দীর্ঘজীবন লাভের উপায় (পর্ব-৫০) : একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তির করুণ পরিণতি-২
ডায়াবেটিস, হার্ট অ্যাটাক এবং উচ্চ রক্তচাপের প্রকৃত কারণ এবং প্রতিরোধের উপায় জানার মাধ্যমে
দীর্ঘজীবন লাভের উপায়
একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তির করুণ পরিণতি-২
‘এক যাযাবর মন এক দেশ থেকে অন্য দেশ’ নামক একটি ভ্রমণকাহিনীমূলক বইয়ে (প্রকাশক: দিব্য প্রকাশ) লেখক আহমেদ ইকবাল ফারুক একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তির কথা উল্লেখ করেন। লেখক ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনায় অবস্থিত আমাজান অরণ্যে ভ্রমণের কথা বর্ণনার সময় মাদকাসক্ত লোকটির কথা আলোচনায় আসে। ২৪ নং পৃষ্ঠা থেকে শুরু করে ৪৫ নং পৃষ্ঠা পর্যন্ত আলোচনাটি বিস্তৃত। শুধু মাদকাসক্তের কথাটিই সেখান থেকে উল্লেখ করা হচ্ছে এখানে।
‘‘এ্যাবাগিলের সাথে পরিচয় হয়েছে মাস ছয়েক আগে আটলান্টা শহরে। সংক্ষিপ্ত নাম এ্যাবি বলেই ডাকি। এক বড় এনজিওতে কাজ করে। দক্ষিণ আফ্রিকা আর পূর্ব ইউরোপে কাজ করছে। দেশ ভ্রমণে উৎসাহী আর রাজনীতিতে উদারপন্থী। বন্ধত্ব হতে সময় লাগেনি। প্রায় সমবয়সী, বিয়ে করেনি, কোনো ছেলেপুলে নেই। কথা একটু বেশি বলে, সাইকেল চালানো আর স্কুবা ড্রাইভিংয়ে পারদর্শী। ছেলে বন্ধুর মতো একজন আছে, তবে সেটা কোন পর্যায়ে পড়ে তা নিয়ে মাথা ঘামাইনি। লোকটার বয়স মধ্য চল্লিশের মতো, ব্যাংকে চাকরি করে। নাম এন্ডারসন, সংক্ষেপে এন্ডি। তার আবার একজন ছেলে বন্ধুও রয়েছে, তবে সম্পর্কটা নড়বড়ে মনে হয়। এককথায় সে সে মেয়ে-পুরুষে ভেদাভেদ করে না, অর্থাৎ বাইসেক্সুয়াল। ওয়াটার স্কি আর সাইকেল চালানোর ঝোঁক। এইচআইভি আছে তবে ওষুধের কল্যাণে ভালোই রয়েছে। দুজনেই আলান্টার কাছাকাছি দুই শহরে থাকে, খুবই বন্ধুত্বপরায়ণ। এন্ডি সারাক্ষণ মদ খায়, যাকে বলে ফাংসানিং অ্যালকোহলিক।...
রাত নয়টায় বিমান ছাড়ল ম্যানাউসের উদ্দেশ্যে। আমাজান যাবার কেন্দ্রবিন্দু ম্যানাউস। বিশাল লোকের বিশাল শহর, আমাজান নদীর ওপর আমাজানিয়া স্টেটের রাজধানী। খুবই বিখ্যাত আর কুখ্যাত একই সাথে। আমাজান জঙ্গলে যেতে হলে এখানে আসতেই হবে। এসে পৌঁছালাম, তখন রাত দুইটা বেজে গেছে। ইমিগ্রেশন কাস্টম চুকিয়ে হোটেলে পৌঁছাতে ভোর চারটা। পাশাপাশি দুইটা রুমে জায়গা হলো। এ্যাবি আর এন্ডি এক রুমে। সে অবশ্য সারাক্ষণ প্লেনে হুইস্কি টেনে গেছে।...
উরুগুয়ে যাবার প্ল্যান মাত্র এক দিনের জন্য, সকালে গিয়ে রাতে ফিরে আসা। বাস এল সকাল আটটায় ফেরিঘাটে নেবার জন্য। এন্ডি যাবে না। শরীর খারাপ আর দুর্বল হয়ে গেছে, একটু জ্বর। মনে হয় রুমে শুয়ে আবার চিকেন স্যুপ আর হুইস্কি খেয়ে সারা দির ঘুমোবে।...
বিকেল হয়ে আসছিল, আমরা বাসে উঠে রওনা দিলাম। পথের দুই পাশে খোলা মাঠ, কৃষকেরা কাজ করছে, গাধার গাড়ি চলছে আর গরু দিয়ে লাঙল টানা হচ্ছে। মাঝেমধ্যে দু-একটা ট্রাক্টর। বাস কলোনিয়াতে ফিরে এল তখন সন্ধ্যা পেরিয়ে গেছে। ফেরি ধরে এক ঘন্টা পর বুয়েনস আয়ার্স। হোটেলে ফিরলাম রাত নয়টার দিকে। একটু কিছু খেয়ে যার যার রুমে ফিরে গেলাম। পরদিন ফিরে আসার পালা। এন্ডির শরীর ভালো যাচ্ছে না। একটু জ্বর, শরীর শুকিয়ে গেছে, পায়ে পানি জমেছে, চোখগুলো একটু হলুদ।... নিষেধ করা সত্ত্বেও এন্ডি হুইস্তর অর্ডার দিল। বুঝতে কষ্ট হয় না যে তার হেপাটাইটিস বা সিরোসিস হয়েছে আর এইচআইভি বাড়াবাড়ি শুরু করছে। তাকে বলি, তুমি কি সব আশা ছেড়ে আত্মহনন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছ? একটা হাসি দিয়ে বলল, মোটেই না, আমি মরতে চাই না, তবে বাঁচতেও চাই না।.....
চার-পাঁচ মাসের মাথায় এন্ডি মারা গেল। কারণটা অনুমানসাধ্য। খুব খারাপ লেগেছিল, এমন একটা টগবগে তরুণ জেনেশুনে নিজেকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিল। বয়স আটচল্লিশ, সুন্দর চেহারার জন্য আরো কম মনে হতো।...’’ [পৃষ্ঠা-৪৫]
৫১তম পর্ব:
https://waytogainlonglife.blogspot.com/2022/09/blog-post_57.html
0 Comments: