কোলেস্টেরল অতিরিক্ত হওয়াটাই ‘বিষ’
কোলেস্টেরল অতিরিক্ত হওয়াটাই ‘বিষ’
নূর আহমদ : শিক্ষক; কলামিস্ট
চর্বি-কোলেস্টেরল বৃদ্ধির ক্ষতিকর দিক : কিছু বাস্তব ঘটনা
১৯৯০ সালে আমি যখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ি, তখন যিনি আমাদের প্রধান শিক্ষক ছিলেন, আমি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়া শেষে চলে যাবার দু’তিন বছর পর তিনি চাকরি থেকে অবসরে যান। তাঁর বাড়ি আমাদের এলাকাতেই। ১৯৯০ সালে তাঁকে যেরকম দেখেছি, এখনও তিনি সেরকমই প্রায়। তিনি তখন যেরকম শুকনো লিকলিকে শরীরের ছিলেন, দু’যুগের বেশি পরও এখনও সেরকম লিকলিকেই আছেন; শারীরিক স্থুলতা তাঁকে গ্রাস করার সুযোগ পায়নি। পঁচিশ-ছাব্বিশ বছর আগে যেভাবে দেখতাম তিনি সাইকেলে চলাফেরা করছেন, এখনও তিনি দিব্যি সেরকম সাইকেলে চলাফেরা করছেন। তাঁর বাড়ি থেকে পাঁচ-ছয় মাইল দূরত্বের মধ্যে তাঁর অনেক আত্মীয়ের বাড়ি আছে, তিনি এখনো সাইকেলে করেই সেসব বাড়ি চলে যান মাঝে মাঝে! নিয়মিত সাইকেল চালানো এবং হাঁটাহাঁটির অভ্যেসের কারণেই হয়তো তাঁর শরীরে মেদ, চর্বি বা কোলেস্টেরল প্রবেশের সুযোগ পায়নি এখনো; পঁচিশ-ছাব্বিশ বছর আগের মতোই রয়ে গেছেন তিনি। ৫৭ বছর বয়সে সরকারি চাকরি থেকে অবসরের (তখন সরকারি চাকরি থেকে অবসরের বয়স ছিল ৫৭ বছর) পর দু’যুগেরও বেশি বেঁচে থাকা মানুষ আরও থাকতে পারে, তবে এরকম প্রায় শতভাগ ফিটনেস নিয়ে বেঁচে থাকাটা হয়তো অলৌকিক কোনো বিষয়। তিনি যদি ব্যাক্তিগত গাড়ি, ট্যাক্সি বা রিকশায় চলাফেরায় অভ্যস্ত হতেন, শরীরে চর্বি-কোলেস্টেরলকে জায়গা দিতেন, আমার মনে হয় না তিনি এ পর্যন্ত এভাবে পৌঁছতে পারতেন।
আমাদের পার্শ্ববর্তী এলাকায় ডা. সমীর নামে একজন পল্লী চিকিৎসক আছেন। ছোটকাল থেকে তাঁর বাবাকে দেখতাম সেলুনে কাজ করছেন। আমাদের এলাকাতেই তাঁর একটি সেলুন দোকান ছিল। তিনি তখন বৃদ্ধ ছিলেন। আমাদের বাড়ি থেকে এক মাইল উত্তরে তাঁর বাড়ি। দোকানে সবসময় আসতেন সাইকেল চালিয়ে। লোকটি কিন্তু এখনো বেঁচে আছেন এবং অনেকটা আগের মতোই আছেন। এমনকি এখন আমাদের বাড়ি থেকে দু’মাইল দক্ষিণে অর্থাৎ তাঁর বাড়ি থেকে তিন মাইল দক্ষিণে এক দোকানে সেলুনের কাজ করছেন। সেদিন দেখলাম সাইকেলে করে রোজকার মতো কর্মস্থলে যাচ্ছেন আমার ছোটকাল থেকে দেখা সেই বৃদ্ধ লোকটি! কিভাবে সম্ভব হয়েছে? নিয়মিত সাইকেল চালিয়ে শরীরে মেদ-চর্বি প্রবেশে বাধা দেয়ার কারণে নিশ্চয়ই।
একদিন আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনার কি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা হৃদরোগের মতো কোনও রোগ আছে? তিনি আনন্দের সাথে জবাব দিলেন, 'না'।
আমার এক মহিলা সহকর্মীর স্বামী শিক্ষকতা থেকে অবসরে যান দু’বছর আগে। দেখতে একেবারে ছিমছাম, শুকনো, লম্বা। শারীরিক পরিশ্রম করেন নিয়মিত, বিশেষ করে নিজ জমিতে শাক-সবজি চাষ করেন। মিষ্টি খেতেও আবার বেশ পছন্দ করেন। তাঁর শরীরে এখনো উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস বা হৃদরোগের অস্তিত্ব নেই। আমার বাবার খুব কাছের একজন বন্ধু আছেন দলিলুর রহমান নামে, যাঁর বাড়ি আমাদের পশ্চিম পাশের এলাকায়। স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। এখন অবসর। বয়স ৮০’র মতো। সাইকেল চালান নিয়মিত। সবসময় ব্যস্ততার কারণে দৌড়ের ওপর থাকেন। শরীরে এখনো উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস বা হৃদরোগ নেই। তাঁর আরেকটা ভাই আছে। তিনিও আমার বাবার খুব আন্তরিক বন্ধু। বয়স ৭০ এর বেশি। তাঁর সাথে আমার মাঝে মাঝে পথে দেখা হয়। দেখি সাইকেলে করে কোথাও যাচ্ছেন। তাঁর শারীরিক অবস্থা জানতে গিয়ে রোগগুলোর কথাও জিজ্ঞেস করি। তিনি বলেন, তাঁর এখনো এরকম কোনো রোগ নেই।
অপরদিকে পরিচিত অনেক অনেক লোককে দেখি, যারা দীর্ঘদিন বসে বসে কাজ করা এবং শারীরিক শ্রমশূন্য থাকার কারণে উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। শরীরে উচ্চ রক্তচাপের কিছু লক্ষণ দেখা দেয়ার পর চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতেই চিকিৎসক পরীক্ষা করে দেখেন, রক্তে কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন নিয়মিত প্রেশার মাপতে হচ্ছে, নিয়ন্ত্রণ করতে হচ্ছে, ঔষধও সেবন করতে হচ্ছে। ২০১৭ সালের অক্টোবরে আমি এবং আমার আরও দু’বন্ধু গেলাম লক্ষ্মীপুরের দক্ষিণের উপজেলায় নদী দেখতে। সেখানে লিংকন নামে আমাদের এক পুরনো বন্ধুর সাথে দেখা হলো। ওর বাড়ি সেখানে। ব্যক্তিগত জীবনে সুখী। স্ত্রীও স্কুলে শিক্ষকতা করেন। কোনো বিষয় নিয়ে তেমন একটা টেনশন নেই। মোটরসাইকেল আছে। মোটরসাইকেলে করেই আমাদের সাথে দেখা করতে এসেছেন। সে জানালো, অল্প কয়েকদিন আগে তার উচ্চ রক্তচাপ দেখা দিয়েছে। চিকিৎসক পরীক্ষা করে দেখেছেন, রক্তে কোলেস্টেরল বেড়ে গেছে। এখন নিয়মিত ঔষধ সেবন করে যেতে হচ্ছে। আমার পরিচিত এরকম আরো অনেক লোক আছে, যারা মোটরসাইকেল ব্যবহার করেন। দীর্ঘদিন ব্যবহারের পর এখন হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এসব দু’একটা রোগে আক্রান্ত হয়ে গেছেন।
এরকম আরো অনেকের ঘটনা এখানে উল্লেখ করা যাবে। কিন্তু তাতে শুধু লেখাটিই বড় হবে। তাছাড়া এরকম মানুষ শুধু আমার আশপাশে নয়, সবার আশপাশে এবং পরিচিতজনদের মাঝে খুঁজে পাওয়া যাবে। তাই বেশি উদাহরণ দিয়ে লেখার পরিসর বাড়ানো নিষ্প্রয়োজন। শুধু এ শিক্ষাই পাওয়া যায় গল্পগুলো থেকে: পরিশ্রম থেকে দূরে থেকে, আরামে আরামে চলে আমরা শরীরে যেসব মেদ-চর্বি জমিয়ে প্রথম প্রথম আনন্দ পাই, সেগুলো একসময় ‘বিষ’ হয়ে আমাদের জীবনে আঘাত হানে কখনো ডায়াবেটিস নামে, কখনো উচ্চ রক্তচাপ নামে, কখনো হার্ট অ্যাটাক, হার্ট ব্লকেজ বা হার্ট ফেইলিউর নামে। অধিকাংশ সময় এসব রোগে আক্রান্ত হয়ে আমরা অল্প বয়সে জীবন হারাই। জীবন না হারালেও এসব রোগে আক্রান্ত হবার পর জীবন হয়ে যায় অনেক কঠিন, মনে হয় মৃত্যু খুব কাছে চলে এসেছে। তাই ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ থেকে বাঁচতে শরীরে মেদ, চর্বি, কোলেস্টেরল অতিরিক্ত হতে দেয়া যাবে না।
কোলেস্টেরলের দু’টি প্রজাতি সম্পর্কে কিছু কথা
আরেকটি বিষয় এ প্রসঙ্গে আলোচনা করতেই হয়। কোলেস্টেরলের দু’টি প্রজাতির কথা অনেকে বলে থাকেন। একটি উপকারি কোলেস্টেরল, আরেকটি অপকারি কোলেস্টেরল। উপকারি কোলেস্টেরল নাকি মানুষের উপকারেই আসে শুধু, আর অপকারি কোলেস্টেরল মানুষের সমূহ ক্ষতির কারণ।
১৭ আগস্ট ২০১৭ দৈনিক ইত্তেফাকে ‘রক্তে কোলেস্টেরল কেন বাড়ে’ শিরোনামে ডা. মোড়ল নজরুল ইসলামের একটি লেখা ছাপা হয়। তিনি বলেন, ‘ধূমপান ও শরীরের বাড়তি মেদ রক্তের ভালো কোলেস্টেরল নামের এইচডিএল (হাই ডেনসিটি লাইপো প্রটিন) হ্রাস করে। নিয়মিত ব্যায়াম করে এইচডিএল বাড়ানো যায়। সাধারণত নারী ও পুরুষের বয়স ৫০ পার হলে স্বাভাবিক নিয়মে কোলেস্টেরল খানিকটা বাড়তে পারে। এ বয়সে লাইফ স্টাইল পরিবর্তন করে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। এছাড়া প্রচুর পরিমাণ শাক-সবজি, তাজা ফল ও মাছ আহার এবং চর্বি জাতীয় খাবার কম খাওয়া এবং নিয়মিত ব্যায়াম কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে।’
১৮ অক্টোবর ২০১৪ দৈনিক যুগান্তরে ‘কোলেস্টেরল কমানোর ৯ উপায়’ শিরোনামে ডা. মোহাম্মদ সায়ফুল্লাহ একটি নিবন্ধ লিখেন। তিনি সেখানে বলেন, ‘শারীরিক পরিশ্রম ও ব্যায়াম শুধু রক্তে ক্ষতিকারক কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমায় না, উপকারি কোলেস্টেরলের পরিমাণ (বেশি ঘনত্বের লিপোপ্রোটিন কোলেস্টেরল) ১০ শতাংশ বাড়ায়। জোরে জোরে হাঁটলেও এমন উপকার পাওয়া যায়।’
এ দু’টি বক্তব্যের সারাংশ হলো: ১. কিছু কোলেস্টেরল আছে উপকারি আবার কিছু আছে ক্ষতিকর। ২. শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমায় এবং উপকারি কোলেস্টেরল বাড়ায়। কথা হলো, ক্ষতিকর কোলেস্টেরল আমাদের কী ক্ষতি করে, তা আমরা জানি। কিন্তু উপকারি কোলেস্টেরল আমাদের কী উপকারে আসে, তা অনেকে স্পষ্ট করে বলেন না। উপকারি কোলেস্টেরল ছাড়া কি আমাদের শরীর অচল? যাদের শরীরে উপকারি বা অপকারি কোনো চর্বি-কোলেস্টেরলই নেই, তারা কি স্বাভাবিক জীবনযাপনে অক্ষম?
ফেনী জেলার ফুলগাজী উপজেলার হাসানপুর গ্রামে একটি ইটভাটার খুব কাছেই ২০০৭-০৮ সালে কর্মসূত্রে একবছর আমাকে থাকতে হলো। আমি দেখলাম যারা ইট তৈরির কাজ করে, কী কঠোর পরিশ্রম তাদের করতে হয়। শীতকালের প্রচন্ড শীতে ইট তৈরির সময় তাদের শরীর বেয়ে ঝরঝর করে ঘাম ঝরে। কেউ কি বলতে পারবে, তাদের শরীরে কোনো রকম চর্বি জমতে পারে, রক্তে কোলেস্টেরল জমতে পারে? এসব মানুষই শারীরিকভাবে ফিট। খায় আর পরিশ্রম করে। কঠোর পরিশ্রমের কাজ অনায়াসে করতে পারে। কথিত উপকারি বা অপকারি কোনো কোলেস্টেরল ছাড়াই এদের জীবন সচল, স্বচ্ছন্দ। অথচ যাদের শরীর কোলেস্টেরলে ভরপুর, তারা অনেক কাজের ক্ষেত্রেই অযোগ্য। কোনো শারীরিক পরিশ্রমের কাজ করতে গেলেই হাঁপিয়ে উঠে।
ডাক্তারদের পাশাপাশি অনেক সাধারণ মানুষকেও ইদানিং উপকারি-অপকারি কোলেস্টেরল নিয়ে কথা বলতে শোনা যায়। হয়তো ডাক্তারদের থেকে শুনে শুনে বা পত্রপত্রিকায় ডাক্তারদের লেখা পড়ে পড়ে সাধারণ মানুষদের মধ্যে এমন তথাকথিত ‘সচেতনতা’ সৃষ্টি হচ্ছে। সেদিন একজন লোকের মুখে এরকম কথা শুনে জিজ্ঞেস করলাম, ‘হার্টে ব্লক দেখা দিয়েছে এমন একজন লোক যদি তার শরীরে যে কোনোভাবে হোক ‘উপকারি’ কোলেস্টেরলের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে থাকে, তাতে তার উপকার হবে, নাকি ক্ষতি হবে?’ তিনি ‘উপকার হবে’ কথাটি বলতে রাজি হলেন না। আরেকটি প্রশ্ন করলাম, ‘চর্বিযুক্ত খাবার বেশি খাওয়া এবং শারীরিক পরিশ্রমের কাজ থেকে দূরে থাকলেই শরীরে কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পায়। এমন কোনো উপায় আছে কি, যা অবলম্বন করলে শরীরে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমবে এবং একই সাথে উপকারি কোলেস্টেরল বাড়বে?’ তিনি উত্তর দিতে পরলেন না।
তিনি উত্তর দিতে না পারলেও আমি পরে কোলেস্টেরল সম্পর্কে উপরের এ দু’টি লেখায় দেখতে পেলাম প্রায় একই রকম কথা। শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম নাকি রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমায় এবং যুগপৎভাবে উপকারি কোলেস্টেরলও বাড়ায়। প্রশ্ন হলো, একজন লোক যদি নিয়মিত কঠোর পরিশ্রম বা ব্যায়াম করে, তার শরীরে কোলেস্টেরল কমবে, নাকি বাড়বে? বিশেষ করে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের পেশায় যারা নিয়োজিত, বছরের পর বছর হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে যেতে হয়, যাদের শরীর থেকে পরিশ্রমের কারণে সারাদিন ঘাম ঝরে, তাদের শরীরে কোলেস্টেরল বাড়ার কথা কল্পনাও করা যায় না, চাই সেই উপকারি কোলেস্টেরল হোক, বা অপকারি।
‘ব্যায়াম করলে কোলেস্টেরল বাড়ে, চাই সেটা উপকারি বা অপকারি’ এটা কখনো সম্ভব নয়। বরং নিয়মিত ঘাম ঝরানো কাজ করলে শরীরে জমানো ফ্যাট, চর্বি বা কোলেস্টেরল ভাঙতে থাকে এবং কমতে থাকে। একসময় তা একেবারে তলানীতে চলে আসে। তখন অল্পস্বল্প কোলেস্টেরল শরীরে থেকে গেলেও তা শরীরের কোনো ক্ষতি করতে পারে না। এই অল্পস্বল্প কোলেস্টেরকে শরীরের জন্য ‘ক্ষতিকর নয়’ শুধু বলা যেতে পারে। যদি কেউ একে ‘উপকারি’ বলে খুশি হন, বলতে পারেন। কারণ যা কোনো ক্ষতি করে না, তা ‘উপকারি’ হতেও পারে, যদিও অনেক সময় তা প্রমাণ করা কষ্টকর। আর মেদযুক্ত শরীরে কোলেস্টেরল থাকে বেশি, যা অনেক রোগের জন্ম দেয় বলে যে কেউ একে ‘ক্ষতিকর’ বলে আখ্যায়িত করতে পারে। বিষয়টা সম্পূর্ণ নির্ভর করে কোলেস্টেরলের স্বল্পতা ও আধিক্যের উপর। তাই উপকারি বা অপকারি কোলেস্টেরল না বলে বিষয়টাকে বলা যায়, কোলেস্টেরল অল্প বা বেশি হওয়া। বলা যায়, অতিরিক্ত কোলেস্টেরল শরীরের জন্য ক্ষতিকর আর অল্প কোলেস্টেরল শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয়।
‘উপকারি’ কোলেস্টেরলের ধারণাটা আমাদেরকে নিক্ষেপ করছে কোলেস্টেরল বৃদ্ধিজনিত রোগসমূহের প্রবল ঝুঁকিতে। কারণ অনেকে ‘উপকারি’ কোলেস্টেরল আছে জেনে শরীরে কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পাচ্ছে দেখেও চুপ থাকবে। এক সময় তার শরীরে দেখা দেবে কোলেস্টেরল বৃদ্ধিজনিত বড় ধরনের কোনো রোগ। ‘উপকারি’ কোলেস্টেরল (!) তখন তার পরিণতি দেখে মুখ টিপে হাসবে।
শরীর সুস্থ রাখার জন্য কী প্রয়োজন?
কোলেস্টেরলকে যারা শরীরের জন্য উপকারি মনে করেন, তারা মনে হয় ভুল করছেন। প্রকৃতপক্ষে আমাদের শরীরে শক্তির জন্য, শরীর সঠিকভাবে কাজ করার জন্য প্রয়োজন সকল অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সুস্থ থাকার পাশাপাশি পর্যাপ্ত খাদ্য, পানি এবং বায়ু। আমাদের শরীর একটি রিচার্জেবল ডিভাইসের মতোই। রিচার্জেবল ডিভাইস যেভাবে সব পার্টস যখন ঠিক থাকে তখন চার্জ শেষ হয়ে গেলে শুধু পুণরায় চার্জ দিলে ঠিকমতো কাজ করে, আমাদের শরীরকেও, যখন সুস্থ থাকে, ক্ষুধা লাগলে পর্যাপ্ত খাবার দিলে তা ঠিকঠাক মতো কাজ করে। যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য নেই, পেট সবসময় পরিষ্কার থাকে, তারা ঠিকমতো খাবার খেলে তাদের শরীরে শক্তির অভাব হয় না, চর্বি বা কোলেস্টেরল তেমন একটা না থাকলেও। সুতরাং বিষকে মধু বলাটা ‘খাল কেটে কুমির আনা’রই নামান্তর।
0 Comments: