Headlines
Loading...
দীর্ঘজীবন লাভের উপায় (পর্ব-২) : বাড়ছে মোটা হবার প্রবণতাও

দীর্ঘজীবন লাভের উপায় (পর্ব-২) : বাড়ছে মোটা হবার প্রবণতাও


ডায়াবেটিস, হার্ট অ্যাটাক এবং উচ্চ রক্তচাপের প্রকৃত কারণ এবং প্রতিরোধের উপায় জানার মাধ্যমে


দীর্ঘজীবন লাভের উপায়

অধ্যায়-৩
বাড়ছে মোটা হবার প্রবণতাও

চিকন শরীরের মানুষের প্রতি সমাজের একটা উন্নাসিকতা অনেক ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা যায়। একটা কথা সমাজে প্রচলিতও আছে, ‘মোটাসোটা বেকুবও ভালো’! সমাজের এ দৃষ্টিভঙ্গির কারণে চিকন মানুষগুলো সব সময় এক ধরণের হীনম্মণ্যতায় ভোগে এবং মোটা হতে চায়। ‘মোটাসোটা বেকুব’ ভালো, না খারাপ সে বিতর্কে না গিয়ে অন্তত এটুকু স্বীকার করা যায়, মোটা হলে মানুষকে অনেক  স্মার্ট দেখায় (তবে বেশি মোটা নয়)। এখন স্মার্টনেসের যুগ। স্মার্ট হবার যত পন্থা আছে, মানুষ সব পন্থাই অবলম্বন করতে চায়। এজন্য মোটা হবার প্রতি চিকন মানুষের আগ্রহ এখন খুব বেশি।

মোটা হবার জন্য অনেকে ঔষধ ব্যবহার করতেও কুন্ঠাবোধ করছে না। অনেককে বেশি বেশি খেয়ে মোটা হবার স্বপ্ন বাস্তবায়নে উঠে পড়ে লেগে যেতে দেখা যায়। বিগত কয়েক দশক ধরে বিশ্বের প্রায় সব দেশে মানুষের মোটা বা স্থূল হবার হার ব্যাপক থেকে ব্যাপকতর হচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন, এই স্থূলতার বড় এক কারণ ফাস্টফুড বা জাঙ্কফুডে আসক্তি। তবে আমার কাছে মনে হয়, ২ কারণে মানুষ বেশি মোটা হয়। ১. ক্ষুধা লাগতে না লাগতেই মনমতো খাওয়া বা বেশি বেশি খাওয়া এবং ২. শারীরিক পরিশ্রমের যে কোনো কাজ থেকে থেকে যথাসাধ্য দূরে থাকা বা আরামপ্রিয়তা। একজন মানুষ বেশি বেশি খেলেও যদি বেশি বেশি শারীরিক পরিশ্রম করে, সে মুটিয়ে যেতে পারে না, কিন্তু যখন বেশি বেশি খাওয়া অনুপাতে শারীরিক পরিশ্রম হয় না, তখন শরীরে চর্বি বেড়ে যেতে থাকে এবং শরীর ফুলে ফেঁপে উঠতে শুরু করে। তবে অনেক সময় বাবা-মা কেউ মোটা হলে সন্তাকেও মোটা হতে দেখা যায়, আবার অনেকে কিছু নির্দিষ্ট কিছু রোগের কারণেও মোটা হয়ে যায়। এই দুটো হচ্ছে মোটা হবার অনিচ্ছাকৃত কারণ।


এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় টেলিভিশন এনটিভির স্টুডিওতে অনুষ্ঠিত একটি আলাপচারিতার অংশ বিশেষ উল্লেখ করতে হচ্ছে। এনটিভির ‘স্বাস্থ্য প্রতিদিন’ অনুষ্ঠানের ২২৬৬তম পর্বে অংশগ্রহণ করেন ইউনাইটেড হাসপাতালের (ঢাকা) পরামর্শক অধ্যাপক কানিজ মাওলা। ‘মুটিয়ে গেলে শরীরে কী সমস্যা হয়?’ শিরোনামে ১৪ জানুয়ারি ২০১৬ তারিখে এনটিভির ওয়েবসাইটে আলাপচারিতাটি একটি ফিচার আকারে প্রকাশিত হয়। অধ্যাপক কানিজ মাওলাকে জিজ্ঞেস করা হয়, ‘কেন এই সমস্যা (স্থূলতা) দিন দিন বাড়ছে? তার পেছনের কারণগুলো কী?’ উত্তরে তিনি বলেন, ‘প্রথম কারণ যদি বলতে চাই, পরিবেশগত কারণ প্রধানত দায়ী। পরিবেশ বলতে আমি বোঝাতে চাচ্ছি, আমাদের অনেক ধরনের পরিবেশের পরিবর্তন হয়েছে। এখন অনেক মানুষ আথির্কভাবে স্বচ্ছল হচ্ছে সারাদেশেই। তাতে অনেক ধরনের খাবার খাচ্ছে, এনার্জি ইনটেক (শক্তি গ্রহণ) বেশি হচ্ছে এবং খরচ কমে যাচ্ছে। যেমন : ব্যাংকে যদি টাকা ডিপোজিট করা হয়, আর খরচ না করা হয়, টাকা তো জমতেই থাকবে। সেই রকমভাবে এনার্জি (শক্তি) নিচ্ছি আমরা। ফাস্ট ফুড, সফট ড্রিংকস এগুলো তো আগে ছিল না। এখন সবাই খাচ্ছে। সব দেশেই খাচ্ছে। তবে খরচ হচ্ছে না। কারণ কায়িক পরিশ্রম তো কমে যাচ্ছে। ছেলেমেয়েরা আগে যে দলবেঁধে স্কুলে যেত সেটি কিন্তু এখন আর দেখা যায় না। মহিলারা আগে ঘরের কাজ করত, কাপড় ধুইতো বাসন মাজতো- এসব আর করা লাগে না। সবই মেশিন করে দিচ্ছে। তা ছাড়া কম্পিউটার, ফেসবুক, টেলিভিশন, সিরিয়াল- এগুলোও মানুষকে বাধ্য করছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রাখতে। এতে শরীরের কোনো শক্তি খরচ হচ্ছে না। কাজেই ব্যাংকে শুধু জমছেই, খরচ হচ্ছে না। এটি একটি কারণ।

তা ছাড়া কিছু অসুখ রয়েছে। এসব অসুখের কারণেও স্থূলতা হতে পারে। তার মধ্যে হরমোনাল অসুখ রয়েছে। এডিনাল গ্ল্যান্ডের অসুখ, থাইরোয়েড গ্রন্থির অসুখ হলে এ রকম হতে পারে। মস্তিস্কে থেলামাস বলে একটি অঙ্গ রয়েছে সেটিতে যদি কোনো সমস্যা হয়, তাহলেও হতে পারে। কিছু ওষুধ রয়েছে, যেমন : যান্ত্রিক কারণে মানুষের অনেক সময় মানসিক সমস্যা হয়। এর জন্য যেসব ওষুধ খায় এর কারণেও হতে পারে।
তা ছাড়া একটি প্রচলিত রোগ ডায়াবেটিস, সেই ডায়াবেটিসের যে ওষুধ সালফোলিন ইউরিয়া- এটাও মোটা করে। এমনকি ইনসুলিনের জন্যও সমস্যা হতে পারে। এ রকম অনেক ওষুধ আছে, অনেক অসুখ আছে, সবকিছুর কারণে হতে পারে। তার সঙ্গে আরো একটি বিষয় না বললেই নয়, জেনেটিক্যাল কারণও রয়েছে। তবে স্থূল হতে এটি কতটুকু প্রভাব ফেলে এটি সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না।’

এখানে স্থূলতার জন্য জেনেটিক্যাল কারণকে দায়ী করতে দ্বিধা করা হলেও বাস্তবে কিন্তু অনেক উদাহরণ পাওয়া যায় পিতা-মাতা কারো স্থূলতার কারণে সন্তান স্থূল হবার। ‘স্থূলতা যখন সমস্যা’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয় দৈনিক যুগান্তরে ১২ মার্চ ২০১৬ তারিখে, যা লিখেন ডা. ওয়ানাইজা। সেখানে স্থূলতার জন্য জেনেটিক্যাল কারণও যে অনেক সময় ভূমিকা রাখে, বিষয়টা নির্দ্বিধায় উল্লেখ করে বলা হয়, ‘শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমার ফলে মানুষ মোটা হয় বা ভুঁড়ি হয়। ফ্যাট সেন্স বা চর্বিকোষ যখন আয়তনে বাড়ে তখন শরীরে চর্বি জমে। পেটে, নিতম্বে ও কোমরে ফ্যাট সেন্স বেশি থাকে। অতিরিক্ত খাওয়ার জন্য দেহে চর্বি জমে। আবার যে পরিমাণ খাওয়া হচ্ছে বা দেহ যে পরিমাণ ক্যালরি পাচ্ছে সেই পরিমাণ ক্ষয় বা ক্যালরি খরচ হচ্ছে না এ কারণেও দেহে মেদ জমতে পারে। এগুলো শোনার বা জানার পর অনেকে হয়তো বলবেন, তারা সঠিক পরিমাণে খাদ্য গ্রহণের পরও ওজন বেশি। তাদের অভিযোগ সঠিক। বংশগত কারণেও মানুষ মোটা হতে পারে।...
এ ছাড়া থাইরয়েড ও হরমোন মেদ কম বা বৃদ্ধির সঙ্গে জড়িত। থাইরয়েড হরমোন বৃদ্ধি পেলে রোগী প্রচুর খাবে কিন্তু ওজন বাড়বে না। আবার থাইরয়েড হরমোন কমে গেলে ওজন বৃদ্ধি পায়।’

স্থূল বা মোটা হওয়াটা সমাজের প্রায় সবার নিকটই ইতিবাচক। যে কোনো মা তার সন্তান একটু শুকিয়ে গেলে অস্থির হয়ে যান, আবার মোটা হলে বেশ আনন্দিত হন। সন্তান মোটা হলেই মনে করেন সে শারীরিকভাবে সুস্থ আছে। মোটা হওয়াকে অনেকে সুস্থতার মাপকাঠি বলেও মনে করেন। চিকন মানুষকে মনে করেন রোগা। অনেকের নিকট মোটা হওয়াটা সুখের প্রতীকও। মানুষ সুখে থাকলেই নাকি মোটা হয়ে যায়। মোটা না হওয়াটা অনেক সময় পছন্দের পাত্রী বা কাক্সিক্ষত চাকরি না পাওয়ার ক্ষেত্রেও প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়। চিকন ছেলের কাছে মেয়ে বিয়ে দিতে অনেকের আপত্তি। চিকন শরীরের কাউকে চাকরি দিতেও অনেক প্রতিষ্ঠান রাজি হয় না। তাই মোটা হবার প্রতি আমাদের ঝোঁক বৃদ্ধি পাওয়াটা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

দুঃখজনক হচ্ছে, মোটা হওয়ার এসব আপাতঃ উপকারী দিকের ভেতরে কিছু মারাত্মক ক্ষতিকর দিকও যে রয়েছে, তা আমরা বুঝতেই পারি না। এটা জানা কথা, অনেক ইতিবাচক কাজের মারাত্মক নেতিবাচক দিকও অনেক সময় থাকে। এভাবে মোটা হবারও কিছু নেতিবাচক দিক রয়েছে। কথাটি সবাই মানতে না চাইলেও যারা মোটা হয়ে নানারকম জটিলতার মুখোমুখি হয়েছেন, তারা কথাটিকে অক্ষরে অক্ষরে সমর্থন করবেন। তবে হ্যাঁ, মোটা মানুষদের কাছের অনেকে অবশ্য বুঝতে পারেন, অনেক মোটা মানুষ যে চিকন হবার জন্য সব সময় ছটফট করে, মোটা হবার পর এখন চিকন হবার সর্বাত্মক চেষ্টা করেও চিকনত্ব ফিরে পাচ্ছে না!


তৃতীয় পর্ব পড়তে হলে এখানে ক্লিক করুন

Occupation: Teaching, Hobbies: Writing

0 Comments: