Headlines
Loading...
দীর্ঘজীবন লাভের উপায় (৬২তম পর্ব) :  লেখাটির মূল বক্তব্য এবং দু’টি কথা

দীর্ঘজীবন লাভের উপায় (৬২তম পর্ব) : লেখাটির মূল বক্তব্য এবং দু’টি কথা

 লেখাটির মূল বক্তব্য এবং দু’টি কথা



লেখাটির মূল বক্তব্য ৩টি। (১) মানুষের গড় আয়ু কমছে। গড় আয়ু কমার প্রধান কারণ কিছু প্রাণঘাতী রোগের ভয়াবহ প্রসার। যেমন: ক্যান্সার, স্ট্রোক, কিডনী রোগ, এইডস্, ম্যালেরিয়া, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি। রোগগুলোর মধ্যে হৃদরোগ ব্যতীত অন্য রোগগুলোতে বিশ্বব্যাপী যত মানুষ মারা যায়, শুধু হৃদরোগে তার চেয়ে বেশি মানুষ মারা যায়। ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখের দৈনিক মানবজমিনে বিশ্ব হার্ট দিবস উপলক্ষ্যে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় ‘অল্প বয়সে মৃত্যুর ৮০ শতাংশ দায়ী হৃদরোগ’ শিরোনামে, যা লিখেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাকা) ইন্টারভেনশন্যাল কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক; হৃদরোগ, বাতজ্বর, বক্ষব্যাধি, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এসএম মোস্তফা জামান। লেখাটিতে বলা হয়, ‘হৃৎপিন্ড হচ্ছে মানুষের শরীরের একমাত্র অঙ্গ, যেটা আমাদেরকে সত্যিকার অর্থে বাঁচিয়ে রাখে, কেননা মানুষের মস্তিষ্কের মৃত্যু হলেও আমরা তাকে জীবিত বলতে পারি যতক্ষণ পর্যন্ত হৃৎপিন্ডের কার্যক্ষমতা সচল থাকবে। বর্তমানে মানুষের মৃত্যুর যত কারণ আছে, হৃৎপিন্ড ও রক্তনালিজনিত রোগের কারণে মৃত্যু হলো সবচেয়ে বেশি। এক সমীক্ষা অনুযায়ী দেখা যায়, ২০০০ সালের শুরু থেকে প্রতি বছর ১৭ মিলিয়ন লোক মারা যায় এই হৃৎপিন্ড ও রক্তনালিজনিত রোগের কারণে। দেখা যায়, হৃৎপিন্ডে রক্তনালির ও মস্তিষ্কের স্ট্রোকজনিত কারণে মৃত্যুর হার ক্যান্সার, এইচআইভি-এইডস্ এবং ম্যালেরিয়া থেকেও বেশি। বর্তমানে ৩১ শতাংশ মৃত্যু হয় এই হৃদরোগ ও রক্তনালিজনিত কারণে এবং অল্প বয়সে মৃত্যুর ৮০ শতাংশ কারণও এ হৃদরোগকে দায়ী করা হয়।...’


আর ক্যান্সার, স্ট্রোক, এইডস্, ম্যালেরিয়া, কিডনী রোগ এবং উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস জনিত জটিলতায়ও বিশ্বে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ প্রাণ হারায়। তবে (২) প্রাণঘাতী অন্য রোগগুলো প্রতিরোধের কোনো উপায় না থাকলেও হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধের কার্যকরী উপায় রয়েছে। তা হলো- দৈনিক অন্তত এক ঘন্টা শারীরিক পরিশ্রম/ব্যায়াম/খেলাধুলা করা, অলস জীবনযাপন না করা, শুয়ে-বসে থেকে দিনের বেশির ভাগ সময় না কাটানো, চিকন থাকা, শরীরে মেদ-চর্বি বাড়তে না দেয়া, পরিমিত বা কম কম খাওয়া বা ভোজনবিলাসী না হওয়া ইত্যাদি। এ উপায়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় উপায় নিয়মিত পর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রম করা। প্রতিরোধের এ উপায়গুলো অবলম্বন করলে মানুষ এসব রোগে আক্রান্ত হওয়া থেকে রক্ষা পাবে এবং মানুষের গড় আয়ু অনেক বেড়ে যাবে। অপরদিকে (৩) মানসিক উত্তেজনা, বংশের কারো থাকা, বয়স বেশি হওয়া, লবণ, চিনি বা মিষ্টান্ন বেশি খাওয়া, ফাস্টফুড বা জাঙ্কফুড খাওয়া, খাদ্যে ভেজাল এবং ধূমপান করা এসব রোগের জন্য কোনোভাবে দায়ী নয়।

দেখা যায় যেসব রিকশাচালক কয়েক যুগ ধরে পায়েচালিত রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে, তারা কখনোই এসব রোগে আক্রান্ত হয় না, যতো লবণ বা চিনি খাক, যতো টেনশনই করুক, ধূমপান করুক, বয়স যতো বেশি হোক বা তাদের পূর্বপুরুষ এসব রোগে আক্রান্ত হোক না কেন। শুধু রিকশাচালক নন, অন্য কোনো শারীরিক পরিশ্রমের পেশায় নিযুক্ত ব্যক্তিরাও যদি নিয়মিত ঘামঝরানো কাজ করেন, তারাও যখন এসব রোগ থেকে নিরাপদ থাকেন, তখন কিভাবে বলা যায় লবণ খাওয়া, চিনি বা মিষ্টান্ন বেশি খাওয়া, ধূমপান করা, বংশের কারো থাকা, বয়স বেশি হওয়া, টেনশন করা হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিসের জন্য দায়ী? যাদের শরীরে কোলেস্টেরল বেশি; যারা ভোজনরসিক; মোটা; যারা নিয়মিত কায়িক শ্রম বা ব্যায়াম করে না, তারা লবণ না খেলেও, চিনি বা মিষ্টান্ন সম্পূর্ণ বর্জন করলেও, ধূমপান না করলেও, টেনশন না করলেও, বয়স কম হলেও হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হবেই। তখন লবণ, চিনি, তামাক, ধূমপান বা টেনশনকে দায়ী করার পরিবর্তে কোলেস্টেরলের আধিক্য, স্থূলতা এবং সর্বোপরি কায়িক পরিশ্রমশূন্য থাকাকে দোষারোপ না করে উপায় থাকবে না। বাস্তবতা অস্বীকার করে লেখাটির বক্তব্যকে ভুল বলে উড়িয়ে দিলে বিশ্বব্যাপী মানুষ রোগগুলোর ভয়াবহতা থেকে কখনো মুক্তি পাবে না এবং রোগগুলোর ভয়াবহ থাবায় মানুষের জীবন দিন দিন সংক্ষিপ্ত থেকে সংক্ষিপ্ততর হতে থাকবেই।


৪৩. শেষ অধ্যায়

লেখাটি কার জন্য?


লেখাটি লিখেছি আর কারো জন্য নয়, প্রধানত আমার জন্য। লেখাটির একেবারে প্রথমেই বলেছি, চিন্তাধারাগুলো আমার ভবিষ্যৎকে কেন্দ্র করেই। পৃথিবীর আর কেউ লেখাটিকে এক পয়সার দাম না দিলেও লেখাটি আমার জীবনের জন্য, আমার ভবিষ্যতের জন্য পাথেয়। তবে আমি চাই, পৃথিবীতে বেঁচে থাকা এবং ভবিষ্যতের সব মানুষের হাতেও লেখাটি পৌঁছুক। যে কোনো নিবিড় পর্যবেক্ষণেই দেখা যাবে, বর্তমান বিশ্বে মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া রোগগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর হচ্ছে হৃদরোগ। হৃদরোগেই মানুষ এখন সবচেয়ে বেশি মারা যায়। এরপর হয়তো আছে ক্যান্সার। আর মানুষের জীবন যে রোগগুলোর কারণে সবচেয়ে বেশি কঠিন হয়ে যায়, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস। উচ্চ রক্তচাপই অনেক সময় মানুষকে ঠেলে দেয় হৃদরোগের দিকে। আর ডায়াবেটিস দেখা দিলে তো মানুষের জীবন বলতে গেলে শেষ! ডায়াবেটিসের কারণে অনেকে কিডনী বিকল হয়ে মারা যায়, অনেকে চোখ রোগাগ্রস্থ হয়ে পড়ে, অনেকে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হবার পর হৃদরোগেও আক্রান্ত হয়ে যায়। একথা আগেও বলা হয়েছে, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং উচ্চ রক্তচাপ- এ রোগ তিনটি হাত ধরাধরি করে চলে। কারো এ তিনটি রোগের একটি দেখা দিলে একসময় বাকিগুলোও তাকে পেয়ে বসে। রোগ তিনটি থেকে আত্মরক্ষা করতে পারলে মানুষের জীবন দীর্ঘ হবার পথ অনেক অনেক প্রসারিত হবে। এবং রোগ তিনটি থেকে যেন মানবজাতি আত্মরক্ষা করতে পারে, সেজন্যই লেখাটি লেখা।


লেখাটি শুধু বাংলায় প্রকাশ করতে হলো, অন্য কোনো ভাষা ভালোভাবে জানা না থাকায়। এজন্য পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষের কাছে লেখাটি পৌঁছবে না। কারণ বাংলা শুধু বাংলাদেশে এবং ভারতের কিছু অংশে ব্যবহৃত হয়। ইংরেজি, মান্দারিন (চায়নিজ), আরবীসহ অসংখ্য ভাষা ব্যবহার করে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষ। তাই অন্য ভাষাভাষী মানুষের দেশগুলোতে যদি রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় লেখাটি সেসব দেশের প্রচলিত ভাষায় অনুবাদ করে সবার জন্য লেখাটি পড়ার পথ খুলে দেয়া হয়, তাহলেই আমার মনে হয় লেখাটির পেছনে আমার শ্রম ও সময় ব্যয় সার্থক হবে।

অবশ্য পৃথিবীতে মানবজাতি অসংখ্য ভাষা ব্যবহার করা নিয়ে আমার ভিন্নমতও রয়েছে। আমার মনে হয়, মানুষ এক জাতি, এক ভাষাই ব্যবহার করা উচিত। তাহলেই মানুষে মানুষে সম্পর্ক আরো নিবিড় হবে। মানুষের মধ্যে প্রচলিত এতোগুলো ভাষা আমাদের মধ্যে পারস্পরিক দূরত্বই কেবল বাড়িয়েছে, সামগ্রিক মানবজাতির আর কোনো উপকারে আসেনি। যারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঘোরাঘুরি করেন দরকারে অথবা ভ্রমণপিপাসায়, তারা হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করেন, বহুভাষা মানবজাতির মধ্যে কতো দূরত্ব সৃষ্টি করে রেখেছে। একটা কুকুরও অন্যদেশের কুকুরের ভাষা বুঝতে পারে। কিন্তু যে মানবজাতি পৃথিবীর সব জাতি থেকে জ্ঞানে-গুণে সেরা, সে মানবজাতি পার্শ্ববর্তী আরেকটা দেশে গেলে সেখানকার মানুষের সাথে মিশতে পারে না। অনেকটা কথা বলতে না পারা ‘এক বছরের শিশু’র মতো হয়ে যায়!

ইন্টার্নেটের কল্যাণে বিশ্ব এখন একটি গ্রামে পরিণত হয়েছে ঠিকই, তবে গ্রামটা এতোই অদ্ভুত, যে গ্রামের একজন মানুষ আরেকজন মানুষের কথা বুঝতেই পারে না। শুধু ভাষাগত ভিন্নতা বিশ্বকে গ্রাম হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে বড় অন্তরায়। বহুভাষা মানবজাতির আরো অনেক ক্ষতির জন্যও দায়ী। পৃথিবীতে মাত্র একটা ভাষা হলে যে কোনো কল্যাণকর লেখা, উপভোগ্য গান, চলচ্চিত্র, নাটক, গল্প, উপন্যাস, কবিতা, বক্তৃতা, বার্তা, মানুষের সব সদস্যের নিকট সহজেই পৌঁছে যেতো। পৃথিবীর সব মানুষ সমানভাবে এগুলো থেকে উপকৃত হতো। জানি না, মানবজাতি নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক আরো গাঢ় করার জন্য, চলার পথ আরো সহজ করার জন্য কখনো একভাষা ব্যবহারে উৎসাহিত হবে কিনা!

লেখাটি বর্তমান এবং অনাগত মানুষের কল্যাণেই লেখা, নিজের নাম প্রচারের জন্য নয়। পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ আমাকে চেনে না বলে কি আমার জীবন থেমে আছে? আর পৃথিবীর সবাই যদি আমাকে চেনে, আমার কোনো বিপদ বা মৃত্যু কি আটকাতে পারবে? লেখাটি আমাকে অমর করে রাখবে, এমন ভাবনাও মনে নেই। কারণ ‘মানুষ তার কর্মের মধ্যে বেঁচে থাকে’ হয়তো, কিন্তু সে বেঁচে থাকা কার্যত মানুষের কোনো কাজে আসে না। আমি চাই বাস্তবিকই দু’দিন বেশি বেঁচে থাকতে পৃথিবীতে। হয়তো সফল হবো না। কারণ জন্মের পর থেকেই দুর্ভাগ্য আমার পিছু লেগে আছে, হাতে ধরে আমার অনেক ক্ষতিও করেছে। আরো করবে নিশ্চয়।

পৃথিবীতে মানুষ আগমনের মাত্র একটাই পথ, কিন্তু চলে যাবার পথ অসংখ্য। মুহূর্তের দুর্ঘটনায় একজন সুস্থ-সবল মানুষ মারা যাবার লক্ষ লক্ষ ঘটনা প্রতিনিয়তই ঘটছে পৃথিবীর কোথাও না কোথাও। পৃথিবীতে বেশি দিন বেঁচে থাকতে না পারলেও যতদিন বেঁচে থাকি, চাই সময়টাতে মানুষের কিছু উপকার করে যেতে। মানুষের উপকার করার মধ্যে যে আনন্দ, তা অন্য সব আনন্দ থেকে আলাদা। যারা এ আনন্দের স্বাদ পায়নি, তারাই ক্ষতি করে মানুষের, তারাই বানায় মানুষ মারার অস্ত্র।

Occupation: Teaching, Hobbies: Writing

0 Comments: