দীর্ঘজীবন লাভের উপায় (পর্ব-৬০) : হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ যেসব কারণে, ক্যান্সার ও স্ট্রোক সেসব কারণে নয়
অধ্যায়-৪০
হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ যেসব কারণে, ক্যান্সার ও স্ট্রোক সেসব কারণে নয়
প্রায়ই হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের কারণের সাথে ক্যান্সার ও স্ট্রোকের কারণকে গুলিয়ে ফেলতে দেখা যায়। শারীরিক নিষ্ক্রীয়তা এবং স্থূলতা যেমন হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের জন্য দায়ী নয়, তেমনি এগুলো ক্যান্সার ও স্ট্রোকের জন্যও দায়ী নয়। অথচ পত্রপত্রিকায় অনেক ডাক্তারের লেখায় এবং অনেক গবেষণায় এমন কথা অহরহ প্রচারিত হয়। ‘সাইক্লিং সম্পর্কে ভুল ধারণা’ পরিচ্ছেদে ২০ এপ্রিল ২০১৭ বিবিসি নিউজে প্রকাশিত Cycling to work can cut cancer and heart disease, says study শিরোনামে সাইক্লিং সম্পর্কে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নাল কর্তৃক পরিচালিত একটি গবেষণা প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘‘Want to live longer? Reduce your risk of cancer? And heart disease? Then cycle to work, say scientists.’’
১৮ জুলাই ২০১৬ তারিখে USNews এর ওয়েবসাইটে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়, ÔÔ90 Percent of Strokes Could Be Prevented’’ শিরোনামে, যা তৈরি করা হয় চিকিৎসা সাময়িকী ল্যানসেটে প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রবন্ধের উপর ভিত্তি করে। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়,
‘‘Nine out of 10 strokes are preventable, according a global study that shines light on one of the world's leading causes of death and disability.
New research published Friday in The Lancet confirms 10 risk factors that can be modified account for 90 percent of strokes – which occur when an area of the brain loses blood flow – across the world. The study, dubbed INTERSTROKE, examined nearly 27,000 people in 32 countries across all continents, building on the breadth of an earlier version of the study that identified the same 10 risk factors.
Hypertension, or high blood pressure, is the leading risk factor; others include physical inactivity, obesity, stress, diabetes and a poor diet.
Researchers looked at the proportion of strokes per factor and quantified them through population attributable risk factors. This means that for each one of these 10 risk factors, there’s a corresponding percentage of reduced stroke risk if one risk factor didn’t exist. For example, without hypertension, a person’s stroke risk is down 47.9 percent; 35.8 percent reduction for physical inactivity; and 23.2 percent reduction for poor diet. Since many of these risks can overlap, when added together, this translates to a 90.7 percent reduction probability. This was comparable for each region studied and all age ranges in both men and women.’’
[https://health.usnews.com/wellness/articles/2016-07-18/strokes-could-be-prevented-in-90-percent-of-cases-study-says]
ল্যানসেটের গবেষণা মতে, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা, স্থূলতা, ধূমপান, মানসিক চাপ, খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদি স্ট্রোকে আক্রান্ত হবার জন্য দায়ী। গবেষণা মতে, জীবনযাপন-পদ্ধতি ও আচরণগত (ধূমপান, খাদ্যাভ্যাস ও কায়িক শ্রমের ঘাটতি) পরিবর্তন এনে ৯০ শতাংশ স্ট্রোকের ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব। রক্তচাপ স্বাভাবিক রেখে, রক্তে শর্করা ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে স্ট্রোকের ঝুঁকি কমানো যায়।
ল্যানসেটের গবেষণাটির আলোকে বাংলাদেশের দৈনিক প্রথম আলোয় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় ৩১ জুলাই ২০১৬ তারিখে ‘৯০ শতাংশ স্ট্রোক প্রতিরোধ করা যায়’ শিরোনামে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইটে ক্যান্সার সম্পর্কে Cancer শিরোনামে একটি গবেষণামূলক নিবন্ধে ক্যান্সারের ঝুঁকির কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, ‘‘Tobacco use, alcohol use, unhealthy diet, and physical inactivity are major cancer risk factors worldwide and are also the 4 shared risk factors for other noncommunicable diseases.’’ [https://www.who.int/news-room/fact-sheets/detail/cancer]
এখানেও শারীরিক নিষ্ক্রীয়তাকেও ক্যান্সারের রিস্ক ফ্যাক্টর হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এরকম অনেক গবেষণা-ফলাফলে এবং অনেক ডাক্তারের লেখায় স্ট্রোক এবং ক্যান্সারের জন্য এমন সব কারণকে দায়ী বলে দাবি করা হয়, যেগুলো প্রকৃতপক্ষে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগের জন্য দায়ী। কিন্তু আমার মনে হয়, যে কারণগুলো (যেমন শারীরিক পরিশ্রমহীন জীবন যাপন করা, শরীরে অতিরিক্ত মেদ-চর্বি জমানো, রক্তে কোলেস্টেরল বাড়তি হতে দেয়া, মুটিয়ে যাওয়া, পরিমিত না খাওয়া ইত্যাদি) ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগের জন্য দায়ী, সে কারণগুলো ক্যান্সার এবং স্ট্রোকের জন্য দায়ী নয়। বিষয়টা পরিষ্কারভাবে বুঝার জন্য আগের সব গবেষণার ফলাফল একপাশে রেখে নতুন করে গবেষণা করতে হবে। কিভাবে?
যে কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যক এমন ধরনের লোক বাছাই করতে হবে, যারা ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে শারীরিক পরিশ্রমের কোনো রকম খেলাধুলা করার সময় পায় না বা করে না, কোনো রকম ব্যায়াম করে না, সব মিলিয়ে দৈনিক কমপক্ষে ২০ মিনিটও হাঁটে না, সাঁতার কাটে না, সাইকেলও চালায় না, ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে এমন পেশায় নিয়োজিত, যে পেশায় বসে বসে কাজ করতে হয় সব সময়, ২৪ ঘন্টার প্রায় সবটুকু সময় যারা শুয়ে এবং বসেই কাটিয়ে দেয়, ক্ষুধা লাগলেই পেটভরে খায় দৈনিক তিনবার বা তারচেয়ে বেশি, ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে মোটা, সপ্তাহের সব দিন যারা কাজ করে, ছুটি ভোগ করলেও ছুটিটা আরামে আরামেই কাটিয়ে দেয়।
কোনো কোনো দেশে এমন লোক বেশি সংখ্যক খুঁজে পাওয়া কষ্টকর হতে পারে, তবে অনেক দেশে হাত বাড়ালেই এমন অসংখ্য লোক খুঁজে পাওয়া যাবে। পেশায় ব্যবসায়ী হতে পারে (নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নিজেই সময় দেয়), চালক হতে পারে বা ব্যক্তিগত গাড়িতে করে সব সময় চলাফেরা করে, হতে পারে দর্জি, হতে পারে ডাক্তার, হতে পারে ব্যাংক বা এমন সব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত যেখানে কাজ করতে হয় বসে বসে, কোনো রকম শারীরিক পরিশ্রম ছাড়াই। তবে এমন লোক বাদ দিতে হবে, যারা সপ্তাহে কমপক্ষে একঘন্টা শারীরিক পরিশ্রমের কোনো কাজ না করলেও স্ত্রী বা সঙ্গীর সাথে একান্তে মিলিত হতে গিয়ে সপ্তাহে গড়ে তিন-চার ঘন্টা শারীরিক কসরত করে থাকে।
হ্যাঁ, এই ধরনের লোক বেশি সংখ্যক অনেক দেশেই খুঁজে পাওয়া না গেলেও মধ্যপ্রাচ্যে এমন অনেক লোক খুঁজে পাওয়া যাবে, যারা বাংলাদেশ, ভারত, ফিলিপাইন, পাকিস্তান এসব দেশ থেকে জীবিকা উপার্জনের তাগিতে স্ত্রী-সন্তান দেশে রেখে মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশে গিয়ে বছরের পর বছর কাটিয়ে দেয়। মধ্যপ্রাচ্যে লিভ টুগেদারের সুযোগ নেই যে, এরা অন্য সয্যাসঙ্গীকে নিয়ে সময় কাটাবে। অবশ্য ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, আমেরিকা, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ায়ও অনেক প্রবাসী আছে, যারা স্ত্রী-পরিবার ছাড়াই ঐসব দেশে অনেক বছর ধরে বসবাস করেছে এবং নিজ দেশের সংস্কৃতিতে পরনারীর সাথে সময় কাটানো নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখার কারণে ঐসব দেশে অস্থায়ী সয্যাসঙ্গী সহজলভ্য থাকার পরও নিজেকে সংযত রাখছে।
এরকম প্রাত্যহিক জীবনে শারীরিক ক্রিয়াকলাপ তেমন একটা করতেই হয় না বা করে না, এমন ১০০/৫০০/১০০০/এর চেয়েও বেশি লোক খুঁজে নিয়ে দেখা যাক, তারা কি কোনো রোগে আক্রান্ত? যদি আক্রান্ত হয়, তাহলে কোন্ রোগে তারা আক্রান্ত?
আমার বিশ্বাস, এরকম লোক, যারা কোনো রোগে আক্রান্ত, যদি এরকম রোগাক্রান্ত অন্তত ১০০ জন লোকের খোঁজ নেয়া হয়, দেখা যাবে এদের কমপক্ষে ৮০ জনই হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস এ তিনটি রোগের একটি/দুটি/তিনটিতেই আক্রান্ত, কিন্তু সর্বোচ্চ ২০ জনও ক্যান্সার এবং স্ট্রোক এই দুইটি রোগের একটি বা দুইটিতে আক্রান্ত নয়।
আমার এ বিশ্বাসের কারণ, আমি খুব গভীরভাবে দেখেছি, যারা অলস এবং আরামপ্রিয় জীবন যাপন করে, রসনাবিলাসী, মোটা হতে বা থাকতে পছন্দ করে, শারীরিক কষ্ট হয়, এমন সবকিছু থেকে এড়িয়ে চলার চেষ্টায় থাকে সব সময়, অবসর পেলে সময়টা ঘুমে বা আরামে কাটায় বেশি, খেলাধুলা বা ব্যায়ামে আগ্রহ নেই, তারা ক্যান্সার বা স্ট্রোকে আক্রান্ত হোক বা না হোক, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের কোনো একটি বা একাধিকটিতে আক্রান্ত হয় নিশ্চিতভাবে, খুব কমই এ রোগগুলো রক্ষা পায়। কেউ একটা রোগে, কেউ দু’টো আবার কেউ পর্যায়ক্রমে তিনটি রোগেই আক্রান্ত হয়। এর একটি কারণ হচ্ছে, এরকম মানুষগুলোর কেউ একটা রোগে আক্রান্ত হলে ডাক্তার যখন নিয়মিত হাঁটতে বা ব্যায়াম করতে বলে, খাবার পরিমিত পরিমাণে খেতে বলে, নিয়মিত ঔষধ নিতে বলে, তখন অনেকেই ডাক্তারের উপদেশ যথাযথভাবে পালনের চেষ্টা করলেও কেউ কেউ ডাক্তারের উপদেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিজের মনমতো চলে। অনেকে আছে, যারা এসব কোনো একটা রোগে আক্রান্ত হবার পর ডাক্তার এদেরকে খাওয়া-দাওয়ায় সংযম অবলম্বন করতে বললে এরা বলে, ‘যদি না খেয়েই থাকতে হয়, তাহলে বেঁচে থেকে কী লাভ! খেয়েদেয়ে মরে যাওয়াও ভালো’। এরকম দৃষ্টিভঙ্গির মানুষগুলো এরকম একটি রোগে আক্রান্ত হবার পর তা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা না করার কারণে দ্রুত অন্য রোগগুলোতেও আক্রান্ত হয়ে পড়ে। এরা শুধু নিজেকে নিয়েই ভাবে, তার অকালমৃত্যুতে তার পরিবার ভয়াবহ সঙ্কটে পড়ে যাবে, এ বিষয়টা একটিবারের জন্য ভাবে না। খাওয়া-দাওয়াকেই এরা পৃথিবীর একমাত্র উপভোগ্য বিষয় মনে করে। মনে করে, পৃথিবীতে খাওয়া-দাওয়া ছাড়া মজার আর কিছু নেই।
যাহোক, ১৫-২০ বছর ধরে অলস জীবনযাপন করে, রক্তে কোলেস্টেরল বেশি, ওজন বেশি, খাওয়া-দাওয়ায় সংযম নেই, এমন মানুষ খুব কম পাওয়া যাবে, যারা হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস এই তিনটি রোগের কোনোটি থেকে মুক্ত আছে। যদি এমন মানুষদের ৮০ শতাংশ এই রোগগুলোতে আক্রান্ত হয় আর ২০ শতাংশও ক্যান্সার বা স্ট্রোকে আক্রান্ত না হয়, তাহলে এটা কি দিবালোকের মতো পরিষ্কার হয় না, ওজন বেশি হওয়া, রক্তে কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পাওয়া, শারীরিক পরিশ্রম থেকে দূরে থাকা, বেশি বেশি খাওয়া ক্যান্সার এবং স্ট্রোকের জন্য দায়ী নয়?
নতুন করে গবেষণার জন্য এখানে যে বৈশিষ্ট্যের লোক নির্বাচনের শর্ত করা হয়েছে, সে রকম লোক খুঁজে বের করা কঠিন হতে পারে। সেজন্য এমন লোক বাছাই করাও যথেষ্ট হতে পারে, যারা পনের বছরের বেশি সময় ধরে- ১. আরামের পেশায় নিয়োজিত, ৩. অবসর সময়টাও আরামে কাটাতেই পছন্দ করে, ৩. শারীরিক কষ্টের সব রকম কাজ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করে, ৪. খেলাধুলা করে না, ৫. কোনো রকম ব্যায়ামের সাথে যুক্ত নয়, ৬. ভোজনবিলাসী, ৭. স্থূল, ৮. প্রচুর শর্করা ও চর্বিজাতীয় খাবার খায়।
এরকম লোক অনেক দেশেই এখন অহরহ খুঁজে পাওয়া যায়। তবে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারে এরকম লোকের সংখ্যা এখন অন্য অনেক দেশের তুলনায় আনুপাতিকহারে খুব বেশি। সেখানে এখন দশজনের মধ্যে সাতজনই স্থূল। এই স্থূলতার কারণে তারা কী রোগে আক্রান্ত? দেখুন বিবিসি বাংলায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে। ১৮ মার্চ ২০১৮ বিবিসি বাংলায় প্রকাশিত ‘কাতারের মানুষের ওজন বেশি হয় কেন?’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘কাতারে প্রতি দশজনে সাতজনই স্থূলকায় এবং পাঁচজনে একজন ডায়াবেটিসে ভুগছেন’। বলা হয়, ‘কাতারের ৭০ শতাংশ মানুষই প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত ওজনের। বিশ্বের অন্য যেকোনো দেশের স্থূল মানুষের দ্বিগুণের বেশি মানুষ এদেশে অতিরিক্ত ওজনের। দেশটির প্রতি দশজনে সাতজনই স্থূলকায় এবং প্রতি পাঁচজনে একজন ডায়াবেটিসে ভুগছেন।’
প্রতিবেদনটিতে ওজন বৃদ্ধির পাশাপাশি ওজন বৃদ্ধির ফলে শুধু ব্যাপকহারে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হবার কথা বলা হয়েছে। আমার বিশ্বাস, সেখানে এসব স্থূল মানুষ ব্যাপকহারে উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগেও আক্রান্ত। হ্যাঁ, প্রতিবেদনটিতে ওজন বৃদ্ধিজনিত কারণে এসব স্থূল মানুষ ব্যাপকহারে ক্যান্সারে বা স্ট্রোকে আক্রান্ত হবার কথা বলা হয়নি। বিষয়টা সরেজমিনে নতুন করে অনুসন্ধান করলে আমার বিশ্বাস, এটাই প্রমাণিত হবে, স্থূলতা এবং শারীরিক নিষ্ক্রীয়তা হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসের জন্য দায়ী কিন্তু ক্যান্সার এবং স্ট্রোকের জন্য দায়ী নয়।
শেষ পর্ব:
https://waytogainlonglife.blogspot.com/2022/09/blog-post_5.html
0 Comments: