হার্ট অ্যাটাক, ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ এই ৩টি রোগের ঝুঁকিতে আছি আমরা সবাই!
হার্ট অ্যাটাক, ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ এই ৩টি রোগের ঝুঁকিতে আছি আমরা সবাই!
নূর আহমদ : শিক্ষক; কলামিস্ট ও গবেষক
মানুষ যে রোগগুলোতে বেশি আক্রান্ত হয়, সেগুলোকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। কিছু রোগ চিকিৎসায় পুরো ভালো হয়ে যায়, কিছু রোগ একবার আক্রমণ করলে আর কখনো পুরোপুরি ভালো হয় না; কিছু রোগ মানুষকে সাময়িক কষ্ট দেয়, কিছু রোগ দীর্ঘ সময় ধরে কষ্ট দেয়; কিছু রোগে মৃত্যুহার কম, কিছু রোগে মৃত্যুহার বেশি; কিছু রোগ আকস্মিক মানুষের মৃত্যু ঘটায়, কিছু রোগ আকস্মিক মৃত্যু ঘটায় না; কিছু রোগের চিকিৎসা-ব্যয় বেশি, কিছু রোগের চিকিৎসা-ব্যয় কম; কিছু রোগ মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়, কিছু রোগ মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় তেমন কোনো পরিবর্তন আনে না।
যে রোগগুলো সাময়িক কষ্ট দেয়, যেগুলোর পেছনে চিকিৎসা-ব্যয় কম, মানুষের আকস্মিক মৃত্যু ঘটায় না, অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানুষ সেগুলো থেকে পুরোপুরি সুস্থ্য হয়ে যায়, এরকম রোগগুলো মধ্যে রয়েছে ইনফ্লুয়েঞ্জা, নিউমোনিয়া, টাইফয়েড, মাথাব্যথা, মাইগ্রেন, কনজাংটিভাইটস, ডায়রিয়া, কলেরা, যক্ষ্মা, আর্থারাইটিস বা বাত, পক্স, বিভিন্ন রকম চর্মরোগ ইত্যাদি।
এই রোগগুলো ব্যতীত যে রোগগুলো রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ক্যান্সার, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট অ্যাটাক (হৃদরোগ), কিডনী রোগ ইত্যাদি। এই রোগগুলোর সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো এগুলো মানুষের আকস্মিক বা অকাল-মৃত্যুর জন্য বেশি দায়ী; এগুলোর পেছনে চিকিৎসা-ব্যয় বেশি। আবার এই রোগগুলোর মধ্যে ক্যান্সার ও স্ট্রোক খুব কম ক্ষেত্রে হলেও উপযুক্ত চিকিৎসায় পুরোপুরি ভালো হয়ে গেলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে এগুলোতে আক্রান্ত রোগী অল্প কয়েক মাস বা অল্প কয়েক বছরের মধ্যেই মারা যায়। স্ট্রোকে আক্রান্ত মানুষ অনেক সময় পক্ষাঘাতেও(প্যারালাইসিস) আক্রান্ত হয়। এই দু’টি রোগের সুনির্দিষ্ট কারণ এখনো পরিষ্কার নয় বলে এগুলো এখনো সম্পূর্ণ প্রতিরোধহীন রোগ বলে বিবেচিত। এসব রোগের যেসব কারণ আপনি-আমি জানি, নানাভাবে প্রচার করা হয়, সেসবের সাথে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। ধূমপায়ীরা এসব রোগে যেমন আক্রান্ত হয়, অধূমপায়ীরাও আক্রান্ত হয়, টেনশনে ভোগা মানুষ যেমন আক্রান্ত হয়, যাদের জীবনে তেমন কোনো টেনশন নেই, তারাও আক্রান্ত হয়, উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্তরা যেমন আক্রান্ত হয়, যাদের উচ্চ রক্তচাপ নেই, তারাও আক্রান্ত হয়।
আর ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং উচ্চ রক্তচাপের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীরা রোগে আক্রান্ত হবার পরও চিকিৎসা ও নিয়ন্ত্রণের উপর নির্ভর করে অনেক দিন বেঁচে থাকার সুযোগ পায়, যদিও বেশ ধরাবাঁধা নিয়মের মধ্য দিয়ে বেশ কষ্টকর জীবন যাপন করতে হয়। কিন্তু হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত মানুষ অনেক ক্ষেত্রে আক্রান্ত হবার সাথে সাথেই মারা যায়, আর আক্রান্ত হবার সাথে সাথে মারা না গেলেও শেষে আরো এক বা একাধিকবারের হার্ট অ্যাটাকে মারা যায়। ক্যান্সার এবং স্ট্রোকের সাথে হার্ট অ্যাটাক, ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের একটা প্রধান পার্থক্য হচ্ছে, ক্যান্সার এবং স্ট্রোক সম্পূর্ণ প্রতিরোধহীন রোগ, কিন্তু হার্ট অ্যাটাক, ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ এই তিনটি রোগ সম্পূর্ণ প্রতিরোধযোগ্য; সুনির্দিষ্ট কিছু কারণেই এই তিনটি রোগ মানুষকে আক্রমণ করে। কারণগুলো হচ্ছে, আরামে থাকা বা শারীরিক পরিশ্রম থেকে দূরে থাকা, মুটিয়ে যাওয়া এবং মনমতো খাওয়া। মানুষ যদি এই কারণগুলো এড়িয়ে চলে, অন্তত ‘কঠোর শারীরিক পরিশ্রম থেকে দূরে থাকা’ এড়িয়ে চলে, মানুষ এই তিনটি রোগের কোনোটিতে আক্রান্ত হয় না।
এবার আমরা আমাদের অবস্থা বিবেচনা করি। আমরা দেখি, আমরা কি নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করি? আমাদের মধ্যে যারা (১) নিয়মিত কঠোর শারীরিক পরিশ্রম করে, যেমন: পেশাদারভাবে এমন সব কাজ করে, যেগুলোতে প্রচুর শারীরিক পরিশ্রম হয়; (২) যারা ক্রীড়াবিদ; (৩) যারা প্রতিরক্ষা বিভাগে চাকরি করার সুবাদে নিয়মিত ব্যায়াম করে, তারা যতদিন এভাবে শারীরিক পরিশ্রম করবে, ততদিন এই তিনটি রোগ থেকে নিরাপদ থাকবে। কিন্তু আমরা যারা কোনোভাবে শারীরিক পরিশ্রমের সাথে জড়িত নই, শারীরিক পরিশ্রম করলেও খুব কম পরিমাণে করি, আরামে আরামে থাকতে অভ্যস্থ হবার পাশাপাশি মনমতো খাই, তারা যে কোনো সময় এই তিনটি রোগের শিকারে পরিণত হবো। প্রথমে আমাদেরকে আক্রমণ করবে উচ্চ রক্তচাপ, পরে ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগ।
আমার কাছের এক বন্ধু মনির হোসেন। আমার সাথেই ২০০৯ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি শুরু করেছেন। বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলায়। চাকরির শুরুতে তাঁকে পোস্টিং দেয়া হয়েছিল তাঁর বাড়ি থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরের একটি স্কুলে। তিনি সেখানে সাইকেলে যাতায়াত করতেন। সেসময় তাঁর শরীরে এই তিনটি রোগের কোনোটিই ছিল না। একসময় তিনি বাড়ির পাশে অবস্থিত স্কুলে বদলি হয়ে চলে আসেন। বদলি হয়ে আসার কয়েক বছরের মধ্যেই তাঁর শরীরে দেখা দেয় উচ্চ রক্তচাপ। দুঃখজনকভাবে কিছুদিন আগে তিনি ডায়াবেটিসেও আক্রান্ত হয়ে পড়েন।
আমাদের বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কয়েক বছর আগে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হন। আমি তাঁকে মাঝে মাঝে শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম করার পরামর্শ দিতাম। কিন্তু তিনি আমার পরামর্শকে গুরুত্ব দেননি। তিনি গত কয়েক মাস আগে ডায়াবেটিসেও আক্রান্ত হয়ে পড়েন। আমার মা’কে আমার জন্মের পর থেকে দেখতাম সাংসারিক বিভিন্ন কাজে জড়িত থাকতেন সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। তিনি প্রায় ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এসব কোনো রোগে আক্রান্ত হননি। ৭-৮ বছর আগ থেকে তিনি সাংসারিক কাজ থেকে অনেকটা অবসরে চলে যান। এরপর তিনি প্রথমে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হন। এখন তিনি ডায়াবেটিসেও ভুগছেন। আমার বাবার অবস্থাও প্রায় একই। তবে তিনি উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হবার পর নিয়মিত উচ্চ রক্তচাপের ঔষধ সেবন করার কারণে তাঁর উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকার ফলে এখনো ডায়াবেটিস বা হৃদরোগে আক্রান্ত হননি।
আগে বাইসাইকেল চালাতেন, কিন্তু এখন মোটরসাইকেল চালান, এরকম ১০ জন লোক খুঁজে নিন আপনার পরিচিত মানুষদের মধ্য থেকে, যারা বিগত ১৫ বছর ধরে মোটরসাইকেল চালাচ্ছেন, দেখবেন তাদের অনেকেই উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত, অনেকে উচ্চ রক্তচাপের সাথে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ইত্যাদিতেও আক্রান্ত। কিন্তু দৈনিক অন্তত ৪০ মিনিট বাইসাইকেল চালান (বেশ ধীরগতিতে নয়), এমন ১০ জন লোকের খোঁজ নিন, যারা ১০ বছরের বেশি সময় ধরে বাইসাইকেল চালাচ্ছেন, দেখবেন তাদের কেউ এই তিনটি রোগের কোনোটিতেই আক্রান্ত নন।
একটি পরিসংখ্যান দেখা যাক। ‘বাংলাদেশ প্রতিদিনে’ ১১ মে ২০১৯ তারিখে ‘চারজনে তিনজন হৃদরোগ ঝুঁকিতে’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে (তৈরি করেছেন শামীম আহমেদ ও জয়শ্রী ভাদুড়ী) বলা হয়, ‘‘বাংলাদেশে প্রতি চারজন প্রাপ্তবয়সীর মধ্যে তিনজনের হৃদরোগ ঝুঁকি রয়েছে। হৃদরোগের অন্যতম কারণ উচ্চ রক্তচাপ। গত বছরের অক্টোবরে শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোয় অনুষ্ঠিত উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের ওপর এক নীতিনির্ধারণবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এ তথ্য উঠে আসে। গ্রীষ্মের দাবদাহে বেড়েছে আক্রান্তের সংখ্যা। আশঙ্কাজনকহারে অল্পবয়সীরা হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছে। সম্মেলনে উপস্থাপিত তথ্যে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ায় উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত প্রাপ্তবয়সী প্রতি চারজনের মধ্যে তিনজনের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের বাইরে এবং তার মধ্যে এক তৃতীয়াংশ ডায়াবেটিসে ভুগছে। ইউরোপীয়দের তুলনায় পাঁচ থেকে সাত বছর আগেই দক্ষিণ এশীয়দের মধ্যে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক ও কিডনি রোগ দেখা দেয়। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) গত বছরের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ৩৫ বছর কিংবা এর চেয়ে বেশি বয়সীর মধ্যে প্রতি তিনজনের একজন উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত, এর অর্ধেকই এ সম্পর্কে সচেতন নয়। ২০২৫ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী ১৫০ কোটি মানুষ উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হবে। তবে দক্ষিণ এশিয়ায় এর ক্ষতিকর প্রভাব সবচেয়ে বেশি। এ অঞ্চলে প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ৪০ জনই উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে। ১৯৭০ সালের পর উন্নত বিশ্বে মৃত্যুর হার কমে গেলেও বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায় হৃদরোগ। বর্তমান বিশ্বে এক তৃতীয়াংশ মানুষ মারা যাচ্ছে হৃদরোগে। কিছুদিন আগ পর্যন্তও দেশে বয়স্কদের মধ্যে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা ছিল বেশি, কিন্তু গত কয়েক বছরে তরুণদের মধ্যে হৃদরোগের প্রবণতা ক্রমবর্ধমান।’’
আগে মানুষ বুড়ো বয়সেও আর কোনো শারীরিক পরিশ্রম না করলেও, দূরে কোথাও যাবার সময় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হেঁটে হেঁটেই যেতো। এজন্য মানুষ সহজে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এসবে আক্রান্ত হতো না।
কিন্তু এখন মানুষ অল্প বয়সেই শারীরিক পরিশ্রম ছেড়ে দেয়। ছাত্রজীবনে অনেকে আর কোনো উপায়ে পরিশ্রম না করলেও অন্তত বিভিন্ন খেলাধুলা করার ফলে কিছু পরিশ্রম করে। অন্য উপায়েও অনেকে শারীরিক পরিশ্রম করে। কিন্তু কর্মজীবনে আরামদায়ক বা শারীরিক পরিশ্রমহীন কোনো পেশায় যখন নিয়োজিত হয়ে যায়, তখন অধিকাংশ মানুষ সব রকম শারীরিক পরিশ্রমকে বিদায় জানানোর ফলে অল্প বয়সেই আক্রান্ত হয়ে পড়ে উচ্চ রক্তচাপে। আর হৃদরোগ এবং ডায়াবেটিসও উচ্চ রক্তচাপের পথ ধরে দ্রুত মানুষকে আক্রমণ করে বসে।
ক্যান্সার বা স্ট্রোকে কে আক্রান্ত হবে, কে আক্রান্ত হবে না, তা বুঝা না গেলেও উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগে কারা আক্রান্ত হবে, সহজেই বুঝা যায়। ক্যান্সার বা স্ট্রোকে আমাদের মধ্যে কে আক্রান্ত হবে, কে এগুলো থেকে বেঁচে যাবে, তার কোনো ঠিক-ঠিকানা না থাকলেও আমরা যদি আরামপ্রিয় জীবন বেছে নিই, শারীরিক পরিশ্রম ছেড়ে দিই, আমরা নিশ্চিতভাবে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগ এই তিনটি রোগে আক্রান্ত হবোই। আমরা আমাদের পরিচিত মানুষদের দিকে তাকালেই দেখতে পাবো, তাদের অনেকেই এই তিনটি রোগের এক বা একাধিকটিতে আক্রান্ত হয়ে আছে, অনেকে মারাও গেছে ইতোমধ্যে।
বিগত ১০ বছরে আমাদের পরিচিত ‘৫০ বছরের বেশি বয়সে মারা যাওয়া’ ২০-৩০ জন মানুষের খোঁজ নিলে দেখা যাবে, তাদের বেশিরভাগই মারা গেছে ডায়াবেটিস বা হার্ট অ্যাটাকে; ক্যান্সার এবং স্ট্রোকে মারা গেছে এদের খুব অল্প সংখ্যক মানুষ।
পরিসংখ্যান বলছে, বর্তমান বিশে^ মানবমৃত্যুর ৩১ শতাংশই হৃদরোগে। ‘বিশ্বে ৩১ ভাগ মৃত্যুর জন্য দায়ী হৃদরোগ’ শিরোনামে দৈনিক যুগান্তরে ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘‘বিশ্বে প্রতিবছর ১৭ দশমিক ৫ মিলিয়ন বা পৌনে দুই কোটি মানুষের মৃত্যু হয় হৃদরোগে। ৩০ থেকে ৭০ বছর বয়সী প্রতি ১০ জনে একজন এ রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারান। আতঙ্কের বিষয় হল- বিশ্বে ৩১ ভাগ মৃত্যুর জন্যই দায়ী হৃদরোগ। এছাড়া অল্প বয়সে মৃত্যুর ৮০ শতাংশ কারণও এ রোগ। এ তথ্য ওয়ার্ল্ড হার্ট ফেডারেশনের।’’
‘প্রতি বছর ডায়াবেটিসে মারা যাচ্ছে ৩৭ লাখ মানুষ’ শিরোনামে দৈনিক ইনকিলাবে ৮ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘‘বিশ্বে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। ৩৪ বছরে বিশ্বে এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা অন্তত চারগুণ বেড়েছে। বর্তমানে প্রতি ১১ জন পূর্ণবয়স্ক মানুষের একজন এই রোগে আক্রান্ত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এক প্রতিবেদন এ তথ্য জানিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্ব এখন ডায়াবেটিসের ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের ঝুঁঁকিতে। ২০১৪ সালে এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৪২২ মিলিয়ন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি, যা ১৯৮০-তে আক্রান্তের তুলনায় ৪ গুণ বেশি।’’
উপরে উল্লেখিত তিনটি প্রতিবেদন মতে, (১) বাংলাদেশে প্রতি চারজন প্রাপ্তবয়সীর মধ্যে তিনজনের হৃদরোগ ঝুঁকি রয়েছে। হৃদরোগের অন্যতম কারণ উচ্চ রক্তচাপ। (২) বিশ্বে ৩১ ভাগ মৃত্যুর জন্যই দায়ী হৃদরোগ। এবং (৩) বর্তমানে প্রতি ১১ জন পূর্ণবয়স্ক মানুষের একজন ডায়াবেটিসে রোগে আক্রান্ত।
ক্যান্সার এবং স্ট্রোকে মৃত্যুহার নয়, আক্রান্তের হারও হৃদরোগের ধারেকাছেও নেই। আর হৃদরোগের পর আর কোনো রোগে আক্রান্তের হার (প্রতি ১১ জনে ১ জন) ডায়াবেটিসে আক্রান্তের হারের ধারেকাছেও নেই। আর উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্তরাই মূলত এই দু’টি রোগে আক্রান্ত হয়।
এটা নিশ্চিত, আমরা আর কোনো রোগে আক্রান্ত হই বা না হই, এই তিনটি রোগে আক্রান্ত হবোই যদি প্রতিরোধব্যবস্থা গ্রহণ না করি। এই রোগগুলোর কারণ নিয়ে অনেক ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত আছে। সেগুলোয় কান না দিয়ে আমরা নিয়মিত অন্তত ৪০ মিনিট কঠোর শারীরিক পরিশ্রম করলে এই তিনটি রোগের কোনোটিই আমাদেরকে আক্রমণ করতে পারবে না।
0 Comments: