দৈনিক মাত্র একটি কাজ করুন, ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগ থেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ থাকবেন
দৈনিক মাত্র একটি কাজ করুন, ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগ থেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ থাকবেন
নূর আহমদ : শিক্ষক; কলামিস্ট; গবেষক
আমি কোনো ডাক্তার নই। তবু নিজের প্রয়োজনে বিগত প্রায় পাঁচ বছর সময় ধরে ক্যান্সার, স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, ডায়াবেটিস এসব ভয়াবহ রোগের কারণ নিয়ে ভাবছি, পর্যবেক্ষণ করছি ও অধ্যয়ন করছি। আমার এই নিজের মতো করে দেখার ফলাফল একসময় পরিষ্কারভাবে সামনে আসতে শুরু করে। আমি এই রোগগুলোতে আক্রান্ত মানুষের খোঁজ নিতে গিয়ে দেখি- (১) হার্ট অ্যাটাক, ডায়াবেটিস এবং হাই ব্লাড প্রেসার এই তিনটি রোগের কারণ নির্দিষ্ট ও পরিষ্কার। (২) এই তিনটি রোগ একই ধরনের কারণে হয়, একই সূত্রে গাঁথা। (৩) এই তিনটি রোগের মধ্যে মানুষ প্রথমে আক্রান্ত হয় উচ্চ রক্তচাপে, পরে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা না হলে মানুষ কখনো হার্ট অ্যাটাক, কখনো ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়। (৪) এই তিনটি রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া মানুষের পক্ষে সম্ভব ও সহজ। এগুলো সম্পূর্ণ প্রতিরোধযোগ্য রোগ। (৫) ক্যান্সার এবং স্ট্রোকের কোনো কারণ স্পষ্ট নয়। ক্যান্সারের কারণে নিয়ে সমাজে এমনকি বিশ^ব্যাপী যেসব ধারণা ছড়িয়ে আছে, সবগুলো ভুয়া। ইনফেকশনে ক্যান্সার হয়, ধূমপানে ক্যান্সার হয়, স্থূলতার কারণে ক্যান্সার হয়, এটা খেলে ক্যান্সার হয়, ওটা খেলে ক্যান্সার হয়, এই সব কথা ভিত্তিহীন। এখানে শুধু দু’টি রেফারেন্স দিচ্ছি।
American Cancer Society'র অনলাইনে 'What is Cancer?' শিরোনামের একটি নিবন্ধের (হালনাগাদযোগ্য) 'Why did this happen to me?' Dcwk‡ivbv‡g ejv n‡q‡Q, ''People with cancer often ask, ''What did I do wrong?'' or ''Why me?'' Doctors don't know for sure what causes cancer. When doctors can't give a cause, people may come up with their own ideas about why it happened.
Some people think they're being punished for something they did
or didn't do in the past. Most people wonder if they did something to cause the
cancer.
If you're having these feelings, you're not alone. Thoughts and
beliefs like this are common for people with cancer. You need to know that
cancer is not a punishment for your past actions. Try to not blame yourself or
focus on looking for ways you might have prevented cancer. Cancer is not your
fault, and there's almost never a way to find out what caused it. Instead,
focus on taking good care of yourself now.''
[https://www.cancer.org/cancer/cancer-basics/what-is-cancer.html]
এখানে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, ''Doctors don't know for sure what causes cancer. When doctors can't give a cause, people may come up with their own ideas about why it happened.'' ejv n‡q‡Q, ''Cancer is not your fault, and there's almost never a way to find out what caused it.'' অবাক লাগে, তবু বিশ^্যাপী এটা-সেটাকে ক্যান্সারের কারণ বলে প্রচার করা হয় কিভাবে!
ফুসফুস ক্যান্সারের কারণ হিসেবে বিশেষভাবে ধূমপানকে দায়ী করা হয় বিশ^ব্যাপী। এবার দেখুন ফুসফুস ক্যান্সার সম্পর্কে চায়নার গুয়াংজৌ ক্যান্সার হসপিটালের মতামত।
চায়নার 'গুয়াংজৌ ক্যান্সার হসপিটালের' ওয়েবসাইটে (বাংলা) 'ফুসফুস ক্যান্সার' শিরোনামে একটা লেখায় দেখলাম একটা চাঞ্চল্যকর তথ্য।
সেখানে বলা হয়েছে, 'গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ৯০% ক্ষেত্রেই ফুসফুস ক্যান্সার তাদের হয়, যারা ধূমপান করেন। তার মানে যারা ধূমপান করেন না তাদের কি এই ক্যান্সার হবার সম্ভাবনা নেই? আসলে ব্যাপারটা এমন নয়। মডার্ন ক্যান্সার হসপিটাল গুয়াংজৌ দেখেছে যে, এখন পর্যন্ত ফুসফুস ক্যান্সারের প্রকৃত কারণ জানা যায়নি। সুতরাং ধূমপান-ই না, এর সাথে আরও তিনটি কারণ জড়িত থাকতে পারে- ১. বায়ু দূষণ, ২. অতিরিক্ত প্রেসার, ৩. পুষ্টির অভাব। এছাড়াও ভাইরাল ইনফেকশন, মাইকোটক্সিন, টিউবারকুলসিস, ইমিউন ডিসফাঙ্কশন, এন্ডওক্রাইন ডিজঅর্ডার এবং জেনেটিক কারণেও ফুসফুস ক্যান্সার হতে পারে।' [http://www.asiancancer.com/bengali/cancer-topics/lung-cancer]
এখানে বলা হয়েছে, ''মডার্ন ক্যান্সার হসপিটাল গুয়াংজৌ দেখেছে যে, এখন পর্যন্ত ফুসফুস ক্যান্সারের প্রকৃত কারণ জানা যায়নি।''
স্ট্রোকের ক্ষেত্রে মানসিক টেনশনকে সামান্য দায়ী করার সুযোগ আছে। তবে বিষয়টা নিশ্চিত নয়। ‘‘ধূমপানে স্ট্রোক হয়’’ কথাটা লেখা থাকে সিগারেটের প্যাকেটেও। কিন্তু সরাসরি ধূমপান নয়, বরং পরোক্ষ ধূমপানের সাথেও সম্পর্কিত নয়, এমন অসংখ্য মানুষকেও স্ট্রোকে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। বিশেষ করে ওইসব মহিলা, যাদের স্বামী বা পরিবারের কেউই ধূমপান না করা সত্ত্বেও তারা স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে থাকেন।
এই কথাটা বললে কেউ কেউ বলে থাকেন, ‘ধূমপানই স্ট্রোকের কারণ নয়, স্ট্রোকের অনেকগুলো কারণের মধ্যে একটি হচ্ছে ধূমপান’। যারা এমন কথা বলে থাকেন, তাদেরক যখন বলা হয়, ‘যদি স্ট্রোকের অনেক কারণের মধ্যে ধূমপান একটি হয়ে থাকে, তাহলে তো ধূমপান যারা করে, তাদের সবাই স্ট্রোকে আক্রান্ত হবার কথা। কিন্তু তেমন হয় না কেন? কেন ৩০-৪০ বছরের বেশি সময় ধরে ধূমপান করার পর বিশ্বব্যাপী অসংখ্য মানুষ স্ট্রোক থেকে রেহাই পাচ্ছে?’ তখন এসব মানুষ একেবারে চুপ হয়ে যায়।
ধূমপানকে গিনিপিগ বা ‘বলির পাঁঠা’ না বানিয়ে স্ট্রোকের প্রকৃত কারণ নিয়ে নিবিড়ভাবে খোঁজ নিলে হয়তো একসময় সত্যিকারের কারণ সামনে চলে আসবে। কিন্তু ভুল কারণকে সত্যিকারের কারণ ধরে বসে থাকলে সত্যিকারের কারণটি আরো আরো মানুষকে স্ট্রোকে আক্রান্ত করার সুযোগ পেয়ে যাবে।
আমার প্রায় পাঁচ বছরের ভাবনা, পর্যবেক্ষণ ও অধ্যয়নের উপর ভিত্তি করে একটি দীর্ঘ নিবন্ধ তৈরি করা হয়েছে, যা বই আকারে প্রকাশ করলে ২৫০ পৃষ্ঠার সমতুল্য একটি বই হবে। এখনো বইটি প্রকাশ করা যায়নি। জানি না, কখনো যাবে কিনা!
বইটিতে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ডায়াবেটিস, হার্ট অ্যাটাক এবং হাই ব্লাড প্রেসারের সত্যিকারের কারণ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, এই রোগগুলোর কারণ নিয়ে ভুলভাবে প্রচারিত বিষয়গুলোকে ভ্রান্ত এবং ভিত্তিহীন প্রমাণ করা হয়েছে যুক্তি, রেফারেন্স এবং বাস্তবতা পর্যবেক্ষণমূলক অসংখ্য নিরীক্ষার মাধ্যমে।
রোগগুলো প্রতিরোধের উপায় নিয়েও বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। এই কথাটা ভালো করে বুঝিয়ে বলা হয়েছে, ডায়াবেটিস, হার্ট অ্যাটাক এবং হাই ব্লাড প্রেসার এই তিনটি ভয়াবহ রোগ থেকে বাঁচতে হলে প্রতিদিন অন্তত ৪০ মিনিট কঠোর শারীরিক পরিশ্রমের যে কোনো কাজ করতে হবে। তা হতে পারে কৃষিকাজসহ খেতখামারের যে কোনো কাজ; যে কোনো ব্যায়াম তথা জোরে জোরে হাঁটা, দৌড়া, সাঁতার কাটা, শারীরিক যে কোনো কসরত; ক্রীড়া তথা ফুটবল, ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন, ভলিবল ইত্যাদি।
যতদিন মানুষ এভাবে দৈনিক অন্তত ৪০ মিনিট কঠোর শারীরিক পরিশ্রমের কাজ করে যাবে, ততদিন মানুষকে তিনটি রোগ কোনোভাবে আক্রমণ করতে পারবে না। অন্য রোগগুলো আক্রমণ করতে পারুক বা না পারুক।
তাই দৈনিক অন্তত ৪০ মিনিট যে কোনো শারীরিক পরিশ্রমের কাজে সময় দেয়াটা অভ্যাসে পরিণত করুন, রোগগুলো থেকে বেঁচে যাবেন, নিশ্চিত।
0 Comments: