Headlines
Loading...
 টেনশনে কি মানুষ ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়?

টেনশনে কি মানুষ ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়?

টেনশনে কি মানুষ ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়?

নূর আহমদ

ব্রেইন স্ট্রোকের জন্য টেনশনকে দায়ী করা হয় একতরফাভাবে। এমনভাবে দায়ী করা হয়, যেন মনে হয় টেনশন না করলে মানুষ কোনোভাবে ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয় না। যাদের জীবনে টেনশন তেমন একটা নেই, তারা ব্রেইন স্ট্রোক থেকে পুরোপুরি নিরাপদ। আর যারা টেনশন করে, তারা ব্রেইন স্ট্রোক থেকে কোনোভাবেই নিরাপদ থাকে না। কিন্তু সত্যিই কি টেনশনে মানুষ ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়?

প্রশ্নটির উত্তর মাথায় রেখে যদি বাস্তবতা পর্যবেক্ষণ করা হয়, তাহলে দেখা যাবে, যেসমস্ত মানুষ অভাবের কারণে খুবই কঠিন জীবন যাপন করে, বিশেষ করে সমাজের দিনমজুর শ্রেণি; তারা তো অহরহ ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয় না। যদি টেনশনের কারণেই মানুষ ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হতো, তাহলে যাদের মাথার উপর নানা রকম ঋণের বোঝা, যারা কণ্যাদায়গ্রস্থ, যাদের কোনো সন্তান শারীরিকভাবে সমস্যাগ্রস্থ, যারা কোনো কারণে হঠাৎ চাকরি হারিয়ে ফেলে, যারা ব্যবসা করতে গিয়ে দেউলিয়া হয়ে যায়, যেসব মেয়েকে তার স্বামী অকারণে ডিভোর্স দিয়ে দেয়, যেসব নারীর স্বামী মাদকাসক্ত, যাদের সন্তান মাদকাসক্ত, এরকম মারাত্মক টেনশনে ভোগা কোনো মানুষ ব্রেইন স্ট্রোক থেকে নিরাপদ থাকতো না। টেনশনে পড়া মাত্রই ব্রেইন স্ট্রোক তাদেরকে আক্রমণ করে বসতো। কিন্তু এরকম কি হচ্ছে? হচ্ছে না।

যদি টেনশনে মানুষ ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হতো, তাহলে ৪০-৪৫ বছর বয়সী মানুষ কেউ-ই ব্রেইন স্ট্রোক থেকে নিরাপদ থাকতো না, সবাই ব্রেইন স্ট্রোকের শিকারে পরিণত হতো, বিশেষ করে পুরুষরা। কারণ বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক কারণে একজন পুরুষকে তার প্রাত্যহিক জীবনে নানা রকম টেনশনে ভুগতে হয়। কখনো জায়গা-জমি নিয়ে, কখনো সাংসারিক অন্য কিছু নিয়ে। ৪০-৪৫ বছর বয়সী মানুষ তার জীবনে এক বা একাধিকবার কোনো না কোনো বিষয়ে মারাত্মকভাবে টেনশনে পড়েনি, এটা কল্পনাও করা যায় না। যদি টেনশনেই মানুষ ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হতো, তাহলে ৪০-৪৫ বয়সী কোনো মানুষ ব্রেইন স্ট্রোক থেকে কোনোভাবে বেঁচে যেতো না। 

দেখা যায়, যারা ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়, তাদের জীবনে যেমন টেনশন থাকে, তেমনি যারা ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয় না, তাদরে অনেকের জীবনেও টেনশন থাকে। তাহলে আপনি কিভাবে টেনশনকে ব্রেইন স্ট্রোকের জন্য একতরফাভাবে দায়ী করবেন?

বিগত কয়েক বছর ধরে সবচেয়ে বেশি প্রাণঘাতি এবং কষ্টদায়ক রোগগুলো নিয়ে স্টাডি করতে গিয়ে আমি দেখেছি, ক্যান্সার এবং ব্রেইন স্ট্রোকের কারণ নিয়ে যত কথাই বলা হোক না কেন, কোনো কথার কোনো ভিত্তি নেই। এই দুটি রোগের প্রকৃত কারণ এখনো কারো জানা নেই।

আপনি খোঁজ  নিয়ে দেখুন, আপনার পরিচিত যারা গত ৫ বছরে ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছে, তারা সবাই এমনভাবে টেনশনে ভুগতো না, যেভাবে একজন দিনমজুর নানা বিষয় নিয়ে টেনশনে থাকে। টেনশন তেমন একটা নেই, এমন অসংখ্য মানুষও হরহামেশা ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়। অনেক মহিলাও ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়। আমার এক বন্ধুর ১৯ বছর বয়সী এক বোন দু’তিন বছর আগে ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছে। তার মানে কি এটা যে, ওই মেয়েই শুধু টেনশন করে বেশি বেশি, অন্য শত শত মেয়ে তেমন কোনো টেনশন করে না?

যেসব মেয়ের বিয়ে হতে দেরি হয়, যেসেব ছেলে পড়ালেখা শেষে চাকরি পেতে দেরি হয়, তাদের জীবনে কত টেনশন, তা শুধু তারাই জানে। এরকম বিয়ে হতে দেরি হলেই বা চাকরি পেতে দেরি হলেই যদি ছেলে-মেয়েরা টেনশন করে, তাহলে ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে পড়ে? আমার প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখা শেষ হয়েছে ২০০৪ সালে। ২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে আমি পার্টটাইম চাকরি শুরু করি। কিন্তু ভালো চাকরির জন্য চেষ্টা করতে থাকি। অনেক সময় প্রচুর টেনশন হতো। অবশেষে ২০০৯ সালে কোনো রকম একটি চাকরি হয়। টেনশন কিছুটা কমে যায়। যদি টেনশনে ব্রেইন স্ট্রোক হতো, তাহলে আমি সেই ৫ বছরে অনেক অনেক বার ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে যেতাম। এখনো আমার জীবনে নানা বিষয় নিয়ে টেনশন আছে। আমি এখনো ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হতে পারি, যেহেতু্ এই রোগের কোনো কারণ এখনো পরিষ্কার নয়। কিন্তু আমি যদি এখন ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হই, সেজন্য কি আমার টেনশনকে দায়ী করা ঠিক হবে?

আপনি আপনার জীবনে কখনো কোনো বিষয়ে মারাত্মকভাবে টেনশনে ভোগেননি? আপনি কি তখন ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন? মোটেই না। এভাবে টেনশনে মানুষ ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয় বলে বলে মানুষকে টেনশন ও দুশ্চিন্তায় ফেলা হচ্ছে। এটা সত্যিই দুঃখজনক। এমন প্রচারণা অবশ্যই মানবজাতির জন্য ক্ষতিকর।

টেনশন মানুষকে কখনোই ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত করে না। ব্রেইন স্ট্রোকে মানুষ আক্রান্ত হয় এখনো অজ্ঞাত কারণে। এটাই সত্য এবং বাস্তব। তাই টেনশন করলেই আপনি ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে পড়বেন, এই অমূলক ভয় মন থেকে এখনই ঝেড়ে ফেলুন বাকি জীবনের জন্য।

নূর আহমদ : শিক্ষক, কলামিস্ট ও গবেষক

https://www.facebook.com/nurahmad.teacher

[আমি কোনো রোগের চিকিৎসা নিয়ে কথা বলি না। আমি কথা বলি বিভিন্ন রোগের  কারণ এবং প্রতিরোধের উপায় নিয়ে। কারণ এই বিষয়ে অনেক বছর ধরে আমি অধ্যয়ন ও লেখালেখি করছি।]

Occupation: Teaching, Hobbies: Writing

0 Comments: