আরামে থাকা এবং মোটা হওয়া ভয়ানক ক্ষতিকর
আরামে থাকা এবং মোটা হওয়া ভয়ানক ক্ষতিকর
নূর আহমদ : শিক্ষক; কলামিস্ট; গবেষক
কষ্টের কাজ থেকে গা বাঁচিয়ে আরামে আরামে থেকে আর বসে বসে খেয়ে মোটা হয়ে অনেকে প্রথম প্রথম ভাবে, ‘জীবনের সেরা সময়টা বুঝি কাটছে আমার; বেশ সুখী এবং সুস্থ-সবল দেখাচ্ছে আমায়!’ কিন্তু মোটা হবার সাথে সাথে যখন শরীরের ওজন বেড়ে যেতে শুরু করে, শরীরে মেদ জমতে শুরু করে, ভূঁড়ি বেড়ে যায়, মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা তখন নানাভাবে ব্যাহত হয়; পরিশ্রমের সামান্য কাজ করতে গিয়েও মানুষ হাঁপিয়ে ওঠে।
নতুন নতুন সব বিপদে পড়ে একসময় ভাবে, ‘কেন মোটা হলাম? চিকন থাকাই তো ভালো ছিল!’ মাঝে মাঝে এমন অনেক লোকের কথা জানতে পারি, যারা একসময় চিকন ছিল। অনেক চেষ্টা-সংগ্রামের পর মোটা হয়ে এখন আবার চিকনত্ব ফিরে পাবার জন্য অস্থির হয়ে উঠেছে, কিন্তু চিকন হতে পারছে না কোনোভাবে!
মোটা হওয়ার পরিণতি অবশ্য এ অস্থিরতা আর অস্বস্তির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। মোটা মানুষদের এ সমস্যাগুলো কেবল মোটা হওয়ার প্রাথমিক পরিণতি মাত্র। মোটা হওয়াটা ইদানিং বিশ^ব্যাপী মানুষের মহাবিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মোটা হওয়াটা এখন মানুষের সুস্বাস্থ্য এবং জীবনের জন্যই হুমকি। মোটা হবার কারণে মানুষ ইদানিং এমন অনেক রোগে আক্রান্ত হয়, যে রোগগুলো মানুষের জীবনকে জটিল করে তোলে, মানুষকে দ্রুত মৃত্যুমুখে ঠেলে দেয়। যেসব মানুষের কায়িক শ্রমের কোনো কাজ নেই, ব্যায়ামেরও অভ্যেস বা সুযোগ নেই, মোটা হওয়ার পর ধীরে ধীরে তাদের শরীর ও রক্তে চর্বি-কোলেস্টেরল বেড়ে যায়। অতিরিক্ত চর্বি এবং কোলেস্টেরলের ফলে তাদের শরীরে দেখা দেয় উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হার্ট অ্যাটাক বা হার্ট ব্লকেজের মতো রোগ। আমার পরিচিতজনদের মধ্যে অসংখ্য মানুষ এখন এসব রোগে আক্রান্ত, অনেকে ইতোমধ্যে মারাও গেছেন। আমি দেখেছি, এসব লোকের মধ্যে অধিকাংশই মোটা ছিলেন, অন্যদিকে শারীরিক পরিশ্রমের কোনো কাজের সাথেও এদের তেমন সম্পর্ক ছিল না।
ত্রিশের বেশি বয়সী মোটা মানুষরা এসব রোগে আক্রান্ত হয়ে রোগের জটিলতায় কঠিন জীবনের মুখোমুখি হবার ঘটনা বিশ্বব্যাপী এখন হু হু করে বাড়ছে। ত্রিশের কম বয়সী মোটা মানুষরাও, এমনকি শিশুরাও এখন এসব রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। আমি খুব গভীরভাবে দেখেছি, মোটা হওয়া এবং শারীরিক শ্রমশূন্য থাকার সমন্বয় যার মধ্যে ঘটে, এসব রোগ থেকে সে খুব কমই রেহাই পায়। কেউ হয়তো দ্রুত এসব কোনো রোগে আক্রান্ত হয়, কেউ একটু দেরিতে।
আরামে থাকা এবং মোটা হওয়াজনিত এসব রোগের কারণে মানুষ এক কঠিন জীবনের মুখোমুখি হয়; খাওয়া-দাওয়ায় লাগাম টেনে ধরতে হয়; সার্বক্ষণিক ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলতে হয়; সব সময় ঔষধ সাথে রাখতে হয়; নিয়মিত ঔষধ গ্রহণ করতে হয়; রুটিনমাফিক হাঁটতে বা ব্যায়াম করতে হয়; রক্তচাপ-ডায়াবেটিস এসব মাপতে হয় নিয়মিত; হার্টের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হয় কয় দিন পরপর- জীবনের এক বিভীষিকাময় অধ্যায়ে মানুষ প্রবেশ করে। মানুষের স্বাভাবিক খাওয়া-দাওয়া, স্বাভাবিক চলাফেরা, সর্বোপরি স্বাভাবিক জীবন চিরতরে নষ্ট হয়ে যায়। একমাত্র মৃত্যুই মানুষকে রোগগুলোর যন্ত্রণা থেকে পুরোপুরি মুক্তি দেয়।
ডায়াবেটিস দেখা দিলে অনেকের চোখ আর কিডনীও পর্যায়ক্রমে ক্ষতিগ্রস্থ হয়; ডায়াবেটিস বেড়ে গেলেও বিপদ, শূন্য হয়ে গেলেও বিপদ। উচ্চ রক্তচাপ দেখা দিলে রোগের তীব্রতায় অনেকে আকস্মিক হার্ট অ্যাটাকের কবলে পড়ে মুহূর্তেই মৃত্যুমুখেও পতিত হয়। হার্ট অ্যাটাকের কবলে পড়া অনেক রোগী তাৎক্ষণিক মারা না গেলেও দ্বিতীয় বা তৃতীয়বারের অ্যাটাকে মারা যায়। মাঝখানের সময়টা তার কাটে অন্তহীন শঙ্কা আর হতাশায়, চোখের সামনে সব সময় মৃত্যুকে দেখে। অনেক হার্ট অ্যাটাকের রোগীকে রিং বসিয়ে বা বাইপাস সার্জারী করে সাময়িকভাবে কোনো রকম সুস্থ করে তোলা গেলেও বাকি জীবন চলতে হয় খুব সতর্কভাবে।
মোটা হওয়ার এসব গুরুতর ক্ষতি সম্পর্কে আমরা সতর্ক না হলে দিন যত যাবে, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের মতো রোগগুলো বিশ্বব্যাপী মানুষের জীবনকে সংক্ষিপ্ত থেকে সংক্ষিপ্ততম করতেই থাকবে।
‘‘দীর্ঘজীবন লাভের উপায়’’ শিরোনামে একটি বইয়ের অংশ বিশেষ এই লেখাটি। পুরো বই অনলাইনে পড়তে হলে যেতে হবে এই লিঙ্কে: https://waytogainlonglife.blogspot.com/2019/03/blog-post.html
0 Comments: