কয়েক বছর পর বা মায়ের দুধ পান শেষ হবার কয়েক বছর পর যদি ওর বাবা-মা কারো শরীরে রোগগুলো দেখা দেয়ার পর পরে কখনো শিশুটিও রোগগুলোতে আক্রান্ত হয়, তখন শিশুটির রোগগুলোতে আক্রান্ত হওয়াকে বংশগত বলার কোনো সুযোগই থাকবে না। কারণ বাবা-মায়ের ঐসব রোগই কেবল সন্তানের মধ্যে সংক্রমিত হতে পারে, যেসব রোগ সন্তান মাতৃগর্ভে আসার পর থেকে মায়ের দুধ খাওয়া পর্যন্ত সময়ে বাবা/মা কারো থাকে এবং ঐ সময়েই সন্তানের দেহে সংক্রমিত হয়। এসময় যদি বাবা-মা কারো শরীরে রোগগুলো না থাকে বা থাকলেও সন্তানের শরীরে সংক্রমিত না হয়, তাহলে পরে আর সংক্রমিত হবার কোনো সুযোগ থাকে না। বায়ুবাহিত রোগ হলে ভিন্ন কথা। কিন্তু ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগ এগুলো বায়ুবাহিত রোগ নয়।
শিশু মাতৃগর্ভে আসার পর থেকে মায়ের দুধ খাওয়া পর্যন্ত সময়ে যদি বাবা/মা কারো রোগগুলো থাকে এবং তাদের শরীর থেকে তার শরীরে এরকম কোনো রোগ সংক্রমিত না হয়, তাহলে পরে যতদিন সে বেঁচে থাকে, যদি সে নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম (খেলাধুলা, হাঁটা, সাঁতার, শারীরিক শ্রমের যে কোনো কাজ ইত্যাদি) করার পাশাপাশি স্থূলতা, বেশি খাওয়া থেকে দূরে থাকতে পারে, তার শরীরে রোগগুলো জন্ম নিতে পারবে না। আর যদি কোনো সন্তান জন্মের অনেক বছর পর ওর বাবা-মা কেউ রোগগুলোতে আক্রান্ত হয়, তাহলে তো কোনোভাবেই রোগগুলো সন্তানের শরীরে সংক্রমিত হতে পারবে না।
ডাক্তারদের মধ্যে একটা সাধারণ প্রবণতা সৃষ্টি হয়েছে, যা মানুষকে মারাত্মকভাবে বিভ্রান্ত করছে। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা হৃদরোগে আক্রান্ত কোনো রোগী ডাক্তারের কাছে গেলে অনেক সময় ডাক্তার প্রথমে জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনার বাবা/মা কারো কি রোগটি ছিল?’ রোগী ‘হ্যাঁ’ বললে ডাক্তার সাথে সাথে মন্তব্য করে, ‘তাহলে আপনার রোগটি বংশগত’। কিন্তু রোগী যদি ‘না’ বলেন, তখন ডাক্তার অন্য কোনো কারণে রোগটি হয়েছে বলে মন্তব্য করেন।
প্রশ্ন হচ্ছে, যেসব রোগীর বাবা/মা কারো রোগটি ছিল না, সেসব রোগী যে কারণে রোগটিতে আক্রান্ত হয়েছে, ঐ একই কারণেই ঐসব রোগীও কি রোগটিতে আক্রান্ত হতে পারে না, যাদের বাবা/মা কারো রোগটি ছিল?
কোনো রোগের সঠিক কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা না করে রোগটি রোগীর বাবা/মা কারো থাকার কথা জেনেই রোগটিকে বংশগত বলে ফেলা যে ক্ষতিকর, ডাক্তাররা তা বুঝতে পারলে কখনোই এভাবে মন্তব্য করতেন না। এবার আলাদাভাবে বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করা যাক...
বংশগতভাবেও কি উচ্চ রক্তচাপ হয়?
‘উচ্চ রক্তচাপে করণীয়’ শিরোনামে ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ তারিখের দৈনিক যুগান্তরে একটি নিবন্ধ দেখলাম, যা লিখেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাকা) মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ। লেখাটিতে উচ্চ রক্তচাপের কারণ সম্পর্কে তিনি লিখেছেন, ‘৯০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ জানা যায় না, একে প্রাইমারি বা অ্যাসেন্সিয়াল রক্তচাপ বলে।’
বিবিসি বাংলায় ১৭ মে ২০১০ তারিখে প্রকাশিত ‘উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে’ শিরোনামের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উচ্চ রক্ত চাপের কারণ সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায়না, বলছেন বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা। তবে চিকিৎসাবিজ্ঞান উচ্চ রক্তচাপকে বংশগত বিষয় হিসেবেই দেখে থাকে।’
‘উচ্চ রক্তচাপ বংশগত কারণে হয়’, এমন অভিমত ব্যক্তকারী সবার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলছি, আমার মনে হয় অভিমতটি সম্পূর্ণ বাস্তবতা-পরিপন্থী। কোনো ডাক্তার বলতে পারবেন না, তার কোনো ভুল নেই। ডাক্তারদের হাতেই ভুল চিকিৎসায় অনেক রোগী প্রায়ই মারা যায় বা ক্ষতিগ্রস্থ হয়। অনেক রোগীই প্রথমে একজন ডাক্তারের কাছে গিয়ে অনেক সময় সঠিক চিকিৎসা পায় না। পরে অন্য ডাক্তারের কাছে গিয়ে সুচিকিৎসা পায়। এজন্য কোনো ডাক্তার এটা জোর দিয়ে বলতে পারবেন না, তার ধারণায় কোনো ভুল নেই। অনেক গবেষণাও অন্য আরেক গবেষণায় ভুল প্রমাণিত হয়। কারণ? অনেক গবেষণা পদ্ধতি ভুল পন্থায় পরিচালিত হয়।
যারা মনে করছেন, ‘৯০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ জানা যায় না’ বা ‘উচ্চ রক্তচাপ বংশগত বিষয়’, তাদের অভিমত সম্পর্কে আমি কোনো মন্তব্য না করে সবাইকে বাস্তবতার সাথে তাদের অভিমতটিকে মিলিয়ে দেখার অনুরোধ করছি। বাস্তবতার সাথে মিলিয়ে দেখতে গেলে দেখা যায়, শারীরিক পরিশ্রমের কাজে যারা বেশি বেশি সময় দেন, যারা চিকন এবং যাদের শরীরে চর্বি বাড়তে পারে না, তাদের তেমন কারোই উচ্চ রক্তচাপ নেই। পক্ষান্তরে যারা শারীরিক পরিশ্রমের সাথে সম্পর্কহীন বা সম্পর্ক কম রাখেন, শরীরে চর্বি-কোলেস্টেরল বেশি এবং দীর্ঘদিন ধরে মোটা, তাদের অধিকাংশই উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত। সুতরাং ‘৯০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের কারণ অজানা’ নয়, বরং প্রায় শতভাগ ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের কারণ দিবালোকের মতো পরিষ্কার। আর তা হলো মুটিয়ে যাওয়া, ক্ষুধা লাগতে না লাগতেই পেটভরে খাওয়া ও শারীরিক পরিশ্রম তেমন না করে আরামপূর্ণ জীবন যাপন করা।
‘উচ্চ রক্তচাপে করণীয়’ লেখাটিতে লেখক উচ্চ রক্তচাপের কারণ হিসেবে বংশগত ধারাবাহিকতার কথাও বলেছেন। কথাটি আমরা বাস্তবতার সাথে একটু মিলিয়ে দেখি। পঞ্চাশ বছর বয়সী একজন লোকের উচ্চ রক্তচাপ দেখা দিল। সে ভাবতে লাগলো, কোত্থেকে, কেন তার উচ্চ রক্তচাপ দেখা দিল? পরিচিত কারো সাথে বিষয়টা নিয়ে আলাপ করলো। জানতে পারলো, উচ্চ রক্তচাপ বংশগত কারণেও হয়ে থাকে। সে তৎক্ষণাৎ মিলিয়ে দেখলো, তার বাবা/মাও শেষ বয়সে উচ্চ রক্তচাপে ভুগেছেন। সে তখন নিশ্চিত হয়, ঠিক আছে, আমার উচ্চ রক্তচাপ বংশগত কারণেই হয়েছে।
আমাদের সরল চিন্তা। খুব সহজেই আমরা অনেক সমীকরণ মিলিয়ে ফেলি। কিন্তু অনেক সময় বড় ধরনের ফাঁক যে থেকে যায়, সেদিকে লক্ষ্য করি না। কাল্পনিক এ লোকটির মতো আমরা অনেকেই উচ্চ রক্তচাপকে বংশগত রোগ মনে করি। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, বাবা-মা কারো উচ্চ রক্তচাপ না থাকলেও এখন অনেকে নিজের উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হবার জন্য বংশগত কারণকেই দায়ী মনে করেন!
এবার আসি বাস্তবতার সাথে মিলিয়ে দেখার কথায়। যে লোকটি নিজের উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হবার জন্য নিজের বাবার উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হওয়াজনিত কারণকে দায়ী করলো, সে কি ভেবে দেখেছে, তার বাবা কত বছর বয়সে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হয়েছে? সে যদি বিষয়টা ভাবতো, দেখতো, তার বাবা হয়তো উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হয়েছে ষাট বা সত্তর বছর বয়সে (কারণ প্রথম প্রথম অধিকাংশ মানুষ ষাট-সত্তর বছর বয়স পার হলেই উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হতো), তার জন্মের অনেক অনেক বছর পর। অর্থাৎ লোকটি যখন জন্মগ্রহণ করে, তখন তার বাবার উচ্চ রক্তচাপ ছিল না। তার জন্মের সময় যে রোগ তার বাবার ছিল না, তার জন্মের অনেক বছর পর তার বাবার শরীরে দেখা দেয়া রোগটি তার শরীরে সংক্রমিত হলো কী করে?! এমনও হতে পারে, লোকটির বয়স যখন পঞ্চাশ, লোকটির বাবা হয়তো তখন জীবিতও নেই, তখন তার বাবার উচ্চ রক্তচাপ তার শরীরে সংক্রমিত হলো কী করে?! এটা কি সত্যিই সংক্রমণ? কেমন সংক্রমণ? বংশগত? বায়ুবাহিত? পানিবাহিত?!
শুধু উচ্চ রক্তচাপ নয়, ডায়াবেটিসকেও মানুষ বংশগত রোগ মনে করে ঠিক একই রকমভাবে। একজন লোকের বাবা বৃদ্ধ বয়সে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলো। বাবা মারা যাবার পর যখন তার ডায়াবেটিস দেখা দিলো, সে ধরে নিলো, তার বাবার ডায়াবেটিস থাকার কারণেই তার ডায়াবেটিস হয়েছে। লোকটির বাবা যদি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হবার আগে অন্য কোনো রোগ বা দুর্ঘটনায় মারা যেতো, তাহলে লোকটি (সন্তান) আর ডায়াবেটিস হতো না, এটা কি নিশ্চিত? একটা কথা মনে রাখলে কেউ এরকম বিভ্রান্তিতে পড়বে না, সন্তানের শরীরে বাবা-মায়ের শরীর থেকে ঐ সমস্ত রোগ সংক্রমিত হতে পারে, যেসব রোগ সন্তান গর্ভধারণের সময় বা সন্তানকে দুধ খাওয়ানোর সময় বাবা-মায়ের শরীরে থাকে। সন্তান জন্ম ও সন্তানকে দুধ খাওয়ানো শেষ হবার পর বাবা-মা যদি কোনো রোগে আক্রান্ত হয়, সে রোগ সন্তানের শরীরে সংক্রমিত হতে পারে না।
হৃদরোগও কি বংশগতভাবেও হয়?
শুধু উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিস নয়, হৃদরোগও যে বংশগত কারণে হতে পারে বলে কেউ মনে করে, তা রীতিমতো আমার ধারণার বাইরে ছিল। অবাক হয়ে গেলাম সেদিন একটি দৈনিক পত্রিকায় খোদ এক ডাক্তারের লেখায় এমন কথা পড়ে। ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ দৈনিক যুগান্তরের ‘সুস্থ থাকুন’ পাতায় ‘হার্ট ভালো রাখার টিপস’ শিরোনামে একটি লেখা ছাপা হয়, যা লিখেছেন ঢাকার উত্তরার শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের ডাক্তার সামিয়া তাসনীম। তিনি লিখেছেন, ‘উত্তরাধিকার সূত্রেও কেউ হৃদরোগে আক্রান্ত হতে পারেন।’
একসময় অধিকাংশ মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হতো ষাট-সত্তর বছর বয়সের পর। একজন লোক যদি ষাট বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয় বা মারা যায় এবং তার কোনো সন্তান পরে কখনো হৃদরোগে আক্রান্ত হয়, ধরে নেয়া হয়, লোকটির হৃদরোগ থাকাতেই তার সন্তানও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু এটা কি সম্ভব? সম্ভব নয়। কারণ-
১. লোকটি যখন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়, তার অনেক আগেই, যখন সে হৃদরোগমুক্ত ছিল, তখনই তার সন্তানটি তার স্ত্রীর গর্ভে আসে। তাহলে সন্তানের শরীরে তার শরীর থেকে এ রোগ কিভাবে সংক্রমিত হবে?
২. লোকটি ষাট বছর বয়সে পৌঁছার পরই তো তার শরীরে হৃদরোগ দেখা দেয়। ষাট বছরের আগে যদি সে হৃদরোগ ব্যতীত কোনো দুর্ঘটনা বা অন্য কোনো কারণে মারা যেতো, তখন কি তার সন্তান হৃদরোগ থেকে নিষ্কৃতি পেতো?
৩. সন্তানটি জন্মের পর থেকে চল্লিশ বছর যখন হৃদরোগমুক্ত ছিল, তখন বংশগত কারণটি কোথায় ছিল? বংশগত কারণে যেসব রোগ হয়, সেসব সাধারণতঃ জন্মের সময়েই সন্তান শরীরে করে পৃথিবীতে নিয়ে আসে। চল্লিশ বছর যখন সে সুস্থ ছিল, তখন এটা বলার কোনো সুযোগই থাকে না, রোগটি তার বংশগত কারণে হয়েছে।
৪. বিগত চার-পাঁচ দশক ধরে যারা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন, হৃদরোগে মারা গেছেন, তাদের মধ্যে এমন মানুষ খুঁজে বের করা কষ্টকর হবে, যার পূর্বপুরুষ কারো হৃদরোগ ছিল। এর প্রধান কারণ, চার-পাঁচ দশক বা তারও আগে মানুষের জীবন শ্রমসাধ্য সব কাজের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল বলে হৃদরোগ মানুষকে তেমন স্পর্শ করার সুযোগ পেত না। হৃদরোগের উপদ্রব শুরু হয় মানুষের জীবন থেকে কায়িক শ্রম দূরে সরে যেতে থাকার পর থেকে; মানুষ ব্যবসা আর চাকরিমুখী হয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা অফিসে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতে অভ্যস্ত হওয়ার পর থেকে; গাড়ি, লিফট, মেশিন এসব আরামের উপকরণ ব্যবহারে মানুষ অভ্যস্ত হবার পর থেকে; সর্বোপরি মানুষের শরীরে চর্বি-কোলেস্টেরল বৃদ্ধির সুযোগ পাবার পর থেকে।
তাই হৃদরোগকে বংশগত বলে আমরা প্রকারান্তরে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়া-না হওয়ার বিষয়টাকে নিয়তির উপরই ছেড়ে দিচ্ছি এবং হৃদরোগ থেকে আত্মরক্ষার উপায় খোঁজার গুরুত্ব হারিয়ে ফেলছি। বিশ্বব্যাপী মানুষ ব্যাপকহারে হৃদরোগে আক্রান্ত হবার এটা একটা প্রধান কারণ।
ডায়াবেটিস কি বংশগত কারণেও হয়?
ডায়াবেটিস কেন হয়, সে সম্পর্কেও আমাদের ধারণায় বড় ধরনের ভুল রয়েছে। ডায়াবেটিসের কারণ সম্পর্কে অনেককেই বলতে শুনি এবং পত্রপত্রিকায় ডায়াবেটিস সম্পর্কে অনেক নিবন্ধে অনেক ডাক্তারকে লেখতে দেখি, বংশগত কারণেও নাকি অনেক মানুষের ডায়াবেটিস হয়।
খুব গভীরভাবে দেখেছি, ডায়াবেটিস সম্পর্কে এমন বিশ্বাস বা বক্তব্যের কোনো বাস্তবতা নেই। একটা সময় ছিল, সমাজের পাঁচ শতাংশ মানুষেরও ডায়াবেটিস ছিল না। ডায়াবেটিস নামক কোনো রোগের সাথে মানুষের তেমন পরিচয়ও ছিল না। মানুষ পরিশ্রমের বিভিন্ন কাজের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকতো। খুব অল্প সংখ্যক মানুষ একেবারে শেষ বয়সে যখন কাজকর্ম থেকে পুরো অবসরে চলে যেতো, তখন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতো। যে সমাজে এক সময় ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা হাতে গোনা যেতো, সেই সমাজে এখন ডায়াবেটিসের এতো ছড়াছড়ি কেন? অবস্থা এমন পর্যায়ের দিকে যাচ্ছে, অল্প ক’বছর পর হয়তো ৪০-৫০ বছরের বেশি বয়সী ডায়াবেটিসহীন মানুষ খুঁজে বের করাও কষ্টকর হয়ে পড়তে পারে। শিশুরাও এখন বিশ্বব্যাপী ব্যাপকহারে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে শুরু করেছে!
আমার এক আত্মীয়ের পরিবারে পাঁচ-পাঁচজন লোক ডায়াবেটিস রোগী! আমার এক সহকর্মীর চার বোনের মধ্যে তিনজনই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত! আমার এক বন্ধু আছে মামুন নামে। সে বললো, তাদের পরিবারে সে ব্যতীত তার বাবা-মা, ভাই-বোন (মোট ৭ জন) সবাই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়েছে! আমার বিশ্বাস, এরকম একই পরিবারে একাধিক মানুষের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হবার অনেক ঘটনা অনেকের জানা থাকতে পারে।
চল্লিশ-পঞ্চাশ বছর আগেও ডায়াবেটিস রোগী ছিল সমাজে দুর্লভ, আর এখন ঘরে ঘরে মানুষের ডায়াবেটিস, এটাই বাস্তবতা। ডায়াবেটিসহীন সেই সমাজে এখন ডায়াবেটিসের এতো ছড়াছড়ি কেন? যদি আগে অধিকাংশ মানুষের ডায়াবেটিস থাকতো, তাহলেই এখন বলা যেতো, ডায়াবেটিস বংশগত কারণে হয়ে থাকে। বিশ্বের প্রায় সব দেশে এমন লক্ষ লক্ষ পরিবারে এখন অনেকের ডায়াবেটিস, যেসব পরিবারে আগে কারো ডায়াবেটিস ছিল না। তাহলে রোগটি কিভাবে বংশগত হলো? আমার বাবা-মা, দাদা-দাদী বা নানা-নানী কারোই ডায়াবেটিস ছিল না, অথচ আমার দু’ভাই ইতোমধ্যে ডায়াবেটিসের শিকার হয়ে গেছেন কিভাবে! তাঁদের জন্মে কি তাহলে দোষ ছিল?!
আরেকটা বিষয়, বংশগত রোগ হলে জন্মের সময়ই তারা ডায়াবেটিস নিয়ে জন্মাতেন। কিন্তু পরিণত বয়সে এসে, তা-ও আবার শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়ার পর, মেদ-চর্বি বেড়ে যাবার পর তারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলেন কেন? তাহলে শরীরে মেদ-চর্বি বাড়লেই কি সন্তানরা সত্যিকারের সন্তান হয়ে ওঠেন?! যখন চিকন ছিলেন, তখন নয়, মোটা হয়ে যাবার পর তাদের শরীরে ডায়াবেটিস এসে হাজির হলো কেন?! তাছাড়া বাবা/মা কেউ আক্রান্ত হবার আগে আগেই এখন অনেক সন্তান ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে পড়ে।
বর্তমানে ৩৫ থেকে ৫০/৫৫ বছর বয়সী অনেক ডায়াবেটিস রোগীর পূর্বপুরুষেরও ডায়াবেটিস দেখেই ডাক্তাররা এবং সাধারণ মানুষ মনে করে বসে ডায়াবেটিস বংশগত রোগ। কিন্তু এদিকে লক্ষ্য করে না, বর্তমানে ৬০ বছরের বেশি বয়সী যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, তাদের অধিকাংশেরই বাবা-মা বা পূর্বপুরুষ কারো ডায়াবেটিস ছিল না। ৩৫ বছরের বেশি বয়সী যারা এখন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, তাদের অনেকের পূর্বপুরুষের ডায়াবেটিস আছে দেখেই রোগটিকে বংশগত মনে করা যে ভুল, তা প্রমাণিত হবে বর্তমানে ৬০ বছরের বেশি বয়সী যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, তাদের অধিকাংশেরই বাবা-মা বা পূর্বপুরুষের যে ডায়াবেটিস ছিল না, সেদিকে লক্ষ্য করলে।
আমার এক সহকর্মীর বড় ছেলেটি, নাম ইমরুল হাসান অয়ন, ২০১৬ সালে যখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে মাত্র, তখন তার ডায়াবেটিস দেখা দেয়। এগারো কি বারো বছর বয়সে কেউ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হবার ঘটনা, আমি জানি, অনেকের বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে। ছেলেটির বাবা-মা কারোই ডায়াবেটিস নেই। তবে ছেলেটির ওজন খুব বেশি। ২০১০ সালেও মহসিন নামে পঞ্চম শ্রেণি পড়–য়া একটি ছেলে সম্পর্কে জানতে পারলাম, ওর নাকি ডায়াবেটিস। ওই ছেলেটিও স্থূলকায় ছিল। সত্যি কথা বলতে কি, কথাটি তখন আমারও তেমন বিশ্বাস হয়নি। কারণ এর আগে এমন ঘটনার সাথে আমি পরিচিত ছিলাম না। ইদানিং পত্রপত্রিকায়ও শিশুদের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়া সংক্রান্ত অনেক লেখা দেখতে পাই। আমাদের জানাশোনায় যেসব শিশু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছে, দেখবেন তাদের অনেকেরই বাবা-মা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত নন। তবু কেন বলা হয়, ডায়াবেটিস বংশগত কারণেও হয়ে থাকে?
অসংখ্য ডায়াবেটিস রোগীর সাথে কথাটির বাস্তবতা মেলানোর চেষ্টা করে লাভ হয়নি। প্রকৃতপক্ষে আমরা যারা এসব কথা বলি, তারা খুব ভালোভাবে যাচাই বাছাই করা ছাড়াই বলি। রোগটির কারণ সম্পর্কে অল্পস্বল্প ভেবে যখন কোনো কূল না পাই, তখন হুট করে বলে বসি, এটি বংশগত রোগ। অনেক সময় তাকিয়েও দেখি না, পরিচিত যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, সবার বাবা-মা কারো ডায়াবেটিস ছিল কিনা বা আমার যে ডায়াবেটিস হয়েছে, আমার বাবা-মা কারো ডায়াবেটিস ছিল/আছে কিনা?
বংশগত কারণেও মানুষ অনেক রোগে আক্রান্ত হয়, এটা সত্য। তাই বলে, আপাত দৃষ্টিতে ডায়াবেটিসের কোনো কারণ খুঁজে না পেয়ে এই রোগটিকেও বংশগত রোগের কাতারে ফেলে দিতে হবে, এটা তো ঠিক নয়। ভুল ধারণাটি এখনই দূর করা না গেলে ৫০-৬০ বছর পর মানুষের এই ধারণা দূর করা খুবই কঠিন হবে। কারণ এখন তো মানুষ অহরহ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছে। ৫০-৬০ বছর পর তখনকার প্রজন্মের কেউ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে যখন দেখবে তার পূর্বপুরুষদেরও ডায়াবেটিস ছিল, তখন সে নিশ্চিতভাবে রোগটিকে বংশগত রোগ মনে করবে। তখন এ ধারণা ভুল প্রমাণ করা অনেকটা অসম্ভব হয়ে যাবে।
৫০-৬০ বছর আগে খুব কম সংখ্যক মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতো। এখন কেন ব্যাপকহারে আক্রান্ত হচ্ছে? প্রশ্নটির উত্তরের মধ্যেই ‘ডায়াবেটিস বংশগতভাবেও হয় কিনা?’ এই প্রশ্নটির উত্তর খুঁজে পাওয়া যাবে।
৫০-৬০ বছর আগে বা তারও আগে মানুষের জীবন ছিল পরিশ্রমসাধ্য। মানুষকে বিভিন্ন ভাবে শারীরিক পরিশ্রমের সাথে জড়িত থাকতে হতো। চলাফেরায় ছিল পরিশ্রম, প্রাত্যহিক জীবনের প্রায় প্রতিটা কাজে ছিল শারীরিক পরিশ্রম। শারীরিক পরিশ্রম বেশি বেশি করার কারণে মানুষের শরীরে কোলেস্টেরল জমার সুযোগ পেতো না। বেশি বেশি খেলেও অত্যধিক শারীরিক পরিশ্রম করার কারণে মানুষ মোটা হতো না, মানুষের শরীরে কোলেস্টেরল জমার সুযোগ পেতো না। তাই ডায়াবেটিসও শরীরে জন্ম নেয়ার সুযোগ পেতো না। কিন্তু বিগত কয়েক দশক ধরে কাজকর্মে আরামদায়ক সব প্রযুক্তি, চলাফেরার ক্ষেত্রে যানবাহনের ব্যাপক প্রচলন এবং মানুষ ব্যাপকহারে আরামপ্রিয় জীবনযাপনে অভ্যস্থ হবার কারণে শারীরিক পরিশ্রমের সাথে মানুষের সম্পর্ক অনেক কমে যাওয়ায় মানুষকে আক্রমণ করতে শুরু করেছে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং হার্ট অ্যাটাকের মতো কোলেস্টেরল বৃদ্ধিজনিত ভয়াবহ রোগগুলো। এই সত্যটা যারা উপলব্ধি করতে পারেন না, সাধারণ মানুষ বা ডাক্তার, তারাই ডায়াবেটিসকে বংশগত রোগ মনে করে ভুল করে, বিভ্রান্ত করেন অন্যকে।
ডায়াবেটিসকে বংশগত রোগ বলে প্রচার করে আমরা শুধু ভুল করছি না, পুরো মানবজাতির মারাত্মক ক্ষতিও করে যাচ্ছি। বংশগত রোগ মনে করার কারণে আমরা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়াকে নিয়তির উপরই ছেড়ে দিয়ে ডায়াবেটিস প্রতিরোধের কোনো চেষ্টা করছি না। অথচ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হবার প্রকৃত কারণটা আমাদের সামনে স্পষ্ট হলে তথা বেশি বেশি খাওয়া, মুটিয়ে যাওয়া এবং পর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রমহীন থাকার কারণে ডায়াবেটিস হয়, এই সত্যটা আমাদের উপলব্ধিতে এলে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা আমাদের পক্ষে সহজ ও সম্ভব হতো। একটা ঘটনা উল্লেখ করছি।
আমার যে সহকর্মীর চার বোনের মধ্যে তিনজনেরই ডায়াবেটিস, তাঁর নাম নাজনীন আক্তার। তাঁর ভাই মাত্র একজন। তিনি প্রায়ই কথায় কথায় বলেন, ‘আমার অন্য তিন বোনের সবাই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। আমিও মনে হয় যে কোনো সময় ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে যেতে পারি।’ একদিন এমন কথা বলাতে আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘কেন এমনটা মনে করছেন?’ তিনি বলেন, ‘আমার মায়েরও ডায়াবেটিস ছিল।’ আমি বলি, ‘তাতে কী হয়েছে?’ তিনি বলেন, ‘আমার বোনেরা ডাক্তারের কাছে গেলে ডাক্তার প্রথমেই জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনার বাবা-মা কারো কি ডায়াবেটিস ছিল?’ আমার বোনেরা ‘হ্যাঁ’ বলার পর ডাক্তার বলেন, ‘আপনার মায়ের ডায়াবেটিস থাকাতেই আপনাদের ডায়াবেটিস হয়েছে।’ আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘আপনার ভাইও কি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত?’ তিনি বলেন, ‘না’।
আমি বললাম, ‘তাহলে আপনার এবং আপনার ভাইয়ের ডায়াবেটিস নেই কেন? বংশগত হলে তো কেউ বাকি থাকতো না। আরেকটা বিষয় ভেবে দেখুন, ডাক্তাররা বলছেন, আপনার মায়ের ডায়াবেটিস থাকাতে আপনার বোনেরা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়েছে। একটু খোঁজ নিয়ে দেখুন, আপনার নানী বা নানার ডায়াবেটিস ছিল কিনা? যদি না থাকে, তাহলে আপনার মায়ের ডায়াবেটিস হলো কোত্থেকে? শুধু ডাক্তারের কথার কারণেই আপনার মনে এখন ভয় কাজ করছে এই ভেবে, আপনি যে কোনো সময় ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে যেতে পারেন।
আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, বংশগত হলে আপনার বোনেরা জন্মের সময়ই শরীরে ডায়াবেটিস নিয়েই জন্মগ্রহণ করতেন এবং তা তখনই, যখন আপনার বোনদের জন্মের আগ থেকেই আপনার মায়ের ডায়াবেটিস থাকতো। দেখা গেছে, আপনারা সব ভাই-বোন জন্মগ্রহণ করার অনেক বছর পর আপনার মায়ের বয়স যখন ৫০-৬০ বছর এবং আপনার বোনদের বয়স ৪০-৪৫ বছর হয়ে গেছে, তখন আপনার মা এবং আপনার বোনেরা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়েছেন। আপনার বোনদের জন্মের অনেক বছর পর আপনার মায়ের শরীরে সৃষ্টি হওয়া ডায়াবেটিস কিভাবে ৪০-৪৫ বছর বয়সী আপনার বোনদের শরীরে সংক্রমিত হলো, ডাক্তার কি সে প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে?’
নূর আহমদ : শিক্ষক, কলামিস্ট ও গবেষক
https://www.facebook.com/nurahmad.teacher
[আমি কোনো রোগের চিকিৎসা নিয়ে কথা বলি না। আমি কথা বলি বিভিন্ন রোগের কারণ এবং প্রতিরোধের উপায় নিয়ে। কারণ এই বিষয়ে অনেক বছর ধরে আমি অধ্যয়ন ও লেখালেখি করছি।]
0 Comments: