Headlines
Loading...
দীর্ঘজীবন লাভের উপায় (পর্ব-৪৭) : ধূমপানের কি কোনো পরোক্ষ ক্ষতি আছে?

দীর্ঘজীবন লাভের উপায় (পর্ব-৪৭) : ধূমপানের কি কোনো পরোক্ষ ক্ষতি আছে?

ডায়াবেটিস, হার্ট অ্যাটাক এবং উচ্চ রক্তচাপের প্রকৃত কারণ এবং প্রতিরোধের উপায় জানার মাধ্যমে
দীর্ঘজীবন লাভের উপায়




ধূমপানের কি কোনো পরোক্ষ ক্ষতি আছে?


আমাদের পাশ্ববর্তী একটি সরকারি ক্লিনিকের প্রধান, যার নাম সুফিয়া, তাঁর একটি বিবাহিত মেয়ে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। ৫ মার্চ ২০১৯ তারিখের প্রথম আলোর ৪র্থ পৃষ্ঠায় দেখলাম একটি সংবাদ ‘ক্যানসারে আক্রান্ত শিশু নাদিমের চিকিৎসায় সহায়তার আহ্বান’ শিরোনামে। সংবাদে দেখলাম শিশুটির বয়স মাত্র ২ বছর ৪ মাস। এই বয়সেই সে ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে। ১০ মার্চ ২০১৯ আমাদের বিদ্যালয়ে একজন মহিলা একটি শিশু নিয়ে এলেন ভর্তি করাতে, যে তাঁর ভাইয়ের মেয়ে। বললেন ওর মা মারা গেছে, তাই তিনি শিশুটিকে নিজের কাছে রেখে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। জিজ্ঞেস করলাম, ওর মা কিভাবে মারা গেছে? তিনি বললেন, ওর মা মারা গেছে ক্যান্সারে। বাচ্চাদানীতে ক্যান্সার।

এই তিনজন মানুষের ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার সাথে ধূমপানের প্রত্যক্ষ সম্পর্ক নেই। যারা বলবেন, এরা হয়তো পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতির ফলে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে, তারা বলুন, যাদের প্রত্যক্ষ ধূমপানের পরোক্ষ ক্ষতির শিকার হয়েছে এরা, তারা, মানে প্রত্যক্ষ ধূমপায়ীরা ক্যান্সারে আক্রান্ত না হয়ে পরোক্ষ ধূমপায়ী ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় কিভাবে?


আমাদের বাড়ির দক্ষিণে আমজাদ ভুঁইয়া বাড়ি নামে একটি বাড়ি আছে। সম্পর্কে আমার নানা হন, ঐ বাড়ির এমন একজন লোকের নাম রুহুল আমিন ভুঁইয়া। তিনি একদিন কথায় কথায় আমাকে জানালেন, তাঁর মা মারা গেছেন ক্যান্সারে। এটাও জানালেন, তাঁর মা ধূমপান তো করতেনই না, পানের সাথে সাদাপাতা বা জর্দাও খেতেন না। আমার ওই নানার শাশুড়িও মারা যান ক্যান্সারে। ওই বাড়ির সামনে লিয়াকত আলী নামে একজন লোক দোকান দেন। তিনি বলেন, তাঁর শাশুড়িও মারা যান ক্যান্সারে।
ক্যান্সারে আক্রান্ত এইসব মহিলা, যাদের কথা এ পর্যন্ত উল্লেখ করা হলো, তারা কেউই ধূমপান করতেন না, এটা নিশ্চিত। কারণ এরা বাংলাদেশী। বাংলাদেশি মহিলারা সাধারণত ধূমপান করেন না, বাংলাদেশে শতকরা ১ জন মহিলাও ধূমপায়ী নন। দশ হাজারে বা এক লক্ষে একজন ধূমপায়ী হলে তা ধর্তব্যও হতে পারে না। এইসব ক্যান্সারে আক্রান্ত মহিলা পরোক্ষ ধূমপানের শিকারও নন। কারণ এদের অনেকের স্বামীই ধূমপায়ী নন। এদের কারো স্বামী ধূমপায়ী হয়ে থাকলেও কেউই ক্যান্সারে আক্রান্ত হননি। যে লোক নিজে ধূমপান করে, সে (তথা প্রত্যক্ষ ধূমপায়ী) ক্যান্সারে আক্রান্ত না হয়ে পরোক্ষ ধূমপায়ী ক্যান্সারে আক্রান্ত হবে, এটা চরম অযৌক্তিক ও হাস্যকর।

আরেকটি কথা হলো, আমাদের দেশের মহিলারা নিজেরা যেমন ধূমপান করেন না, অনেকেই স্বামীর ধূমপানও পছন্দ করেন না। স্বামীর সাথে এ নিয়ে অনেক মহিলার মনোমালিন্য হয়ে থাকে বলে অনেক পুরুষ বাইরে ধূমপান করলেও বাসায়, স্ত্রীর কাছে থাকলে ধূমপান থেকে বিরত থাকেন। অনেকে স্ত্রীর ভয়ে পুরোপুরি ধূমপান ছেড়েও দেন। তাহলে মহিলারা ধূমপানের পরোক্ষ শিকার হবেন কিভাবে?! শুধু বাংলাদেশে নয়, অন্য অনেক দেশেও মহিলারা তাদের স্বামীদের ধূমপান পছন্দ করেন না। কারণটা খুব সহজেই অনুমেয়। কারণটা হচ্ছে, ধূমপানজনিত কারণে মুখে দুর্গন্ধ। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের অতীত ও বর্তমানের যে রাষ্ট্রপ্রধানদেরকে আমার ভালো লাগে, তার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা অন্যতম। তাঁর একটা ছোট্ট বিষয় এখানে উল্লেখ করছি। ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৩ তারিখের দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকায় বারাক ওবামা সম্পর্কে একটি সংবাদে বলা হয়, ‘বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের শীর্ষ ক্ষমতাধর ব্যক্তি বারাক ওবামা। যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রেসিডেন্ট জানিয়েছিন, স্ত্রীর ভয়েই নাকি তিনি ধূমপানের অভ্যাস ত্যাগ করেছেন। গত সোমবার জাতিসংঘ সাধারণ মানবাধিকার কর্মীদের সঙ্গে বৈঠককালে তিনি একথা বলেন।’

ধূমপানে ক্যান্সার, স্ট্রোক, হৃদরোগ এসব গুরুতর রোগ হয় বলে প্রচার করা হয় বিভিন্নভাবে, আমরাও তা বিশ্বাস করি নির্দ্বিধায়। কিন্তু নিজেরা কখনো বিষয়টাকে বাস্তবতার সাথে মিলিয়ে দেখার প্রয়োজন বোধ করিনা। কারণ বিষয়টা ব্যাপক প্রচারিত। বছরখানেক আগ থেকে কেন জানি বিষয়টার প্রতি আমার একটা কৌতুহল সৃষ্টি হল। একদিন আমাদের বিদ্যালয় এলাকার মোস্তফা নামক একজন লোকের সাথে বিষয়টা নিয়ে একান্তে আলাপ করলাম। তিনি নিজেও ধূমপায়ী ছিলেন। বয়স সত্তরের বেশি। ধূমপানও করছেন কয়েক যুগ ধরে। তিনি কথায় কথায় বললেন, ‘আমাদের বাড়ির দু’তিনজন মহিলা হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক এসবে মারা গেছেন। তারা তো ধূমপান করতেন না! আর আমি নিয়মিত ধূমপান করা সত্ত্বেও এখনো এসব রোগে আক্রান্ত হইনি!’

ধূমপান সম্পর্কে এ আলোচনায় বেশ কয়েক বার ধূমপানের পরোক্ষ ক্ষতির কথা হয়ে গেছে। ধূমপানের পরোক্ষ ক্ষতি সম্পর্কে আর কোনো কথা না বললেও হতো। তবু বিষয়টা আরো পরিষ্কার করার জন্য আর মাত্র একটি কথা বলা প্রয়োজন। ধূমপানে যদি প্রত্যক্ষ ধূমপায়ীর বড় ধরনের কোনো ক্ষতি না হয়, এ লেখায় যে ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো, তাহলে পরোক্ষ ধূমপায়ীর ক্ষতি হবে কী করে!

নিকোটিনের ক্ষতি কিভাবে বুঝা যাবে?


ধূমপান বা তামাক সেবনে যে ক্যান্সার, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা হৃদরোগ হয় না, তার আরো একটা বড় প্রমাণ হচ্ছে, অনেক অনেক ধূমপায়ী আছেন, যারা দীর্ঘ দিন ধরে ধূমপানের পাশাপাশি তামাকও সেবন করেন, তবু তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের কথিত সব ক্ষতি থেকে নিরাপদ।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ধূমপান বা তামাক সেবন যদি মানুষের বড় কোনো ক্ষতি না করে, তাহলে নিকোটিন নামক বস্তু, যা তামাকে থাকে বলে বলা হয়, সেই নিকোটিন যে মানুষের ক্ষতি করে, তা বুঝা যাবে কিভাবে?!

কেন এই লেখায় ধূমপান নিয়ে আলোচনা?

ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কিনা, ‘‘দীর্ঘজীবন লাভের উপায়’’ শিরোনামে আমার এ লেখায় এ বিষয়ে আলোচনা করার কোনো ইচ্ছা ছিল না।  মূলত ডায়াবেটিস, হার্ট অ্যাটাক এবং উচ্চ রক্তচাপ এ তিনটি রোগের প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করা এবং এ রোগ তিনটি থেকে আত্মরক্ষার মাধ্যমে দীর্ঘজীবন লাভের পথ প্রসারিত করা সম্পর্কেই এ লেখা। কিন্তু যখন দেখা গেল, অনেক গবেষণায় গবেষকরা এবং অনেক লেখায় চিকিৎসকরা ধূমপানকেও হার্ট অ্যাটাক, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এসব রোগের জন্য দায়ী করেন, তখন ধূমপান নিয়ে এ লেখায় আলোচনা না করে উপায় ছিল না। ধূমপানের কথিত ক্ষতিগুলোর সাথে যতোই বাস্তবতার সাথে মেলাতে যাই, ততোই অবাক হই এটা চোখের সামনে পরিষ্কার হতে দেখে যে, ধূমপান তো আসলেই কোনো ক্ষতি করছে না মানুষের! শুধু হার্ট অ্যাটাক, উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিস নয়, বরং ধূমপানের সাথে ক্যান্সার এবং স্ট্রোকেরও কোনো সম্পর্ক নেই!

আমি নিজে ধূমপায়ী নই, ধূমপানে অভ্যস্ত হবার কোনো ইচ্ছাও নেই, আমাদের পরিবারের কেউই ধূমপান করে না, তবু আমার কথাগুলো ধূমপানের পক্ষে গেল কেন? কারণ, যে রোগগুলোর জন্য ধূমপান দায়ী নয়, ভালোভাবে যাচাই না করে সেগুলোর জন্যও ধূমপানকে একচেটিয়াভাবে দায়ী করার প্রবণতাটা রোগগুলোর প্রকৃত কারণকে আমাদের চোখের সামনে আসতে দিচ্ছে না। ধূমপানের প্রতি একটা সাধারণ নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের চোখের ওপর পর্দা ফেলে রাখছে। আমি শুধু সে পর্দাটি সরানোর চেষ্টা করেছি। এ পর্দাটা সরে গেলে শুধু ডায়াবেটিস, হার্ট অ্যাটাক এবং উচ্চ রক্তচাপ নয়, ক্যান্সার এবং ব্রেন স্ট্রোকের মত ভয়াবহ রোগগুলোর কারণ অনুসন্ধানের পথ আলোকিত হবে, কোনো সন্দেহ নেই।

হয়তো অনেকে বলবেন, ধূমপান কি তাহলে মোটেই ক্ষতিকর নয়? হ্যাঁ, ধূমপান অবশ্যই ক্ষতিকর। তবে সে ক্ষতি পরিমাণে অল্প এবং সীমিত। যেমন: অর্থের অপচয়; যারা ধূমপান পছন্দ করে না, তাদের বিরক্তি; অধিকাংশ বিড়ি এবং কিছু কিছু সিগারেট পানে মুখে দুর্গন্ধ হয়; সিগারেটের আগুনে অনেক সময় জামা পুড়ে যায় এবং সিগারেট খাওয়া নিয়ে অনেক স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য হয় ইত্যাদি।

৪৮তম পর্ব:
https://waytogainlonglife.blogspot.com/2022/09/blog-post_11.html

Occupation: Teaching, Hobbies: Writing

0 Comments: