Headlines
Loading...
দীর্ঘজীবন লাভের উপায় (পর্ব-৩) : আরামে থাকা এবং মোটা হবার ভয়াবহ পরিণতি

দীর্ঘজীবন লাভের উপায় (পর্ব-৩) : আরামে থাকা এবং মোটা হবার ভয়াবহ পরিণতি

ডায়াবেটিস, হার্ট অ্যাটাক এবং উচ্চ রক্তচাপের প্রকৃত কারণ এবং প্রতিরোধের উপায় জানার মাধ্যমে


দীর্ঘজীবন লাভের উপায়



অধ্যায়-৪
আরামে থাকা এবং মোটা হবার ভয়াবহ পরিণতি

কষ্টের কাজ থেকে গা বাঁচিয়ে আরামে আরামে থেকে আর বসে বসে খেয়ে মোটা হয়ে অনেকে প্রথম প্রথম ভাবে, ‘জীবনের সেরা সময়টা বুঝি কাটছে আমার; বেশ সুখী এবং সুস্থ-সবল দেখাচ্ছে আমায়!’ কিন্তু মোটা হবার সাথে সাথে যখন শরীরের ওজন বেড়ে যেতে শুরু করে, শরীরে মেদ জমতে শুরু করে, ভূঁড়ি বেড়ে যায়, মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা তখন নানাভাবে ব্যাহত হয়; পরিশ্রমের সামান্য কাজ করতে গিয়েও মানুষ হাঁপিয়ে ওঠে।

নতুন নতুন সব বিপদে পড়ে একসময় ভাবে, ‘কেন মোটা হলাম? চিকন থাকাই তো ভালো ছিল!’ মাঝে মাঝে এমন অনেক লোকের কথা জানতে পারি, যারা একসময় চিকন ছিল। অনেক চেষ্টা-সংগ্রামের পর মোটা হয়ে এখন আবার চিকনত্ব ফিরে পাবার জন্য অস্থির হয়ে উঠেছে, কিন্তু চিকন হতে পারছে না কোনোভাবে!


মোটা হওয়ার পরিণতি অবশ্য এ অস্থিরতা আর অস্বস্তির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। মোটা মানুষদের এ সমস্যাগুলো কেবল মোটা হওয়ার প্রাথমিক পরিণতি মাত্র। মোটা হওয়াটা ইদানিং বিশ^ব্যাপী মানুষের মহাবিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মোটা হওয়াটা এখন মানুষের সুস্বাস্থ্য এবং জীবনের জন্যই হুমকি। মোটা হবার কারণে মানুষ ইদানিং এমন অনেক রোগে আক্রান্ত হয়, যে রোগগুলো মানুষের জীবনকে জটিল করে তোলে, মানুষকে দ্রুত মৃত্যুমুখে ঠেলে দেয়। যেসব মানুষের কায়িক শ্রমের কোনো কাজ নেই, ব্যায়ামেরও অভ্যেস বা সুযোগ নেই, মোটা হওয়ার পর ধীরে ধীরে তাদের শরীর ও রক্তে চর্বি-কোলেস্টেরল বেড়ে যায়। অতিরিক্ত চর্বি এবং কোলেস্টেরলের ফলে তাদের শরীরে দেখা দেয় উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হার্ট অ্যাটাক বা হার্ট ব্লকেজের মতো রোগ। আমার পরিচিতজনদের মধ্যে অসংখ্য মানুষ এখন এসব রোগে আক্রান্ত, অনেকে ইতোমধ্যে মারাও গেছেন। আমি দেখেছি, এসব লোকের মধ্যে অধিকাংশই মোটা ছিলেন, অন্যদিকে শারীরিক পরিশ্রমের কোনো কাজের সাথেও এদের তেমন সম্পর্ক ছিল না।

ত্রিশের বেশি বয়সী মোটা মানুষরা এসব রোগে আক্রান্ত হয়ে রোগের জটিলতায় কঠিন জীবনের মুখোমুখি হবার ঘটনা বিশ্বব্যাপী এখন হু হু করে বাড়ছে। ত্রিশের কম বয়সী মোটা মানুষরাও, এমনকি শিশুরাও এখন এসব রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। আমি খুব গভীরভাবে দেখেছি, মোটা হওয়া এবং শারীরিক শ্রমশূন্য থাকার সমন্বয় যার মধ্যে ঘটে, এসব রোগ থেকে সে খুব কমই রেহাই পায়। কেউ হয়তো দ্রুত এসব কোনো রোগে আক্রান্ত হয়, কেউ একটু দেরিতে।

আরামে থাকা এবং মোটা হওয়াজনিত এসব রোগের কারণে মানুষ এক কঠিন জীবনের মুখোমুখি হয়; খাওয়া-দাওয়ায় লাগাম টেনে ধরতে হয়; সার্বক্ষণিক ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলতে হয়; সব সময় ঔষধ সাথে রাখতে হয়; নিয়মিত ঔষধ গ্রহণ করতে হয়; রুটিনমাফিক হাঁটতে বা ব্যায়াম করতে হয়; রক্তচাপ-ডায়াবেটিস এসব মাপতে হয় নিয়মিত; হার্টের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হয় কয় দিন পরপর- জীবনের এক বিভীষিকাময় অধ্যায়ে মানুষ প্রবেশ করে। মানুষের স্বাভাবিক খাওয়া-দাওয়া, স্বাভাবিক চলাফেরা, সর্বোপরি স্বাভাবিক জীবন চিরতরে নষ্ট হয়ে যায়। একমাত্র মৃত্যুই মানুষকে রোগগুলোর যন্ত্রণা থেকে পুরোপুরি মুক্তি দেয়।

ডায়াবেটিস দেখা দিলে অনেকের চোখ আর কিডনীও পর্যায়ক্রমে ক্ষতিগ্রস্থ হয়; ডায়াবেটিস বেড়ে গেলেও বিপদ, শূন্য হয়ে গেলেও বিপদ। উচ্চ রক্তচাপ দেখা দিলে রোগের তীব্রতায় অনেকে আকস্মিক হার্ট অ্যাটাকের কবলে পড়ে মুহূর্তেই মৃত্যুমুখেও পতিত হয়। হার্ট অ্যাটাকের কবলে পড়া অনেক রোগী তাৎক্ষণিক মারা না গেলেও দ্বিতীয় বা তৃতীয়বারের অ্যাটাকে মারা যায়। মাঝখানের সময়টা তার কাটে অন্তহীন শঙ্কা আর হতাশায়, চোখের সামনে সব সময় মৃত্যুকে দেখে। অনেক হার্ট অ্যাটাকের রোগীকে রিং বসিয়ে বা বাইপাস সার্জারী করে সাময়িকভাবে কোনো রকম সুস্থ করে তোলা গেলেও বাকি জীবন চলতে হয় খুব সতর্কভাবে।
মোটা হওয়ার এসব গুরুতর ক্ষতি সম্পর্কে আমরা সতর্ক না হলে দিন যত যাবে, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের মতো রোগগুলো বিশ্বব্যাপী মানুষের জীবনকে সংক্ষিপ্ত থেকে সংক্ষিপ্ততম করতেই থাকবে।

অধ্যায়-৫
উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগের কারণ সম্পর্কে ভুল ধারণা 

টেনশনে কি মানুষ উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হয়?
পাঁচ-ছয় বছর ধরে উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন, খুব কাছের এমন একজনকে একদিন জিজ্ঞেস করলাম, ‘আপনার উচ্চ রক্তচাপ কেন হয়েছে, বলতে পারবেন?’ তিনি উত্তরে বললেন, ‘এটা আমার টেনশন থেকে হয়েছে।’ পারিবারিক বা ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে তাঁকে বিভিন্ন সময় টেনশনে পড়তে হয় বলেই হয়তো তিনি ধরে নিয়েছেন তাঁর উচ্চ রক্তচাপ এই টেনশন থেকেই সৃষ্টি; নতুবা সমাজের আর দশজন মানুষ যখন টেনশনের সাথে উচ্চ রক্তচাপের সম্পর্ক নিয়ে নানা কথা বলছেন, সেসব শুনেও তিনি এমন ধারণা করতে পারেন। সবাই যখন একই কথা বলে, তখন তা সত্য না হয়ে কি পারে! তবে টেনশনকে তিনি তাঁর উচ্চ রক্তচাপের জন্য দায়ী মনে করতে পারেন এজন্যেও যে, যখন কোনো বিষয়ে তাঁর টেনশন হয়, তখন তাঁর রক্তচাপ বেড়ে যায়, তাৎক্ষণিক তাকে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ঔষধ গ্রহণ করতে হয়। সমাজে এখন এরকম ধারণা ব্যাপকভাবে প্রচলিত হয়ে গেছে, টেনশনের কারণে উচ্চ রক্তচাপ হয়। ধারণাটি প্রচলনের একটি কারণ হচ্ছে, বাস্তবতা। যাদের উচ্চ রক্তচাপ, তারা টেনশন করলে রক্তচাপ বেড়ে যায়, এটা আমরা আমাদের পরিচিত যাদের উচ্চ রক্তচাপ, তাদের বাস্তব অবস্থা দেখেই বুঝি। এছাড়া পত্রপত্রিকায় অনেক চিকিৎসক উচ্চ রক্তচাপ সম্পর্কে লেখতে গিয়ে টেনশনকেও উচ্চ রক্তচাপের একটা বড় কারণ বলে উল্লেখ করেন। চিকিৎসকরা যখন কোনো কথা বলেন, তা আমরা বিশ্বাস করতে দ্বিতীয়বার চিন্তা করি না।

টেনশন করলে রক্তচাপ বেড়ে যায়, এটা সত্য। এক্ষেত্রে বাস্তবতা এবং চিকিৎসকদের কথায় কোনো ভুল নেই। কিন্তু উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত রোগীদের ‘রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া’ আর কেউ নতুন করে ‘উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হওয়া’ এক কথা নয়। আমরা সবাই বিষয় দু’টোকে গুলিয়ে ফেলি। টেনশনের সাথে রক্তচাপের সম্পর্কের কথা শুনে আমরা কেউ তলিয়ে দেখি না, টেনশন করলে কাদের রক্তচাপ বাড়ে? যাদের শরীরে উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন নেই, তাদের? নাকি, যারা ইতোমধ্যে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত, তাদের? মিলিয়ে দেখুন। যেসব লোক উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত নন, তারা কোনো বিষয় নিয়ে যদি মারাত্মকভাবে টেনশন করে, তাদের রক্তচাপ কি বাড়ে? মোটেই না। তাহলে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হওয়ার জন্য টেনশন কিভাবে দায়ী? একজন লোকের আগ থেকে উচ্চ রক্তচাপ আছে, টেনশনের কারণে যদি তার রক্তচাপ বেড়ে যায়, তাহলে রক্তচাপ বেড়ে যাবার জন্যই শুধু টেনশনকে দায়ী করা যেতে পারে। কিন্তু লোকটির শরীরে উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টির জন্য টেনশনকে দায়ী করা হবে ভুল। প্রশ্ন থেকে যায়, তাহলে মানুষ কী কারণে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হয়? প্রশ্নটির উত্তর পরে আসছে।

টেনশন কি হার্ট অ্যাটাকের কারণ?
বর্তমান বিশ্বে যে রোগগুলোর কাছে মানুষ সবচেয়ে বেশি পরাজিত, মানুষের অকালমৃত্যুর জন্য যে রোগগুলো সবচেয়ে বেশি দায়ী, তন্মধ্যে ক্যান্সার, স্ট্রোক এবং হার্ট অ্যাটাক অন্যতম। আবার ক্যান্সার এবং স্ট্রোকে যে মৃত্যুগুলো হয়, সেগুলোর সাথে হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর তুলনা করা হলে আমার মনে হয়, ক্যান্সার ও স্ট্রোকে মৃত্যুর চেয়েও হার্ট অ্যাটাকে বিশ্বব্যাপী মানুষের মৃত্যু অনেক অনেক বেশি ঘটে।

আমাদের পরিচিত যে মানুষগুলো ইতোমধ্যে হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন বা এখন হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত, সে মানুষগুলোর সংখ্যার সাথে আমাদের পরিচিত যারা ক্যান্সার ও স্ট্রোকে মারা গেছেন বা এসবে আক্রান্ত, সে মানুষগুলোর সংখ্যার তুলনা করা হলে সবার নিকট পরিষ্কার হবে, হার্ট অ্যাটাক অন্য সব রোগের চেয়ে বর্তমান বিশ্বে মানুষের মৃত্যুর পেছনে বেশি প্রভাব ফেলে।

পঁয়ত্রিশ বছরের কাছাকাছি বয়সের আমাদের এক আত্মীয় মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত অবস্থায় বছর দুয়েক আগে হার্ট অ্যাটাকে আকস্মিক মৃত্যুবরণ করেন। পারিবারিক কিছু বিষয় নিয়ে তিনি অনেক সময় টেনশন করতেন বলে সবাই তাঁর এ হার্ট অ্যাটাকের জন্য টেনশনকেই দায়ী করলো। এরকম হার্ট ব্লক্ড হয়ে বা হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুবরণকারী অধিকাংশ মানুষের মৃত্যুর জন্য আমরা চোখ বন্ধ করে টেনশনকেই দোষারোপ করি, টেনশন ছাড়া অন্য কিছু তাদের হার্ট অ্যাটাকের জন্য দায়ী ছিল কিনা, তা ভেবে দেখার তেমন একটা প্রয়োজন বোধ করি না।

‘মানসিক অস্থিরতা বা টেনশনে হার্ট অ্যাটাক হয়’, এমন কথা সমাজে এতো ব্যাপকভাবে প্রচলিত, মনে হয়, হার্ট অ্যাটাকের একমাত্র কারণ মানসিক অস্থিরতা বা টেনশন। মনে হয়, যেসব মানুষ বেশি বেশি টেনশন করে বা মানসিক অস্থিরতায় ভোগে, তারাই কেবল হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয় বা মারা যায়, আর যাদের তেমন কোনো মানসিক অস্থিরতা বা টেনশন নেই, তারা হার্ট অ্যাটাক থেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ থাকে। এই হিসেবে- ১. সমাজের নিরীহ, হতদরিদ্র এবং খেটে খাওয়া মানুষগুলোরই বেশি বেশি হার্ট অ্যাটাক হবার কথা। কারণ অভাব, সংকট এবং নানা রকম দুশ্চিন্তা তাদেরই নিত্যসঙ্গী। যাদের জীবনে সুখ নেই, সারাক্ষণ সুখ এবং অর্থের পেছনে যারা ছোটে, মানসিক অস্থিরতা তো তাদেরই বেশি। সুতরাং তারাই বেশি বেশি হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হবার কথা। ২. পক্ষান্তরে যাদের জীবন প্রাচুর্যে ভরপুর, জীবনে যারা সুখী, যারা বিত্তশালী ও সৌভাগ্যবান, তারা কোনোভাবে হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হবার কথা খুব কম! কারণ তাদের তো তেমন কোনো মানসিক অস্থিরতা বা টেনশন নেই!

বিষয়টা কি বাস্তবেই এমন?

যদি একটুও বাড়িয়ে না বলি, আমার মনে হয়, যেসব মানুষ ব্যক্তিগত জীবনে সুখী, যাদের অভাব কম, মানসিক অস্থিরতা যাদের জীবনে খুব কম, তারাই বেশি বেশি হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয় বা মারা যায়। এমন অসংখ্য ঘটনা আমার জানা আছে, উল্লেখ করা অনাবশ্যক। কারণ উদাহরণ শুধু আমার চোখের সামনেই নেই, সবার চোখের সামনেই এমন অসংখ্য ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটে চলছে। দেখা যায়, অর্থবিত্তের মালিক সুখী মানুষরাই বিশ^ব্যাপী বেশি হার্ট অ্যাটাক বা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়, মারা যায়। বিশ্বের অনেক অনেক বিখ্যাত, গুরুত্বপূর্ণ লোক হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাবার সংবাদ প্রায়ই পত্রিকায় চোখে পড়ে। আমার বুঝে আসে না, প্রতিনিয়ত অসংখ্য সুখী, বিত্তশালী ও সফল মানুষ আমাদের চোখের সামনে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যেতে দেখার পরও আমরা হৃদরোগের জন্য কেন একতরফাভাবে মানসিক অস্থিরতাকে দায়ী করি!

আসলেই পৃথিবীতে অনেক কিছু সহজে কাউকে বুঝিয়ে বলা সম্ভব হয় না বা যতো সহজ ও স্পষ্ট করেই বুঝিয়ে বলা হয়, অনেকে বুঝতে চান না, প্রচলিত ধারণা থেকে বের হয়ে আসতে পারেন না। বিশেষত কোনো ব্যাপক প্রচলিত বদ্ধমূল ধারণা ভুল প্রমাণ করতে গেলে বিষয়টা আরো বেশি কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। মানুষ কথায় কথায় পাল্টা যুক্তি দাঁড় করায়। এক্ষেত্রে অনেকে আমার কথাকে সম্পূর্ণ নাকচ করে দিয়ে বলবে, “ঠিক আছে, ‘কিছু কিছু’ সুখী মানুষও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়। কিন্তু এরাও আক্রান্ত হয় সেই টেনশনের কারণেই। কারণ সুখী মানুষরাও অনেক সময় মানসিক অস্থিরতায় ভোগে। বিপদাপদ সবার জীবনেই কমবেশ থাকে। সুতরাং ধনী বা দরিদ্র, সুখী বা অসুখী সবার ক্ষেত্রেই হৃদরোগের কারণ একটাই- মানসিক অস্থিরতা।”

মানসিক অস্থিরতা বা টেনশনকে যারা এভাবে একতরফাভাবে হার্ট অ্যাটাকের জন্য দায়ী মনে করেন, তাদের নিকট প্রশ্ন- ১. যেসব লোক শারীরিক পরিশ্রমের পেশায় নিয়োজিত, বছরের পর বছর ধরে নিয়মিত দৈনিক চার-পাঁচ ঘন্টা বা তার চেয়ে বেশি সময় ঘামঝরানো শারীরিক পরিশ্রম করে আসছেন, তাদের কাউকে কখনো হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হতে দেখা যায়? ২. তাদের কারো জীবনে কি তাহলে কোনো টেনশন বা মানসিক অস্থিরতা নেই?

আমার মনে হয়, কোনো সচেতন মানুষই প্রথম প্রশ্নটির উত্তরে ‘হ্যাঁ’ বলতে পারবেন না এবং দ্বিতীয় প্রশ্নটির উত্তরে ‘নেই’ বলতে পারবেন না।

বরং আমার ছোট্ট পর্যবেক্ষণে মনে হয়, জীবনে অভাব, বিপদ, দুঃখ, হতাশা তেমন একটা নেই, এমন সুখী মানুষগুলোই হৃদরোগে আক্রান্ত হয় বেশি বেশি। অন্য যারা আক্রান্ত হয়, তারা টেনশনে আক্রান্ত হয় বলে বাহ্যিক দৃষ্টিতে মনে হলেও টেনশন তাদের হৃদরোগের জন্য প্রত্যক্ষভাবে দায়ী নয়।
প্রশ্ন হচ্ছে- ১. তাহলে হৃদরোগের প্রত্যক্ষ কারণ কী? ২. জীবনে অভাব, বিপদ, দুঃখ, হতাশা তেমন একটা নেই, এমন সুখী মানুষরা কেন বেশি বেশি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়? এরা তো বরং হৃদরোগ থেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ থাকারই কথা, কারণ তেমন কোনো টেনশনে এদের পড়তে হয় না?


চতুর্থ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

Occupation: Teaching, Hobbies: Writing

0 Comments: