Headlines
Loading...
সুখী মানুষরাই বেশি হার্ট অ্যাটাকে আ্ক্রান্ত হয়, যারা টেনশন বেশি করে তারা নয়!

সুখী মানুষরাই বেশি হার্ট অ্যাটাকে আ্ক্রান্ত হয়, যারা টেনশন বেশি করে তারা নয়!

সুখী মানুষরাই বেশি হার্ট অ্যাটাকে আ্ক্রান্ত হয়, যারা টেনশন বেশি করে তারা নয়!

নূর আহমদ : শিক্ষক; কলামিস্ট; গবেষক

‘‘টেনশনে কি মানুষ সত্যিই হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়?’’ এই প্রশ্নের উত্তর জানার আগে আমাদেরকে অন্য একটি প্রশ্নের উত্তর নিয়ে ভাবতে হবে। যেসব মানুষ কায়িক শ্রমের কোনো না কোনো পেশায় নিয়োজিত, তাদের জীবনে কি টেনশন নেই? তারা তবু কেন হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয় না?

হার্ট অ্যাটাকের কারণ নিয়ে ভাবতে গিয়ে প্রশ্নটি হয়তো আমাদের মনে কখনো উঁকি দেয়নি। কারণ আমরা এতোকিছু ভাববার সুযোগ পাই না। দরকারও মনে করি না। সমাজে ছড়িয়ে পড়া ধারণাগুলো বিশ^াস করেই জীবন কাটাই। কিন্তু আমরা যদি একটু সময় করে ভেবে দেখি, কোনো অসুবিধা আছে? তাহলে চলুন আমরা একটু আমাদের পরিচিত যারা কায়িক শ্রমের কোনো না কোনো পেশায় নিয়োজিত, তাদের খোঁজ নিই।

এতে কোনো সন্দেহ নেই, এরকম ১০০ মানুষের খোঁজ নিলেও, যারা ১০ বছরের বেশি সময় ধরে শারীরিক পরিশ্রমের কোনো পেশায়, যেমন: মাটিকাটার কাজ, পায়েচালিত রিকশা চালানো, গাছ কাটার কাজ ইত্যাদিতে নিয়োজিত থেকেছে জীবিকা উপার্জনের একমাত্র মাধ্যম হিসেবে, দেখবেন তারা কেউই হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত নন।

এবার আবার তাদের সাথে একান্তে আলাপ করে দেখুন, দেখবেন, তাদের প্রায় সবার জীবনে কমবেশি টেনশনের বিষয় রয়েছে।

যদি এই শ্রেণির মানুষ টেনশন করা সত্ত্বেও হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত না হয়ে থাকেন, তাহলে যাদের হার্ট অ্যাটাককে আমরা টেনশনের কারণে হয়েছে বলে মনে করি, তাদের হার্ট অ্যাটাকের কারণ টেনশন না হয়ে অন্য কিছু কি হতে পারে না?

ভাবনাকে একটু নাড়াচাড়া করুন। সবসময় মানুষ যা বলে, তা-ই বিশ^াস করে নেয়া ঠিক নয়। নিজেও কিছু কিছু বিষয় তদন্ত করে, বাস্তবতার নিরিখে যাচাই করে দেখতে পারেন।

কিভাবে যাচাই করবেন? একটা ঘটনা বলছি। আমি মাঝে মাঝে মানুষের মুখে শুনি, মানুষ বলে, ‘সাপ নাকি মানুষকে কয়েক গুণ বড় দেখতে পায়!’

কথাটি শুনতে শুনতে অনেকটা ক্লান্ত হয়ে একদিন একজন লোক আমার সামনে কথাটি বলার পর একটু ভেবে তাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আচ্ছা ভাই, আপনি যে বললেন, সাপ মানুষকে কয়েক গুণ বড় দেখতে পায়। আপনি কি কখনো সাপ হয়ে মানুষের দিকে তাকিয়ে দেখেছেন বিষয়টা? আপনি যদি সাপ হয়ে মানুষের দিকে তাকিয়ে দেখতেন, মানুষকে কয়েক গুণ বড় দেখা যায়, তখন-ইবা আপনি কিভাবে বুঝতেন, মানুষ বাস্তবে অনেক ছোট। আমরা তাদেরকে কয়েকগুণ বড় আকারে দেখছি?’

লোকটি কোনো উত্তর দিতে না পেরে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। আমি আরো বললাম, ‘মানুষকে দেখে শুধু সাপ নয়, অনেক প্রাণিই পালিয়ে যায়। তাই বলে সেসব প্রাণীও কি মানুষকে কয়েক গুণ বড় দেখতে পায়? এগুলো মানুষের ভুল ধারণা। আমরা নিজেরা কোনো কিছু বাস্তবতার সাথে মিলিয়ে না দেখে মানুষের কথায় বিশ^াস করি, আবার তা অন্যের কাছে বলেও বেড়াই! এটা ঠিক নয়। আমাদের উচিত সাধ্যমতো কোনো কিছু বাস্তবতার সাথে মিলিয়ে দেখা।’

টেনশনে কি মানুষ হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে এবার এখন আমরা দেখবো, হার্ট অ্যাটাক মূলত কী কারণে হয়?

আমরা যদি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করি, দেখতে পাবো, সমাজের ঐ শ্রেণির মানুষ হার্ট অ্যাটাকে বেশি বেশি আক্রান্ত হয়, যারা তেমন কোনো শারীরিক পরিশ্রম করে না; বরং আরামে আরামে জীবন কাটাতে এবং বেশি বেশি খেতে অভ্যস্ত এবং যারা স্থূলকায়। যারাই হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হচ্ছে বিশ^ব্যাপী, তাদের মধ্যে এই বৈশিষ্ট্যগুলো কমন। তবে আর কোনো বৈশিষ্ট্য না মিললেও এটা নিশ্চিতভাবে মিলে যায়, হার্ট অ্যাটাকে ঐসব মানুষই বেশি বেশি আক্রান্ত হয়, যারা বছরের পর বছর ধরে শারীরিক পরিশ্রম থেকে দূরে।

বছরের পর বছর আরামে থাকা বা শারীরিক পরিশ্রম থেকে দূরে থাকার কারণে কী হয়? শরীরে মেদ-চর্বি ইত্যাদি বেড়ে যায়, শরীরে দেখা দেয় উচ্চ রক্তচাপ।

এই উচ্চ রক্তচাপ কোনো কারণে, তা সেই কারণ টেনশনে ভোগা হোক বা নিয়মিত ঔষধ না খাওয়া হোক, বেড়ে গিয়ে মানুষের হার্টে রক্ত সরবরাহ বাধাগ্রস্থ হবার কারণে মানুষের হার্ট ব্লক্ড হয়েই মানুষ হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়। হার্ট অ্যাটাক মূলত হার্ট ব্লকেজের অন্য নাম। হার্ট ব্লক্ড হয়ে কী দিয়ে? হার্ট ব্লক্ড হয় শরীরে চর্বি বৃদ্ধি পাবার কারণে।

তাহলে যারা নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করার ফলে শরীরে চর্বি জমা হতে পারে না, তারা যদি প্রচন্ড টেনশনও করে, তাদের হার্ট ব্লক্ড হবে কিভাবে!

তাই আর আরামে আরামে থাকা নয়, শারীরিক পরিশ্রমে নিয়মিত হওয়া উচিত আমাদের সবার। নয়তো জীবনে প্রচুর টেনশন থাকলেও হার্ট অ্যাটাক আমাদেরকে কোনোভাবে আক্রমণ করতে পারবে না। অন্যদিকে যদি আমরা শারীরিক পরিশ্রম থেকে দূরে থাকি, তাহলে জীবনে টেনশন তেমন না থাকলেও হার্ট অ্যাটাক আমাদেরকে আক্রমণ করবেই, আমাদেরকে বেশি দিন বাঁচতে দেবে না পৃথিবীতে।

Occupation: Teaching, Hobbies: Writing

0 Comments: