দীর্ঘজীবন লাভের উপায় (৬১তম পর্ব) : দীর্ঘায়ুদের জাদুঘর
ডায়াবেটিস, হার্ট অ্যাটাক এবং উচ্চ রক্তচাপের প্রকৃত কারণ এবং প্রতিরোধের উপায় জানার মাধ্যমেদীর্ঘজীবন লাভের উপায়
অধ্যায়-৪১
দীর্ঘায়ুদের জাদুঘর
‘দীর্ঘায়ুদের জাদুঘর’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয় দেশ রূপান্তরে ৭ নভেম্বর ২০২২ তারিখে। আগে লেখাটির প্রথম অংশ পড়া যাক।
‘‘কাস্পিয়ান সাগরতীরের দেশ আজারবাইজান। ইউরোপের পূর্বপ্রান্তের এই দেশে বাস করেন বিশ্বের দীর্ঘায়ু মানুষেরা। দেশটির দক্ষিণের একটি অঞ্চল লেরিক, যাকে দীর্ঘায়ুদের উর্বরভূমি হিসেবে ভাবা হয়। লেরিকে রয়েছে বিশে^র দীর্ঘায়ু বাসিন্দাদের একমাত্র জাদুঘর ‘দ্য মিউজিয়াম অব লংজিবিটি’। লিখেছেন নাসরিন শওকত।
বিশ্বে এমন অনেক স্থান রয়েছে যেখানকার বাসিন্দারা দীর্ঘ আয়ু নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য বিখ্যাত। প্রাণবন্ত ও শতবর্ষী বাসিন্দাদের জন্য জাপানের ওকিনাওয়া শহরকে ডাকা হয় ‘অমরদের দেশ’ বলে। ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্যাভ্যাসে অভ্যস্ত ইতালির কাম্পোদিমেলেকে বলা হয় ‘অনন্তকালের গ্রাম’। আবার ক্যালিফোর্নিয়ার রোমা লিন্ডা শহরের বাসিন্দারা এর রৌদ্রোজ্জ্বল ও পরিচ্ছন্ন জীবনযাপনের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। এসব দেশ ছাড়াও বিশ্বের আরেক প্রান্তে রয়েছে এমন এক দেশ যার বাসিন্দারা দীর্ঘায়ুর হলেও তাদের সম্পর্কে সবার জানা আছে খুব কমই। দেশটির নাম আজারবাইজান। এর দক্ষিণের অঞ্চল লেরিকে রয়েছে বিশ্বের দীর্ঘায়ু বাসিন্দাদের একমাত্র জাদুঘর ‘দ্য মিউজিয়াম অব লংজিবিটি (দীর্ঘায়ুদের জাদুঘর)’।
দক্ষিণ ককেশাস অঞ্চলের দেশ আজারবাইজান। ইউরোপ ও এশিয়ার সংযোগস্থলে অবস্থিত হওয়ায় দেশটির জনগণ, সংস্কৃতি ও খাবার পূর্বের সঙ্গে পশ্চিমের অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটিয়েছে। পূর্ব ইউরোপের এ দেশটির বেশ কটি অঞ্চল শতবর্ষী বাসিন্দাদের আবাসস্থল হয়ে ওঠায় পেয়েছে পরিচিতি। এর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য লঙ্কারান ও নাগারোন—কারাবাখ। কিন্তু শতবর্ষী এই বাসিন্দাদের বয়সের সর্বোচ্চ ঘনত্বের জন্য বিখ্যাত লেরিক। আজারবাইজানের ৬৬টি জেলার একটি লেরিক রেয়ন। উঁচু চক্রাকার পাথরের পর্বতমালা দিয়ে ঘেরা এর দক্ষিণাঞ্চলের ছোট পাহাড়ি শহর লেরিক। ইরানের সীমান্ত থেকে ১৬ কিলোমিটার ও কাসপিয়ান সাগর থেকে ৬৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। আলবোর্জ পর্বতশ্রেণির উত্তর—পশ্চিমের উপপর্বত তালিশ পর্বতমালায় এর অবস্থান। পাহাড়ি এই অঞ্চলটি আজারবাইজান ও ইরানউভয় দেশের জাতিগত সংখ্যালঘু তালিশ জনগণের আবাসস্থল। এর পাহাড়ি বনের গোপন ও রহস্যময় সৌন্দর্য ও গালাবিন গ্রামের অপরূপ জলপ্রপাত মোহিত করে থাকে পর্যটকদের। তালিশ পর্বতমালা থেকে সর্পিল এক পথ বাঁকের পর বাঁক নিয়ে গিয়ে মিশেছে পান্না সবুজ বিস্তৃত ভূমিতে, আর মাথার ওপরে অবারিত মেঘ—লেরিকের এই মনোরম পার্বত্য প্রকৃতিই স্থানীয় বাসিন্দাদের দীর্ঘ ও স্বাস্থ্যকর জীবনের গোপন রহস্য বলে মনে করা হয়।
দ্য মিউজিয়াম অব লংজিবিটি
সবাইকে তাক লাগানোর মতো এক আয়োজন করেছে আজারবাইজান। নিজেদের দীর্ঘ জীবনপ্রাপ্তিকে ইতিহাসের ভাষায় সংরক্ষণ করতে তারা এক অভিনব জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করেছে, যা বিশে^ প্রথম। রাজধানী লেরিকের আসাদুল্লায়েভ স্টি্রটে দীর্ঘায়ু দুটি ঘর নিয়ে গড়ে তুলেছে ‘মিউজিয়াম অব লংজিবিটি’। জাদুঘরটি প্রথমবারের মতো ১৯৯১ সালে নির্মাণ করা হয়। এর প্রায় দুই দশক পর ২০১০ সালে সংস্কার করা হয়। লেরিক অঞ্চলের সবচেয়ে প্রাচীন বাসিন্দাদের জীবন ও অমূল্য সব স্মৃতির পসর দিয়ে সাজানো হয়েছে দীর্ঘায়ুদের জাদুঘর, যার প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে পাঁচ প্রজন্মের নিদর্শন হিসেবে দুই হাজারেরও বেশি ছবি ও গৃহস্থালির নানা আসবাব। এর তালিকায় রয়েছে প্রাচীন ওই বাসিন্দাদের প্রত্যেকের জীবনকাল ও দীর্ঘ সময় ধরে তাদের ব্যবহার করা গৃহস্থালির আসবাবপত্র। এক তাকে সাজানো আছে তিন প্রজন্মের ব্যবহার করা পোশাকের ইস্ত্রি, মাথার স্কার্ফ ও শার্ট পরানো পুতুলের শরীর, রূপার কলস ও বাটি, হাতে বোনা সুন্দর মোজা। এ ছাড়া রয়েছে হাতে রঙ করা পাটি, যেগুলোর বয়স অনেক হলেও উজ্জ্বলতা হারায়নি এখনো। এর পরের তাকে রয়েছে রুশ ও আজারবাইজান ভাষায় লেখা কিছু চিঠি। ব্যক্তিগত নানা অনুভূতির সাক্ষী ওই চিঠিগুলো এতটাই পুরনো যে মলিন হতে শুরু করেছে এর কালিও। এর মধ্যে সম্ভবত সবচেয়ে আকর্ষণীয় জাদুঘরের দেয়ালে শোভা পাওয়া ছবিগুলো। যাতে স্থান পেয়েছেন শতবর্ষী কিংবদন্তী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা। যা ১৯৩০ সালে ছবিগুলো ফরাসি চিত্রগ্রাহক ফ্রেডরিক ল্যাচপ জাদুঘরকে দান করেছিলেন। দীর্ঘায়ুদের জাদুঘর ও আজারবাইজানের পরিসংখ্যান বিভাগ ‘শতবর্ষী’ ব্যক্তির সংজ্ঞায় বলেছে, এখানে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি শিথিল করে শতবর্ষীদের বয়স নির্ধারণ করা হয়েছে। এর অর্থ হলো, ৯০ বছরের বেশি বয়সী যে কেউ শতবর্ষী হিসেবে বিবেচিত হবেন এখানে। ১৯৯১ সালের দিকে লেরিকের জনসংখ্যা ছিল ৬৩ হাজার। তখন ২০০—এরও বেশি বাসিন্দা ১০০ বছরেরও বেশি বয়সী হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছিলেন। এরপর থেকে এ সংখ্যা তেমন আর বাড়েনি। স্থানীয়রা এর জন্য পরিবেশের বিপর্যয়কে দায়ী করেছেন। যে বিপর্যয়ে মূল ভূমিকা পালন করছে যোগাযোগের জন্য স্থাপিত টাওয়ার। তাদের দাবি, এ টাওয়ারগুলো থেকে রেডিয়েশনের বিকিরণ পরিবেশকে বিষাক্ত করে তুলছে, যা দীর্ঘায়ু বাসিন্দাদের রেকর্ড সংরক্ষণকে খুব সহজেই নিচে নামিয়ে আনতে পারে। বর্তমানে লেরিকের জনসংখ্যা ৮৩ হাজার ৮০০। এর মধ্যে ১০০ বছরের বেশি বয়সী বাসিন্দা রয়েছেন মাত্র ১১ জন।
১৮৬ বছর বয়সীর রেকর্ড
লেরিকে বর্তমানে সবচেয়ে বয়স্ক নাগরিক রাজি ইব্রাহিমাভো। বয়স তার ১০৫ বছর। তবে রাজির আগে এই এলাকায় আরও একজন বাসিন্দা ১৬৮ বছর বেঁচেছিলেন, যিনি তখন অর্জন করেন সবচেয়ে বিখ্যাত শতবর্ষীর গৌরব। বারজাভু গ্রামের মেষপালক শিরালি মুসলুমভ ছিলেন সেই গর্বিত শতবর্ষী। তবে শিরালির রেকর্ডের কাছে রাজির এই রেকর্ড বেশ নিষ্প্রভ মনে হয়। শিরালির পাসপোর্টের হলুদ পাতায় দেওয়া তথ্যে দাবি করা হয়েছে, তিনি ১৮০৫ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। আর তার কবরের গায়ে লেখা মৃত্যুর সাল ১৯৭৩। এই দুই তথ্য সঠিক হলে শিরালিই ছিলেন আজারবাইজানের সবচেয়ে বয়সী নাগরিক। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ১৯ শতকের শুরুর দিকে বারজাভুর মতো প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে জন্মনিবন্ধন করা হতো খুব কম। তাই তিনি কখন জন্মেছিলেন তার কোনো সরকারি রেকর্ড নেই। তবে শিরালি জীবিত থাকা অবস্থায় প্রায় জন্মদিনেই বিশে^র বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে অসংখ্য চিঠি আসত তার কাছে। যে চিঠিগুলো প্রমাণ করে, তখন শতবর্ষী ব্যক্তি হিসেবে সবার অনেক বেশি শ্রদ্ধাভাজন ছিলেন। গর্বিত শতবর্ষী শিরালির সঙ্গে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অনেক ব্যক্তিত্বেরও যোগাযোগ ছিল তখন। সে সময় ভিয়েতনামের প্রখ্যাত নেতা হো চি মিন শিরালিকে শুভেচ্ছা জানিয়ে একটি পোসকাড পাঠান, যেখানে তিনি শিরালিকে সম্বোধন করেছিলেন ‘প্রিয় দাদাভাই’ বলে। তবে সুখের খবর হলো, এখনো দীর্ঘায়ুর ধারা অব্যাহত রয়েছে শিরালির পরিবারে। পরবর্তী প্রজন্মের ৯৫ বছর বয়সী তার এক মেয়েও রয়েছেন। নাম তার হালিমা কাম্বারোভা। সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে নিজের বংশধারার কথা জানিয়ে হালিমা বলেন, তিনি হয়তো তার বাবার মতো ১৬৮ বছরের আয়ু নাও পেতে পারেন। তবে প্রত্যাশা করেন, তিনি যেন তার দাদার মতো কমপক্ষে ১৫০ বছর নয়তো তার খালার মতো ১৩০ বছর বাঁচেন।
মনের স্থিরতা
শীতকালে ঠান্ডার প্রকোপ বাড়তে থাকলে বারজাভুর শতবর্ষী গ্রামবাসী উপকূলীয় আবহাওয়ার লঙ্কারনে চলে যান। কিন্তু হালিমা তখনো লেরিকের বারজাভুতেই অবস্থান করছিলেন। বাবার হাতে তৈরি দোতলা বাড়িতে থাকেন হালিমা। বাড়িটাকে চারপাশ থেকে ঘিরে রেখেছে বিশালাকারের আপেল ও নাশপাতির বাগান (সম্ভবত বাগান দুটি তার বিখ্যাত বাবার ছিল)। গায়ে শাল জড়িয়ে জানালার পাশে বসে মৃদুস্বরে কথা বলেন হালিমা। সেই কথায় মাঝেমধ্যেই মাতৃভাষা তালিশের আঞ্চলিক টান স্পষ্ট হয়ে ওঠে। আজারবাইজানের একটি উপভাষা তালিশ, যে ভাষায় কথা বলে থাকেন দেশটির প্রায় দুই লাখ জনগোষ্ঠী। ইউনেসকোর ‘ঝুঁকি’র তালিকায় থাকা ভাষার মধ্যে তালিশও একটি। হালিমার পাসপোর্টে জন্মের কোনো মাস বা তারিখের উল্লেখ নেই, শুধু সেখানে সন দেওয়া আছে ১৯২৪। সে হিসেবে তার বয়স সম্ভবত ৯৫ এবং বেশ আনন্দের সঙ্গেই জীবিত রয়েছেন এখনো। প্রাণবন্ত ও রসিক হালিমার বেশির ভাগ সময় কাটে তার নাতি—নাতনিদের সঙ্গে গল্প করে। যখন তার বয়স জানতে চাওয়া হয়, তখন আনন্দের সঙ্গে তিনি উত্তর দেন ‘১৫’ বছর। লেরিকের বেশির ভাগ শতবর্ষীর দীর্ঘ আয়ু পাওয়ার রহস্য সম্পর্কে দীর্ঘায়ু জাদুঘরের গাইড বলেন, ‘মনের স্থিরতা তাদের গোপন এ রহস্যের একটি অংশ। বেশির ভাগ সময় তারা মানসিক চাপ থেকে দূরে থাকেন। জীবন সম্পর্কে তাদের চিন্তাও বেশ দার্শনিক। যেখানে না আছে পরিকল্পনা, না আছে ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগযেন শুধুই এক দিনের জন্য একবার বেঁচে থাকা।’
পুষ্টি ও প্রতিকার
কঠোর পরিশ্রম, পুষ্টিমানসম্পন্ন খাবারের খাদ্যাভ্যাস ও প্রতিষেধক হিসেবে নানা ভেষজের ব্যবহার মূলত বারজাভুর বাসিন্দাদের প্রাত্যহিক জীবনকে সহজ ও রোগমুক্ত রেখেছে। বলা হয়ে থাকে, হালিমার দাদা বেঁচে ছিলেন ১৫০ বছর, বাবা ১৬৮ বছর আর তার খালা বেঁচে ছিলেন ১৩০ বছর পর্যন্ত। হালিমার বয়স ৯৫ হলেও তার প্রাণ যেন একেবারে তরুণ। ভোরে যখন দিনের শুরু হয় তখনই বিছানা ছেড়ে উঠে পড়েন তিনি। এরপর সারা দিন ধরে চলে তার কাজ। কখনো বাগানে আবার কখনো বা বাড়ির চারপাশে। নিজের প্রতিদিনের জীবনযাপন সম্পর্কে হালিমা বলেন, ‘সকালে চোখ খোলার সঙ্গে সঙ্গে আমি ঘুম থেকে উঠে পড়ি।’ তার নিজের থাকার ঘরটি বেশ ছোট। মেঝেতে পাতা পাতলা নরম কার্পেট, যার ওপরে ছড়ানো কয়েকটি বালিশ। এই অঞ্চলের বেশির ভাগ বাসিন্দাই ঘরের মেঝেতে ঘুমাতে পছন্দ করেন। ঘুমের জন্য তোশকের পরিবর্তে তারা গায়ে চাপান পাতলা একটা কম্বল। মেঝেতে পিঠ দিয়ে ঘুমানোকেই সেখানে সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর উপায় বলে বিশ্বাস করা হয়। জনপ্রিয় এই বিশ্বাসের বিপরীতে লেরিকেই এই শতবর্ষীদের রয়েছে পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাসের তালিকা। মাংস খাওয়ার অভ্যাস থাকলেও উত্তরাধিকার সূত্রে তাজা দুগ্ধজাত খাবার খেতে বেশি পছন্দ করেন তারা। পছন্দের এই খাবারের মধ্যে রয়েছে সর (ঘরে তৈরি পনির), বাটার, দুধ ও দই থেকে তৈরি আয়রান নামক এক ধরনের পানীয়। তবে আর্থিক সচ্ছলতার অভাবে আগের সময়ের শতবর্ষীরা খুব কম খেতেন মাংস। হালিমার বাড়িতে ফল হিসেবে নিয়মিত আপেল আর নাশপাতি খাওয়া হয়। সঙ্গে থাকে সুগন্ধী ভেষজ চা, যা খুবই স্বাস্থ্যকর পানীয়। এদিকে দীর্ঘায়ু জাদুঘরের একটি টেবিলে রাখা আছে লেরিকের স্থানীয় অনেক ভেষজ ওষুধ। সেগুলো দেখিয়ে জাদুঘরটির গাইড বলেন, দীর্ঘ আয়ু পাওয়ার মূল রহস্য ভালো পুষ্টি। এখানকার বসন্তের পানিতে রয়েছে খনিজ পদার্থ। আর চায়ে আমরা যে ভেষজগুলো দিই তা আমাদের রোগ প্রতিরোধ করে থাকে। এ কারণে আমাদের কোনো ওষুধ খেতে হয় না। অসুস্থ হলে আমরা শুধু প্রাকৃতিক এই ভেষজগুলো প্রতিকার হিসেবে ব্যবহার করে থাকি।’ গাইডের এই মন্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে হালিমাও বলেন, তিনি তার ৯৫ বছরের এই জীবনে কখনোই কোনো ওষুধ খাননি।’’
নিবন্ধটির এই পর্যন্ত পড়ে আমি পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারিনি, সত্যিই কিভাবে বা কোন সূত্র অবলম্বন করে এই গ্রামের মানুষ দীর্ঘ জীবন লাভ করে। এর পরের অংশ পড়ে বিষয়টা আমার নিকট পরিষ্কার হয়। দেখা যাক পরের অংশ:
‘‘যূথবদ্ধ প্রজন্ম
লেরিকের বারজাভু গ্রামের বাসিন্দারা প্রজন্ম ধরে যূথবদ্ধ জীবনযাপন করে আসছেন। বারজাভুকে দেখতে ছবিতে আঁকা শান্ত ও স্থির এক গ্রাম বলে মনে হয়। কিন্তু রাত—দিনভর কায়িক পরিশ্রম করে দিন কাটে গ্রামবাসীর। সূর্য ওঠা থেকে সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত তারা বাগান, ফসলের মাঠ ও বাড়ির আশপাশে কাজ করেন। কাপড় সেলাই, কাপড় বোনার মতো কাজের পাশাপাশি যৌথ পরিবারের যত্নেই কেটে যায় তাদের বেলা। বারজাভুর মতোই লেরিকে আরেকটি গ্রাম হলো জাঙ্গামিরান। এই গ্রামের বাসিন্দা মামাদখান আব্বাসভ। ১০৩ বছর বয়সী আব্বাসভের জীবনধারাও একসময় এমনই ছিল। পুরোপুরি দৃষ্টিহীন এই শতবর্ষী এখনো কানেও কম শোনেন। আব্বাসীর নাতিরও নাতি আছে, যার সঙ্গে তার বয়সের ব্যবধান শত বছরের। হালিমার মতো আব্বাসভও সারাজীবন ব্যস্ত এক গ্রামবাসীর জীবন কাটিয়েছেন। সারা দিন ফসলের মাঠে কাজ করে কেটেছে তার। সাত বছর হলো তার দৃষ্টিশক্তি একেবার কমে এসেছে। তার আগে একই জীবনধারা ছিল আব্বাসভের।
ঈশ্বরের দান
কঠোর পরিশ্রম, খাদ্যাভ্যাস ও পর্বতের বিশুদ্ধ বাতাস জাঙ্গামিরান গ্রামের বাসিন্দাদের আয়ু বাড়ানোর নেপথ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মামাদখান আব্বাসভের ছেলে তার বাবার জীবনযাপন সম্পর্কে বলেন, ‘তিনি সারা জীবনই একজন ভালো মানুষ ছিলেন, যিনি নিয়মতান্ত্রিকভাবে তার জীবন কাটিয়েছেন। খাবারের বেলায় ‘আল্লাহ যা দান করেছেন’ তার সবই খান তিনি। তবে তিনি একটি নিষেধই মেনে এসেছেন এ যাবৎকালকখনোই মদপান করেননি।’ আব্বাসভ তার দীর্ঘ এই জীবনকে দৈনন্দিন কায়িক শ্রমে ব্যস্ত রেখেছেন। অবসাদকে নয় নিজের শরীরকে চ্যালেঞ্জ জানাতেই সারাজীবন এই হাড়ভাঙা খাটুনি খেটেছেন তিনি। পরিশ্রমের পর খাবার হিসেবে বেছে নিয়েছেন পুষ্টিকর খাবার। এ ক্ষেত্রে ভালো পুষ্টির উৎস হিসেবে খামারজাত খাবার খেতেন। সঙ্গে পান করতেন লিটার লিটার বরফ—শীতল ঝরনার পানি। উচ্চমানের খনিজসমৃদ্ধ ঝরনার এই পানি মানুষের দীর্ঘ আয়ু পেতে অবদান রাখে। এ ছাড়া মাথাব্যথা সৃষ্টি করা পাহাড়ের উচ্চতাও এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে বলে ধারণা করা হয়। স্পেনের নাভারা বিশ^বিদ্যালয় ২০১৭ সালে একটি গবেষণা পরিচালনা করেছিল। ওই গবেষণার ফলাফলে বলা হয়, অতি উচ্চতায় বাস করলে মানুষের হৃদরোগ, স্টে্রাক ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে। এর ছয় বছর আগে ২০১১ সালে যুক্তরাষ্টে্রর কলোরাডোর ডেনভার বিশ^বিদ্যালয়ের একটি গবেষণায়ও দেখা যায়, আকাশছোঁয়া পর্বতের বাসিন্দারা দীর্ঘদিন বাঁচেন।
তবে শতবর্ষ পালন করা এই প্রবীণদের কারও কারও ক্ষেত্রে বয়স নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। কিন্তু লেরিকের এই শতবর্ষীদের উত্তরাধিকার এমন সব মানুষ ধরে রেখেছেন, যারা এখনো তাদের পূর্বপুরুষদের লেরিকের দীর্ঘ আয়ুর সাধারণ গোপন সূত্র মেনে চলেন। এই সূত্র হলো, কায়িক শ্রম, ভালো পুষ্টির খাবার খাওয়া, প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা এবং এমন একটি জীবনবোধ ধারণ করা, যে জীবনবোধের সূত্রে বলা হয়েছে : আমরা শুধু একবারই বাঁচি, কিন্তু যদি এই বাঁচা সঠিকভাবে বাঁচি, তবে তা একবারের জন্যই যথেষ্ট। [https://www.deshrupantor.com/specially/2022/11/07/390250]
৬২তম পর্ব :
https://waytogainlonglife.blogspot.com/2023/06/blog-post_42.html

0 Comments: