দীর্ঘজীবন লাভের উপায় (পর্ব-৪৯) : একজন মাদকাসক্ত তরুণের করুণ পরিণতি-১
ডায়াবেটিস, হার্ট অ্যাটাক এবং উচ্চ রক্তচাপের প্রকৃত কারণ এবং প্রতিরোধের উপায় জানার মাধ্যমে
দীর্ঘজীবন লাভের উপায়
২. একজন মাদকাসক্ত তরুণের করুণ পরিণতি-১
‘‘...প্রায় ছুটতে ছুটতে ফিরে এলাম হোস্টেলে। তালা খুলে রুমে ঢুকেই চমকে উঠলাম রুমের ভেতর মোমের আলো দেখে। কী যে ভালো লাগলো হঠাৎ। কয়েক সেকেন্ডের জন্য মনে হলো লোডশেডিং চলছে। সাত তারিখ রাতে ঢাকার হোটেলে এরকম মোমের আলোয় বসে গল্প করেছিলাম আমরা সবাই। তারপর মাত্র বারো দিন কেটেছে, অথচ মনে হচ্ছে বারো বছর।
কিন্তু কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই কেটে গেলো মোমের আলোর ভালো লাগা। আলোর উৎসের দিকে চোখ গেলো। মোমবাতি ঠিকই- কিন্তু অন্যরকম। ছোট্ট একটা এলুমিনিয়ামের কৌটোতে মোমের সলতে জ্বলছে। হঠাৎ একটা হাড্ডিসার হাত আলোর দিকে এগিয়ে আসতেই একটা ঠান্ডা ভয়ের স্রোত বয়ে গেলো আমার সারা শরীরে। লিকলিকে একটা তরুণ ঘরের কোণায় বসে আছে। মোমের শিখার দিকে হাত বাড়িয়ে এলুমিনিয়িঅম ফয়েলে কিছু একটা গরম করছে। ধবধবে সাদা শরীরের সবগুলো হাড় মনে হয় গোনা যাবে। গায়ে বিদ্ঘুটে একটা টি-শার্ট ছাড়া আর কিছুই নেই। দুই কানের লতি ছিদ্র করে বড় বড় দুটো রিং ঢুকিয়ে রেখেছে। হাতের কব্জি থেকে বাহু পর্যন্ত নানরকম উল্কিতে ভর্তি। চুলের অবস্থা আরো ভয়ঙ্কর। মাথার দু’পাশে কামানো- শুধু মাঝখানের চুলগুলো আছে- এবং কোনো এক অদ্ভুত প্রক্রিয়ায় সেগুলো মোরগের ঝুঁটির মতো খাড়া হয়ে আছে।
এরকম একটা মুর্তিমান বিপদের হাতে সেদিন পড়েছিলাম রাসেল স্ট্রিটে। আজ দেখি একবারে রুমের ভেতর! আমাকে দেখে মেঝেতে ছড়ানো পা-দুটো সামান্য সরিয়ে জড়ানো গলায় বললো- ‘‘হাই দেয়ার’’। আমি কোনো রকমে ‘‘হ্যালো’’ বলতে বলতে দেখলাম তার গর্তে ঢোকা চোখ দুটো মোমের আলোয় জ্বলজ্বল করছে। একটু পরেই এলুমিনিয়াম ফয়েল নাকের কাছে এনে চোখ বুজে জোরে জোরে দম নিলো। ড্রাগ নিচ্ছে ছেলেটা! এরকম একটা মাদকাসক্ত লোকের সাথে রুমে থাকতে হবে আজ!
ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাবার অবস্থা। কিন্তু করার কিছু নেই। হোস্টেলের ভেতরে ধূমপান নিষিদ্ধ অথচ রুমে বসে ড্রাগ নিচ্ছে এই লোক। হোস্টেল কর্তৃপক্ষ নিশ্চয় জানে না ব্যাপারটা। জানার উপায়ও নেই। ধূমপান করলে স্মোক অ্যালার্ম বাজবে- কিন্তু ড্রাগের ক্ষেত্রে সেরকম কিছু নেই। আমার এখন কী করা উচিত? যারা ড্রাগ নেয় তারা বেশির ভাগ সময় দলবেঁধে থাকে। এই ছেলেটার দলবলও কি আছে আশেপাশে? এ কী বিপদে পড়লাম!...
লাইট জ্বালালাম। ছেলেটা বিছানায় নেই। ঘরের কোণে চোখ গেলো। ওখানেই পড়ে আছে সে। মোম শেষ হয়ে বাতিটা নিভে গেছে। তখন আবছা আলো-আঁধারে যতটা ভয়ংকর লাগছিলো- এখন আর সেরকম মনে হচ্ছে না। বরং খুব অসহায় দেখাচ্ছে তাকে। মাদকের বিষে জর্জরিত এই তরুণ ক্রমাগত আত্মহত্যা করছে দিনের পর দিন। কেন এমন করে এরা? এদেশে এদের কিসের অভাব?...’’ [ইয়ারার তীরে মেলবোর্ন, পৃষ্ঠা- ১৪৮-১৫০, প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি ২০১১]
প্রথম ঘটনা আমাদের জানাচ্ছে অস্ট্রেলিয়ায় ধূমপানের বিরুদ্ধে কঠোরতা সম্পর্কে। দ্বিতীয় ঘটনা অস্ট্রেলিয়ায় মদপানের ব্যাপারে নীরবতা সম্পর্কে আমাদের বার্তা দিচ্ছে। অবাক হবার মতো বিষয়। হোস্টেলের ভেতরে ধূমপান নিষিদ্ধ হলেও মানুষ অবাধে মদপান করতে পারে! যে মদপান মানুষকে তিলে তিলে চোখের সামনে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়, সে সম্পর্কে চরম উদাসীন হোস্টেল কর্তৃপক্ষ। অথচ ধূমপানের চাক্ষুস ক্ষতির তেমন কোনো উদাহরণ না থাকা সত্ত্বেও ধূমপানের বিরুদ্ধে আরোপ করা হয় কড়াকড়ি!
অস্ট্রেলিয়ায় স্মোক অ্যালার্ম সম্পর্কে প্রদীপ দেবের ‘অস্ট্রেলিয়ার পথে পথে’ বই থেকে আরো একটা অনুচ্ছেদ উল্লেখ না করলেই নয়। ‘‘শুয়ে শুয়ে রিসেপশান (হোস্টেলের) থেকে দেয়া ফোল্ডারটা খুললাম। হোস্টেলের কিছু নিয়ম কানুন লেখা আছে। এই আবাসিক হোস্টেলের পুরোটাই ধূমপানমুক্ত এলাকা। প্রত্যেক রুমে স্মোক অ্যালার্ম লাগানো আছে। অ্যালার্ম বাজলে সাথে সাথে ফায়ার ব্রিগেডে খবর চলে যাবে আর তারা ঘন্টা বাজাতে বাজাতে চলে আসবে। ধূমপানজনিত কারণে ধোঁয়ার উৎপত্তি বুঝতে পারলে ৩২০ ডলার ফাইন।...’’ [পৃষ্ঠা: ৮৫]
৫০তম পর্ব:
https://waytogainlonglife.blogspot.com/2022/09/blog-post_21.html
0 Comments: