Headlines
হার্ট  অ্যাটাক কিভাবে প্রতিরোধ করবেন?

হার্ট অ্যাটাক কিভাবে প্রতিরোধ করবেন?

হার্ট অ্যাটাক কিভাবে প্রতিরোধ করবেন?


টেনশনে কি মানুষ হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়?

বর্তমান বিশ্বে যে রোগগুলোর কাছে মানুষ সবচেয়ে বেশি পরাজিত, মানুষের অকালমৃত্যুর জন্য যে রোগগুলো সবচেয়ে বেশি দায়ী, তন্মধ্যে ক্যান্সার, স্ট্রোক এবং হার্ট অ্যাটাক অন্যতম। আবার ক্যান্সার এবং স্ট্রোকে যে মৃত্যুগুলো হয়, সেগুলোর সাথে হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর তুলনা করা হলে আমার মনে হয়, ক্যান্সার ও স্ট্রোকে মৃত্যুর চেয়েও হার্ট অ্যাটাকে বিশ্বব্যাপী মানুষের মৃত্যু অনেক অনেক বেশি ঘটে।

আমাদের পরিচিত যে মানুষগুলো ইতোমধ্যে হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন বা এখন হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত, সে মানুষগুলোর সংখ্যার সাথে আমাদের পরিচিত যারা ক্যান্সার ও স্ট্রোকে মারা গেছেন বা এসবে আক্রান্ত, সে মানুষগুলোর সংখ্যার তুলনা করা হলে সবার নিকট পরিষ্কার হবে, হার্ট অ্যাটাক অন্য সব রোগের চেয়ে বর্তমান বিশ্বে মানুষের মৃত্যুর পেছনে বেশি প্রভাব ফেলে।


পঁয়ত্রিশ বছরের কাছাকাছি বয়সের আমাদের এক আত্মীয় মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত অবস্থায় বছর দুয়েক আগে হার্ট অ্যাটাকে আকস্মিক মৃত্যুবরণ করেন। পারিবারিক কিছু বিষয় নিয়ে তিনি অনেক সময় টেনশন করতেন বলে সবাই তাঁর এ হার্ট অ্যাটাকের জন্য টেনশনকেই দায়ী করলো। এরকম হার্ট ব্লক্ড হয়ে বা হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুবরণকারী অধিকাংশ মানুষের মৃত্যুর জন্য আমরা চোখ বন্ধ করে টেনশনকেই দোষারোপ করি, টেনশন ছাড়া অন্য কিছু তাদের হার্ট অ্যাটাকের জন্য দায়ী ছিল কিনা, তা ভেবে দেখার তেমন একটা প্রয়োজন বোধ করি না।


‘মানসিক অস্থিরতা বা টেনশনে হার্ট অ্যাটাক হয়’, এমন কথা সমাজে এতো ব্যাপকভাবে প্রচলিত, মনে হয়, হার্ট অ্যাটাকের একমাত্র কারণ মানসিক অস্থিরতা বা টেনশন। মনে হয়, যেসব মানুষ বেশি বেশি টেনশন করে বা মানসিক অস্থিরতায় ভোগে, তারাই কেবল হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয় বা মারা যায়, আর যাদের তেমন কোনো মানসিক অস্থিরতা বা টেনশন নেই, তারা হার্ট অ্যাটাক থেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ থাকে। এই হিসেবে- ১. সমাজের নিরীহ, হতদরিদ্র এবং খেটে খাওয়া মানুষগুলোরই বেশি বেশি হার্ট অ্যাটাক হবার কথা। কারণ অভাব, সংকট এবং নানা রকম দুশ্চিন্তা তাদেরই নিত্যসঙ্গী। যাদের জীবনে সুখ নেই, সারাক্ষণ সুখ এবং অর্থের পেছনে যারা ছোটে, মানসিক অস্থিরতা তো তাদেরই বেশি। সুতরাং তারাই বেশি বেশি হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হবার কথা। ২. পক্ষান্তরে যাদের জীবন প্রাচুর্যে ভরপুর, জীবনে যারা সুখী, যারা বিত্তশালী ও সৌভাগ্যবান, তারা কোনোভাবে হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হবার কথা খুব কম! কারণ তাদের তো তেমন কোনো মানসিক অস্থিরতা বা টেনশন নেই!


বিষয়টা কি বাস্তবেই এমন?


যদি একটুও বাড়িয়ে না বলি, আমার মনে হয়, যেসব মানুষ ব্যক্তিগত জীবনে সুখী, যাদের অভাব কম, মানসিক অস্থিরতা যাদের জীবনে খুব কম, তারাই বেশি বেশি হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয় বা মারা যায়। এমন অসংখ্য ঘটনা আমার জানা আছে, উল্লেখ করা অনাবশ্যক। কারণ উদাহরণ শুধু আমার চোখের সামনেই নেই, সবার চোখের সামনেই এমন অসংখ্য ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটে চলছে। দেখা যায়, অর্থবিত্তের মালিক সুখী মানুষরাই বিশ^ব্যাপী বেশি হার্ট অ্যাটাক বা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়, মারা যায়। বিশ্বের অনেক অনেক বিখ্যাত, গুরুত্বপূর্ণ লোক হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাবার সংবাদ প্রায়ই পত্রিকায় চোখে পড়ে। আমার বুঝে আসে না, প্রতিনিয়ত অসংখ্য সুখী, বিত্তশালী ও সফল মানুষ আমাদের চোখের সামনে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যেতে দেখার পরও আমরা হৃদরোগের জন্য কেন একতরফাভাবে মানসিক অস্থিরতাকে দায়ী করি!


আসলেই পৃথিবীতে অনেক কিছু সহজে কাউকে বুঝিয়ে বলা সম্ভব হয় না বা যতো সহজ ও স্পষ্ট করেই বুঝিয়ে বলা হয়, অনেকে বুঝতে চান না, প্রচলিত ধারণা থেকে বের হয়ে আসতে পারেন না। বিশেষত কোনো ব্যাপক প্রচলিত বদ্ধমূল ধারণা ভুল প্রমাণ করতে গেলে বিষয়টা আরো বেশি কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। মানুষ কথায় কথায় পাল্টা যুক্তি দাঁড় করায়। এক্ষেত্রে অনেকে আমার কথাকে সম্পূর্ণ নাকচ করে দিয়ে বলবে, “ঠিক আছে, ‘কিছু কিছু’ সুখী মানুষও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়। কিন্তু এরাও আক্রান্ত হয় সেই টেনশনের কারণেই। কারণ সুখী মানুষরাও অনেক সময় মানসিক অস্থিরতায় ভোগে। বিপদাপদ সবার জীবনেই কমবেশ থাকে। সুতরাং ধনী বা দরিদ্র, সুখী বা অসুখী সবার ক্ষেত্রেই হৃদরোগের কারণ একটাই- মানসিক অস্থিরতা।”


মানসিক অস্থিরতা বা টেনশনকে যারা এভাবে একতরফাভাবে হার্ট অ্যাটাকের জন্য দায়ী মনে করেন, তাদের নিকট প্রশ্ন- ১. যেসব লোক শারীরিক পরিশ্রমের পেশায় নিয়োজিত, বছরের পর বছর ধরে নিয়মিত দৈনিক চার-পাঁচ ঘন্টা বা তার চেয়ে বেশি সময় ঘামঝরানো শারীরিক পরিশ্রম করে আসছেন, তাদের কাউকে কখনো হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হতে দেখা যায়? ২. তাদের কারো জীবনে কি তাহলে কোনো টেনশন বা মানসিক অস্থিরতা নেই?


আমার মনে হয়, কোনো সচেতন মানুষই প্রথম প্রশ্নটির উত্তরে ‘হ্যাঁ’ বলতে পারবেন না এবং দ্বিতীয় প্রশ্নটির উত্তরে ‘নেই’ বলতে পারবেন না।


বরং আমার ছোট্ট পর্যবেক্ষণে মনে হয়, জীবনে অভাব, বিপদ, দুঃখ, হতাশা তেমন একটা নেই, এমন সুখী মানুষগুলোই হৃদরোগে আক্রান্ত হয় বেশি বেশি। অন্য যারা আক্রান্ত হয়, তারা টেনশনে আক্রান্ত হয় বলে বাহ্যিক দৃষ্টিতে মনে হলেও টেনশন তাদের হৃদরোগের জন্য প্রত্যক্ষভাবে দায়ী নয়।


প্রশ্ন হচ্ছে- ১. তাহলে হৃদরোগের প্রত্যক্ষ কারণ কী? ২. জীবনে অভাব, বিপদ, দুঃখ, হতাশা তেমন একটা নেই, এমন সুখী মানুষরা কেন বেশি বেশি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়? এরা তো বরং হৃদরোগ থেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ থাকারই কথা, কারণ তেমন কোনো টেনশনে এদের পড়তে হয় না?


‘টেনশনে কি হৃদরোগ বা হার্ট অ্যাটাক হয়?’ প্রশ্নটির উত্তর নিয়ে অনেক কথা বলা হলো। তবু হয়তো অনেকে আমার উত্তরে সন্তুষ্ট হতে পারেননি। অসংখ্য শক্তিশালী গবেষণা, অসংখ্য ডাক্তারের দ্ব্যর্থহীন বক্তব্য এবং সাধারণ মানুষের খুব কমন ধারণার বিপরীতে গিয়ে আমি এটা বলেছি এবং প্রমাণ করার চেষ্টা করেছি যে, হৃদরোগ বা হার্ট অ্যাটাক টেনশন বা মানসিক অস্থিরতার জন্যও হতে পারে, তবে মানসিক অস্থিরতা রোগটির মূল বা প্রত্যক্ষ কারণ নয়। রোগটির মূল কারণ হচ্ছে, কায়িক শ্রম থেকে দূরে থাকা বা কায়িক শ্রম কম করা, আরামপ্রিয় লাইফস্টাইল, মুটিয়ে যাওয়া, মনের চাহিদামতো খাওয়া, সর্বোপরি শরীরে চর্বি/কোলেস্টেরল বাড়তে দেয়া ইত্যাদি।


যেসব লোক দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিত পর্যাপ্ত কায়িক শ্রম বা ব্যায়াম করে, শরীর হালকা রাখে, পরিমিত খায়, তারা যত টেনশন করুক, হৃদরোগে আক্রান্ত হয় না। পক্ষান্তরে যারা শারীরিক পরিশ্রমের কাজে জড়িত নয় বা খুব কম জড়িত, স্থূল, খাওয়া-দাওয়ায় সংযম অবলম্বন করে না, শরীরে চর্বি বাড়তে দেয়, তারা টেনশন না করলেও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়। এজন্য দেখা যায়, অনেক মানুষ, ব্যক্তিগত জীবনে সুখী, তেমন কোনো মানসিক অস্থিরতা নেই, তারাও প্রায়ই হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়। অনেকে তাৎক্ষণিক মারা যায়, অনেকে চিকিৎসা পর্যন্ত বেঁচে থাকার সুযোগ পেলেও বাকি জীবন কাটাতে হয় হৃদরোগ নিয়ে। এদের প্রায় সবাই শেষে হৃদরোগেই মারা যায়। অর্থাৎ হৃদরোগের প্রত্যক্ষ কারণ পর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রম না করা, আরামপ্রিয় জীবন যাপন করা, বেশি খাওয়া, স্থূল হওয়া এবং চর্বি বাড়তে দেয়া।


যারা নিয়মিত পর্যাপ্ত শারীরিক কার্যক্রম করে না, শরীরে চর্বি বাড়তি হতে দেয়, তারা টেনশন করলে অনেক সময় হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে যায়। এই হার্ট অ্যাটাকের জন্য আমরা তখন সরাসরি টেনশনকে দায়ী করে বসি। মনে করি টেনশনই লোকটি হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হবার মূল কারণ। কিন্তু আমরা দেখি না অসংখ্য মানুষ যে টেনশন না করেও হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়। আমরা লক্ষ্য করি না, টেনশনে যাদের হার্ট অ্যাটাক হয়, তারা শারীরিক পরিশ্রমের সাথে তেমন একটা সম্পর্ক রাখতো না, তাদের শরীরে চর্বির মাত্রা বেশি ছিল।


শারীরিক পরিশ্রহীনতার কারণে চর্বি বেড়ে গিয়ে রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি করার কারণেই মানুষের হার্ট ব্লক্ড হয়ে যায়। এই হার্ট ব্লক্ড হওয়াকেই হার্ট অ্যাটাক বলা হয়, একে হার্ট ফেলিউরও বলা হয়। এজন্য নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করার কারণে যাদের শরীরে বাড়তি চর্বি হতে পারে না, তারা কোনো কিছু নিয়ে অতিমাত্রায় টেনশন করলেও হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয় না। টেনশন যে হার্ট অ্যাটাকের প্রত্যক্ষ কারণ নয়, এটা তার সবচেয়ে উৎকৃষ্ট প্রমাণ।


তবু বিষয়টা পরিষ্কারভাবে বুঝতে যাদের কষ্ট হচ্ছে, তাদের জন্য একটি মর্মস্পর্শী প্রতিবেদন উল্লেখ করছি, যা ছাপা হয়েছে বাংলাদেশ প্রতিদিনে ৮ জানুয়ারি ২০১৮ তারিখে ‘হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ছে প্রবাসীদের, আমিরাতেই এক বছরে ২৩১ জনের মৃত্যু’ শিরোনামে। প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের ইউ-এ-ই প্রতিনিধি কামরুল হাসান জনি।


প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘নিজ দেশের ভূখন্ড ছেড়ে জীবন-জীবিকার তাগিদে পরবাসে ঠাঁই নেন প্রবাসীরা। দেশের মায়া ত্যাগ করে হাজার মাইল দূরে শ্রম বিক্রি করা এই প্রবাসীরা স্বপ্ন পূরণের আশায় কাজ করেন বছরের পর বছর। সবারই লক্ষ্য থাকে অর্থনৈতিক স্বাবলম্বী হয়ে ফিরে আসবেন দেশে। অথচ শ্রম বিক্রিতে ব্যস্ত প্রবাসীদের কর্মক্ষমতার পাশাপাশি কমতে থাকে আয়ুষ্কাল।


ল্যাম্পপোস্টের আলো দেখে যাদের ভোর হয়, তাদের চোখে রাতও নামে ল্যাম্পপোস্টের আলোতে। মাঝখানে দিনের আলো শুধুই কর্মযজ্ঞে ব্যস্ততা। ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা কর্মস্থলে ব্যয় করে যখন তারা ঘরে ফেরেন তখনই শুরু হয় নানামুখী চিন্তা। কখনো পারিবারিক চিন্তা, কখনো ভিসার মেয়াদ উর্ত্তীণ হয়ে যাবার চাপ, ভিসা পরিবর্তনের খরচ জোগাতে হিমশম খাওয়া, কখনো বা কোম্পানি বন্ধ হয়ে দেশে ফেরার ভয়। নিদ্রাহীন এসব প্রবাসীদের পেয়ে বসে হৃদরোগ। নিয়তির বিধানে কারো কারো জীবন অবসান ঘটে যায় নিষ্ঠুর পরবাসে। 


হৃদরোগ, সড়ক দুর্ঘটনা, কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা, হত্যাসহ প্রতিবছরেই মৃত্যুর মিছিলে যোগ হয় হাজারও প্রবাসীর নাম। এ তালিকা লম্বা হয় হৃদরোগে আক্রান্ত প্রবাসীদের নামে। বয়সের ভারে নয় বরং তাজা যুবকরাও হৃদরোগে ঝরে যান অকালে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবি ও দুবাইয়ে গত এক বছরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে যথাক্রমে শতকরা ৭৭ ভাগ ও ৪৯ ভাগ প্রবাসী মারা গেছেন।


আবুধাবিস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম) ড. মোহাম্মদ মোকসেদ আলী জানান, গত বছর আবুধাবী ও এর অধীনস্থ শহরগুলোতে বিভিন্নভাবে মারা গেছেন ১৪৪ জন প্রবাসী। তাদের মধ্যে ১১১ জনই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।


তিনি আরও বলেন, ‘প্রবাসীরা মাত্রাতিরিক্ত দুশ্চিন্তার কারণে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। বিশেষ করে ভিসার মেয়াদ শেষে নবায়নের চিন্তা, ভালো কর্মসংস্থান না পাওয়া, মাস শেষে ঠিক মত বেতন না পাওয়াসহ পারিবারিক নানা দুশ্চিন্তা তাদের মৃত্যুর কারণ হতে পারে।’


দুবাই ও উত্তর আমিরাত বাংলাদেশ কনসুলেটের প্রথম সচিব (শ্রম) একেএম মিজানুর রহমান জানান, ‘দুবাই বাংলাদেশ কনসুলেটের অধীনস্থ শহরগুলোতে গত বছর বিভিন্নভাবে ২৪৪ জন প্রবাসীর মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে হৃদরোগে মারা গেছেন ১২০ জন, সাধারণ মৃত্যু ৫২ জনের, সড়ক দুর্ঘটনায় ৪০ জন, কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় ১৩ জন, আত্মহত্যা-হত্যা মিলে ১৯ জন প্রবাসীর মৃত্যু হয়েছে।’ 


এছাড়াও সৌদি আরবের জেদ্দা কনসুলেটের দেয়া তথ্য অনুযায়ী গত বছর বিভিন্নভাবে সেখানে মারা যান ৮৩০ প্রবাসী বাংলাদেশি। তাদের মধ্যে হৃদরোগ ও সাধারণ মৃত্যু ৫৯৯ জন, সড়ক দুর্ঘটনায় ১৭১ জন, আত্মহত্যা ১৯ জন ও অন্যান্য ৪১ জনের মৃত্যু হয়। বাহরাইন মানামা বাংলাদেশ কনসুলেটের তথ্য অনুযায়ী সেখানে গত বছর বিভিন্নভাবে ১১৩ জন প্রবাসীর মৃত্যু হয়, এতে হৃদরোগ ও সাধারণ মৃতের সংখ্যা ৮২ জন। 


প্রবাসীদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়া প্রসঙ্গে রাস আল খাইমা ফজল ক্লিনিকের পরিচালক ডাক্তার ফজলুর রহমান বলেন, ‘প্রবাসে যারা সিটিং চাকরি করে তাদের মধ্যে বেশির ভাগ হৃদরোগের ঝুঁকি থাকে। বর্তমানে যারা সাধারণ শ্রমজীবী তাদের মধ্যেও হৃদরোগে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি বাড়ছে। কারণ তারা দেশ থেকে অনেক দূরে থাকে, তাদের মধ্যে সারাক্ষণ দেশের পরিবার পরিজনের জন্যে চিন্তা কাজ করে। আর্থিক অস্বচ্ছলতাও এর জন্যে দায়ী। তবে চর্বিযুক্ত খাবার ও সিগারেট সেবনের প্রবণতাও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।’


তিনি আরও বলেন, ‘হৃদরোগ ও মৃত্যু ঝুঁকি কমাতে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন, অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার বাদ দেয়া, নিয়মিত ব্যায়াম ও বিনোদনের ব্যবস্থা করা, ব্লাড প্রেসার ও ডায়বেটিস চেক করাসহ প্রবাসীদের সচেতন করতে কমিউনিটি সংগঠনগুলোর উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন। সপ্তাহে বা মাসে অন্তত একটি করে হলেও সচেতনতামূলক সেমিনার, প্রশ্ন-উত্তর পর্ব করলেও প্রবাসীদের হৃদরোগের ঝুঁকি কিছুটা কমে আসতে পারে।’


আপাতদৃষ্টিতে প্রতিবেদনটি হৃদরোগ সম্পর্কে আমার বক্তব্যের পরিপন্থী। কারণ এখানেও হৃদরোগের জন্য কয়েক জায়গায় মানসিক অস্থিরতাকে দায়ী বলে মতামত দেয়া হয়েছে। কিন্তু তবু প্রতিবেদনটি আমার বক্তব্যকে কিভাবে সমর্থন করে?


এখানে মূলত হৃদরোগের কারণ সম্পর্কে তিনজনের মতামত আছে। প্রথম জন হলেন প্রতিবেদনটির প্রতিবেদক। তাঁর মতে, নানা রকম দুশ্চিন্তার কারণে প্রবাসীরা হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছে ব্যাপকহারে। দ্বিতীয় জন হলেন আবুধাবিস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম) ড. মোহাম্মদ মোকসেদ আলী। তাঁর মতেও মাত্রাতিরিক্ত দুশ্চিন্তার কারণে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান প্রবাসীরা। তৃতীয় জন হলেন রাস আল খাইমা ফজল ক্লিনিকের পরিচালক বাংলাদেশি চিকিৎসক ফজলুর রহমান। তাঁর বক্তব্য হলো, প্রবাসে যারা সিটিং জব করেন, তাদের হৃদরোগের ঝুঁকি বেশি। তবে বর্তমানে যারা সাধারণ শ্রমজীবী তাদের মধ্যেও হৃদরোগে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি বাড়ছে। এরপর তিনি হৃদরোগের ঝুঁকি কমানোর জন্য পরামর্শ দেন খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করতে, অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার বাদ দিতে, নিয়মিত ব্যায়াম ও বিনোদনের ব্যবস্থা করতে, ব্লাড প্রেসার ও ডায়বেটিস চেক করতে।


হৃদরোগের কারণ সম্পর্কে একজন প্রতিবেদক ও দূতাবাস কর্মকর্তার বক্তব্য মতে, রোগটি দুশ্চিন্তার কারণে হয়ে থাকে। আর একজন ডাক্তার, যিনি প্রবাসেই থাকেন, প্রবাসী মানুষদেরকে সব সময় কাছ থেকে দেখেন, হয়তো অনেক প্রবাসী বাংলাদেশির চিকিৎসাও করেন, তাঁর মতে, প্রবাসে যারা সিটিং (বসে বসে) চাকরি করে তাদের মধ্যে বেশির ভাগ হৃদরোগের ঝুঁকি থাকে। এখন প্রশ্ন, কার কথা সঠিক হতে পারে?


ডাক্তার ফজলুর রহমান ‘বসে বসে চাকরি করা’ প্রবাসীরা বেশি হৃদরোগে আক্রান্ত হবার কথা বলার পর সাধারণ শ্রমজীবিরাও হৃদরোগে আক্রান্ত হবার যে কথা বললেন, তা কেন বললেন? হয়তো এ কারণে যে, পৃথিবীর সবাই টেনশনকেই হৃদরোগে আক্রান্ত হবার জন্য দায়ী মনে করেন। ব্যাপক প্রচলিত এ ধারণা থেকে তিনিও পুরোপুরি বের হয়ে আসতে পারেননি হয়তো। অথবা সাধারণ শ্রমজীবি যাদেরকে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হতে দেখেছেন, তারা যে পরিমাণ পরিশ্রম করে, তার চেয়ে বেশি আরাম করে, খায়। শ্রমের তুলনায় আরাম বেশি হলে, খাওয়া বেশি হলে, তেল-চর্বিজাতীয় খাবার বেশি খেলে মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হতেই পারে। কিন্তু পরিশ্রম বেশি হলে এবং যে পরিমাণ পরিশ্রম মানুষের শরীরে চর্বি-কোলেস্টেরল জমতে বাধা দেয়, সে পরিশ্রম মানুষকে হৃদরোগ থেকেও রক্ষা করবেই। কারণ হৃদরোগ বা হার্ট অ্যাটাক হয় অতিরিক্ত চর্বির কারণে হার্টে রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্থ হবার কারণেই।


তবে সাধারণ শ্রমজীবীদের মধ্যেও হৃদরোগে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি বাড়ার কথা বলার পরও ডাক্তার ফজলুর রহমান কিন্তু হৃদরোগের ঝুঁকি এড়ানোর উপায় হিসেবে দুশ্চিন্তামুক্ত থাকার কথা না বলে বরং বলেছেন খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করতে, অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার বাদ দিতে, নিয়মিত ব্যায়াম ও বিনোদনের ব্যবস্থা করতে, ব্লাড প্রেসার ও ডায়াবেটিস চেক করতে। এতে বুঝা যায়, তিনি হৃদরোগের জন্য বেশি দায়ী মনে করেন ব্যায়াম বা পরিশ্রম না করা, অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখা ইত্যাদিকে, টেনশনকে নয়।


একটা বিষয় লক্ষ্যণীয়, ডাক্তার ফজলুর রহমান কিন্তু ধূমপানকে হৃদরোগের জন্য দায়ী মনে করেন না। কারণ তিনি দেখেছেন, যারা বসে বসে কাজ করে, তারাই বেশি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়। আরেকটা বিষয় হচ্ছে, বসে বসে যারা কাজ করে, তারা বেশি বেশি হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ এই তিনটি রোগে আক্রান্ত হয়, ক্যান্সার এবং স্ট্রোকে নয়- বিষয়টা এই প্রতিবেদন এবং ডাক্তার ফজলুর রহমানের বক্তব্য থেকে সহজে বুঝা যায়।


এরকম বিষয় নিয়ে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় ১০ মার্চ ২০১৮ তারিখের দৈনিক সমকালে ‘মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশিদের হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ছে’ শিরোনামে।


এরপরও হৃদরোগের প্রকৃত কারণ সম্পর্কে আমার বক্তব্য যাদের মানতে কষ্ট হয়, তাদেরকে আবারও বলছি, তারা তাদের পরিচিত বা খুব কাছের যারা অতিসম্প্রতি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে দেখুন। দেখবেন, তাদের মধ্যে শতভাগ লোক শারীরিক পরিশ্রম থেকে দূরে থাকতেন বা শারীরিক পরিশ্রম করলেও তা পরিমাণে অল্প ছিল। এদের অধিকাংশকেই দেখবেন মোটা ছিল, অনেককে দেখবেন খাওয়া-দাওয়ায় সংযম ছিল না।


এরপর দেখুন, পরিচিত যারা শারীরিক পরিশ্রমের পেশায় দীর্ঘদিন ধরে নিযুক্ত, তাদের কেউ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছে কিনা? যেমন, পায়েচালিত রিকশা যারা দীর্ঘদিন ধরে চালায়, তারা। দেখবেন তারা অন্য কোনো রোগে আক্রান্ত হলেও হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস এই তিনটি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে না কখনো। আশা করি খুব কাছ থেকে বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করলে এটা সবার নিকট স্পষ্ট হবে, হৃদরোগের মুখ্য কারণ টেনশন নয়, বরং শারীরিক পরিশ্রমহীন জীবন যাপন করা। যারা শারীরিক পরিশ্রমহীন জীবন যাপন করেন বা পরিশ্রম করলেও তা পরিমাণে অল্প হয়, তারা টেনশন না করলেও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। পক্ষান্তরে শারীরিক পরিশ্রমে যাদের দিন কাটে, তারা যত টেনশন করুক, হৃদরোগ বা হার্ট অ্যাটাক তাদের কখনোই স্পর্শ করতে পারে না।


দশ বছরের বেশি সময় ধরে পেশাদার ফুটবল, ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন ইত্যাদি শারীরিক শ্রমনির্ভর খেলা যারা খেলে যাচ্ছেন, তাদের কারো জীবনে কি টেনশনের কিছু নেই? দেখবেন, তারা কেউই হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয় না কখনো। হার্ট অ্যাটাক বা হৃদরোগের মূল কারণ যে শারীরিক পরিশ্রমহীনতা, তার এর চেয়ে বড় প্রমাণ আর কী হতে পারে!


যাদের শরীরে যদি চর্বির পরিমাণ বেশি, পাশাপাশি শারীরিক পরিশ্রমের কোনো কাজ বা ব্যায়াম থেকেও দূরে থাকে, তারা টেনশন না করলেও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। হয়তো কেউ দু’দিন আগে, কেউ দু’দিন পরে। হার্ট অ্যাটাক থেকে বাঁচতে হলে টেনশন থেকে দূরে থাকার চেয়ে আলসেমি, আরামপ্রিয়তা বা শারীরিক নিষ্ক্রীয়তা থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন, নিশ্চিতভাবে রক্ষা পাবেন হার্ট অ্যাটাক থেকে।


মানুষ যতদিন দৈনিক অন্তত এক ঘন্টা শারীরিক পরিশ্রম করবে, ততদিন মানুষ হৃদরোগ থেকে নিরাপদ থাকবে। যদি কখনো কোনো বিপদে/রোগে আক্রান্ত হয়ে মানুষ পুরোপুরি বিশ্রামে চলে যায়, শারীরিক পরিশ্রম করতে অক্ষম হয়ে পড়ে, শুধু তখন আক্রান্ত হতে পারে হৃদরোগে।


এ লেখায় বেশ কয়েকবার উল্লেখ করা হয়েছে, বর্তমান পৃথিবীতে হৃদরোগে মৃত্যুর হার অন্য সব রোগের চেয়ে বেশি। হৃদরোগের কারণ সম্পর্কে প্রচলিত বিভ্রান্তিগুলো দূর করা না গেলে এবং হৃদরোগের প্রকৃত কারণ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন না করলে বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ মানুষের মহামূল্যবান জীবন হৃদরোগ কেড়ে নিতেই থাকবে অকালে; মানুষ কখনো হৃদরোগের মতো বিধ্বংসী রোগ থেকে নিস্তার পাবে না এবং দিন যত যাবে, হৃদরোগ মানুষের গড় আয়ুকে সংক্ষিপ্ত থেকে সংক্ষিপ্ততম করতেই থাকবে।


অবাক লাগে, শুধু সাধারণ মানুষ নয়, অনেক ডাক্তারও অবলীলায় মানসিক উত্তেজনাকে হার্ট অ্যাটাকের সবচেয়ে বড় কারণ বলে প্রচার করেন। দু’একটা উদাহরণ দেখুন:


‘মানসিক উত্তেজনা থেকে হার্ট অ্যাটাক’ শিরোনামে দৈনিক যুগান্তরে ২৯ অক্টোবর ২০১৬ তারিখে প্রকাশিত একটি লেখায় হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ সাইফউল্লাহ বলেন, ‘প্রাচীনকাল থেকেই হৃৎপিন্ডের সঙ্গে মনের সম্পর্কের কথা বলা হয়ে আসছে। মানসিক উৎকণ্ঠা বা উত্তেজনার সময় দ্রুত হৃৎস্পন্দন, বুক ধড়ফড় করা বা বুকে ব্যথা অনুভূত হয়। অনুভূতির সঙ্গে হৃৎপিন্ডের নিবিড় সম্পর্কের কথা জানা যায়। জীবনের কোনো উত্তেজনাকর বা সংঘাতময় পরিস্থিতিতে কোনো কোনো মানুষ হঠাৎ হৃদরোগ বা হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করতে পারে।


সাময়িক মানসিক উত্তেজনা শরীর সহজেই অ্যাডজাস্ট করে নেয়। একটানা মানসিক উত্তেজনা ও দুশ্চিন্তা হৃদরোগ বা হার্ট অ্যাটাকের একটি ঝুঁকিপূর্ণ উপাদান।...’


২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখের বাংলাদেশ প্রতিদিনে ‘মেন্টাল টেনশন ও হার্ট অ্যাটাক’ শিরোনামে একটি লেখায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল ইউনিভার্সিটির কার্ডিওলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. আবু সিদ্দিক বলেন, ‘মনোবিজ্ঞানীরা সব মানুষকে দুই ধরনের ব্যক্তিত্বে বিভাজন করেছেন। যারা অত্যন্ত প্রতিযোগী, পরিশ্রমী, উচ্চাকাক্সক্ষী তাদের টাইপ 'এ' এবং যারা অল্পে সন্তুষ্ট, টেনশনমুক্ত, ঝামেলামুক্ত জীবন পছন্দ করেন তাদের টাইপ 'বি' বলে অভিহিত করেছেন। গবেষণায় দেখা গেছে, টাইপ 'এ'-র লোকেরা অধিকতর পরিমাণে মনপীড়নে ভোগেন এবং এদের মাঝে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা টাইপ 'বি'-র চেয়ে দ্বিগুণ বেশি। যদিও মনপীড়নের সঙ্গে হার্ট অ্যাটাক বা করোনারি হৃদরোগের সরাসরি সম্পর্ক নির্ণয় করা কঠিন। তবুও এর সঙ্গে যদি করোনারি হৃদরোগের অন্যান্য কারণসমূহ যেমন- রক্তে কোলেস্টেরলের আধিক্য, ধূমপান, উচ্চরক্তচাপ ইত্যাদি যোগ হয় তবে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা বহুগুণ বৃদ্ধি পায়।’


লেখা দু’টিতেই টেনশন বা মানসিক উত্তেজনাকে হার্ট অ্যাটাকের জন্য ‘সরাসরি’ দায়ী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এরকম আরো অনেক ডাক্তারের লেখায় এভাবে টেনশনকে হার্ট অ্যাটাকের প্রত্যক্ষ কারণ বলে দায়ী করা হয়। আমার মনে হয়, এভাবে টেনশনকে হার্ট অ্যাটাকের জন্য দোষারোপ করে আমরা হার্ট অ্যাটাকের প্রকৃত কারণ সম্পর্কে মানুষকে বিভ্রান্তিতে ফেলে মানুষের ক্ষতিই করছি।


আমরা জানি, টেনশন কেউ ইচ্ছাকৃত করে না। মানুষের জীবনে কোনো সমস্যা উদয় হলে টেনশন এমনিতেই এসে যায়। টেনশনকে অহেতুক হার্ট অ্যাটাকের জন্য দায়ী করে আমরা আমাদের জন্য হার্ট অ্যাটাক থেকে বাঁচার কোনো সুযোগই রাখছি না। কারণ টেনশন প্রতিহত করা কোনো মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। জীবন যতদিন থাকবে, বিপদ বা সমস্যা ততদিন থাকবেই কমবেশ। তাই মানুষ যখন দেখে, প্রায় সব ডাক্তার টেনশনকে হার্ট অ্যাটাকের জন্য দায়ী করছে, তখন যারা কোনো কিছু নিয়ে টেনশনে থাকে, তারা ভাবে আমার হার্ট অ্যাটাক হতে পারে যে কোনো সময়। তাই সে হার্ট অ্যাটাককে নিজের অপরিহার্য নিয়তি বলে ধরে নেয়। হার্ট অ্যাটাক থেকে বাঁচার আশা ছেড়ে দেয়। হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধের কোনো উপায় খুঁজে পায় না। অথচ হার্ট অ্যাটাক একটি প্রতিরোধযোগ্য রোগ।


তবে যে দু’টি লেখার অংশ এখানে উল্লেখ করা হলো, তার দ্বিতীয় লেখাটিতে শেষে বলা হয়, ‘যদিও মনপীড়নের সঙ্গে হার্ট অ্যাটাক বা করোনারি হৃদরোগের সরাসরি সম্পর্ক নির্ণয় করা কঠিন। তবুও এর সঙ্গে যদি করোনারি হৃদরোগের অন্যান্য কারণসমূহ যেমন- রক্তে কোলেস্টেরলের আধিক্য, ধূমপান, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি যোগ হয় তবে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা বহুগুণ বৃদ্ধি পায়।’ দ্বিতীয় লেখাটির এ বক্তব্য মূলত প্ররোক্ষভাবে এটাই স্বীকার করে, মনপীড়ন বা টেনশনের কারণে হার্ট অ্যাটাক হয় না, হার্ট অ্যাটাক হয় রক্তে কোলেস্টেরলের আধিক্য, ধূমপান, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি কারণে। যেহেতু প্রথমে এটা স্বীকার করে নেয়া হয়েছে, ‘মনপীড়নের সাথে হার্ট অ্যাটাকের সরাসরি সম্পর্ক নির্ণয় করা কঠিন’, তাই পরের অংশ (যদি মনপীড়নের সাথে রক্তে কোলেস্টেরলের আধিক্য, ধূমপান, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি যোগ হয় তবে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা বহুগুণ বৃদ্ধি পায়) থেকে আমরা ধরে নিতে পারি সেগুলোই মূলত হার্ট অ্যাটাকের কারণ।


দ্বিতীয় লেখাটির এ বক্তব্যে হার্ট অ্যাটাকের সাথে টেনশন ও কোলেস্টেরলের সম্পর্কের কথা বলা হয়েছে উল্টো দিক থেকে। এখানে বলা হয়েছে, টেনশনে যারা ভোগে, তাদের শরীরে যদি কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি হয়, তখন সে হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হতে পারে। মূলত টেনশনকেই এখানে ধরা হয়েছে হার্ট অ্যাটাকের মুখ্য কারণ আর কোলেস্টেরলের আধিক্যকে ধরা হয়েছে গৌণ কারণ হিসেবে। হার্ট অ্যাটাকের সাথে টেনশন ও কোলেস্টেরলের প্রকৃত সম্পর্ক হচ্ছে, যখন মানুষের শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি থাকে, তখন টেনশন করলে মানুষ হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হতে পারে। তাই কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি থাকা হচ্ছে হার্ট অ্যাটাকের মুখ্য কারণ আর টেনশন হচ্ছে গৌণ কারণ।


এখানে ধূমপানকেও হার্ট আ্যটাকের একটি কারণ বলে উল্লেখ করা হয়। ধূমপান সত্যিই হার্ট অ্যাটাকের জন্য দায়ী কিনা, তা উপরে আলাদা অধ্যায়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আর উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্তদের হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হবার কথা এখানে যা বলা হয়েছে, তা একেবারে সঠিক। আমার এই লেখায় আগেই বলা হয়েছে, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগ- এ তিনটি রোগ সমগোত্রীয়, একই সূত্রে গাঁথা। কারো এ তিনটি রোগের কোনো একটি হলে যদি মানুষ তা নিয়ন্ত্রণ না করে, তাহলে তাকে অন্য দু’টিও আক্রমণ করে বসে। যারা উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত, তারাই বেশি হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়। এজন্য কেউ উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হলে যদি নিয়মিত উচ্চ রক্তচাপের ঔষধ গ্রহণ বা ব্যায়াম/কায়িক শ্রম করে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ না করেন, তারা যে কোনো সময় হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে বসেন। এরকম ভুরি ভুরি ঘটনা বিশ্বব্যাপী প্রতিনিয়ত সংঘটিত হচ্ছে।


জার্মানীর জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের (বাংলা) ওয়েবসাইটে ১৪.১০.২০১৭ তারিখে প্রকাশিত ‘ভারতে তরুণ প্রজন্মের পুরুষদের মধ্যে হৃদরোগ বিশ্বে সর্বাধিক’ শিরোনামের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘সব হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ এ বিষয়ে একমত যে, নিয়মিত শরীরচর্চা এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস হৃদরোগ ঠেকানোর অন্যতম উপায়।’


সেখানে আরো বলা হয়, ‘তরুণ প্রজন্মের মধ্যে, অর্থাৎ তিরিশের আশপাশে যাঁদের বয়স, তাঁদের মধ্যে ইদানিং দেখা যাচ্ছে, হৃদরোগের হার ক্রমশই বাড়ছে। এর কারণ কী? হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ দেবব্রত রায় ডয়চে ভেলেকে এই প্রসঙ্গে বললেন, এর সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো, লাইফ স্টাইল. কারণ, ছোট থেকেই বাচ্চারা খেলাধুলা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। বাড়ছে ফাস্ট ফুড খাওয়া। এরজন্য মোটা হচ্ছে। ওজন বাড়ছে কিশোর বয়স থেকেই। অল্প অল্প করে রক্তে বাড়ছে শর্করা, বাড়ছে কোলেস্টরেল। এর ফলে ধমনির দেওয়ালে কিছু কিছু খারাপ চর্বি জমা হয়। এবার রক্ত স্রোতে যদি একটা ঘূর্ণন তৈরি হয়, তখন সেটা ফেটে গেলে তৈরি হয় জমাট বাঁধা একটা রক্তের ঢেলা। সেটা থেকেই হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা। তখন ২৫-৩০ বছর বয়সেই হয় হার্ট অ্যাটাক।’ [https://www.dw.com/bn/a-40942842]


সবশেষে মানসিক চাপের সাথে হার্ট অ্যাটাকের সম্পর্ক নিয়ে বিবিসি বাংলায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন উল্লেখ করছি। ১০ ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখের বিবিসি বাংলায় ‘মানসিক চাপের সাথে হার্ট অ্যাটাকের সম্পর্ক নেই’ শিরোনামে গবেষণা প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ‘একটা সময় মনে করা হতো মানসিক চাপ, অবসাদ কিংবা অসুখী হলে মানুষের মৃত্যু হয়। কারণ মানসিক চাপে থাকলে সেটি হৃদপিন্ডের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং হার্ট অ্যাটাক হয়।


কিন্তু যুক্তরাজ্যের চিকিৎসা বিষয়ক সাময়িকী ল্যানস্যাটে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হচ্ছে অতীতের এই ধারনা ভুল ছিল এবং সেটি মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে।


যুক্তরাজ্য এবং অস্ট্রেলিয়ার গবেষকরা গত বারো বছর ধরে যৌথভাবে এই জরিপ চালিয়েছেন।


এই জরিপে উভয় দেশের ১০ লাখ নারীর মতামত নেয়া হয়েছে। এরপর সেটির ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে।


বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গবেষণায় যে বিষয়টি দেখার চেষ্টা হয়েছে তা হলো- মানুষ কতটা সুখী? সুখী হলেই কি মানুষ বেশি দিন বাঁচে?


যাদের উপর এই গবেষণা চালানো হয়েছে তাদের জিজ্ঞেস করা হয়েছিল- তাদের স্বাস্থ্যগত অবস্থা কেমন? তারা কি সুখী? তাদের মানসিক চাপ কতটা আছে? ইত্যাদি প্রশ্ন।


এই গবেষণা দলের অন্যতম সদস্য এবং অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গবেষক বলছেন, “মানুষ শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকলে অসুখী হয়। কিন্তু অসুখী হলে মানুষ মারা যায় না।” তিনি বলছেন মানুষের মৃত্যুর সাথে অসুখী হবার কোন সরাসরি সম্পর্ক পাওয়া যায়নি।


এই গবেষণা দলের আরেকজন সদস্য এবং যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার রিচার্ড পিটো বলেন, ১০ বছর ধরে গবেষণা চালানোর সময়টিতে তারা লক্ষ্য করেছেন যারা কম ধূমপান করেন তাদের কম বয়সে মারা যাবার সম্ভাবনা দ্বিগুণ।


আর যারা বেশি ধূমপান করেন তাদের কম বয়সে মারা যাবার সম্ভাবনা তিনগুণ। কিন্তু দশ বছর ধরে যারা মানসিক চাপে ভুগছেন কিংবা অসুখী রয়েছেন তারা মারা যাননি।


গবেষক মি: পিটো বলেন, “কিন্তু অনেকেই মনে করে মানসিক চাপে থাকলে কিংবা অসুখী হলে হার্ট এ্যাটাক হয়। এটা সত্য নয়। আসলে অনেক মানুষ এটা ভাবতে পছন্দ করে।”


তবে গবেষকরা বলছেন কেউ যদি শৈশবে অসুখী থাকে তাহলে সেটি তার উপর দীর্ঘমেয়াদে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।’


[https://www.bbc.com/bengali/news/2015/12/151210_mental_health?fbclid=IwAR1La57AgggYfkW66IiIyk5ixax4zhWlZROoRalI0cNfZMxuY6VhBR2A_jo]


এই গবেষণা প্রতিবেদনে স্পষ্ট করে বলা হয়, ‘অনেকেই মনে করে মানসিক চাপে থাকলে কিংবা অসুখী হলে হার্ট এ্যাটাক হয়। এটা সত্য নয়। আসলে অনেক মানুষ এটা ভাবতে পছন্দ করে।’


তবে গবেষণা-ফলাফলটির অন্য কিছু মন্তব্যের সাথে আমার ভিন্নমত রয়েছে। যেমন, এখানে বলা হয়েছে, ‘যারা কম ধূমপান করেন তাদের কম বয়সে মারা যাবার সম্ভাবনা দ্বিগুণ। আর যারা বেশি ধূমপান করেন তাদের কম বয়সে মারা যাবার সম্ভাবনা তিনগুণ।’ কিন্তু আমার এই লেখায় আমি ধূমপানের ক্ষতি সম্পর্কে আলাদা এক অধ্যায়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এটা প্রমাণ করার চেষ্টা করেছি, ধূমপানে মারাত্মক যেসব ক্ষতির কথা ব্যাপকভাবে বিশ্বব্যাপী প্রচার করা হয় সেসব ক্ষতির সাথে বাস্তবে ধূমপানের সম্পর্ক নেই। প্রকৃতপক্ষে ধূমপান করা-না করার সাথে দীর্ঘজীবন লাভ করা-না করার তেমন একটা যোগসূত্র নেই। অসংখ্য ধূমপায়ী চল্লিশ-পঞ্চাশ বছর ধরে ধূমপান করেও ধূমপানের কথিত ক্ষতিগুলো থেকে মুক্ত থাকে আবার অনেক অনেক মানুষ ধূমপান থেকে একশ’ হাত দূরে থেকেও ঐসব ক্ষতির সম্মুখীন হয়, ধূমপান করলে যেসব ক্ষতি হয় বলে প্রচার করা হয়। ধূমপান সম্পর্কীয় আমার ওই অধ্যায়টি পড়লে আশা করি সবাই বিষয়টা পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারবেন।


যাহোক, হার্ট অ্যাটাকের জন্য মানসিক উত্তেজনা যে সরাসরি দায়ী নয়, অন্তত এ কথাটা বিশ্বাস করতে এ গবেষণা প্রতিবেদনও সবাইকে সহায়তা করবে। আমরা নিজেরাও আমাদের আশেপাশে চোখ বুলিয়ে দেখলে পরিষ্কার বুঝতে পারবো, সুখী মানুষরাই, বিশেষ করে যেসব সুখী মানুষ সুখে থাকার পাশাপাশি আরামে থাকতেও পছন্দ করে, তারাই বেশি হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়। আর যাদের জীবনে মানসিক অস্থিরতা বেশি, তাদের মধ্যে যারা শারীরিক পরিশ্রম থেকে দূরে, তারাই বেশি হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়। বিষয়টা হাজার বার যাচাই করা হলেও একই ফল মিলবে। আশা করি হার্ট অ্যাটাকের কারণ সম্পর্কে অনর্থক কোনো কিছুকে দোষারোপ করে মানুষকে বিভ্রান্ত করা থেকে সবাই সতর্ক হবে।


বংশগতভাবেও কি মানুষ হার্ট  অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়?


শুধু উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিস নয়, হৃদরোগও যে বংশগত কারণে হতে পারে বলে কেউ মনে করে, তা রীতিমতো আমার ধারণার বাইরে ছিল। অবাক হয়ে গেলাম সেদিন একটি দৈনিক পত্রিকায় খোদ এক ডাক্তারের লেখায় এমন কথা পড়ে। ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ দৈনিক যুগান্তরের ‘সুস্থ থাকুন’ পাতায় ‘হার্ট ভালো রাখার টিপস’ শিরোনামে একটি লেখা ছাপা হয়, যা লিখেছেন ঢাকার উত্তরার শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের ডাক্তার সামিয়া তাসনীম। তিনি লিখেছেন, ‘উত্তরাধিকার সূত্রেও কেউ হৃদরোগে আক্রান্ত হতে পারেন।’


একসময় অধিকাংশ মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হতো ষাট-সত্তর বছর বয়সের পর। একজন লোক যদি ষাট বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয় বা মারা যায় এবং তার কোনো সন্তান পরে কখনো হৃদরোগে আক্রান্ত হয়, ধরে নেয়া হয়, লোকটির হৃদরোগ থাকাতেই তার সন্তানও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু এটা কি সম্ভব? সম্ভব নয়। কারণ-


১. লোকটি যখন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়, তার অনেক আগেই, যখন সে হৃদরোগমুক্ত ছিল, তখনই তার সন্তানটি তার স্ত্রীর গর্ভে আসে। তাহলে সন্তানের শরীরে তার শরীর থেকে এ রোগ কিভাবে সংক্রমিত হবে?


২. লোকটি ষাট বছর বয়সে পৌঁছার পরই তো তার শরীরে হৃদরোগ দেখা দেয়। ষাট বছরের আগে যদি সে হৃদরোগ ব্যতীত কোনো দুর্ঘটনা বা অন্য কোনো কারণে মারা যেতো, তখন কি তার সন্তান হৃদরোগ থেকে নিষ্কৃতি পেতো?


৩. সন্তানটি জন্মের পর থেকে চল্লিশ বছর যখন হৃদরোগমুক্ত ছিল, তখন বংশগত কারণটি কোথায় ছিল? বংশগত কারণে যেসব রোগ হয়, সেসব সাধারণতঃ জন্মের সময়েই সন্তান শরীরে করে পৃথিবীতে নিয়ে আসে। চল্লিশ বছর যখন সে সুস্থ ছিল, তখন এটা বলার কোনো সুযোগই থাকে না, রোগটি তার বংশগত কারণে হয়েছে।


৪. বিগত চার-পাঁচ দশক ধরে যারা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন, হৃদরোগে মারা গেছেন, তাদের মধ্যে এমন মানুষ খুঁজে বের করা কষ্টকর হবে, যার পূর্বপুরুষ কারো হৃদরোগ ছিল। এর প্রধান কারণ, চার-পাঁচ দশক বা তারও আগে মানুষের জীবন শ্রমসাধ্য সব কাজের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল বলে হৃদরোগ মানুষকে তেমন স্পর্শ করার সুযোগ পেত না। হৃদরোগের উপদ্রব শুরু হয় মানুষের জীবন থেকে কায়িক শ্রম দূরে সরে যেতে থাকার পর থেকে; মানুষ ব্যবসা আর চাকরিমুখী হয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা অফিসে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতে অভ্যস্ত হওয়ার পর থেকে; গাড়ি, লিফট, মেশিন এসব আরামের উপকরণ ব্যবহারে মানুষ অভ্যস্ত হবার পর থেকে; সর্বোপরি মানুষের শরীরে চর্বি-কোলেস্টেরল বৃদ্ধির সুযোগ পাবার পর থেকে।


তাই হৃদরোগকে বংশগত বলে আমরা প্রকারান্তরে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়া-না হওয়ার বিষয়টাকে নিয়তির উপরই ছেড়ে দিচ্ছি এবং হৃদরোগ থেকে আত্মরক্ষার উপায় খোঁজার গুরুত্ব হারিয়ে ফেলছি। বিশ্বব্যাপী মানুষ ব্যাপকহারে হৃদরোগে আক্রান্ত হবার এটা একটা প্রধান কারণ।


হার্ট অ্যাটাক এবং উচ্চ রক্তচাপের প্রত্যক্ষ কারণ


হৃদরোগকে হার্ট ব্লকেজও বলা হয়, এটা সবার জানা কথা। হার্ট ব্লকেজ কী? হার্ট বা হৃৎপিন্ড কেন ব্লক্ড হয়? কীসের দ্বারা ব্লক্ড হয়? এ প্রশ্নগুলোর উত্তরের মধ্যেই উপরের দু’টি প্রশ্নের উত্তর রয়েছে।


হৃৎপিন্ডের ধমনীতে কোলেস্টেরল বা চর্বি জমে স্বাভাবিক রক্ত চলাচল ব্যাহত হয়। ফলে হৃৎপিন্ডে অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায় এবং বুকে ব্যথাসহ হৃদরোগের নানা উপসর্গ দেখা দেয়। অনেকে প্রথম বার হার্ট অ্যাটাকেই মারা যায়। ভাগ্য সহায় থাকলে অনেকে চিকিৎসা পর্যন্ত বেঁচে থাকে।

হৃৎপিন্ডে এভাবে কোলেস্টেরল বা চর্বি বৃদ্ধি হওয়াজনিত কারণে রক্ত চলাচল ব্যাহত হওয়াই হার্ট ব্লকেজ। যেসব মানুষের শরীরে চর্বি জমতে পারে না, সব সময় শারীরিক পরিশ্রমের কাজে জড়িত থাকার কারণে, তাদের হৃৎপিন্ড তাই কোনো রকম ব্লকেজের সম্মুখীন হয় না। এরকম মানুষগুলো হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি থেকে সব সময় নিরাপদ থাকে। যে কোনো কারণে যতো মানসিক অস্থিরতা এদের জীবনে আসুক না কেন, এরা কখনো হার্ট ব্লকেজ বা হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয় না।


যেসব মানুষের শরীরে চর্বি বেশি, তারা কোনো রকম শারীরিক পরিশ্রমের সাথে সম্পর্ক না রাখলে বা কম রাখলে কোনো রকম টেনশন না করলেও হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়। শরীরে চর্বির পরিমাণ বেশি থাকা এবং শারীরিক পরিশ্রম না করাই হচ্ছে হার্ট অ্যাটাকের প্রত্যক্ষ কারণ। এই দু’টো বৈশিষ্ট্য যাদের, তারা শুধু টেনশন করলে নয়, বেশি আনন্দ করলেও হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হতে পারে। ২০১৮ সালে রাশিয়া বিশ্বকাপে গ্রুপপর্বে আর্জেন্টিনা-নাইজেরিয়া ম্যাচে খেলার একেবারে শেষ দিকে আর্জেন্টিনা যখন জয়সূচক গোল করে, তখন অতি আনন্দে জয়োল্লাস করতে গিয়ে আর্জেন্টিনার এক বাংলাদেশী সমর্থক চেয়ার থেকে নিচে পড়ে যান। এসময় তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন। পরে হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করে। ঘটনার পরদিন ২৭ জুন ২০১৮ তারিখের দৈনিক সমকালে সংবাদটি ‘জয়োল্লাস করতে গিয়ে আর্জেন্টিনা সমর্থকের মৃত্যু’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়। এসব মানুষ বেশি জোরে হাঁটলে বা বেশি পরিশ্রমের কোনো কাজ করলেও হাঁপিয়ে উঠে, কারো কারো তাৎক্ষণিক বুকব্যথা শুরু হয়ে যায় টেনশন না করলেও।


সুতরাং হার্ট অ্যাটাকের জন্য টেনশন প্রত্যক্ষভাবে দায়ী নয়। মানুষের শরীরে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেশি হলে যে কোনো সময় মানুষ হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হতে পারে, টেনশন করলেও, না করলেও। যদি দেখা যায় কোনো বিষয়ে বেশি টেনশন করার কারণে কেউ হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়, তখন টেনশনকে তার হার্ট অ্যাটাকের প্রত্যক্ষ কারণ বলা যাবে না। প্রত্যক্ষভাবে দায়ী হচ্ছে কোলেস্টেরল বেশি হওয়া এবং শারীরিক পরিশ্রমহীনতা। যেভাবে কারো শরীরে এলার্জি দেখা দেয়ার পর এমন কিছু খাবার এড়িয়ে চলতে হয় যেগুলো খেলে এলার্জি মারাত্মক রূপ ধারণ করে, কিন্তু সেসব খাবার খাওয়া তার এলার্জিতে আক্রান্ত হবার জন্য দায়ী নয়।


সুতরাং হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হবার জন্য টেনশন প্রত্যক্ষভাবে দায়ী নয়, প্রত্যক্ষভাবে দায়ী হচ্ছে, শরীরে চর্বি বা কোলেস্টেরল বাড়তে দেয়া, শারীরিক পরিশ্রম থেকে দূরে আরামে আরামে থাকা, মোটা হওয়া, বেশি বেশি খাওয়া ইত্যাদি। যদি সব কারণ বাদ দিয়ে শুধু একটি কারণকে দায়ী করতে হয়, তাহলে দায়ী করতে হবে পর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রম না করাকে। কারণ পর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রম না করলে মানুষ কম খেলেও শরীরে চর্বি জমে যায়।


ঠিক এরকম, যে বৈশিষ্ট্যের লোকগুলোর হার্ট অ্যাটাক হয়, একই বৈশিষ্ট্যের লোকেরই উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস হয়। এ সম্পর্কে পরে আরো বিস্তারিতভাবে আলাদা অধ্যায়ে আলোচনা করা হবে।


অধিকাংশ সময় দেখা যায়, যারা উচ্চ রক্তচাপে ভোগে, তারাই হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হন। মানসিক টেনশন এসব রোগে আক্রান্ত হবার জন্য প্রত্যক্ষভাবে দায়ী নয়। মানসিক টেনশনের সাথে এসব রোগের সম্পর্ক হচ্ছে, যেসব লোক শারীরিকভাবে স্থুল, ভোজনরসিক, আরামপ্রিয় বা কায়িক শ্রমহীন, শরীরে চর্বি-কোলেস্টেরল বেশি, তারা টেনশন করলে দ্রুত এসব রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। টেনশন না করলেও এসব রোগ থেকে রক্ষা পান না।


দু’টি বিষয় লক্ষ্য কর বিষয়টা আরো স্পষ্ট হবে- ১. আমাদের আশপাশে খুঁজলে দেখা যাবে, ব্যক্তিগত জীবনে যারা বেশ সুখী, কোনো বিষয় নিয়ে তেমন কোনো টেনশন নেই, পাশাপাশি শারীরিকভাবে স্থুল, খাওয়া-দাওয়ায় সংযম নেই, শারীরিক পরিশ্রমের কোনো কাজের সাথেও সম্পর্ক নেই, শরীর মেদ-চর্বিতে ভরপুর, তারা ব্যাপকহারে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ২. অন্যদিকে কায়িক পরিশ্রমের কাজই যাদের পেশা, অভাবের কারণে ভালো ভালো খেতে পারেন না সব সময়, শরীরে মেদ-চর্বি জমারও সুযোগ নেই, চিকন শরীর, এমন মানুষদের জীবনে যতো টেনশনেই থাকুক, উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট অ্যাটাক এবং ডায়াবেটিস থেকে এরা মুক্ত থাকে। এই দু’টি বিষয় একটু ভালোভাবে চিন্তা করলেই আশা করি সবাই রোগগুলোর প্রকৃত কারণ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পেয়ে যাবে।


মানুষের জীবনে কমবেশ টেনশন থাকেই। টেনশন নেই, এমন মানুষের সংখ্যা কম। উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ এসবে আক্রান্ত হবার জন্য নিয়মিত কায়িক শ্রম বা ব্যায়াম না করাকে দায়ী না করে টেনশনের ওপর সব দোষ চাপানো হলে এসব রোগের আক্রমণ ও ক্ষতি থেকে আমরা কখনোই নিরাপদ হতে পারবো না।


হার্ট অ্যাটাক, ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের প্রতিষেধক


শৈশবে যে রোগগুলোতে মানুষ বেশি বেশি আক্রান্ত হবার কথা জানতে জানতে বড় হয়েছি, সেগুলো হলো পোলিও, কলেরা, হাম, যক্ষ্মা, হুপিংকাশি, ডিপথেরিয়া, হাঁপানি ইত্যাদি। কিন্তু পরবর্তীতে দেখলাম এসব রোগের মধ্যে অনেকগুলোর প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হবার ফলে মানুষ সেগুলোতে আক্রান্ত হওয়া থেকে রক্ষা পাচ্ছে। কিন্তু বড় হয়ে নতুন নতুন কিছু রোগের সাথে পরিচিত হতে লাগলাম। যেমন: ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট অ্যাটাক, কিডনী বিকলতা, স্ট্রোক, এইডস ইত্যাদি। কিন্তু যখন দেখতাম আগের রোগগুলোর প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হবার ফলে মানুষ সেগুলো থেকে নিরাপদ হতে শুরু করেছে, তখন প্রায়ই মনের মধ্যে একটা প্রশ্ন আসতো, কেন পরের এ রোগগুলোর প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয় না? বিজ্ঞানীরা এখানে এসে কি ব্যর্থ? এসব রোগের প্রতিষেধক বের হলে মানবজাতি কতোই না উপকৃত হতো! বিষয়টা ভাবতে গিয়ে সবসময় হতাশ হতাম। প্রশ্ন জাগতো, বিজ্ঞান কি এতোই সীমাবদ্ধ?


ভাবতে ভাবতে একসময় বুঝতে পারলাম, বিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতার সাথে বিষয়টাকে সম্পর্কিত করা ভুল। যে রোগগুলোর প্রতিষেধক নিয়ে ভাবছি, সেগুলোর মধ্যে কিছু রোগের প্রতিষেধক হয়তো বিজ্ঞান কখনোই আবিষ্কার করতে পারবে না। কারণ এগুলোর প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হবার নয়। ঠান্ডাজনিত কারণে মানুষ নিমোনিয়া, সর্দি-কাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো যে শারীরিক সমস্যাগুলোতে আক্রান্ত হয়, সেগুলোর প্রতিষেধক আবিষ্কার করা যেমন বিজ্ঞানের পক্ষে সম্ভব নয়, তেমনি উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের মতো যে রোগগুলো মানুষের শরীরে শারীরিক পরিশ্রম থেকে দূরে থাকা এবং চর্বি-কোলেস্টেরল বৃদ্ধির কারণে হয়ে থাকে সেগুলোর প্রতিষেধক আবিষ্কার করাও বিজ্ঞানের পক্ষে সম্ভব নয়।


স্ট্রোক এবং ক্যান্সারের কারণ নিয়ে বিজ্ঞান এখনো অনেকটা অন্ধকারে আছে। স্ট্রোকের কারণ নিয়ে অনেকে অনেক মন্তব্য করে, বাস্তবতার সাথে আমি যেগুলোর মিল পাই না। এমনকি ক্যান্সারের কারণ নিয়েও অনেককে ফাঁকা বুলি আওড়াতে দেখা যায়। বিশেষ করে ধূমপানকে স্ট্রোক এবং ক্যান্সারের জন্য নয় শুধু, হার্ট অ্যাটাক, উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসের জন্যও একতরফাভাবে দায়ী বলে মনে করা হয় বিশ্বব্যাপী। এ ব্যাপারে আমার ভিন্নমত রয়েছে। বিষয়টা নিয়ে পৃথক অধ্যায়ে আলোচনা করা হবে। আমার মনে হয়, ক্যান্সার এবং স্ট্রোকের স্পষ্ট কারণ খুঁজে বের করা যায়নি বলেই এগুলোর প্রতিষেধক নিয়ে কিছু করা যাচ্ছে না। তবে চেষ্টা যে চলছে, তা আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারছি। আর এইডসের কারণ সম্পর্কে অনেক কথা শোনা যায়। কতটুকু সঠিক, জানি না। কিন্তু প্রতিষেধক এখনো বের করা যায়নি।

ঠান্ডাজনিত রোগগুলো থেকে বাঁচার জন্য ঠান্ডা লাগা থেকে মানুষের আত্মরক্ষা করাটা যেভাবে প্রতিষেধকের কাজ করে, তেমনি শারীরিক পরিশ্রম থেকে দূরে থাকা এবং শরীরে চর্বি-কোলেস্টেরল বৃদ্ধির কারণে যে রোগগুলোতে মানুষ আক্রান্ত হয়, সে রোগগুলো থেকে বাঁচার জন্য বেশি বেশি শারীরিক পরিশ্রম করা এবং শরীরে চর্বি-কোলেস্টেরল বাড়তে না দেয়াও অবশ্যই প্রতিষেধকের কাজ করবে। মানুষের অলসতা, শারীরিক পরিশ্রম ছেড়ে দেয়া, আরামপ্রিয় লাইফস্টাইল আর শরীরে মেদ-চর্বি বৃদ্ধির সুযোগে যে রোগগুলোর জন্ম, সেগুলোর প্রতিষেধক বিজ্ঞান কিভাবে আবিষ্কার করবে!

এগুলোর প্রতিষেধক তো মানুষের হাতেই! মানুষ যদি নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করে- তা কায়িক শ্রমের যে কোনো কাজ/পেশায় নিয়োজিত থেকে হোক, নিয়মিত শরীরচর্চা করে হোক বা খেলাধূলা করে হোক; পরিমিত খায়; মুটিয়ে যাওয়া থেকে দূরে থেকে চিকন থাকাকে প্রাধান্য দেয়; শরীরে চর্বি-কোলেস্টেরল বাড়তে না দেয়; কমপক্ষে নিয়মিত পর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রম করে, মানুষের শরীরে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগের মতো রোগ কখনো দেখা দেবে না, বাবা-মা বা পূর্বপুরুষ কারো এসব রোগ থাকুক না কেন, জীবনে যত টেনশনই থাকুক; যত মিষ্টিজাতীয় খাবার, চিনি, লবণ (চিনি, মিষ্টান্ন এবং লবণ খাওয়াকেও অনেকে এসব রোগে আক্রান্ত হবার জন্য দায়ী মনে করে, যা নিয়ে পরে একটি অধ্যায়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে) বা মাংস খেতে অভ্যস্ত হোক না কেন।

যতদিন মানুষ নিয়মিত পর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রম করবে ও শরীরে মেদ-কোলেস্টেরল বাড়তে না দেবে, ততদিন এসব রোগ থেকে নিরাপদ থাকবে। তবে কখনো কোনো কারণে শারীরিক পরিশ্রম করতে অক্ষম হয়ে গেলে রোগগুলোতে মানুষ আক্রান্ত হয়ে পড়তে পারে। তবে এমন হতে পারে, কেউ নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন করে দীর্ঘদিন ধরে রোগগুলো থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখলো, কিন্তু একসময় অন্য কোনো রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলো, তাতেও কিন্তু তুলনামূলক বেশি দিন বেঁচে থাকার সুযোগ পেল। মানুষকে তো একসময় মারা যেতেই হয়। জীবন বিধ্বংসী ছয়টি রোগের তিনটি থেকেই মানুষ যদি নিজেদেরকে নিরাপদ রাখতে পারে, এমনকি ছয়টির মধ্যে সবচেয়ে বিধ্বংসী রোগ হার্ট অ্যাটাক থেকে মানুষ যদি নিজেদেরকে রক্ষা করতে পারে, তাতে মানুষের গড় আয়ু অনেক বৃদ্ধি পাবে, সন্দেহ নেই।



দীর্ঘজীবন লাভের উপায় শিরোনামে এইটি বই পড়ুন সম্পূর্ণ অনলাইনে, ঘর শুয়ে-বসে। বইটি পড়লে আপনি উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং হার্ট অ্যাটাক এই তিনটি গুরুতর রোগের সঠিক কারণ এবং এই তিনিটি রোগ থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখার সঠিক উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।

Occupation: Teaching, Hobbies: Writing

0 Comments: